Friday, December 5, 2008

ছোটদি - ২

(২)
আপনার চিঠি পেয়েছি অনেক আগেই। চিঠিতে আপনি আমাকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন যে আমার উপর আপনার কোন রাগ নেই এবং আমার জন্য আপনি মেমসাহেবকে হারিয়েছেন বলে আপনি মনে করেন না। শুনে ভাল লাগলেও আমি নিজেকেই নিজে কখনো ক্ষমা করতে পারিনা। আপনাকে অনেকদিন অপেক্ষা করালাম। অনেকবারই বসেছিলাম লেখার জন্য কিন্তু কলম নিয়ে বসলেই কি যে হত পুরান দিনের সেইসব মধুর স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে। অসম্ভব মায়াবী একটা মুখ আমাকে ডাকে,"পিচ্চি কেমন আছিস? কতদিন তোকে আদর করিনা। দিদির কথা মনে পড়ে না তোর?" বোকা মেয়েটা কেন জানেনা এক মুহূর্ত ও যে আমি শান্তি পাইনা। ঘুমাবার সময় এখনও কত ডাকি তাকে , ও ছাড়া কে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে?

বিশুর যখন দিদির বিয়ে হল সেইদন বিয়েবাড়িতে কিছুক্ষণ থেকেই অসহ্য হয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম আমি। সারা কলকাতা চষে বেড়িয়েছি। কি এক অস্থিরতা ভর করেছিল আমার উপর কে জানে। খুঁজে ফিরেছি আমার সেই হারিয়ে যাওয়া মায়াবী মুখ। বিয়ের সাজে উপমাদিকে যতবার দেখছিলাম ততবার মনে হচ্ছিল সেখানে আমার ছোটদি বসে আছে। পরে বিশুর জেরার মুখে পড়ে মিথ্যে বলে পার পেয়েছিলাম।

সেবার পূজোর বন্ধে বড়দি এসেছিল বেশ কিছুদিনের জন্য। অনেকদিন পর দিদি আসাতে আমাদের সেবার অনেক আনন্দ হয়েছিল। দিদির ছেলের তখন মাত্র দেড়বছর বয়স। তাকে নিয়ে তখন বাড়িতে অনেক হৈচৈ সবাই কাড়াকাড়ি করে তাকে আদর করার জন্য। ছেলেটি দেখতেও একেবারে পুতুলের মত ছিল। সবার সাথেই তার ভাব সবার কোলে গিয়েই অদ্ভুত সুন্দর করে হাসত। বাসার সবাই তাকে নিয়েই ব্যস্ত। আমারও খুব মজা লাগছিল কিন্তু দুদিন পরেই আমি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লাম। মেঝদি ছোটদি সবাই বাইরে থেকে আসলেই সবার আগে ঐ পিচ্চির খোঁজ করে আদর করে, যা এতদিন আমার ভাগেই ছিল। মেনে নিতে পারছিলাম না।
সেদিন ছোটদি বাসায় ছিল না। মেঝদির পাশে বসে আমি তার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম ওদের রুমে। বাইরের ঘরে আওয়াজ পেলাম ছোটদি এসেছে। আমি অপেক্ষা করছি কখন সে এই রুমে আসবে অন্য সময়ের মত ছুটে তার কাছে গেলাম না। ছোটদি কিন্তু এল না এই ঘরে ওই ঘরেই বড়দির সাথে গল্পে মেতে গেল। কখন যে মেঝদি ও ওই ঘরে চলে গেল টের পেলাম না আমি তখন একা একা বসে বসে অভিমানে জ্বলছি। কেউ আমার খবর নিচ্ছে না মনে হচ্ছিল এক ছুটে চলে যাই সেখান থেকে অনেক দূরে। মনে হচ্ছিল এখন আমি যদি এমন কোথাও চলে যাই যেখানে আমাকে আর কেউ খুঁজে পাবে না তাহলে বেশ হবে খুব শাস্তি হবে সবার। অনেকক্ষণ পরে মনে হয় আমার ছোটদি খেয়াল করল আমি আজ সে আসার সাথে সাথে তার কাছে যাইনি।
"মা খোকন কই বাসায় নেই?" বলতে বলতে দিদি ঘরে ঢুকল। আমি তখন কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিয়েছি।
-কিরে পিচ্চি কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন।
দিদির কথা শুনে ওঘর থেকে সবাই এসে গেল এই রুমে। আমার তখন কথা বলার মত অবস্থা নেই। ছোটদি তো কিছুই বুঝতে না পেরে এসে আমাকে আদর করে কাছে টেনে নিল।
মেঝদি এসে বলল তুই না এতক্ষণ আমার সাথেই বসে ছিলি কখন ছোটদি আসবে সেই অপেক্ষায় কখন আবার কাঁদতে শুরু করলি । কি হয়েছে ভাইয়া?
সবাইকে দেখে আমি খুব লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলাম। ছোটদির বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম এতক্ষণে আমার কথা মনে পড়ল। বড়দি আসার পর তুমি আমাকে আর আদর কর না আমার খবরই নাওনা।
এতক্ষণে বুঝতে পেরে সবাই হেসে উঠল। বোধ করি বড়দির কোলে থাকা পিচ্চিটাও। আমার ছোটদি একটু লজ্জা পেয়ে গেল।
-ওহহো অভিমান হয়েছে আমাদের খোকনের। বড়দি বলল।
-দূর পাগল । এজন্য এত কান্নাকাটি। ও না তোর কত ছোট আর কদিনের জন্য মাত্র এসেছে । ২ দিন পরেই চলে যাবে। তোর আদর তো আলাদা করা সেটাতে কেন ও ভাগ বসাবে। আমাকে সামলাচ্ছে ছোটদি।
- ওকে বাবা স্যরি আর হবে না। আমি নাহয় একটু পঁচা হয়ে গিয়েছিলাম আর কখনো তোর আদরে কম হবে না।

সেবার বড়দি যাবার সময় দুষ্টামি করে বলছিল ,"যাইরে খোকন , তুই তো খুশিই হবি আমি গেলে তোর আদরে ভাগ বসাবার কেউ থাকবে না।"
লজ্জায় ছোটদির পিছনে লুকিয়েছিলাম আমি। ওরা যাওয়ার পর বাসাটা খুব খালি খালি লাগছিল আমারও।
দিদিকে পরে জিজ্ঞেস করেছিলাম , দিদি তোমাকে আমার এত ভাল লাগে কেন। জবাবে কি বলেছিল জানেন?
--আমাকে ভাল লাগবেনা তো কাকে লাগবে তোর কি ১০১ টা দিদি আছে নাকি?
-কিন্তু মেঝদিকে নিয়ে তো আমার এমন হয় না। আমাকে ছাড়া তুমি অন্য কাউকে আদর করলে আমার সহ্যই হয় না।আমি কী হিংসুটে তাইনা?
- আমার মত কি মেঝদি তোকে আদর করে। তুই জানিস আমি যখন বাসার বাইরে থাকি তখনও আমার সবসময় মনে হয় আমার পিচ্চিটা না জানি কি করছে এখন। তুই যখন অনেক বড় হবি বাইরে বাইরে থাকবি তখনও আমার তোকে নিয়ে চিন্তা থাকবে সবসময়। আমার কেবলই মনে হয় তুই আমার কাছে না থাকলেই একটা বিপদ বাঁধিয়ে ফেলবি। আর তুই হিংসুটে হবি কেন তুই যে আমাকে প্রচন্ড ভালবাসিস এজন্য তোর এমন হয়।তোকেও যদি কেউ অনেক আদর করে তাহলে আমার ও এমন লাগবে। বড় হয়ে যখন তুই বিয়ে করবি তোর বউকে আমার থেকে বেশি ভালবাসবি তখন দেখবি আমি একেবারে হিংসায় মরে যাব।
-আমি কখনো কাউকে তোমার থেকে বেশি ভালবাসব না দিদি তুমি দেখো।

ওর থেকে কাউকে ভালবেসে ফেলি সেই দুঃখ যেন না পায় সেইজন্যই বুঝি আমার দিদি এত তাড়াতাড়ি চলে গেল।

Wednesday, December 3, 2008

বাচ্চালোক তালিয়া মার

বাচ্চালোক একসাথে তালিয়া মার। চাইলে বুড়ারাও মারতে পারেন। আমাদের তো সামনে সুখের দিন আসতেছে। ২৯ তারিখ নির্বাচন হবে তারপর ফিরে আসবে আমাদের ঘোড়ার ডিম বহু আরাধ্য গণতন্ত্র। যে গণতন্ত্রের জন্য আমাদের ঘুম আসতেছেনা। কোথায় কে জানি বলেছিল পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ রাষ্ট্রব্যবস্থা হচ্ছে গণতন্ত্র কিন্তু এইটাই নাকি এখন পর্যন্ত বাকি গুলার থেকে সবচেয়ে ভাল। অবশ্যই সত্য কথা নইলে কি আর আমরা মাত্রই ১৮ বছর আগে রক্ত ফক্ত দিয়ে স্বৈরাচার নামিয়ে গণতন্ত্রের কাছে হাত পেতেছি? সেই গণতন্ত্রই নাকি গত ২ বছর ধরে নাই। কি কষ্টের কথা। আহ এখন আনন্দ লাগছে আবার গণতন্ত্র আসবে, আমাদের ত্যাগী নেতারা ( দলত্যাগী, দেশত্যাগী ) সবাই আবার ক্ষমতায় যাবে আমাদের দিয়ে পুতুল নাচ নাচাবে। সবচেয়ে আনন্দ লাগছে আমাদের এরশাদ সাহেব আবার প্রেসিডেন্ট হবে। উফফ এত আনন্দ আমি কোথায় রাখি। প্লিজ সবাই আবার জোরে তালি লাগান।
এরশাদ সাহেবকে কান, ঘাড়, গলা ধড়ে সেদিন যদি না নামাতে পারতাম তাহলে কি আর আমাদের গণতন্ত্র আসত? উনিই তো গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি স্যক্রিফাইস করেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পদ ছিল তার কাছে সাথে নারী গাড়ি বাড়ি। সব কিছু ছেড়ে তিনি গেছেন লালঘরে। ওনার থেকে বেশি আর কে করেছে ? নূর হোসেন? ঐ ছেলে আর কি করেছে ও তো মরে বেঁচেছে। ওকে আর দেখতে হচ্ছে না কে আবার প্রেসিডেন্ট হচ্ছে। দেখছি তো আমরা। দুই মহিলা কোমরে শাড়ি পেঁচিয়ে যাকে একদিন টেনে নামিয়েছিল তারাই আবার এখন একই ভাবে ঝগড়া করছে কার হাতের উপর দিয়ে সেই লোক আবার প্রেসিডেন্ট হবে সেটা নিয়ে। আসলেই নারীর মন বুঝা ভগবানেরও সাধ্যের বাইরে।
তালি মার তালি মার সবাই। আমি মারতেই আছি...

Friday, October 31, 2008

ছোটদি ১

journalist
আমার এ চিঠি পেয়ে অবাক হয়েছেন নিশ্চয়ই। প্রেরকের জায়গায় খোকন নামটি পরিচিত ঠেকলেও চিনে উঠতে পারছেন না। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনি আমার খুব আপনজনই হতেন। আপনার মেমসাহেব কাহিনীখানা পড়ার পর থেকেই আপনাকে লেখব ভাবছি। কিন্তু কিভাবে লেখব তা ঠিক করে উঠতে পারছিলাম না। আমার জন্য আমার ছোটদি মারা গেছে এই অপরাধবোধ থেকে কখনোই আমি বের হয়ে আসতে পারিনি। আপনার অবস্থা আমি কখনো চিন্তা করিনি। সত্যি বলতে কি আপনাকে আমি কখনোই পছন্দ করতে পারিনি। দিদি যখন আপনার কথা বলত তখন ঈর্ষায় জ্বলতাম আমি। আপনার সাথে পরিচয় হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার দিদির সবটুকু জুড়ে ছিলাম আমি। সদ্য কৈশোর পেরুনো আমার তাই আপনার আগমন একদমই ভাল লাগেনি। আপনার কাহিনী পড়ে তাই বুঝতে পারলাম পোড়ামূখী অসম্ভব সুখীদের মধ্যে একজন হতে পারত।এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝেছেন আমি আপনার মেমসাহেবের ছোটভাই খোকন।

আপনার জন্য আমার কখনোই খারাপ লাগেনি। অন্য সবার মত কিছুদিন দেবদাস সেজে থেকে ঠিকই আপনি আবার একজন মনের মানুষ জুটিয়ে ফেলবেন , এই ছিল আমার ধারণা। প্রেম করলেই প্রেমিকা পাওয়া যায়, বিয়ে করলে বউ, কিন্তু বোন হারালে কিভাবে আর পাওয়া যায় বলতে পারেন? ছোটবেলা থেকে যে দিদিকে পাশে দেখে বড় হয়েছি হঠাৎ করে সেখানে সে নেই , শূন্যতা কতটুকু বুঝতে পারেন? আপনার লেখা পড়ে তাই আমার ভুল ভেংগেছে। আমার দিদিটা জানলই না কত সুখ জমে ছিল তার জন্য।

আমি ওর আপন ভাই ছিলাম না। কিন্তু কোনদিন টের পাইনি আপন দিদি আর কতটা বেশি কিছু হয়। মায়ের কোন স্মৃতি নেই আমার। শুনেছি জন্মের সময় মা মারা যাবার পর পাশের বাসার এই দিদিরা আর ওনাদের মা যাকে আমি বড়মা ডাকি তারাই কোলে তুলে নেয় আমাকে। স্ত্রী হারিয়ে বিপর্যস্ত আমার বাবাও স্বস্তি পায় সন্তান পালনে ওনাকে আর কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি ওনাকে। ও বাড়িত কোন ছেলে না থাকায় আমার আদর, আধিপত্য সেখানে একচ্ছত্র হয়ে উঠে। তিন মেয়ের সবাই বেশ বড় হয়ে উঠায় আমি হয়ে উঠলাম সবার আদরের। ও বাসাতেই থাকতাম আমি। হঠাৎ হঠাৎ মনে হলে পিতাকে একবার দর্শন দিয়ে যেতাম হয়তবা। আমার জন্য কোন চিন্তাই করতে হয়নি আমার জনকের। চিন্তার জন্য যে তিনি অধীর ছিলেন এমনটাও কখনো মনে হয়নি। বাবা একজন থাকতে হয় তাই শুধু জানতাম আমি। আমার ছিল আমার বড়মা, আর তিন দিদি। আমি তাদের ঘরের পুতুল। আমাকে ছাড়া তাদের ঘর খালি হয়ে থাকে। ছোটবেলায় ঐ বাড়িতেই বড় হয়েছি আমি। বড়মাকে মা বলে জেনেছি। বড়দিকে বেশিদিন পাইনি তখনই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল দিদির কিন্তু ও যখন বাড়ি আসত আমার পছন্দের জিনিস কখনোই বাদ পড়তনা। মেঝদি আর ছোটদি আমার বাল্যকালের সাথী। ওদের দুজনের কোলে চড়েই বড় হয়েছি আমি। আমাকে নিয়ে দুজনের চলত কাড়াকাড়ি। আমি কার কাছে কি আবদার করব সেটার অপেক্ষায় থাকত তারা। আমি যেন কিছু চেয়ে ওদের একজনকে জিতিয়ে দিতাম আরেকজনের কাছে। ওদের ভালবাসায় আমিও হয়ে উঠেছি আহ্লাদী। বড়মা নিজেও আমাকে আদর করতেন কিন্তু মেয়েদের ভালবাসার আতিশয্য দেখে ওনার হয়তবা কখনো মনে হত একটু শাসন করা দরকার। প্রাণে ধরে তাই কখনো যদি বা একটু শাসন করলেন সেইদিনই তাকে পড়তে হত দিদিদের তোপের মুখে। দিদিরা আসার সাথে সাথেই তাদের কাছে বিচার দেয়া হয়ে যেত আমার। ফলাফল যেটার জন্য শাসন করা হল সেটা তো পেতামই উপরি হিসেবে পেতাম বাড়তি আদর। আমার অবশ্য বাড়তি বলে মনেই হতনা। এসবই যেন আমার ন্যয্য অধিকার। বড়মা হয়তবা বলতেন তোদের আদর পেয়েই ছেলেটা উচ্ছন্নে যাবে। মেঝদির চটপট উত্তর, এই বাচ্চা ছেলে উচ্ছন্নের পথই এখনো চেনেনা বড় হোক তখন শাসন কর।

