Friday, March 14, 2008

যে পথে হয়নি যাওয়া

[ডিসক্লেমারঃ রবার্ট ফ্রস্ট এর the road not taken এর অনুবাদ করার চেষ্টা]

দুটো পথ আলাদা হয়ে গেল বনের ধারে এসে
থমকে দাড়ালাম আমি,
যে কোন একটা বেছে নিতে হবে আমার
একটাই, দুটোতে পারব না যেতে।

স্বিদ্ধান্তহীন আমি তাকিয়ে রইলাম পথটির দিকে
যতদূর দৃষ্টি যায়,
যেখানে পথটি নেমে গেছে দিগন্তের কাছে।

কিন্তু আমাকে টানল অন্যটি।
সবুজ ঘাসে ভরা স্বপ্নিল পথ
যেন সবুজ কার্পেটে মোড়া।

অপরটি অন্য কোনদিনের জন্য ভেবে,
এই পথেই এগিয়ে গেলাম আমি।
যদিও বুনো এই পথের মোরে আবার কখনো
আমার আসা হবে কিনা জানিনা আমি।

দুটো পথ আলাদা হয়ে গেল বনের ধারে এসে।

আজ এতদিন পর।
সেই বাঁকে ফেরা হয়নি আমার।
দেখা হয়নি অন্য পথে হেঁটে।
আর সেই বেছে নেওয়াটাই বদলে দিল সব।
মুল কবিতা এখানে