পরদিন দিদিরা স্কুলে চলে গেলে আমি আস্তে করে এসে বড়মার পিছনে গলা জড়িয়ে ধরতাম। বড়মা রাগ করে বলতেন , থাক আর লাগবে না আমার কাছে আসা। দিদিরা আসলে তখন আদর নিও। আমি তখন বলতাম ঠিক আছে আমি তাহলে চলে যাচ্ছি ঐ বাসায় দিদিরা আসলেই আসব। জানতাম আমাকে ছাড়া খালি বাসা সহ্য হবে না বড়মার। পিছন থেকে বলতেন ওরে আমি কি তাই বলেছি আয় এদিকে আয়। কিচ্ছু খাসনি নিশ্চয়ই। আমি তখন আদর বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বলতাম নাশতা খেয়েছি না সকালে। সেই কখন খেয়েছিস বলে কাছে ডেকে আদর করে খাওয়াতেন আমাকে বড়মা। আপন মা থাকলে আর কিভাবে আদর করত আমি জানিনা। এইভাবেই আমার শৈশব কাটে। মায়ের জন্য কখনো আফসোস হয়নি আমার।

একটু বড় হলাম আমি। তখন আমার ৭-৮ বছর বয়স। বাইরে পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলতে যাই। মেঝদি তখন কলেজে ভর্তি হওয়ায় ছোটদির বেশি কাছঘেঁষা হয়ে গেলাম আমি। মেঝদি বাসায় আসতে দেরি হত ততক্ষণে আমি ছোটদির দলে ভিড়ে যেতাম। মেঝদি আসার পর তার কাছ থেকে চকলেট মুখে পুরেই আমি আবার ছোটদির কোলে চলে আসতাম। মেঝদি প্রায়ই বলত তুই আমার থেকে ছোটকে বেশি ভালবাসিস তাই না পিচ্চি। ভালবাসার মর্ম আমি তেমন বুঝিনা তখন। মেঝদির চকলেট খেতে খেতেই তখন বলতাম আমি ছোটিদিকে ভালবাসি। ছোটদি মনে হয় মেঝদিকে খুশি করার জন্যই বলত এতক্ষণ তো খালি মেঝদি কখন আসবে তাই জিজ্ঞেস করছিলি।

সেদিন আমি বাইরে খেলতে গিয়ে বিশুদের সাথে ঝগড়া লাগিয়ে ফেললাম। ওদের শাঁসিয়ে বললাম আসুক আমার ছোটদি ওকে বলে দিব তোকে আচ্ছা মত মেরে দিবে। বিশুটা মুখ বাঁকিয়ে বলল , ছোটদিকে বলে দিব ইশশ ছোটদি, ছোটদি কি তোর আপন বোন। জানিনা এই কথা শুনে কেন যে আমার এত খারাপ লাগল প্রচন্ড কান্না পেয়ে গেল আমার। সেদিন আর বড়মার কাছে গেলাম না। বাসায় এসে কান্না শুরু করলাম। আমার বাবা অসময়ে আমাকে বাসায় দেখে এমনিতেই হতবাক তার উপর ক্রন্দনরত ছেলেকে কিভাবে সামলাতে হয় তার জানা ছিলনা। অনভ্যস্ত হাতে আমাকে আদর করার চেষ্টা করে বলছিলেন কি খোকা কি হয়েছে। একরাশ অভিমান গ্রাস করছিল আমাকে। কিছুক্ষণ পর ছোটদি এসে স্বস্তি দিল আমার বাবাকে। বাবা অসহায়ের মত বললেন , দেখ তো মা সেই তখন থেকে কাঁদছে আমি তো কিছুই বুঝছিনা।

ছোটদি এমনিতেই স্কুল থেকে বাসায় এসে আমাকে না দেখে থাকতে পারেনা। আমি বাইরে থাকলেও ওর ফেরার সময়ে একবার এসে ওর সাথে দেখা করে যেতাম। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যার পরও আমি না আসাতে বড়মাও চিন্তায় পড়ে গেলেন। চিন্তিত ছোটদি যখন বিশুর কাছে শুনতে পেল আমি অনেক আগেই বাসায় চলে এসেছি তখন আমার ছোটদি কাঁদোকাঁদো হয়ে বাসায় ফিরে আসল। বড়মাই তখন বললেন এই বাসায় দেখতে। আমাকে দেখে ছোটদির জান ফিরে আসল কিন্তু আমার কান্না বেড়ে গেল দ্বিগুন। ও এসে আমাকে আদর করছে কেউ মেরেছে কিনা জিজ্ঞেস করছে আমি কারো কথাই শুনছি না। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কিনে আনা খেলনা দিয়েও আমার কান্না থামাতে পারলনা ও। আমাই সব ছুড়ে ফেললাম , লাগবে না আমার কিছু।বালক আমি কিভাবে বুঝাব আমার অভিমান। পেছন পেছন বড়মা আর মেঝদি এসেও হাজির হল। বড়মাই শেষ পর্যন্ত থামাল আমাকে। অনেকক্ষণ কেঁদে আমিও ক্লান্ত। মেঝদি এসে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছিলরে পিচ্চি তোর। আমি তখন ছোটদির দিকে তাকিয়ে বললাম ," বিশু কেন বলল ছোটদি আমার আপন বোন না"। এতক্ষণ ধরে আমার কান্না দেখে ছোটদির চোখ ও ছলছল করছিল এইবার সেখানে রাগ দপ করে জ্বলে উঠল। বলল, তোর আর খেলতে হবে না কোনদিন বিশুর সাথে। বড়মা আমাকে ধরে আস্তে করে বললেন, বোকা ছেলে এই জন্য এত কাঁদা লাগে। বলতো আপন আর পর কি দিয়ে হয়। জন্মের পরদিন থেকে তোকে কোলে তুলে নিয়েছি তোর আপন মা থাকলে এর থেকে কোন জিনিসটা বেশি করত। বিশু বাচ্চা ছেলে ও বুঝেনি। আর কোনদিন বললে জিজ্ঞেস করবি ওর আপন বোন কোন জিনিস করে যেটা তোর ছোটদি করে না। তুই আস্তে আস্তে বড় হবি তখন দেখবি আপন পর জন্ম দিয়ে ঠিক হয় না। অন্তর দিয়ে আপন পর চিনতে হয় । ছোট্ট আমি এত কিছু বুঝিনা। শুধু বড়মাকে বলেছিলাম তুমি বিশুকে বলে দিবা ছোটদি আমার আপন বোন। বড়মা হেসে বলেছিলেন হ্যা বলে দিব। মেঝদি হেসে বললেন ছোটদি আপন হলেই হবে আমি কেউ না? দৌড়ে ওর কোলে উঠে বলেছিলাম তুমিও আমার আপন বোন।

আজ আর লেখতে পারছি না। চোখ বুজলে আজো আমার ছোটদির মায়াবী মুখখানা আমার চোখের সামনে ভাসে। এক মুহূর্ত ও শান্তি দেয়না ও আমাকে। এখনো আমাকে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যায়। চোখের জল কেন যে আমার শেষ হয় না। তবুও আপনাকে আমার দিদির কাহিনী জানাব আমি। আপনার কাছে হয়ত আমি অপরাধী। কোন এক খোকনের জন্য আপনার স্বপ্ন উলটপালট হয়ে গেল। কোথা থেকে শুরু করে কিভাবে লেখব জানিনা। আপনি সাংবাদিক মানুষ লেখালেখি করাই আপনার কাজ। আপনার লেখায় আমার দিদি মেমসাহেব হয় সবার মনে অবস্থান করেছে। কিন্তু আমার পক্ষে এত গুছিয়ে বলা সম্ভব নয়। তবুও আপনাকে শোনাব আমার দিদির কথা।

Thursday, October 23, 2008

আমার আপুসোনা - ৪

তপু শোন তোর সাথে কথা আছে।
আম্মুর ডাক শুনে এসে বসলাম আম্মুর পাশে। মনে হচ্ছে সিরিয়াস কোন ব্যাপার আলোচনা হবে। বসতেই একটা প্রিন্ট করা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিল আম্মু। আপু দেখলাম উঠে চলে গেল অন্য রুমে। ব্যাপার কি বুঝার জন্য কাগজটাতে চোখ বুলাতেই দেখলাম কোন এক সুযোগ্য পাত্রের বায়োডাটা।
-কার জন্য মা এইটা
-কার জন্য আবার তোর বোনের জন্য। দেখ তোর পছন্দ হয় কিনা।
-মানে? আপুর বিয়ে? কেন এত তাড়াতাড়ি কেন।
-বিয়ে দিতে হবে না। মেয়ে বড় হয়েছে না?
আমার মাথায় কিছু কাজ করে না। আমার আপুসোনার বিয়ে হয়ে যাবে, ও চলে যাবে আমাদের বাসা থেকে এ কি করে সম্ভব। এই বাসায় আমার আপু থাকবে না, আমি রাতে কার সাথে গল্প করে করে ঘুমাব। এ কি করে হয়। আম্মুকে কিছু বলিনা আমি কাগজটাতে দ্বিতীয় নজর না দিয়েই ফিরিয়ে দেই আমি আম্মুর কাছে।
-কিরে কিছু বললিনা তো?
-আমার পছন্দ হয়নাই।
-দেখলিই তো না ঠিক করে।
আমি গিয়ে আমার আপুর কাছ ঘেষে বসি।
-আপু তোর বিয়ে হয়ে গেলে তুই এই বাসা থেকে চলে যাবি !
আপু কিছু বলে না একবার শুধু আমার দিকে তাকায়। আমার এটা তো প্রশ্ন ছিলনা।
-আপু তুই না থাকলে এই বাসায় আমার যে খুব একা একা লাগবে। আবার বলি আমি।
আর থাকতে পারিনা আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি।

আমার আবেগ দিয়ে তো আর কিছু হবে না। বাসার সবার গবেষণায় সেই পাত্রই সুযোগ্য বলে গণ্য হল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম কি দ্রুত আমার আপুর বিয়ের দিন চলে আসল। কেন আমার আপুকে বিয়ে করতেই হবে এটা আমার এখনো মাথায় ঢুকছেনা। সেই ছেলে আবার আমার আপুকে ফোন করে এখনই। আমার একটুও ভাল লাগে না। আপু যখন তার সাথে কথা বলে তখন আমার মনে হয় ফোনটা কেড়ে নিয়ে একটা আছাড় মারি। আর আপুকে চীৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে তুই কোথাও যাবিনা, তোর বিয়ের দরকার নেই। আমার সহ্য হয় না। ঘরে থাকতেও ইচ্ছা করেনা। আপুকে চোখের সামনে দেখলেই মনে হয় আগামী সপ্তাহেই ও আর আমাদের বাসায় থাকবে না। ওর সাথে আমার কথা বলতে হবে টেলিফোনে। প্রতিদিন ইচ্ছা হলেই ওকে দেখতে পারবনা। রাতে ঘুম না আসলে ওকে ডেকে বলতে পারবনা আপুসোন আমার , আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
---------------------------------------------------------------------------------------------
আজ আমার আপুসোনার বিয়ে। স্টেজে পরীর মত সেজে বসে আছে ও। আমাকে করতে হচ্ছে একশ একখানা কাজ। বোনের বিয়েতে ভাইয়ের কি আর ব্যস্ততার কোন শেষ থাকে। তাও কাজের মধ্যে ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার কাজ আমি ভুলে গেলাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলাম আমার আপুকে। আর ঘন্টা কিছু পরেই চলে যাবে আমার আপু। বাসায় গিয়ে আজ আর আমি আমার আপুকে দেখতে পারবনা। আপু আমাকে লক্ষ্য করল না। কে যেন ডাকছে আমাকে ...

আপু চলে যাচ্ছে। আমার সেখানে যেতে ইচ্ছা করছে না। দূর থেকে আমি দেখছি ও কাঁদছে আম্মুকে জড়িয়ে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ছুটে গিয়ে ওকে রেখে দিতে ইচ্ছা করছে। কে যেন বলল আমাকে ডাকে আমার আপুসোনা।
আপু তুই চলে যাবি ... আর কিছু আমার মুখ দিয়ে বের হল না। ও কাঁদছেই।

বাসায় এসে সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আমার আপুসোনাটা ছাড়া এই বাসায় আমি কখনো একা ছিলাম না। কেন ওর বিয়ে করতেই হল। অবুঝ কান্না জাপটে ধরে আমাকে। কিছুই বুঝতে চাইনা আমি আমার আপুসোনাটাকে যে আমি বড় ভালবাসি, ওকে ছাড়া কিভাবে থাকব।

Wednesday, October 22, 2008

লোনাজলে ভাসে বুক

এই কবিতাটা আমার নিজের লেখা না। একটা পত্রিকায় পেয়ে ভাল লেগেছে। যার লেখা তাকে না জিজ্ঞেস করেই নিজের ব্লগে তুলে দিলাম। আশা করি তিনি রাগ করবেন না।
লোনা জলে ভাসে বুক
-জুলফিকার শাহাদাৎ
ঢাকা শহরের অলিতেগলিতে কত কার দেখা পাই
আমার দিদির মতন এমন চেনামুখ দেখিনাই
সকলের মুখে খুঁজেছি দিদির হাসিমাখা সোনামুখ
কোথাও পাইনি দিদিকে আমার লোনাজলে ভাসে বুক

দিদিকে খুঁজেছি হাটে মাঠে ঘাটে দিদিকে খুঁজেছি দূরে
পাখিকে বলেছি দিদির খবর, পাখি ছোটে উড়ে উড়ে
নদীকে বলেছি দিদিকে দেখেছ? যদি দেখা পাও ভাই-
একটু বলিও দিদির জন্য দুই চোখে ঘুম নাই।

পাহাড়ের কাছে জানতে চেয়েছি পাহার বলেছে শোনো
তোমার দিদিকে লুকিয়ে রেখেছি সন্দেহ যদি কোনো
আমিও তোমার দিদি হয়ে রবো , তুমি ভাই হয়ে থেকো
তোমার দিদির ঠিকানা আমার জানা নেই মনে রেখো।

জোছনা রাতের চাঁদকে বলেছি, শোনো শোনো চাঁদমামা
তোমার চোখে তো আলোর শহর আলোকরশ্মি জামা
তুমি যদি দেখো দিদিকে আমার একটু খবর দিয়ো
বিনিময়ে তুমি আমার চোখের আলোটুকু কেড়ে নিয়ো।

কেউই দেয়নি দিদির খবর সকলে বলেছে, না
আমরা জানিনা তোমার দিদির কোনো নাম ঠিকানা
কোথায় খুঁজব তোমার দিদিকে তোমার দিদি কি পাখি?
আকাশে আকাশে ডানা মেলে মেলে করে শুধু ডাকাডাকি।

দিদিকে খুঁজব , কোথায় খুঁজব, কার কাছে আর যাই
দিদিকে হারিয়ে আমার দুচোখের ঘুম নাই ঘুম নাই
দিদিকে পাব না কোথাও পাবনা এমন কি করে হয়
দিদি কি আমার আকাশের তারা আকাশেই জেগে রয়।

Wednesday, October 8, 2008

আমার কাজলাদিদিরা - ২ ( পিয়াপু )

[ঠিক কবে মনে নেই কিন্তু খুব ছোটবেলা থেকেই কেন যেন আমার একটা বড় বোনের শখ হয়ে গেল ( আজো গেল না )।
" মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?"
এই প্রশ্নটা আজীবন খুঁজে ফিরছি। একটু একটু যখন বড় হলাম গল্পের বই পড়া শুরু করলাম তখন এই ইচ্ছাটা দিনকে দিন বাড়তে লাগল। শরৎচন্দ্রের বড়দিদি, মেঝদি, পড়তে পড়তে ছোট্ট আমার কত দীর্ঘশ্বাস বের হল তার খবর কেউ রাখেনি। কেন যে আমার এত বোনের শখ আমি নিজেও জানিনা। আসলেই কি বোনরা অনেক বেশি আদর করে? আমার যেহেতু বোন নেই তাই আমার এই বিষয়ে অনেক কল্পনা অনেক রকমের চিন্তাভাবনা। যদি শুধু চিন্তার উপর পিএইচডি থাকত তাহলে আমি পেয়ে যেতাম। কত রকম চিন্তা যে করি আমার একটা বোন থাকলে এই করত ওই করত। পরবর্তীতে এক ভাইয়ার কাছে শুনেছিলাম উনার বড় আপু নাকি হোষ্টেলে থাকত উনি বাসায় এসেই প্রথমে নাকি আম্মুর সাথে একটা ঝগড়া করত কারন হচ্ছে তার আগেই নাকি উনি বোনের কাছে বিচার দিয়ে দিতেন অমুক দিন তমুক দিন মা ওনাকে মেরেছেন। আর আমি মনে মনে ভাবি ইশশ , আমি তো এইরকম একটা বড় বোন চেয়েছিলাম।
এই জন্যই মনে হয় ছোটবেলা থেকেই আমি আমার আশে পাশে সবসময় বড়বোন খুঁজেছিলাম। সেই খোঁজার ফলে আমার জীবনে অনেক গুলা আপুই এসেছে। কেউ কেউ আমাকে আসলেই ছোটভাইর মত আদর করেছে কাউকে কাউকে আমি নিজেই মনে মনে আপুর আসন দিয়েছি উনি হয়ত জানেই না।
সবার সাথে যে আজ যোগাযোগ আছে তাও না। কিন্তু মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে কারো কথা মনে পড়ে। সেই আপুদের গল্প আমার এই কাজলাদিদিরা। ]
আমি এখন যদি কাউকে বলি যে ছোটবেলায় আমি একেবারেই চুপচাপ ছিলাম। কথাই বলতাম না খুব একটা। এমন কথাও প্রচলিত ছিল যে আমাকে নাকি বোম মেরেও কথা বের করা যায় না। কোথাও গেলেই আমার প্রথম কাজ ছিল আশে পাশে খুঁজে একটা গল্পের বই বের করে ফেলা। তারপর কোন এক কোনায় গিয়ে সেটা গেলা। সবাই আমাকে সেইরকমই জানত। ক্যাডেট কলেজে ঢুকে তখন সবে মাত্র সবার কাছে পাত্তা পেতে শুরু করেছি। ছোট্ট একটা বাচ্চা একা বাইরে থাকে সবার কাছে তাই ছুটিতে আসলে আমার অনেক দাম। সবাই এটা ওটা জানতে চায়। আমিও টুকটাক কথায় তার উত্তর দেই। তখন ক্লাস ৮ এ পড়ি। আব্বু মারা গেছেন মাত্রই। আমি ছুটিতে এসেছি তখন আব্বুর জন্য মিলাদ হবে। আমার আব্বু মারা যাবার আগে ১১ মাস অসুস্থ ছিল। তখন আমার এক দূর সম্পর্কের মামা আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। ছোট বেলা থেকেই আমরা ঐ বাসায় গিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে থাকি কেন যেন ঐ মামীকে আমরা ভয় পেতাম। ওনার ভয়ে কত অখাদ্য যে খেতে হইছে ( শাকসব্জী ) ।
আব্বুর মিলাদ এর ব্যবস্থা সব করছেন ঐ মামা। আমার বড় ভাই আর আমি গেলাম সেখানে কি একটা কাজে। বড়ভাইয়া কথা বলছে মামী, মামাত ভাই আর বোনের সাথে। আমি সবসময়ের মতই একটা ম্যাগাজিন টেনে নিলাম। হঠাৎ পিয়া আপু এসে আমার থেকে সেটা কেড়ে নিল। বলল এত জ্ঞান অর্জন করতে হবে না কথা বল আমাদের সাথে। আপু ডিগ্রী পড়ে আর আমি সেভেন এর একটা ছেলে। ওনার সাথে আমি কি কথা বলব। কিন্তু সেই কেড়ে নেওয়ার মধ্যে কিছু একটা ছিল বুঝতে পারিনি। এই আপুও ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আমার ছোটভাইকে আদর করে। আর কয়েকদিন ধরেই দেখছিলাম গত ১ বছরেই পান্থ ( আমার বড়ভাই ) এর সাথে তার খুবই খাতির। পান্থভাইয়াও পিয়াপু বলতে প্রায় অজ্ঞান। আমার ভাইকে কখনো কারো এরকম ফ্যান হতে দেখিনি।
আব্বুর মিলাদের দিন রাতে আপুদের যখন বিদায় দিচ্ছি তখন আপু এসে আমাকে বলল , তপু পান্থ আমাকে তুমি করে বলে তুমিও আমাকে তুমি করে বলবা। আমি তো হা হয়ে গেলাম। এরপর ১ সপ্তাহ ছিলাম ঢাকায়। এর আগে কখনো আমি ফোনে কথা বলিনি। সেই সময় ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার আগে আপুকে ফোন করলাম। কথা বলতে গিয়ে তুমি আপনি এসবে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। মনে আছে কলেজে গিয়েও খালি ভাবতাম এতদিনে বুঝি আমার একটা কাজলাদিদি এসে হাজির হয়েছে।
অনেক ভেবে তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করলাম। কলেজে বসে প্রথম তাকে চিঠি লেখলাম। সেই চিঠির যে উত্তর পাব তা ঠিকই ভেবেছিলাম কিন্তু চিঠিটা যে আমাকে এতটা খুশি করবে তা বুঝতে পারিনি। হঠাৎ একদিন দেখলাম একটা খাম তার উপরে আমার নাম লেখা ঠিকই কিন্তু হাতের লেখাটা আমি চিনিনা। মনের মধ্যে অনেকদিন ধরেই বাজছিল আজই হয়তবা ... হলুদ রঙের খামটি তখন আমার কাছে আকাশের চাঁদ। খোলার আগে অনেকক্ষণ ধরে ভেবেছি এইরকম লেখবে ঐ রকম লেখবে।
তারপর থেকে শুরু হল আমার চিঠি লেখা আমার পিয়াপু কে। মনের আনন্দে আমি শুধু আপু আপু লেখতাম। এক চিঠিতে মনে হয় আমি ১০-১৫ বার আপু আপু ডাকতাম। ছোট্ট বেলা থেকে মনের ভিতরে জমে থাকা ডাকটা চান্স পেয়ে যত বেশি ডাকা যেত তত ডাকতাম।
কলেজ থেকে ছুটিতে আসলে কখন পিয়াপুকে দেখতে যাব তাই ভাবতাম শুধু। কিন্তু তখনো আমার এই মুখচোরা স্বভাব চেঞ্জ হয়নি তাই গিয়েও খুব বেশি কথা বলতে পারতাম না। আমার থেকে আমার বড় ভাইই বেশি কথা বলত। আমিও অনুভব করতাম পিয়াপু আমার থেকে আমার বড় ভাইকেই বেশি আদর করে। ও সবসময় ঢাকায় থাকে প্রায়ই তার সাথে দেখা হয় এজন্য তার সাথেই বেশি ফ্রি। আর আমি ? চিঠিতেই আপু আপু সামনে আসলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারিনা।
এইভাবে কেটে গেল অনেকদিন। কলেজে যতদিন ছিলাম প্রতি টার্মে তাকে চিঠি লেখতাম। পিয়াপু আমার চিঠির আপু। মনে আছে তখন ভাবতাম কলেজ থেকে বের হলে তো সবসময় ঢাকাতেই থাকব। আমার সাথেও আপুর সম্পর্কটা আস্তে আস্তে পান্থ ভাইয়ার মত হবে। কিন্তু কলেজ থেকে বের হয়ে যে কি হল চিঠি লেখা বন্ধ হয়ে গেল আমার আপুটাও কেমন যেন দূরে সরে গেল। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আরো ব্যস্ত হয়ে গেল। খুব মজা হত কোন বারই আমার জন্মদিন মনে রাখতে পারতনা আপু। আমি ফোন করে বলতাম কি আপু এবারও ভুলে গেলা।
একসময় বিদেশ চলে আসলাম। প্রথম চিঠি লিখেছিলাম আম্মু আর পিয়াপুকে। দুটা চিঠির একটাও গিয়ে পৌঁছায়নি। এরপর আর লেখা হয়নি। আস্তে আস্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল পিয়াপুর সাথে। তবুও বছরের দুটা দিন পিয়াপুকে ফোন দিতাম। তার জন্মদিনে উইশ করতে। আর আমার জন্মদিনে। সে মনে রাখতে পারতনা। আমিও আর বলতাম না যে আজ আমার জন্মদিন। আস্তে আস্তে ভুলতে বাধ্য হলাম কারণ যতদিন মনে হত কেমন যেন খারাপ লাগত।
এবারো দেশে গিয়ে আপুর সাথে ফোনে কথা হল। সে অনেকবারই বলছিল আমি কিন্তু তপু তোমাকে অনেক আদর করি। আমি মনে মনে বললাম হয়তবা সত্য কিন্তু সেকথা এখন তোমাকে মুখে বলতে হচ্ছে। দেখা করিনি ইচ্ছে করেই।

Saturday, October 4, 2008

আমার আপুসোনা - ৩

বহুদিন পরে দেশে যাচ্ছি। সময়ের হিসাব করলে অবশ্য হবে না। সময়ের হিসাব ধরলে মাত্র ১৫ মাস কিন্তু মানসিক ভাবে এই ১৫ মাস আমাকে ১৫ বছরের কষ্ট দিয়েছে। দেশ থেকে আসার সময় ১১ মাসকেই মনে হচ্ছিল অনন্তকাল। কত্ত দিন পর আজ মাকে দেখব। প্লেনটা মনে হয় আস্তে চলছে। একটা ঘুম দিয়ে দিব নাকি? ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম আমার দেশ। চোখ বন্ধ করে একটু চিন্তা করি এয়ারপোর্টে কি হবে। আম্মু তো আসবেই। সেই ক্লাস ৭ এ ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার পর থেকে আমার আজ পর্যন্ত যত আগমন এবং গমন সবসময়ই আম্মু শত কাজ থাকলেও আমাকে নিতে এবং দিতে আসবে। আর কে কে আসবে? কনক তো আসবেই। এয়ারপোর্ট বলে কথা ছেলেমানুষ একজন তো থাকতেই হবে। আম্মু কি এবারো কাঁদবে। দেশ ছাড়ার সময় কান্নার ব্যাপারটা বুঝতে পারি কিন্তু দেশে আসার সময় কেন আম্মু কাঁদে? আমারও বা কেন চোখ ভিজে যায়। দেশ যখন ছাড়ছিলাম তখন অবশ্য বুঝিনি এত তাড়াতাড়ি দেশে যেতে পারব। সবাই দেখে ২-৩ বছরের আগে আসে না। সেই হিসেবে ভালই লাগছে।
আমার আপুসোনাটা কি আসবে? আমি যখন দেশ ছাড়ছিলাম তখন আমার আপুসোনাটা আসেনি আমাকে তুলে দিতে । আম্মু অনেকবার বলার পরও তার একই কথা আমার পিচ্চিটা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে সেটা আমি সহ্য করতে পারবনা। ওখানে নাকি সে কাঁদতে কাঁদতেই মরে যাবে । সিনক্রিয়েট এর হাত থেকে বাঁচার জন্য সে যাবেনা। তাও যা করল। আমি বের হবার আগ পর্যন্ত বেশ হাসিমুখেই ছিল। কিছুক্ষণ পরপরই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, জড়িয়ে ধরে গাল টিপে আদর করে দিচ্ছে আর বারবার বলছে কোন ব্যাপার না প্রতিদিন আমরা মেসেঞ্জার এ কথা বলব ওয়েবক্যামে তোকে দেখব তুই আমাদের দেখবি দেখবি খারাপ লাগবেই না। আমি একবার আম্মুকে জড়িয়ে ধরি আরেকবার ওকে । বুকের মাঝে যে কান্নার দলাটা পাকিয়ে উঠছিল সেটা গলা পর্যন্ত এসে থেমে যায়। কি যেন অনেক কথা বলার ছিল। বলতে পারিনা। কিন্তু যেই আমি গাড়িতে উঠে গেলাম তখন বুঝতে পারলাম আমার আপুসোনাটা এতক্ষণ আমাকে নয় নিজেকেই স্বান্ত্বনা দিচ্ছিল। আমাকে দেখাবে না সেইজন্য সে ভিতরের রুমে গিয়ে শুরু করল কান্না। আম্মু আর আপু মিলে সে কি কান্না। আমি দাঁড়িয়ে আছি দরজায়। বের হতে পারছিনা। একবার মনে হল কেন যাব বিদেশে। কি দেবে আমাকে বিদেশ। কেন আমাদের যেতে হয়। না গেলেই কি নয়?
আমার আপুসোনার একটা কথা গত ১৫ মাসের সবসময় আমার কানে বেজেছে । ও কাঁদছিল আর বলছিল," আমার পিচ্চি ছাড়া এখানে আমার যে বুকটা হুহু করবে।" আম্মু অনেকক্ষণ ওকে বুঝিয়ে আমাকে নিয়ে বের হয়ে গেল। আমার আপুসোনাটা আর আমার সামনে আসল না। আমিও আর কাঁদতে চাইনি। গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছিল কত্ত দিন আমি আমার আপুসোনাটাকে দেখবনা। দৌড় দেই। একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা যে ওকে বলা হয়নি। ওকে বলা হয়নি আমি আপু তোকে কত ভালবাসি। মাকে জড়িয়ে ধরলাম। আম্মু বুঝতে পেরে আরো নিবিড় করে আমাকে জড়িয়ে ধরল। ফোনে কথা বলা শুরু করলাম আপুসোনার সাথে। আমি শুধু আপুসোনাটা উচ্চারণ করতে পেরেছিলাম। আর আপু বলেছিল পিচ্চি আমার একটুও কাঁদবি না। তুই যেদিন আসবি এয়ারপোর্টে নেমেই আমাকে দেখবি ।
ও তো অনেক ব্যস্ত। আজও ওর অফিস আছে। আসবে কি আমার আপুসোনা এয়ারপোর্টে।
---------
এয়ারপোর্টে নেমে ঝামেলা শেষ করে গেট দিয়ে বের হয়ে আসলাম। কোথায় আমার আম্মু কোথায় আমার আপুসোনা। এদিক ওদিক তাকাই কেউ নেই দেখি। এমন সময় দেখলাম কনক ডাকছে আমাকে। আমার অতি আদরের ছোট ভাইটা দেখি একটু বড় হয়ে গেছে। আমাকে কি সুন্দর গাইড করে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। ওর উপর নির্ভর হতে হল আমাকে। পিচ্চি কনক দেখি অনেক বেশি দায়িত্বশীল ও হয়েছে। আম্মুকে দেখে আবার সেই কলেজের মত ছবি। আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি।প্রথন দৃশ্যতো শেষ হল আমি এদিক ওদিক তাকাই আমার আপুসোনাটা কই? আম্মু কনক দুজনই বুঝতে পারে কিন্তু কিছু বলে না। এগিয়ে যাই গাড়ির দিকে হঠাৎ দেখি নরম দুটা হাত আমার চোখ ধরেছে। আর কিছু বুঝতে হল না আমাকে উলটা ঘুরেই বললাম " আমার আপুসোনা"।

Saturday, August 9, 2008

দেশে যাব, কিন্তু ...

খাতার পাতায় ক্যালেন্ডার আঁকা আর দিন কাটাকাটির খেলা আমার আর শেষ হল না। সেই ক্লাস সেভেন যখন ক্যাডেট কলেজ গেলাম সেদিন থেকে শুরু হল খাতার পাতায় বাড়ি যাবার দিন গুনার জন্য স্পেশাল ক্যালেন্ডার বানানো। বানিয়ে সেটা রেখে দিতাম। অনেক দিন পর একবার বের করে একসাথে দিন কাটতাম। আর দেখতাম আর কত দিন বাকি। এখনো বানাই তবে এখন আর দিন না মাস, বছর এইসব গুনি। এরকম দিন কাটাকাটি করতে করতেই হঠাৎ করে দেখি আর মাত্র ৭ দিন আছে আমার দেশে যাবার। আগামী সপ্তাহে এই দিনে আমার ঈদ। শনিবার প্লেনে উঠব। অনেক দিন থাকব যদিও তাও দেখা যাবে যেদিন দেশে নামব তারপর থেকে দিনগুলা হয়ে যাবে ৫-৭ ঘন্টার মনে হবে পরদিনই আমার চলে আসার দিন এসে গেল। আগষ্ট এর ১৬ তারিখে রওনা দিয়ে সেপ্টেম্বর এর ২৯ তারিখে ফিরব। একটাই আফসোস আসল ঈদটা পাবনা। ঈদ পাবনা তা ব্যাপার না ব্যাপার হল ঈদের ৪-৫ দিন আগে ফিরে আসতে হবে। ঈদ করিনা অনেক বছর তাই সেটা গায়ে লাগবে না তবে এই ঈদ পেতে পেতেও না পাওয়াটা মনে হয় কষ্ট হবে।
আরো একটা মন খারাপ লাগা আছে। সেদিন এক আপু মেইলে বলল তোর জন্য আমার চিন্তাই লাগছে তুই দেশে আসবি কিন্তু তোর মনে হয় মন খারাপ হবে বিরক্ত লাগবে, মেজাজ খারাপ হবে। কারণ এসে দেখবি বন্ধুদের সবার চাকরি হয়ে গেছে কিংবা অনেকে বাইরে চলে গেছে। পরে চিন্তা করে দেখলাম আসলেই তাই হবে। এই পর্যন্ত যতবার দেশে গিয়েছি গিয়েই পরেরদিন বের হয়েছি বন্ধুদের খোঁজে । এইবার গিয়ে অপেক্ষা করতে হবে পরের উইকএন্ডের জন্য তাও সবাই এক সাথে ছুটি পায় না। কারো দেখা গেল শুক্র শনি, কারো বা শনি রবি আবার কারো বা বৃহস্পতি , শুক্র। সেখানে আবার প্রায় সবারই কিছু পার্সোনাল রিলেশন আছে সেখানে সময় দিতে হয়। মনে হয় এইবার দেশে গেলে অনেক পরিবর্তন দেখব। ব্যগা গোছানো ছাড়াও মনকেও গুছাতে হবে দেশে যাওয়ার আগে যাতে এইসব দেখে মন খারাপ না হয়।

Friday, August 1, 2008

আপুসোনা ---৫


-ঐ শালা কার্ড দে, এইটা দাবা খেলা না।
-বেশি ভাব মারিস না শামস। twenty nine খেলতে আয় তোকে খেলা শিখিয়ে দেব। ব্রীজটা নতুন শিখেছি বলে ভাব মারতেছিস।
হাহাহা করে হেসে উঠে সবাই তপুর কথা শুনে। আজ বহুদিন পরে ওদের রাতের আসর বসেছে। আজ রাফির বাসায়।
-তোরা ৪ জন খেললে আমি কি করব বসে বসে।আয় ৬ জনে মিলে lorries খেলি।জ্যোতির প্রস্তাব।
-রাফিকে রাজি করাতে পারলে আয়। তোর দোষেই তুই বসে আছিস।৯ টায় আসার কথা তুই এসেছিস ১১টায়।মীমের নির্বিকার গলা।জ্যোতি বসে আছে এতে ওর কোন মাথাব্যাথা নেই।বরং খুশিই হচ্ছে।
-রাফি খেলবে কার্ড তাইলেই হইছে।ও sure কার্ড খেলতে বসলেও মিথ্যা কল দিবে।ফোঁড়ন কাটল শামস।আবার হেসে উঠে সবাই।
শুধু মর্তুজাই চুপচাপ খেলে যাচ্ছে।কোনদিকে খেয়াল নেই ওর।
-ইদানিং মর্তুজার কি হইছেরে কথাবার্তা বলিসই না একদম।কোন কিছুতেই আগ্রহ নাই তোর। শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলে তপু।
-আমার আবার কি হবে ।এইতো খেলছি।
-কি জানি তোকে দেখলে মনে হয় পৃথিবীর সব দুঃখ তোর। কোন কিছুতেই আগের মত আগ্রহ দেখাস না।অনেকদিন ধরেই খেয়াল করছি বলা হয়না।
-ধূর কিছু হয়নাই।তুই বেশি বুঝস।উড়িয়ে দেয় মর্তুজা।
-তপু তো মনে হয় জটিল আলোচনা শুরু করতে চাচ্ছিস।কিন্তু জটিল আলোচনার নিয়ম তো যে থাকবে না তাকে নিয়ে আজকে মর্তুজা কে নিয়ে কেন।
-নারে শামস মনে হয় বড় হয়ে গেছি। যাই বলি সব জটিল হয়ে যায়।আগে জীবন সহজ সরল ছিল আয়োজন করে আমরা জটিল আলোচনা করতাম।
হঠাত একটু চুপ হয়ে যায় আসরটা।সবাই মনে মনে মেনে না নিয়ে পারে না তপুর কথা। সবারই কোন না কোন ঝামেলা আছে যেটা নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না।
মর্তুজা ভাবে, সব কথা কি বলা যায়।তাও ভালো আমাকে তোরা খেয়াল করছিস।আমি change হচ্ছি এতে কারো তো কিছু এসে যাচ্ছেনা বলে মনে হয় আমার।
-ধুর তপু তুই একটা foul, আঁতলামি শুরু করছস। সর আমি খেলি।
-তোর শাস্তি এখনো শেষ হয়নাই।২ ঘন্টা পরে আসছিস ২ ঘন্টার আগে তুই খেলার নামই মুখে আনতে পারবিনা।
এ সময়ে বেজে উঠে মোবাইল।তপু মোবাইলটা নিয়েই কার্ডগুলো জ্যোতির দিকে বাড়িয়ে দেয়।
-নে তোর কপাল খুলে গেল। আমি কথা বলি।
আর কোন কথা না বলে তপু পাশের রুমে চলে গেল।রাফির বাসায় আজ ওরা ছাড়া কেউ নেই।
-কি ব্যাপার রে , ঘটনা কি?তপু কার্ড ছেড়ে উঠে গেল মনে হচ্ছে লম্বা ব্যাটিং দিবে।এটা তো মর্তুজা আর জ্যোতির কাহিনী।তপুর কিছু হল নাকি?মীমের প্রবল কৌতুহল।
-নাহ sure লাবণী আপু।মর্তুজার উত্তর। ঐ শালা ইদানিং buet এও আমাদের পাত্তা দেয়না।লাবণী আপুরে পাইলেই হইছে।কঠিন খাতির হইছে। প্রতিদিন ই নাকি আপু ফোন করে।
-তপু শালা একটা লুইচ্চা হইছে।
-তুই এত jealous কেন শামস।
-তুই আবার কথা কস কেন তুই ও তো ।
জ্যোতি আর শামসের মধে চলে খুনসুটি।ওদের আড্ডায় এরকম পঁচানো চলবেই।একটু পরে দেখা যাবে জ্যোতি আর শামস মিলেই অন্য একজনকে পঁচাচ্ছে।
-ঐ রাফি ল্যাপটপ গুতাচ্ছিস কেন।দেখাস নাকি।গান ছাড়।
-নারে আমার কালকেই একটা report জমা দিতে হবে।
-মীম যা তো কিছু গান ছাড়।ঐ শালার কথা বিশ্বাস করিস না ।চাপা মারে শালায়।
-আরে না না চাপা না ও মিছা কথা কয়।
শামসের কথা শুনে হেসে উঠে সবাই।
রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে ওদের হাসির মাত্রাও বাড়তে থাকে।রাতের একটা মাদকতা আছে।রাত গভীর হলে এমনিতেই সবার মাথা আউলা হয়ে যায় তাই।


লাবণী আপুর সাথে কথা বলে রুমে ঢুকে তপু।ঢুকেই সবার তোপের মুখে ও। কোন কথাই কানে ঢুকে না অবশ্য।অদ্ভুত এক ভালো লাগায় মনটা ভরে আছে ওর।জানে বন্ধুদের এইসব বাঁকা কথায় কান না দিলেও চল্বে।কোণ topic পেলে পঁচানোর chance ছাড়বেনা কেউই।কোন কথাই mean করে বলে না কেউ।ওর মনের মধ্যে এখন শুধু একটাই নাম ওর আপুমনি।একটা জিনিস কিছুতেই ভেবে পায়না ও এত আদর করে একজন কিভাবে কথা বলে। ওর সাথে কথা শুনলে মনে হয় ও অনেক পিচ্চি একটা বাচ্চা এখনই ওকে কোলে তুলে আদর করবে।এত আদর পেয়ে অভ্যস্ত নয় তপু।তাই ওর অসম্ভব ভাল লাগে।কখন যে ১ ঘন্টা পেরিয়ে যায় টেরই পায়না ।প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে কথা বলেও তাই শখ মিটে না তপুর।সবসময় চিন্তা করে ইশশ লাবণীটা যদি ওর আপন বোন হত। নিদেনপক্ষে খালাতো মামাতো।অথবা ওদের বাসাটা যদি লাবণীদের আশে পাশে থাকত।

সারাদিন কার্ড খেলে কিংবা আড্ডা দিয়ে সকাল হলেই ওরা যে যার জায়গায় চলে যায়। এই হয়ে আসছে সবসময়।কখনো মীমের বাসা কখনো তপুর বাসায়। আজই প্রথম রাফির বাসায়। আন্টি আঙ্কেলের কাছে চট্রগ্রাম চলে যাওয়াতে আজ এখানে এসেছে ওরা।
-আমরা এক সাথে হলেই শুধু কার্ড খেলি।কেমন boring হয়ে যাচ্ছে।তপু বলল । অন্য কিছু করা যায়না?
-কেন তোর লাবণী আপু মানা করেছে কার্ড খেলতে।মীমের প্রশ্ন।
-আরে তা না, বলছিলাম অন্য কিছু করা যায় কিনা।মনে মনে ভাবে তপু আসলেই তো কার্ড খেলছে শুনে মৃদু ঝাড়ি দিল আপু।
-চল কক্সবাজার যাই এই বৃহস্পতিবার।
শামসের প্রস্তাব শুনে হৈহৈ করে উঠল সবাই।তপুই শুধু কিছু বললনা।ও জানে ওর পক্ষে যাওয়া সম্ভব হবে না।বৃহস্পতি শুক্রবার ও খুব busy থাকে।আর বাসা থেকেও যেতে দিবে না আম্মু।
-তপুরে জিজ্ঞেস কর। ওর বাসা থেকে যেতে দিবে কিনা।মর্তুজাই বলল কথাটা।
-না ঠিক তা না। বাসায় সমস্যা নাই।কিন্তু আমি তো বৃহস্পতি আর শুক্র omeca তে ক্লাস নেই। কিভাবে যাই।
-এক সপ্তাহ ক্লাস না নিলে দুনিয়া উলটে যাবেনা। তুই ছাড়াও অনেকে আছে ক্লাস নেওয়ার।ভাব দেখাইসনা। রেগে উঠে জ্যোতি।
-দেখি তোরা প্ল্যান কর আমি পরে জানাচ্ছি।
রাত পার হয়ে যায় কখনো কার্ড খেলে কখন আড্ডা বা কক্সবাজার যাবার প্ল্যান করে।তুমুল এই জমজমাট আড্ডায় থেকে ৬ তরুণের মনে হয় ওরাই বুঝি পৃথিবীর সেরা circle।ওরা জানেনা পৃথিবীর সব circle ই এটা মনে করে।

আমার কাজলাদিদিরা - ১ ( সুমি আপু )

ঠিক কবে মনে নেই কিন্তু খুব ছোটবেলা থেকেই কেন যেন আমার একটা বড় বোনের শখ হয়ে গেল ( আজো গেল না )।
" মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?"
এই প্রশ্নটা আজীবন খুঁজে ফিরছি। একটু একটু যখন বড় হলাম গল্পের বই পড়া শুরু করলাম তখন এই ইচ্ছাটা দিনকে দিন বাড়তে লাগল। শরৎচন্দ্রের বড়দিদি, মেঝদি, পড়তে পড়তে ছোট্ট আমার কত দীর্ঘশ্বাস বের হল তার খবর কেউ রাখেনি। কেন যে আমার এত বোনের শখ আমি নিজেও জানিনা। আসলেই কি বোনরা অনেক বেশি আদর করে? আমার যেহেতু বোন নেই তাই আমার এই বিষয়ে অনেক কল্পনা অনেক রকমের চিন্তাভাবনা। যদি শুধু চিন্তার উপর পিএইচডি থাকত তাহলে আমি পেয়ে যেতাম। কত রকম চিন্তা যে করি আমার একটা বোন থাকলে এই করত ওই করত। পরবর্তীতে এক ভাইয়ার কাছে শুনেছিলাম উনার বড় আপু নাকি হোষ্টেলে থাকত উনি বাসায় এসেই প্রথমে নাকি আম্মুর সাথে একটা ঝগড়া করত কারন হচ্ছে তার আগেই নাকি উনি বোনের কাছে বিচার দিয়ে দিতেন অমুক দিন তমুক দিন মা ওনাকে মেরেছেন। আর আমি মনে মনে ভাবি ইশশ , আমি তো এইরকম একটা বড় বোন চেয়েছিলাম।
এই জন্যই মনে হয় ছোটবেলা থেকেই আমি আমার আশে পাশে সবসময় বড়বোন খুঁজেছিলাম। সেই খোঁজার ফলে আমার জীবনে অনেক গুলা আপুই এসেছে। কেউ কেউ আমাকে আসলেই ছোটভাইর মত আদর করেছে কাউকে কাউকে আমি নিজেই মনে মনে আপুর আসন দিয়েছি উনি হয়ত জানেই না।
সবার সাথে যে আজ যোগাযোগ আছে তাও না। কিন্তু মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে কারো কথা মনে পড়ে। সেই আপুদের গল্প আমার এই কাজলাদিদিরা।

আমি তখন ক্লাস ৩ তে পড়ি। সবেই আমরা সিলেট থেকে ঢাকাতে এসেছি। থাকি পোস্তাগোলার দিকে জায়গার নাম জুরাইন। সেখানে আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকি তার পাশের বাসাতেই একটা আপু ছিলেন। আমার ৩-৪ বছরের বড় হবেন। উনি মনে হয় তখন ৭ এ পড়েন। আমাদের তখন একটা বিশাল পিচ্চি কাচ্চার দল । প্রায় ১০-১২ জন আমরা সেখানে। সবাই মিলে এটা ওটা খেলি। ছোটবেলায় আমি বউচি থেকে শুরু করে হেন খেলা নাই যা খেলিনাই। কুতকুত ও খেলেছি এবং ভাল বউ ছিলাম (বউচি খেলার ) । সেই প্রথম মনে হয় আমার আপু বানানো শুরু। যদিও ঐ আপু আমার থেকে আমার ছোটভাইকেই বেশি আদর করেন। কেন যেন সবসময় এইটাই হয়েছে। আমার ফ্যামিলির মধ্যেও যত খালাত ভাই বোন আছে সবাই দেখি হয় আমার বড় ভাই নয় আমার ছোট ভাইকেই বেশি আদর করে। সেই জন্য ছোটবেলায় আমি অনেক কম আদর পেতাম।
যাইহোক সেই আপুকে আমি তখন থেকেই মনে মনে আপু হিসেবে ভাবতাম। কেমন যেন মনে হত ইশশ এই আপুটা যদি কনক( আমার ছোট ভাই ) থেকে আমাকে বেশি আদর করত। কখনো বলা হয়নি তাকে। একদিন হঠাৎ শুনলাম ওই আপুরা আমেরিকা চলে যাবে। আমি তখন ক্লাস ৪ পাশ করে ৫ এ উঠব। ওনারা সপরিবারে আমেরিকা চলে গেলেন। আমার আর কোন দিন তাকে বলা হল না তুমি আমার আপু হবে?
এরপর থেকে আমি অনেকদিন ভাবতাম আমি কোন একদিন আমেরিকা যাব , সুমি আপুর সাথে আমার দেখা হবে। তখন তাকে আমি বলব আপু সেইসময় আমার খুব মনে হত আপনি যদি আমাকে কনকের থেকে বেশি আদর করতেন। সবচেয়ে অবাক হয়ে গেলাম প্রায় ১২ বছর পরে যখন আমি জাপানে থাকি হঠাৎ করে আম্মু বলল সুমির ফোন নম্বর আছে। সাথে সাথেই আমি ফোন নাম্বার নিয়ে ডায়াল করলাম আমেরিকায়। খুব এক্সাইটিং লাগছিল। এত বছর পরে আপু কি আমাকে চিনতে পারবে? এখনো আগের মত আছে কিনা?
প্রথমদিন ফোনে পেলাম না কিন্তু ওনার গলা শুনা গেল। মেসেজিং এ দেখি বেশ দুঃখ প্রকাশ করল ফোন ধরতে না পারার জন্য। দেখলাম নাহ সুমি আপুর গলা চেঞ্জ হয়নি। আবার একদিন ফোন করলাম এরপর পেলাম সুমি আপুকে। দীর্ঘ ১২ বছর পর আবার ওনার সাথে আমার কথা হল। প্রথম অনেকক্ষণ আমরা পুরান আলাপ করলাম। ছোটবেলার সেইসব স্মৃতি আরো কত কি। এরপর মাঝে মাঝেই ফোন করা হত। তখন বলতাম আপু ছোটবেলায় আমি এইরকম ভাবতাম। উনি বলল কে বলল আমি তোমাকে কম আদর করতাম। তোমাকেও আদর করতাম তো কিন্তু কনক বেশি ছোট ছিল তো সেই জন্য। আমি বলি ওইটাই তো আসল সমস্যা ও ছোট বলে আমার আদর অনেক জায়গাতেই কমে যেত। পৃথিবীতে আসলেই কত কি যে ঘটে নইলে সুমি আপুর সাথে যে আমার আবার কখনো যোগাযোগ হবে কখনো চিন্তাই করিনি। হয়তবা এইবার দেশে গেলে ওনার সাথে আমার দেখাও হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর উনি নাকি বাংলাদেশে যাবেন। বেশ আশা নিয়ে বসে আছি আপু সেই আগের মতই আছে কিনা।
(-চলবে)

Sunday, June 29, 2008

আমার আপুসোনা-২

(এক স্বপ্নের সকাল)

-তপুউউউউ , উঠলি তুই?
-উমমম...
-এই নিয়ে আমি ১০ বার ডাকলাম । উঠ।
-হুমম এইতো আপু আর একটু।
-নাহ আর একটুও না। তোর না আজ ক্লাস আছে।
-আরে আপু কি কর , বালিশ সরাও কেন। উঠতেছি তো।
উফফ কি যে সমস্যা। এই বৃষ্টির সকালে কি আর কোথাও যেতে ভাল লাগে। আজকে ক্লাস আছে কিন্তু এর থেকে এই বৃষ্টিতে ঘরে বসে ১১টা পর্যন্ত ঘুমানোর উপরে কিছু কি আছে? এর জ্বালায় কি আর হইল।উঠে মুখ ধুতে যেতে যেতে ভাবলাম আমি। সকাল ৭ টার মধ্যে বের হতে হবে। নইলে প্রথম ক্লাসটা পাওয়ার কোন চান্স নাই।
-এইতো লক্ষী ভাই আমার। আয় তাড়াতাড়ি নাস্তা করে ফেল।
-কিরে আপু তুই যে আজ এখনো তৈরী হোস নাই। তুই যাবিনা অফিসে?
আপুর চাকরীটা হয়ে যাওয়ার পর আম্মুর খুব উপকার হইছে। সকালে আম্মুকে এখন আর উঠতে হয় না। আপু উঠে নাস্তা বানায় তারপর আমাকে জাগায়। আমরা ভাই বোন একসাথে খেয়ে বের হয়ে পড়ি। তার আগে ও যখন ভার্সিটিতে ছিল তখন এই কাজ করত আম্মু। আমাদের দুজনকে জাগাতেই আম্মুর আধা ঘন্টা লাগত। রাতে তো আমরা দুজন দুজনের বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প করতে করতে ঘুমাতাম যখন তখন ঘুমিয়ে নিজে নিজে এত সকালে উঠা অসম্ভব ব্যাপার ছিল। গত ৩-৪ মাস আপুর এই নতুন ডিউটি। বোন গুলা একটা সময় এসে পুরা মায়ের মত হয়ে পড়ে। এই জিনিসটাই আমি ঠিক বুঝিনা। আমার বোনটা একাধারে আমার বোন , বন্ধু , এখন আবার মাঝে মাঝে মায়ের ভূমিকাও নিয়ে নেয়। আমার সব কিছু আমার আপুসোনা।
- ভুলে গেলি? আজ তো আমার অফিসে যাওয়া লাগবে না। কাল রাতে না তোকে বললাম। আমার একটা ট্রেনিং আছে মালয়েশিয়ায় ৭ দিনের জন্য। আজ রাতে ফ্লাইট। এই জন্য আজ অফিস নাই।
-ওহহো, আমি তো ভুলেই গেছি? তাহলে তুই ঘুম থেকে উঠলি কেন?
-এমনি অভ্যাস হয়ে গেছে তো তাই।
ধুর আমার আজ ভার্সিটি যাওয়ার ইচ্ছাটাই চলে গেল। বাদ যাবনা, দেখি কাউকে মেসেজ করে দিব প্রক্সিগুলা দিয়ে দিবে।
-আমি আজ যাব না ক্লাসে। ঘোষণা দিলাম আমি
-যাবিনা মানে? কেন?
-নাহ আমারো আজ শরীর ভাল লাগছে না। আর তুই থাকবিনা আগামী ৭ দিন আমি আজ সারাদিন তোর সাথে থাকি।
-এইটা কোন কথা হইল। আমার তো আজ অনেক কাজ থাকবে। ব্যাগ গুছাতে হবে । আরো কত কি।
-হইল আমি যাবনা ঠিক করছি। আয় আমরা ভাইবোন এখন নাস্তা করে আড্ডা দেই । সকালে উঠলে দিন অনেক বড় হয়ে যায়।
-নাহ , ফাজলামি নাকি। তাড়াতাড়ি নাস্তা কর ক্লাস করে আয় ।
ধুত্তোরি ওকে যে এখন কিভাবে রাজি করাই। বুঝেছি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে। আমার একদমই আজ ওর কাছ থেকে যেতে ইচ্ছে করছে না। আমার বুদ্ধি হবার পর থেকে ওকে ছাড়া আমি খুব বেশি থাকিনি। প্রথম যেদিন ও এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে খালার বাসায় বেড়াতে গেল কয়দিন থাকবে ভেবে। সেই রাতে আমি এয়সা কান্না দিলাম। (কেউ অবশ্য দেখে ফেলেনি এইটাই স্বস্তির কথা) পরেরদিন দুপুরে দেখি ও চলে আসল আবার। কেন আসল আমি আর জিজ্ঞেস করিনি। ও এসেছে তাতেই আমার মজা ১ দিনেই দেখি আমাদের ভাইবোনের কথার পাহাড় জমে গেছিল। তবে আমি কিন্তু ঠিকই আমার পরীক্ষার পর বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার গিয়ে ঘুরে এসেছি ৭ দিনের জন্য। প্রতিদিন অবশ্য রাতে ও ফোন করত একগাদা উত্তর দিতে হইত। খাইছি কিনা, হোটেল এর খাবার খেতে পারছি কিনা, সমুদ্রের বেশি দূরে গেছি কিনা আরো কত কি। আমার অবশ্য তখন মনে হইত আমি কি আর ছোট আছি কিন্তু সেটা বলতে পারতাম না ।
হঠাৎ করেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর তো বেশিদিন নাই। ওর তো বিয়ে হয়ে যাবে। আমি তখন কি করব।ও তো এই বাসা থেকে চলে যাবে । মন খারাপ নিয়েই ব্যাগ গোছাই। খেয়াল করে ও। আমার কোন কিছুই কখনো ওর চোখ এড়ায় না।
-কিরে ভাইয়া কি হইল তোর। ক্লাস তো আজ তোর ২টা মাত্র যাবি আর করে চলে আসবি। তুই আসলে আমি আজ তোকে নিয়ে বের হব আইস্ক্রিম খেতে। লক্ষী ভাইয়া আমার। কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ও।
আমি নাস্তা করতে থাকি কিছু বলি না। ও ও আমার কাছ থেকে সরে না।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই থাকে। আমার খুব কান্না পেয়ে যায় হঠাৎ। ওকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব। কেন ওর বিয়ে হবে।
নাস্তা শেষ করি আমি। আর বেশি দেরী করলে ভার্সিটির বাসটা মিস হবে আমার। ব্যাগটা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলি আসিরে আপু। তারপর হঠাৎ বলি মালয়েশিয়ায় গিয়ে তোর আমার জন্য খারাপ লাগবে না আপু?
ওতো মনে হয়ে কেঁদেই দিল। আমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে পড়ি ।
গেট থেকে বের হতেই আমার মোবাইলে ফোন।
-পিচ্চি, তোর আজ ক্লাস করার দরকার নাই। চলে আয় ভাইবোন মিলে সারাদিন গল্প করব। একদিন ক্লাস না করলে কিছু হয়না। প্রক্সি সার্ভার চালু করে দে।
আমি আর কিছু বলি না।কলটা কেটে শামসকে মেসেজ করে দেই, "দোস্ত আজ ভার্সিটিতে আসতে পারতেছিনা। তুই আমার পার্সেন্টেজটা ব্যবস্তা করে দিস।"

Wednesday, May 21, 2008

ফিরে দেখা -২৯ জুন ১৯৯৭

আজ ঘুম থেকে উঠলাম ই ফোনটা পেয়ে। শুভ ফোন দিয়ে বলল জাহিদের একটা দুঃসংবাদ আছে। আমরা তিনজন জাপানের একই জায়গায় পড়ি আবার একই ডর্মে থাকি। জাহিদের সাথে আমার সম্পর্ক আজ ১২ বছর আর শুভর সাথে জাপান এসে পরিচয়। জাহিদের দুঃসংবাদ কি হতে পারে সেটা মাথাতেই আসল না। শুনলাম ওর আব্বা মারা গেছেন। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। ভাবলাম কি বলব। জাহিদ কে ফোন দিব কিনা ভাবছি। কিই বা বলা যায় ওকে। জিজ্ঞেস করলাম দেশে যাবি কিনা। যাবে না ও। গতকাল রাতে মারা গেছেন আঙ্কেল আজ দুপুরেই মাটি দিয়ে দিবে গিয়েও পাবে না। বিদেশে থাকি আমরা যে কোন সময় এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে পারি আমরা যে কেউ। এরপর আমি আর শুভ মিলে চুপ করে বসে থাকি অনেকক্ষণ। মনে পড়ল আজ থেকে ১১ বছর আগের কাহিনী। কি দ্রুত সময় যায়।
১৯৯৭ সাল তখন। ক্যাডেট কলেজে পড়ি। কলেজের হাবিজাবি করতে করতেই দিন যায়। আমার আব্বু তখন অসুস্থ। যে কোন দিন একটা দুঃসংবাদ আসতে পারে কিন্তু ক্যাডেট কলেজে এত ঝামেলে সেসব আমার মনে থাকেনা একদমই। আর বয়সটাও তখন এসবের জন্য উপযুক্ত নয়। ১২ বছরের বালক তখন আমি। বাসায় আব্বু অসুস্থ তাই বলে কলেজে আমার খেলাধুলা, দুষ্টামি কিছুই থেমে থাকেনা। প্রতি সপ্তাহে একটা চিঠি পাঠাই বাসায় তাতে জিজ্ঞস করি আব্বু কেমন আছে। আব্বুর সম্বন্ধে আমার খোঁজখবর সেটুকুই। আমাদের পাক্ষিক পরীক্ষা চলছে তখন। সকালে উঠে ক্লাসে গেলাম। পরের পিরিয়ডে বোধ করি সমাজ পরীক্ষা হবে। আমরা সবাই পড়ছি। আমার ক্লাস টিচার তখন ক্লাসে। উনি ডেকে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার লোকাল গার্জিয়ান কে। আমি আর অত পাত্তা দিলাম না । আমার তখন পরের পিরিয়ডের পরীক্ষা নিয়েই চিন্তা। পরীক্ষা শুরু হওয়ার একটু আগে এসে ভিপি স্যারের দফতরীর ডাক ," কামরুল ১০৪৭ কে? আপনাকে ভিপি স্যার ডাকে" । আমার মাথায় আসল কি ব্যাপার এমন কোন ফল্ট তো করিনি যে ভিপি আমাকে ডাকবে। চিন্তা করতে করতে গেলাম ভিপি অফিসে। গিয়ে দেখি আমার খালাত ভাই বসে আছে। তখনই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। আব্বুর কোন সংবাদ। আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার আব্বু কেমন আছে। ভাইয়া বলল আব্বু একটু বেশি অসুস্থ আমাকে দেখতে চেয়েছে। ওভাবে বলাই বুঝি নিয়ম। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না আমার কিন্তু কেন যেন আমি বুঝেও না বোঝার চেষ্টা করতে থাকলাম। বসে আছি ভিপির অফিসের পাশে আর ভাবছি কখন এরা আমাকে ছাড়বে। ৯টা থেকে ১১টা বাজিয়ে দিল তারা অফিসিয়াল কাজ সারতে সারতে। কলেজ থেকে বেরিয়ে বাস স্টেশনে গেলাম। সিলেট থেকে ফেনীর তখন কোন ভাল বাস নেই। যেতেই লাগবে ৭-৮ ঘন্টা। তাও কুমিল্লা হয়ে যেতে হবে। যত তাড়াতাড়ি রওনা হওয়া যায়। ঢাকায় থাকা আব্বু কেন ফেনীতে আমাকে দেখতে চাইল সেটা ভেবেই আমি কনফার্ম হয়ে গেলাম আব্বুকে দাদাবাড়ি নিয়ে গেছে । তাও আমি যাচ্ছি। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। পড়ে জানতে পেরেছিলাম আব্বু মারা গেছেন তার আগের রাতে ১১ টায়। সাথে সাথে রাতের ২টার দিকে আমার কলেজে ফোন করা হয়েছিল কিন্তু কেউ ধরেনি। সকালে আমার খালাত ভাই এসেও অনেক আগেই বসে ছিল কলেজে কিন্তু স্যারদের অফিস টাইম শুরু হয় নি বলে তাড়াতাড়ি কিছু করা যায়নি।
বিকেল ৫টায় আমি এসে ফেনী নামলাম। কেন যেন আমি আমার দাদাবাড়ি না গিয়ে নানার বাসায় আসলাম। এসে দেখি কেউ নেই। এক খালা শুধু আছেন। এসে বোকার মত আমি জিজ্ঞেস করলাম আব্বু কই? আব্বুর দাফন হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। আম্মু আসল আরো ২ ঘন্টা পর। এই দুই ঘন্টা আমি ভেবেছি আম্মুর সাথে কি বলব আমি?
আব্বুকে আমি আর দেখতে পারিনি। আম্মু আমাকে পরে বলেছিল তুই বুঝিস নি ? কেন সরাসরি গ্রামের বাড়িতে যাসনি? ১২ বছরের একটা ছেলের তখন এই বুদ্ধি হওয়ার কথা কি?
আমার তাই আমার আব্বুর মৃত চেহারার কোন স্মৃতি নেই। শেষ যে চেহারা মনে আছে তা হল তার আগের বার কলেজে যাওয়ার সময় আমি বাসা থেকে বের হলাম আব্বু বারান্দায় চেয়ারে বসে আমার দিকে চেয়ে আছে। এটাই আমার আব্বুর শেষ দেখা। এরপর থেকে আমি কতবার আব্বুকে স্বপ্নে দেখি। আব্বুক স্বপ্নে দেখাটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আজ ১১ বছর পরেও তা কমেনি এখনো সপ্তাহে একবার হলেও আব্বুকে আমি স্বপ্নে দেখি। মনে হয় শেষ দেখা হয়নি বলেই। আমার অন্য ভাইরা দেখে না শুধু আমিই।
আজ খুব সেদিনের কথা মনে পড়ছে। খুব খুউব।

Sunday, May 18, 2008

ফয়েটে দুপুর

রেষ্টুরেন্টে বসে কি খাব মেনুতে চোখ বুলাচ্ছি। এমন সময় ,"আরে আপনাকে বসিয়ে রাখলাম" বলতে বলতে এক তরুণী এসে আমার সামনে বসল। আমি তো ভেবেই পাচ্ছিনা কারো কি আমার সাথে lunch করার কথা ছিল কিনা। কিন্তু তরুণী ভাবতেই মনে মনে পুলকিত হয়ে উঠতে গিয়েই হোঁচট খেলাম। চেহারাতে অতটা পুলকিত হবার কিছু নেই কিন্তু খুবই চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি। মেনুটা ওনার দিকে এগিয়ে দিতেই উনি যা বললেন তাতেই আমি তাকে চিনে ফেললাম।
"আমি তো লাঞ্চে ১ টার বেশি কিছু খাইনা।" মেনু হাতে নিয়েই বলল।
এ তো সেই পেটুক মহিলা উইলিয়াম সমারসেট মম কে যিনি ফতুর করে ছেড়ে দিয়েছেন। আশে পাশে তাকিয়ে বুঝলাম আরে আমি যে ফয়েটে বসে আছি। কিন্তু ইনি এখানে কেন। একেবারে সেই চেহারা, "imposing rather than attractive" ভীত হয়ে উঠেই মানিব্যাগে হাত দিলাম আমি। উনি বসেই আমাকেও ফতুর করার মিশন শুরু করে দিলেন। আর আমি মনে মনে ভাবি সচলায়তনে আর ক্যাডেট কলেজের একটা ব্লগে লেখি কিন্তু ভক্ত হওয়ার তো চান্স নেই ইনি আমাকে পেল কোথায়। বেশিক্ষণ চিন্তা করতে পারলাম না, বিশাল একটা বিল এসে গেল আমার হাতে। কিন্তু মমের যা ছিল না তা আমার আছে একখানা ক্রেডিট কার্ড। তা দিয়ে বিল দিয়ে বেরুতেই তরুণী দেখি হাওয়া।
আমার চোখের সামনে ছেড়া জামা আর বিশাল এক নাবিক টুপী পড়া ancient mariner. জীবে দয়া করার উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে।এবার আর আমার চিনতে দেরী হয় নি। সাথে সাথেই চিনতে পেরেছি। এলবাট্রসটাকে যে কেন উনি মারতে গেলেন সেটা জিজ্ঞেস করতে এগুবো তখনই পেছন থেকে বাচচা একটা ছেলে আমার জামা টেনে ধরল। চিনতে পারলাম জেরীকে। একেই তাহলে বলে integrity। হায়রে কত ভাবে পড়েও এর মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারিনি । ওর হাতের ভারী জিনিস কিভাবে বহন করছে জিজ্ঞেস করতে গিয়েই বুঝে ফেললাম কি বলবে ও। "size dont matter chopping wood"
আমার চারপাশে ছোটবেলায় পড়া সব চরিত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার আমি রেষ্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম জিম আর ডেলাকে খুঁজে বের করার জন্য। কোনার দিক একটা কাপল পেয়ে গেলাম। চুপটি করে ওদের পিছনে বসে ওদের পুতুপুতু প্রেমময় কথাবার্তা শুনেই চিনতে পারলাম ওদের। দুজন দুজনে এত ব্যস্ত তাই আমি আর জানতে পারলাম না ডেলার চুল লম্বা হতে কত সময় লাগল আর জিমই বা ঘড়ির চেইনটা দিয়ে কি করল।

ঘড়ির কর্কশ এলার্মে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। আরে চমতকার একখানা স্বপ্ন দেখলাম তো। গতরাতে প্রথম আলোতে luncheon এর বাংলা অনুবাদ পড়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে hsc তে পড়া ইংরেজির গল্পগুলার কথা মনে পড়ছিল। সেটাই আমার জীবনের প্রথম ইংরেজী সাহিত্য পড়া। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের ইংরেজি সিলেবাস একই থাকার কারণে অনেক বড় ভাইয়াদের সাথেও এই কথা গুলা মিলে। "size dont matter ", " imposing rather than attractive" এই কথা গুলা সবার সামনে বললেই বুঝে ফেলে। এখনকার পোলাপান এইগুলা বুঝে না। ওরা মনে হয় অনেক জানে তবে আমার মনে হয় ইন্টারে থাকতেই ইংরেজি সাহিত্যের ৪টা ছোট গল্পের সাথে পরিচয় অন্তপক্ষে আমার জন্য একটা বিশাল ব্যপার ছিল।

আপুসোনা ---৪


-কিরে তপু বসে আছিস যে একা এখানে?
-তোমার জন্যই তো বসে আছি আপুমনি।
-কেন রে তোর বন্ধুরা কোথায়?
-ওরা তো চলে গেছে।আমার তো সেই ২টায় ক্লাস শেষ হয়ে গেছে।তোমার routineদেখে তোমার জন্য বসে আছি আমি।
-ধূর গাধা। আমি তো রাতে তোকে ফোন দিবই।
-নারে আপুমনি তোমার কথা এত মনে পড়ছিল যে একটু দেখা না হলে ভালই লাগত না।
-তুই একেবারে পাগল একটা পিচ্চি।
-আরো পিচ্চি হলে ভাল হত।
-কেন রে?
-তোমার আর কাছে কাছে থাকতে পারতাম। কে কি ভাবল ওইটা care করতে হতনা।
-কিইবা এসে যায় বল মানুষজন কি ভাবল না ভাবল।তুই আমার ছোটভাই এটা তুই আর আমি জানলেই তো হল তাইনা।
-আপুমনি এ কথা টা তোমার সবসময় মনে থাকবে তো?সবসময় আমাকে এরকম ভাবে আদর করবি তো আপুমনি?
আস্তে করে তপুর মাথার চুলে একটু হাত বুলিয়ে দেয় লাবণী।পাগলটা কি জানে, যে গতকাল রাতে ও যে সারাক্ষণ ওর কথাই ভেবেছে?ঠিক এসময় ওর গাড়ীটা চলে আসে।
-যাইরে পিচ্চি।
-আপু শোন, ডাকে তপু।
-এইটা রাখ বাসায় গিয়ে খুলে দেখবে। একটা খাম এগিয়ে দেয় তপু।
অবাক লাবণী কিছু বুঝে উঠার আগেই তপু চলে যায়।
বাসায় ফিরে fresh হয়ে এসে নিজের খাটে শুয়ে খামটা খুলে পড়তে শুরু করে লাবণী। সারাটা রাস্তাই ভাবছিল কি লিখেছে পাগলটা

লাবণী আপু
কেমন আছ আপু?খুব অবাক হয়েছ চিঠিটা পেয়ে? তোমার মন খারাপ ভাব কমেছে আপু?তোমার যে কারণে মন খারাপ ঐটা তো আমি ঠিক করতে পারবনা। তোমাকে যে কাল বললাম তমার মন ভাল করে দিব তার জন্যই এই বুদ্ধি।চিঠি পেলে আমার খুব ভালো লাগে। তোমার ও ভালো লাগবে আশা করি। আমার একটা শখ হল মানুষকে চমকে দেয়া। হঠাত করে চিন্তার বাইরে কিছু হলে মানুষ কেমন খুশী হয়ে উঠে ঐটা কল্পনা করতে আমার খুব ভাল লাগে।
আমার না ছোটবেলা থেকেই একটা বড়বোনের খুব আফসোস। আমি কত কল্পনা করি আমার একটা বড় বোন থাকলে এইভাবে আমাকে আদর করত। তুমি কি কখনো ভেবেছ তোমার যদি একটা ছোটভাই থাকত তাহলে তুমি কি করতে? যদি নাও ভাব এখন ভাব কারণ তোমার একটা ভাই হয়েছে তাইনা আপু?
আমি ক্লাসে বসে বসে তোমাকে চিঠি লিখছি। বিকেল বেলা তোমাকে দিব। ইচ্ছে করছে বিশাল একটা চিঠি লিখি।পড়তে পড়তে তোমার যেন শেষই না হয়। আপুমনি আমার , তুমি ভালো থেকো অনেক অনেক বেশি ভাল।একটু ও মন খারাপ করবা না কখনো। সারাটা চিঠি জুড়ে শুধু আমার কথাই লিখলাম তোমার কথা কিছু জিজ্ঞেস করা হলনা।মন কি একটু হলেও ভাল হয়েছে আপু?
তপু

চিঠি পড়তে পড়তে চোখটা ভিজে উঠল লাবণীর।এত ভাল লাগছে ভেজা চোখ টা মুছতেও ইচ্ছা করছে না। কেউ একজন ওকে নিয়ে ভাবছে মন ভালো করে দেওয়ার জন্য ক্লাসের ফাঁকে চিঠি লিখছে।ভাবতেই কেমন জানি লাগছে ওর।বহুদিন পরে ভালবাসার response পেল ও।কি করা যায়। মনে মনে ডাকল পিচ্চিটাকে।“তুই কিভাবে বুঝলি রে চিঠি যে আমার এত পছন্দ। আমি যাকে পছন্দ করি তাকে limit ছাড়িয়ে ফেলি পছন্দ করতে করতে।মাঝে মাঝে মনে হয় এই জন্যই বুঝি পছন্দের মানুষটা পাত্তা দিচ্ছেনা বিরক্ত হচ্ছে। হয়তবা বেশি ভালবাসি বলেই care করছে না।একথা ভেবেই মন খারাপ ছিল রে।তুই তো একেবারে reverse way তে আমার মনটা ভাল করে দিলি।
-লাবণী খেতে আস।বেশিক্ষণ কথা বলা হল না খাওয়ার ডাক চলে আসল।খেতে বসে লাবণীর খুশি ভাব কারো দৃষ্টি এড়ালো না।
-কিরে লাবণী কয়দিন মন মরা করে ছিলি আজ দেখি বেশ খুশি খুশি।
মায়ের কথার কোন জবাব দিল না লাবনী।চুপচাপ খেয়ে উঠে নিজের রুমে এসেই মোবাইল এ রিং দিয়ে দিল

Saturday, May 3, 2008

আপুসোনা----৩


-কিরে তোর মন এত খুশি খুশি কেন?
-আম্মু আজ আমার লাবণী আপুর সাথে কথা হল।ওই যে যে আপুটার কথা আপনাকে বলেছিলাম। খুবই মায়াবতী একটা আপু। আমাকে আজ ও ওর ছোটভাই বানিয়েছে।
-তোর এই বড়বোন শখ আর গেলনা। একদিনেই ভাই বানিয়ে ফেলল।বেশি আপু আপু করিসনা পড়ে দেখিস কষ্ট পাবি।
-আরে নাহ আম্মু। এতদিন তো আমি অনেক কে বোন বানিয়েছি।দুদিন পরে ওরা সরে গেছে এবার তো লাবণী আপুই আমাকে ভাই বানিয়েছে এবার আর কষ্ট পাবনা।
প্রশ্রয়ের হাসি ফুটে উঠল সিপনের মুখে।ছেলেটা তার এত ভালো...
মায়ের সাথে কথা বলে এসে নিজের পড়ার টেবিলে বসে তপু।কিন্তু খুবই ছটফট করছে। সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করছে ওর আপুর কথা।শরৎচন্দ্রের মেঝদিদি বইটা হাতে নিল ও।এইসব বই পড়ে পড়েই ওর মনের ভিতরে বড়বোনের আকাঙ্ক্ষা এত বেশি। আজ মনে হচ্ছে এইরকম বোন শুধু যে বইতেই থাকে তা নয় ওর নিজের ও আছে।সারাক্ষণ কানে বাজছে মিষ্টি একটা সুর “আজ থেকে তুমি আমার ছোটভাই”।পারবে তো এই আপুটা ওর কল্পনার আপুর থেকেও অনেক বেশি করে ওকে আদর করতে।পারবে নিশ্চয়ই।
নাহ কিছু একটা করতে হয় ওর আপুটার জন্য।ভাবে তপু।
আমি থাকতে আমার আপুটার মন খারাপ হয়ে থাকবে আর আমি কিছু করবনা তা কেমন করে হয়।কিন্তু কি করা যায়। একটার পর একটা প্ল্যান আসছে আর বাদ হচ্ছে।এসময়েই মোবাইলটা বেজে উঠল। নাম্বারটা চেনেনা ও তবুও নিশ্চিত জানে এটাই সেই ফোন যার জন্য তখন থেকে মনে মনে অপেক্ষা করছে ও।

Thursday, May 1, 2008

আপুসোনা ---২


-আপনি লাবণী আপু।
বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে একাই বসে ছিল লাবণী।হঠাৎ করে সামনে একটি ছেলে।আপু ডাক শুনে বোঝা গেল জুনিয়র।
-হ্যা তোমাকে চিনিনা কিন্তু প্রায়ই দেখি।
-আমিও দেখি আপু আপনাকে। আগে থেকেই চিনি।omecay BUET admission এর একটা class নিয়েছিলেন আপ্নি।সেদিন থেকেই তো আমি আপনার ফ্যান। ওহ আপু আমার নাম তপু।CSEতে ০২ ব্যাচ।আপনাকে প্রতিদিন দেখি ভাবি কথা বলব কিন্তু আপনি বন্ধুদের সাথে থাকেন আর কেমন যেন বলা হয়ে উঠে না।এক নাগাড়ে কথা বলে একটু থামল তপু। মিষ্টি করে হাসল।
গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছিল লাবণী।কয়েকদিন ধরেই personal কিছু ব্যাপারে মনটা ভালো নেই ওর।হঠাৎ করে এই ছেলেটির কথা শুনে খুব ভালো লেগে গেল ওর। মনে মনে ভাবল এরকম একটা ছোটভাই থাকলে মন্দ হতনা।
-তাই নাকি ভাইয়া। কথা বললেই পারতে। আরো আগেই পরিচয় হত তাহলে তোমার সাথে।
এমনিতেই লাবণী খুব মিষ্টি করে কথা বলে।তার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে তপু পুরো অভিভূত। কতদিন ও ভেবেছে এই লাবণীটা যদি ওর আপন বড় বোন হত। একটা বড় বোনের আকাঙ্খা ওর সেই ছোটবেলা থেকেই। কত জনকে নিয়ে যে বড় বোন কল্পনা করেছে ও। বলাই বাহুল্য লাবণী ও তাদের মধ্যে একজন।
-better late than never আপু। বলেই পাশে বসল তপু। আপনার সাথে গল্প করি আপু একটু?
-অবশ্যই ভাইয়া। আমার গাড়ী আসার wait করছি। ততক্ষণ বকবক করা যায়।
হাহা করে হেসে উঠল তপু। হাসিটা বেশ প্রাণখোলা ওর।দেখতে ভারি ভালো লাগল লাবণীর।
-আপনি বকবক করবেন?আপনার ঐ চশমা দেখে আপনাকে খুব গুরুগম্ভীর মনে হয়।
-তাই নাকি? এ কথা শুনে একটু আনমনা হয়ে পড়ে লাবণী।একই কথা আরো একজন বলেছিল।“চশমা তে তোমাকে খুব গম্ভীর লাগে”।
-আপু হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেন যে...
-ও না কিছু না এমনিতেই। মনটা ভালো নেই কিছুদিন ধরেই।
-হুমম বোঝা যায়। সবসময় তো বন্ধুদের সাথেই থাকেন আজ একা একা বসে আছেন।আমার জন্য অবশ্য ভালোই হল।আপনার সাথে পরিচয় হয়ে গেল।কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ।
-না তা হবে কেন প্রতিবাদ করে লাবণী।আমারো তো ভাল হল একটা ছোটভাই পাওয়া গেল।আমার তো কোন ভাই নেই।
-সত্যি বলছেন আপু? আমাকে আপনার ছোট ভাই বানাবেন? নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারেনা তপু।। আমার ও তো কোন বোন নেই। আমার সেই ছোটবেলা থেকেই একটা বড় বোনের যে কি শখ। আমাকে আপনার ছোট ভাই বানিয়ে নিন।
-okk বানিয়ে নিলাম।
এসময়ই গাড়ী চলে আসল লাবণীর। খুবই ভালো লাগছিল ওড় ছেলেটির বাচ্চা বাচ্চা কথা শুন্তে।মনে হচ্ছিল আসলেই বুঝি ওর ছোটভাই। অনেকদিন পর ওর সামনে এসে হাজির হয়েছে।গাড়ীতে উঠার আগে বলল,
-আজ থেক তুমি আমার ছোটভাই।তোমার ফোন নম্বরটা দাও রাতে ফোন করব আমি।
যাই ভাইয়া আজ আমি।বাসায় চিন্তা করবে।
-আল্লাহ হাফেজ আপু। সাবধানে যেও।মনের আজান্তেই তুমি ডাকল তপু।
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে গাড়ীতে উঠে গেল লাবণী। গাড়ী ছাড়ার আগে আলতো করে হাতটা নাড়ল ছোট্টভাইটার উদ্দেশ্যে।

Saturday, April 26, 2008

আপুসোনা --- ১

শুরুর আগে
উৎসর্গ
আমার আপুসোনাকে

এই গল্পের কোন চরিত্রই কাল্পনিক নয়।চরিত্র গুলা বাস্তব তবে নামগুলা নয়।একজনের জীবনে সব ঘটনা না ঘটলেও এর অংশবিশেষ কারো না কারো জীবনে ঘটেছে।তাই কোন চরিত্রের সাথে কেউ কোন মিল খুজে পেলে আশেপাশের চরিত্র গুলোকে খুঁজে নিতে চেষ্টা করতে পারেন।


-হ্যালো, লাবণী কি করছিস?
-ও সাথী একটু বাইরে রে, কি খবর তোর?
-হুমম এইতো ভালো, তুই কি ব্যস্ত?
-না, কেন কি হয়েছে?
-নাহ এমনি, কেমন আছিস?
-ভাল।
তোর সাথে তপুর কথা হয়েছে recently?
-নারে অনেকদিন কথা হয় না। কেনরে কি খবর ওর?
-নাহ মানে বলছিল তোকে নাকি ১টা চিঠি post করেছে পেলি কি না জানেনা।
-ওহহ হ্যা কাল পেয়েছি।কিন্তু পড়া হয়নি একটু ব্যস্ত ছিলাম।
-ও আচ্ছা।
-বাসায় গিয়ে পড়ব।বাকি সব কেমন?
-আচ্ছা তোকে আমি একটু পরে ফোন দিচ্ছি।
-ঠিক আছে, Bye।
-Bye
গত ২মাস ধরে তপু চিঠিতে এত প্যানপ্যান করছে ভালো লাগেনা আর শুন্তে।কি লিখেছে জানি। লিখেছে আপু তুমি আমাকে আদর করনা ফোন কর না এই সেই। মনে মনে ভাবছে লাবণী , আমিও কি ওকে কম পছন্দ করি। কিন্তু কেন যে পিচ্চিটা এত বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে।শুধু আবদার করবে।ওর এত আবদার এত expectation মেটানোটা আমার জন্য বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে ও সেটা বুঝছেইনা। মাঝে কিছু ঝামেলায় পড়ে অনেকদিন ওকে সময় দিতে পারেনি লাবণী তখন থেক শুরু হয়েছে ওর অভিমান। ও এত অভি্যোগ না করলে লাবণী হয়ত নিজে থেকেই ওকে sorry বলত কিন্তু ওর অভিযোগ শুনতে শুনতে কেমন যেন ওর উপর অনীহা এসে গেছে।

তখনই মোবাইলটা আবার বেজে উঠে।
-হ্যা বল সাথী।
-তুই কখন বাসায় ফিরবি রে?
-আমি বাইরে lunch করব একটু পরে।সন্ধ্যা হয়ে যাবে।ভেবে বলল লাবণী।
-ওহহ আচ্ছা ঠিক আছে বাসায় ফিরে আমাকে একটা ফোন দিস।
-কিছু একটা বলতে চাচ্ছিস মনে হয়?
-না ঠিক আছে বাসায় ফিরে ফোন দিস।
-ঠিক আছে।
একটু যেন বিপর্যস্ত মনে হল সাথীকে।মনে হল মাত্রই কান্না থামিয়ে বহু কষ্টে ফোন দিল।এই মেয়েটা আরেক কিসিমের। ২ দিন পর পরই ওর মন খারাপ হয়। আর তখনই ফোন দেয় লাবণীকে।লম্বা দুঃখের কাহিনী শুনতে হয় লাবণীকে। আজ ও বুঝি কিছু একটা হল।

Wednesday, April 23, 2008

মেলায় যাইরে


এত দিন পরে বৈশাখী মেলা নিয়ে কিছু লেখাটা মনে হয় একেবারেই বেমানান হচ্ছে। কি করব জাপানে মেলাটা হল যে গতকাল। অনেকদিন পরে মেলায় গেলাম। অনেকদিন পরে মেলায় যাব বলে বেশ আগ্রহ কাজ করছিল। অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রাখছিলাম কি পরে যাব কখন যাব কিভাবে কাদের সাথে যাব এইসব। কিন্তু যাওয়ার আগেরদিন অনেক ঝামেলা হয়ে আমার সব প্ল্যান গেল ভেস্তে। আগের দিন অলস শনিবার আমি ঘুম থেকে উঠে রান্না করব না ধুনফুন করে পার করে দিব ভাবছি তখনই এক ভাই ফোন করে বলল ফুটবল খেলব চলে আস। আমি আবার খেলাধূলার নাম শুনলে থাকতে পারি না। চলে গেলাম ফুটবল খেলতে। তখন আবার আরেক ভাই বলল খেলে চলে আস আমার এখানে রাতে থাক কাল একসাথে মেলায় যাব। আমিও আর কিছু না ভেবে চলে গেলাম ওনার ওখানে। তখনই মনে হল আরে আমার মাঞ্জা মারার কি হবে। অন্তত পাঞ্জাবি তো লাগবে। ঐ ভাইয়া আবার আমার থেকে অনেক লম্বা। খুঁজে খুঁজে একটা পাঞ্জাবি নামানো হল সেটা আবার তার বিয়ের। পড়ার সময়ই আমাকে হুঁশিয়ার করে দিলেন কিছু হলে খবর আছে। পাঞ্জাবি পড়ে যখন রিহার্স্যাল দিচ্ছি তখকন লুংগি পড়া ছিলাম বলে বাকি সবার মনে পড়ে গেল পাঞ্জাবি লুঙ্গি বেশ মানাবে। যেই কথা সেই কাজ। মানাবের থেকে বেশ জোকস হবে সেটাই আসল কথা। পাঞ্জাবি লুঙ্গি আর উপরে একটা ওড়না পড়েই রওনা দিলাম মেলায়। পাঞ্জাবিটা এত বড় ছিল যে নিচে যে লুঙ্গি ছিল অনেকে বুঝতেই পারেনি। (অবশ্য সাবধানের মার নেই ভেবে লুঙ্গির নিচে কিন্তু জিনস ছিল)।
গেলাম মেলায় , জায়গার নাম ইকেবুকোরো। সেখানে আবার একটা শহীদ মিনার বানানো হয়েছে ৩ বছর আগে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী এসে উদ্বোধন ও করে গিয়েছিলেন। গিয়ে সবার আগে সেটাই দেখতে গেলাম। কেমন যেন খুব ভালো লাগা অনুভব করলাম। আস্তে আস্তে লোকজন বাড়ল। এরপর সৌরভ ভাইর সাথে দেখা।ওনার পিছন থেকে কে যেন বলল আরে এই কি উলুম্বুশ নাকি। আমি চিনতে পারিনি শুধু বললাম না ভাইয়া এখনো অতিথি লেখক। সৌরভ ভাই হুমকি দিয়ে দিলেন যে আজীবন নাকি তাই থাকতে হবে। কি আর করা যাই হোক সচল দুজনের সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল। এরপর আরো অনেকে চলে আসল এক এক বড় ভাই আসে এক এক জন এক এক জিনিস খাওয়ায়। প্রথমে মিষ্টি দিয়ে শুরু করে একে একে সিংগাড়া, জিলাপী, বিরিয়ানি, সমুচা খেলাম। মনে হচ্ছিল দেশেই আছি।
আনিসুল হক এসেছিলেন মেলায়। ওনার সাথে গিয়ে হালকা কথা বলে আসলাম। আমি সৌরভ ভাইর মত ওনাকে দেশের কথা জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। ব্যক্তিগত প্রশ্নই করলাম। এক্সিডেন্টের পর এখন কেমন আছে সেই খবর নেওয়ার ইচ্ছেই ছিল। আর ঐ ভীড়ের মধ্যে দেশের খবর বেশি আঁতলামি হয়ে যেত। এরপর শুরু হল নাচগান।
মেলায় যাওয়ার আমার প্রধান আকর্ষন ছিল এসো হে বৈশাখ -সেই কালজয়ী - গান । কিন্তু কারা যে গানটা গাইল আমি গান বাজনা ভাল বুঝিনা তাও মনে হল এমনটা নয় এরকম করে নয়। ওহ সচলায়তনের সবচেয়ে পছন্দের গান এর সাথে নাচ নিয়ে আসল একটু পরেই এক পিচ্চি মেয়ে (উপস্থাপক তাই বলেছিল । সেই মেয়ের বয়স নাকি ১৫ ) সাথে সাথেই আমার সচলায়তনের মিলার কথা মনে পরে গেল। সেই রূপবানের গান। রায়হান আবীর কে এসেই খবর দিব যে , মিলার নাচ না দেখতে পারি , সেই মেয়ে যে নাচ দিল সেটা মিলার থেকে বোধ করি খুব একটা কম দোলানো হবে না।
মেলার মজাও হল সবার সাথে প্রচুর আড্ডাও হল। কিন্তু শেষ হওয়ার পর ফিরে আসার সময় একটু ছোটবেলায় চলে গেলাম। আমরা ছোট থাকতে রথের মেলায় যেতাম। সেই মজা আমি আর কোনদিন পাইনি। কিছু কিনতে পারতাম না কারন আমাদের সেই বয়সে আমাদের হাতে টাকা থাকত না আর অনেক কষ্ট করে আম্মুর থেকে ২ টাকা নিতে পারতাম তাও বরাদ্দ থাকত পটাশ বলে একটা জিনিসের জন্য। সেটা ছিল বাশ দিয়ে বানান একটা জিনিস যেটা দিয়ে বন্দুকের মত একটা গাছের বিঁ চি মারা যেত। সেটা দিয়ে রথের মেলার পরদিন আমাদের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হত। সেই দিনগুলা কোথায় হারিয়ে গেল। এখন আর কাউকে শুনিনা যে রথের মেলায় যায়। নাকি এখনো কোন এক পিচ্চি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছে আর আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে সব হারাবার জন্য।

Monday, April 14, 2008

প্রমার জন্য

সে অনেক দিন আগের কথা। বলার ভঙ্গিটা রূপকথার মত হলেও একেবারে বাস্তব, নির্মম বাস্তব। তার আগে প্রমার পরিচয়টা দিয়ে দেই। প্রমা আমার ভাগনী হয় সম্পর্কে। আমি তখন সবে কলেজ থেকে বের হয়েছি। ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। একদিন আম্মু এসে নিয়ে গেল লতায় পাতায় এক আপুর বাসায়। আমার খালাত ভাইয়ের চাচাত বোন। আপু বললেও অনেক বড়। বেশ বড় একটা অফিসের বেশ বড় একজন কর্মকর্তা। ওনার হাজব্যান্ড ও। গেলাম ওনার বাসায়। একেবারেই নতুন আমি সেই বাসায়। কিছুক্ষণ পরেই এসে হাজির হল ওনাদের ৩ মেয়ে। একজন আমার থেকে বড় , দ্বিতীয় জন আমার সমান আর ৩য় জন ছোট প্রমা। ছিলাম সেদিন ২ ঘন্টা। আমরা সবাই মিলে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিয়েছিলাম। আমি যেহেতু বেশি কথা বলি আর সদ্য ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হওয়া আমি সারাক্ষণই বকে গেলাম আমার নতুন পাওয়া ভাগনীদের সাথে। সবাই আমাকে কি সুন্দর করে মামা ডাকছিল, আমি অভিভূত। সেই বাসার পরিবেশটা আমার খুব ভাল লেগে গেল। বুঝতে পারলাম এই ৩ বোন খুবই টিপিক্যাল ঢাকার মেয়ে। ওরা পড়ালেখায় ভাল, ভাল স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে পড়তে শিখেছে কিন্তু খুব একটা মানুষের সাথে মেশাটা রপ্ত করতে পারেনি। তাই আমার মত একজন বকর বকর মামা পেয়ে ওরা খুব খুশি।
এর কিছুদিন পরে ওই আপুর অনুরোধে ঢেঁকি গিলে প্রমাকে আমার পড়াতে হয় কিছুদিন। খুব সুন্দর করে মামা ডাকত ও।ওর অন্য দুই বোনের নামের সাথে মিলিয়ে আমি ওকে প্রমি ডাকতাম। তাই একদিন ওর ঝাড়ি ,"মামা বলেন আমার নাম কি?" ঘাবড়ে গেলাম আমি প্রমি বলে ডাকি যখন তখন বুঝতেই পারলাম ওর নাম প্রমি না। তখন থেকে ওর নাম হল প্রমি ওহহ না প্রমা। বেশিদিন পড়ানো হয়নি ওকে আমার। ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায়। এর পর একসময় ও এসএসসি পাশ করল। তখন আমার বিদেশ যাওয়া ঠিকঠাক। ভেবেছিলাম ওর পাশ উপলক্ষে একটা বই উপহার দিব। সেটা আর দেওয়া হয়নি। বিদেশ চলে আসলাম। খুব বুয়েটে পড়ার ইচ্ছা ছিল ওর। আর ক্যাডেট কলেজ সম্বন্ধে আগ্রহ। বুয়েটে কিভাবে ঢুকবে সেটা নিয়ে অনেক কথা বলত। আমিও তাকে বলতাম তোমার চিন্তার কিছু নেই, বড় দুই আপুর মত তুমিও বুয়েটেই পড়বা। যতবার ওর বাসায় যেতাম ততবারই প্রথম কথাটা শুরু করত "মামা..." বলে।
বিদেশে সকালে ঘুম থেকে উঠেই নেটে ঢুকে প্রথম আলো টা খুলি। সেদিন ও খুলেছি। পেপার পড়া ছাড়া সেদিন কোন কাজ ছিল না। টার্ম শেষ। ক্লাস নেই। তাই পুরা পেপারটাই খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ছিলাম। ছোট্ট একটা নিউজে চোখ আটকে গেল। দেখলাম একটা কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। অনেক দিনই এইসব খবর পড়ি। কিন্তু সেদিন নামটা দেখে বুকটা ফাঁকা হয়ে গেল। এ যে প্রমা। সাথে সাথে বাসায় ফোন করে বললাম খবর নিতে। আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছিলাম এ যেন অন্য কোন প্রমা হয়। কিন্তু নাম ঠিকানা কলেজের নাম সব যে মিল। তার কিছুদিন আগেই আমি ওদের বাসায় ফোন করেছিলাম। বড় দুটার সাথে কথা বলেছি। ওর তখন টেস্ট চলছিল। তাই ওর সাথে কথা হয়নি। আমাকে পরে মেইল করেছিল এই বলে যে, মামা সেদিন আপনার সাথে কথা বলতে পারিনি খুব খারাপ লেগেছে। আপুরা কি মজা করে আপনার সাথে কথা বলল। আমার যখন পরীক্ষা শেষ হবে তখন একবার ফোন করবেন।
ঠিক করে রেখেছিলাম আর কিছুদিন পরে যখন দেশে যাব আমার এই ভাগনীটার জন্য একটা উপহার নিয়ে যাব। কিন্তু সে আমার উপহার নিতে চায়নি। চলে গেছে । ভাইয়ার ট্রান্সফার হয়েছিল ইন্ডিয়াতে। উনি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন সেখানে গিয়ে। তাই আপুও সেখানে গিয়ে বেশ কিছুদিন ছিলেন তখন। প্রায় ২-৩ মাস হয়ে যাওয়ার পর প্রমা যেতে চেয়েছিল সেখানে। এই নিয়ে আপুর উপর অভিমান করে চলে গেল ও। কি বোকা মেয়েটা। বুঝল না কিছুই। আমার প্রায়ই মনে হত কেন এই বোকামিটা করল ওর মত একটা বুদ্ধিমতী মেয়ে। আমি দেশে গিয়ে ওর বাসায় গিয়েছিলাম। আপু আমাকে দেখেই কান্না শুরু করেছিল। বারবার বলছিল আমার মেয়েটা তপুকে খুব পছন্দ করত। আজ আমার বাসাটায় কত আনন্দ হত আমার মেয়েটা থাকলে কত খুশি হত, আর আমি ভাবছিলাম কখন ভিতরের রুম থেকে একটা মুখ বের হয়ে আসবে বলবে "মামা..."।
আজ এতদিন পরে কাল রাতে ওকে স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নে মামা বলে ডাকেনি। তাই ওর কথা মনে পড়ল খুব। কেমন আছে আমার ভাগনীটা। ভাল থেকো প্রমা যেখানেই আছ। তোমার গিফট টা আমার কাছে রয়ে গেছে। যেদিন আবার দেখা হবে সেদিন চেয়ে নিও কিন্তু।

Friday, March 14, 2008

যে পথে হয়নি যাওয়া

[ডিসক্লেমারঃ রবার্ট ফ্রস্ট এর the road not taken এর অনুবাদ করার চেষ্টা]

দুটো পথ আলাদা হয়ে গেল বনের ধারে এসে
থমকে দাড়ালাম আমি,
যে কোন একটা বেছে নিতে হবে আমার
একটাই, দুটোতে পারব না যেতে।

স্বিদ্ধান্তহীন আমি তাকিয়ে রইলাম পথটির দিকে
যতদূর দৃষ্টি যায়,
যেখানে পথটি নেমে গেছে দিগন্তের কাছে।

কিন্তু আমাকে টানল অন্যটি।
সবুজ ঘাসে ভরা স্বপ্নিল পথ
যেন সবুজ কার্পেটে মোড়া।

অপরটি অন্য কোনদিনের জন্য ভেবে,
এই পথেই এগিয়ে গেলাম আমি।
যদিও বুনো এই পথের মোরে আবার কখনো
আমার আসা হবে কিনা জানিনা আমি।

দুটো পথ আলাদা হয়ে গেল বনের ধারে এসে।

আজ এতদিন পর।
সেই বাঁকে ফেরা হয়নি আমার।
দেখা হয়নি অন্য পথে হেঁটে।
আর সেই বেছে নেওয়াটাই বদলে দিল সব।
মুল কবিতা এখানে

Wednesday, March 12, 2008

বাংলাদেশ ক্রিকেটঃ কিছু প্রস্তাবনা


সব ক্রিকেট দর্শকদের একটা বদ্গুণ আছে যেটা হল তারা ভাল খেললে আনন্দে সবাইকে আকাশে তুলে দেয় আর খারাপ খেললে সাথে সাথে মাটিতে নামিয়ে দেয়। আমি নিজেকে তার থেকে ব্যতিক্রম ভাবতাম। জিতে গেলে আমি অসম্ভব খুশি হই কারণ আমি আর সবার মত বাংলাদেশের সামর্থ্য বিশ্বকাপ জিতে যাওয়ার মত এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী নই। তাই আমি জিতে যাওয়াটাকে অনেক অসম্ভব ভেবেই খুশি হই। এমন কি দুর্বল দল গুলার সাথে খেলার সময়ও আমি অনেক চিন্তিত থাকি। দুই বিশ্বকাপে কানাডা এবং আয়ারল্যান্ড এর সাথে হার আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমার বড় ভাই আয়ারল্যান্ড থাকে। তাকে পোহাতে হয়েছে আরো কষ্ট। অস্ট্রেলিয়ায় যারা থাকে তাদের কাছে শুনেছিলাম তারা কেমন ভাবে অস্ট্রেলিয় দের বলেছিল আমরা তোমাদের হারিয়েছি সেই কার্ডিফের পরে। আমি আমার বড় ভাইয়ার কাছে শুনলাম তার উলটা কাহিনী। সেখানে এটা একেবারেই নতুন খেলা। তাই আমাদের সাথে জেতার পর তারা বলেছে ভাইয়াকে আমরা তো প্রথম এসেই পাকিস্তান আর তোমাদের হারিয়ে দিলাম। আগামীবার হয়ত আমরা বিশ্বকাপ ই জিতে যাব। হায় আল্লাহ!! এরা দেখি আমাদের মতই স্বপ্ন দেখে।
যা হোক আজ খেলা দেখতে বসেছিলাম। ২৩-৪ এই অবস্থায় আমি আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। এতদিন যে কোন বিপর্যয়ে আমি আশা রেখেছি পাশে ছিলাম। আজ আমি দর্শক হিসেবে রিটায়ার করে ফেললাম। তবে তার আগে কিছু প্রস্তাবণা দিয়ে যাই। বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি ম্যাচ আগে খেলা কিংবা টেস্ট এর ২য় ইনিংস আগে করা এগুলা খুবই জনপ্রিয় ধারণা। সেই সাথে আমার কিছু চিন্তাভাবনা যোগ হোক।
১। ক্যাপ্টেন্সি বাংলাদেশ দলে বড় একটা সমস্যা। এমন কি ভাইস ক্যাপ্টেন ও। তার প্রমান যত ভাইস ক্যাপ্টেন আছে তারা। রাজিন, শাহরিয়ার নাফিস থেকে শুরু করে হালের মাশরাফি তার প্রমাণ। তাই আমার প্রথম প্রস্তাবনা বাংলাদেশ দলে থাকবে নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন ভাইস ক্যাপ্টেন। ফিল্ডিং এর ১০ ওভার পরেই একজন ব্যাটসম্যানকে সরিয়ে ক্যাপ্টেন মাঠে নামবেন। আর ব্যাটিং এর সময় তো কোন সমস্যা নাই।
২। টিভিতে খেলা দেখালে নাকি আমাদের প্লেয়ারদের উপর খুব চাপ পড়ে। তাই বাংলাদেশের খেলা সম্প্রচার এর দায়িত্ব দেওয়া হোক এমন কোন চ্যানেলকে যেটা দেশে দেখা যায় না। আর বিটিভি খেলার কোন হাইলাইটস ও যেন না দেখায়।
৩। বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে দুর্লভ জিনিস হল ধারাবাহিকতা। তাই একজন প্লেয়ার যখন একটা ফিফটি মেরে দিবে এটা শিউর হয়ে যাওয়া যায় পরের দিন তিনি ডাক না মারলেও ১০ করতে পারবেন না। তাকে তখন পরের ম্যাচে বসিয়ে দিতে হবে। (যেমন আজ তামিম ডাক মেরেছে)
৪। যে নিয়মিত খারাপ খেলবে তাকে বানিয়ে দিতে হবে দ্বাদশ প্লেয়ার। দলের সাথে ঘুরে বেড়াবে খেলতে পারবেনা। একদিন হঠাৎ করে চান্স দিলে সে সেঞ্চুরী মেরে দিবে। (যেমন রাজিন মেরেছিল )
৫। প্র্যাকটিসে ব্যাটসম্যানের অফ সাইডে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সেদিকে ব্যাট না যায়। দেওয়াল তুলে দেওয়া যেতে পারে। অফ স্ট্যাম্প সজোরে চালানোর প্রবণতা রোধের জন্য।
আরো অনেকগুলা প্রস্তাবনা ছিল আমার। কিন্তু হঠাৎ কালকের একটা কথা মনে পড়ে গেল। মাশরাফি নাকি প্র্যাকটিস দেখতে আসা জনৈক ক্রিকেত ভক্ত কে বলেছে পারলে আসেন আপনি ক্রিজে এসে খেলেন। এখন আমাকেও যদি কেউ সেটা বলে তাহলে চুপ থাকা ছাড়া কিছু করতে পারবনা। তাই এখানেই শেষ করে ফেলি।
[[ ডিসক্লেইমারঃ এই লেখাটা এক ভগ্ন হৃদয়ের ক্রিকেট ভক্তের মাথা গরম লেখা কেউ এটাকে সিরিয়াস লেখা হিসেবে নিলে লেখক দায়ী নয়। ছবিটি ক্রিকইনফো থেকে নেওয়া ]]

Monday, March 10, 2008

অভিমানের ২টা দিন

মা কে নিয়ে কিছু না বলাই মনে হয় যথার্থ কাজ। কেউ কোনদিন এটা ঠিকমত প্রকাশ করতে পারেনি। আর সবার কাছেই সবার মা বিশ্বসেরা। আসলে মা শব্দটাই বিশ্বসেরা। আর আমার মত যারা বিদেশে থাকে তাদের কাছে মা যে কি ঠিক বলে বুঝানো যাবেনা। সেই ছোটবেলা থেকে হোস্টেলে থাকার পথ ধরে অবশেষে ইন্টার এর পর চলে আসলাম বিদেশে। মা কে অনুভব করি সেইদিন থেকে যেদিন প্রথম মাকে ছেড়ে ক্যাডেট কলেজে রাত কাটিয়েছিলাম। তার আগ পর্যন্ত বুঝতেই পারিনি মা কি জিনিস। এই দেখছি আমার পাশেই আছে, কিছু দোষ করলে বকা দিচ্ছে এই পর্যন্তই। মা শব্দটা আসলে কি তার অনুভূতি পেলাম সেদিন। সেই থেকে পেয়েই চলছি। প্রতিদিন মায়ের সাথে একটু কথা না হলে শান্তি পাইনা। এটা ঠিক মাঝে মাঝে কথা বলার কোন বিষয় থাকেনা তাও ফোন দেই শুধুই মায়ের গলাটা শোনার জন্য।
সেই মায়ের সাথে আমি গত ৩ দিন ধরে কথা বলিনি। এমনিতে ব্যস্ত থাকার জন্য যদি না পারতাম তাহলে সমস্যা হতনা। ব্যাপারটা হল আম্মুর সাথে আমি অভিমান করে ফোন করিনি। এমন কি আম্মু একবার ও কোন মেসেজ কেন পাঠাচ্ছেনা যে কেন আমি ফোন করছিনা কেন আমার অভিমান ভাংগাচ্ছেনা এইটা ভেবে ভেবে এই উইকএন্ড আমার খুবই বিশ্রী গেল। যতই ভাবি আমিই আগে ফোন করি ততই আমার অভিমান বেড়ে যাচ্ছিল কেন আম্মু আমার কথা ভাবছেনা। ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল নেটে। ভয়েস করছিলাম ছোটভাই এর সাথে। সেদিন সকালেই আম্মুর সাথে তার আবার কি নিয়ে বেশ লাগালাগি হয়ে গেছে সেটাতে আবার আমার কিঞ্চিত অবদান আছে। তাই আম্মুকে ডাকলাম নেটে কথা বলব। ওমা রাগে তিনি আসলেনই না নেটের সামনে। অভিমানটা শুরু হল আমার তখন। ভাবলাম যখন আবার না বলবে ততদিন ফোন করবনা। অভিমান করে পড়লাম তো বিপদে। অভিমান একটা রিস্কি শট একেবারে পুল আর হুক তাও বাশার সাহেবের। কেউ অভিমান ভাঙ্গাতে না আসলে মহা বিপদ। নিজে থেকে তো আর অভিমান থেকে সরে আসা যায়না। একেবারে কট খেতে হয়। আমার হয়েছে সেই অবস্থা। আম্মু ও দেখি আর কিছু বলেনা। পরে খবর পেলাম ঐদিন আম্মুর বোন মানে আমার খালার বাসায় তার দাওয়াত ছিল আড্ডা দিয়ে আর মনে পড়ে নাই সকালে যে তিনি আমার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলেন নি। এদিকে তো আমার কাহিল অবস্থা। পরের দিন বাসায় একা বসে বসে আমার মা নাকি খালি ফোনের দিকে তাকায়। আমি তো ভাবছি আমি আর ফোনই করবনা। ২ দিন পরে নেটে এসে আমার ছোটভাই বলল আম্মু তোমাকে ফোন করতে বলেছে।
আমি তো এই অপেক্ষাতেই ছিলাম সাথে সাথে ফোন দিলাম। প্রথম কথাতেই অভিমান পুরা ফেটে ফেটে পড়ছে। এই পাশেও আবার সেই পাশেও। আমিতো কথাই বলতে পারছিলাম না গলা ধরে আসছিল। আম্মু বলে কাল সারাদিন আমি একা বাসায় তুই একবার ফোন ও করলিনা মায়ের উপর রাগ করে থাক ফোন আর করা লাগবে না। আর আমি কি বলব শুধু এটাই বললাম আগেরদিন তো মজায় ছিলেন আমার কথা মনে পড়েনাই। একদিন একা থেকেই কষ্ট পেলেন আর আমি যে বছরের পর বছর একা থাকি ... আর কিছু বলতে পারিনি গলা ধরে এসেছে।
তবে ২টা দিন খুব কষ্টে গিয়েছে। হয়ত আমার মাও কষ্ট পেয়েছে কাল আমার কথা শুনে। তবে কথা বলে যে কি শান্তি পেলাম। মা খুবই সরি ...

Saturday, March 8, 2008

আমার আপুসোনা-১

-আপু , তুমি কি করছ?
- কেনরে, এইত একটু কাজ করছি। কিছু বলবি?
-তোমার সাথে একটু গল্প করি। অনেকদিন কথা হয়না। এত ব্যস্ত তুমি।
-আয় বস তুই। আমি হাতের কাজটা শেষ করে ফেলি।
আমি বসলাম আপুর বিছানায়। শীতকালটা সবে জমে এসেছে। লেপের তলায় ঢুকে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে এসে আপুও বসল।
-এত ব্যস্ত থাকি। নতুন চাকরী তো তাই অনেক ঝামেলা থাকেরে পিচ্চি। তোর খবর কি। পড়ালেখা কেমন চলছে?
-এইত রে আপু। তুই চাকরীতে ঢুকার পর আমার একদম ভাল লাগেনা। আগে ভার্সিটিতে ছিলি একসাতে যেতাম কত গল্প করতাম। এখন তো তোকে পাইইনা। অফিস থেকে এসে এত টায়ার্ড থাকিস কথা বলব কি। তোকে আমি অনেক মিস করিরে আপু। সেই ছোটবেলা থেকে তুইই তো আমার সব। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। বলতে বলতে গলাটা ধরে আসে আমার।
-পাগল, বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে আমার আপুসোনা।
-নতুন চাকরী তো দেখ একটু পুরান হয়ে গেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
-তাই বলে বন্ধের দিনগুলাতেও এত কাজ করতে হবে।
দুই ভাই-বোন আমরা টুকটুক করে গল্প করতে থাকি। আগের মত যখন একরুমে আমাদের দুজনের বিছানা ছিল। দুটা সিঙ্গেল বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমাদের গল্প চলত রাতের পর রাত। মাঝে মাঝেই আম্মুর ঝাড়ি , " ঘুমাবি না তোরা?"অনেকদিন পরে আজ আবার সেইরকম অনুভব করছি। দূর ছাই কেন যে মানুষ চাকরীতে ঢুকে। আমি কোনদিন চাকরি করবনা।
-আপু তোমরা বিয়ে করবে করবে কবে?
-কেন? এখনই আমাকে তাড়িয়ে দিবি?
-আরে না তা বলেছি নাকি? আপুকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরি আমি। মনে হয় তা না হলে চলে যাবে ও এখনই।
-আরেকটু গুছিয়ে নেই। এরপর।
-তোমাদের খুব মানাবে। ভাইয়াকে আমার খুব পছন্দ।
কিন্তু আপু বিয়ে হলে তুই এই বাসা থেকে চলে যাবি তাইনা?
-তাতো যেতেই হবেরে। মেয়ে যে ।
-আপু আমি খুব একা হয়ে যাব যে। তোর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমাকে এইরকম আদর করবি?
উত্তরে কিছু বলে না আমার আপুসোনা। চুলে হাত বুলানো হাতটা আমার চুলগুলোকে আঁকড়ে ধরে। ওর এই চুলে হাত বুলানোটা যে আমার এত ভাল লাগে।
- তুই ঘুমাবি না?
-ঘুম আসেনা যে আপু। এই জন্যইতো আজ তোকে বিরক্ত করতে আসলাম।
-চল তোর রুমে। তোকে আমি ঘুম পাড়িয়ে দিব।

শুয়ে আছি আমি। আর আমার আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। ছোটবেলায় ওই আমাকে ঘুম পাড়াত এই ভাবে। আম্মুর কাজ তাই অনেক কমে গিয়েছিল। আমি চোখ বন্ধ করে ওর আদরটুকু উপভোগ করি। অসম্ভব ভাল লাগে আমার সেই সাথে কোথায় যেন একটু কষ্ট। একসময় আমার নড়াচড়া নেই দেখে ও মনে করে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। এরপর আমার কপালে একটা চুমু দেয় ও। তারপর গায়ের কম্বলটা টেনে টুনে চলে যায়। ঘুমাবার ভান করে আমি চোখ মিটিমিটি করে দেখি ওর মায়াবী মুখে অন্যরকম মমতা আর চোখের কোনে চিকচিক করছে পানি। আমার আপুসোনা আমার জাআআন আপ্পি।

[ আমার কোন আপু নেই। আমার কল্পনার আপুসোনা এইভাবেই আমাকে আদর করে সবসময়।]