Wednesday, March 12, 2008

বাংলাদেশ ক্রিকেটঃ কিছু প্রস্তাবনা


সব ক্রিকেট দর্শকদের একটা বদ্গুণ আছে যেটা হল তারা ভাল খেললে আনন্দে সবাইকে আকাশে তুলে দেয় আর খারাপ খেললে সাথে সাথে মাটিতে নামিয়ে দেয়। আমি নিজেকে তার থেকে ব্যতিক্রম ভাবতাম। জিতে গেলে আমি অসম্ভব খুশি হই কারণ আমি আর সবার মত বাংলাদেশের সামর্থ্য বিশ্বকাপ জিতে যাওয়ার মত এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী নই। তাই আমি জিতে যাওয়াটাকে অনেক অসম্ভব ভেবেই খুশি হই। এমন কি দুর্বল দল গুলার সাথে খেলার সময়ও আমি অনেক চিন্তিত থাকি। দুই বিশ্বকাপে কানাডা এবং আয়ারল্যান্ড এর সাথে হার আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমার বড় ভাই আয়ারল্যান্ড থাকে। তাকে পোহাতে হয়েছে আরো কষ্ট। অস্ট্রেলিয়ায় যারা থাকে তাদের কাছে শুনেছিলাম তারা কেমন ভাবে অস্ট্রেলিয় দের বলেছিল আমরা তোমাদের হারিয়েছি সেই কার্ডিফের পরে। আমি আমার বড় ভাইয়ার কাছে শুনলাম তার উলটা কাহিনী। সেখানে এটা একেবারেই নতুন খেলা। তাই আমাদের সাথে জেতার পর তারা বলেছে ভাইয়াকে আমরা তো প্রথম এসেই পাকিস্তান আর তোমাদের হারিয়ে দিলাম। আগামীবার হয়ত আমরা বিশ্বকাপ ই জিতে যাব। হায় আল্লাহ!! এরা দেখি আমাদের মতই স্বপ্ন দেখে।
যা হোক আজ খেলা দেখতে বসেছিলাম। ২৩-৪ এই অবস্থায় আমি আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। এতদিন যে কোন বিপর্যয়ে আমি আশা রেখেছি পাশে ছিলাম। আজ আমি দর্শক হিসেবে রিটায়ার করে ফেললাম। তবে তার আগে কিছু প্রস্তাবণা দিয়ে যাই। বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি ম্যাচ আগে খেলা কিংবা টেস্ট এর ২য় ইনিংস আগে করা এগুলা খুবই জনপ্রিয় ধারণা। সেই সাথে আমার কিছু চিন্তাভাবনা যোগ হোক।
১। ক্যাপ্টেন্সি বাংলাদেশ দলে বড় একটা সমস্যা। এমন কি ভাইস ক্যাপ্টেন ও। তার প্রমান যত ভাইস ক্যাপ্টেন আছে তারা। রাজিন, শাহরিয়ার নাফিস থেকে শুরু করে হালের মাশরাফি তার প্রমাণ। তাই আমার প্রথম প্রস্তাবনা বাংলাদেশ দলে থাকবে নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন ভাইস ক্যাপ্টেন। ফিল্ডিং এর ১০ ওভার পরেই একজন ব্যাটসম্যানকে সরিয়ে ক্যাপ্টেন মাঠে নামবেন। আর ব্যাটিং এর সময় তো কোন সমস্যা নাই।
২। টিভিতে খেলা দেখালে নাকি আমাদের প্লেয়ারদের উপর খুব চাপ পড়ে। তাই বাংলাদেশের খেলা সম্প্রচার এর দায়িত্ব দেওয়া হোক এমন কোন চ্যানেলকে যেটা দেশে দেখা যায় না। আর বিটিভি খেলার কোন হাইলাইটস ও যেন না দেখায়।
৩। বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে দুর্লভ জিনিস হল ধারাবাহিকতা। তাই একজন প্লেয়ার যখন একটা ফিফটি মেরে দিবে এটা শিউর হয়ে যাওয়া যায় পরের দিন তিনি ডাক না মারলেও ১০ করতে পারবেন না। তাকে তখন পরের ম্যাচে বসিয়ে দিতে হবে। (যেমন আজ তামিম ডাক মেরেছে)
৪। যে নিয়মিত খারাপ খেলবে তাকে বানিয়ে দিতে হবে দ্বাদশ প্লেয়ার। দলের সাথে ঘুরে বেড়াবে খেলতে পারবেনা। একদিন হঠাৎ করে চান্স দিলে সে সেঞ্চুরী মেরে দিবে। (যেমন রাজিন মেরেছিল )
৫। প্র্যাকটিসে ব্যাটসম্যানের অফ সাইডে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সেদিকে ব্যাট না যায়। দেওয়াল তুলে দেওয়া যেতে পারে। অফ স্ট্যাম্প সজোরে চালানোর প্রবণতা রোধের জন্য।
আরো অনেকগুলা প্রস্তাবনা ছিল আমার। কিন্তু হঠাৎ কালকের একটা কথা মনে পড়ে গেল। মাশরাফি নাকি প্র্যাকটিস দেখতে আসা জনৈক ক্রিকেত ভক্ত কে বলেছে পারলে আসেন আপনি ক্রিজে এসে খেলেন। এখন আমাকেও যদি কেউ সেটা বলে তাহলে চুপ থাকা ছাড়া কিছু করতে পারবনা। তাই এখানেই শেষ করে ফেলি।
[[ ডিসক্লেইমারঃ এই লেখাটা এক ভগ্ন হৃদয়ের ক্রিকেট ভক্তের মাথা গরম লেখা কেউ এটাকে সিরিয়াস লেখা হিসেবে নিলে লেখক দায়ী নয়। ছবিটি ক্রিকইনফো থেকে নেওয়া ]]

Monday, March 10, 2008

অভিমানের ২টা দিন

মা কে নিয়ে কিছু না বলাই মনে হয় যথার্থ কাজ। কেউ কোনদিন এটা ঠিকমত প্রকাশ করতে পারেনি। আর সবার কাছেই সবার মা বিশ্বসেরা। আসলে মা শব্দটাই বিশ্বসেরা। আর আমার মত যারা বিদেশে থাকে তাদের কাছে মা যে কি ঠিক বলে বুঝানো যাবেনা। সেই ছোটবেলা থেকে হোস্টেলে থাকার পথ ধরে অবশেষে ইন্টার এর পর চলে আসলাম বিদেশে। মা কে অনুভব করি সেইদিন থেকে যেদিন প্রথম মাকে ছেড়ে ক্যাডেট কলেজে রাত কাটিয়েছিলাম। তার আগ পর্যন্ত বুঝতেই পারিনি মা কি জিনিস। এই দেখছি আমার পাশেই আছে, কিছু দোষ করলে বকা দিচ্ছে এই পর্যন্তই। মা শব্দটা আসলে কি তার অনুভূতি পেলাম সেদিন। সেই থেকে পেয়েই চলছি। প্রতিদিন মায়ের সাথে একটু কথা না হলে শান্তি পাইনা। এটা ঠিক মাঝে মাঝে কথা বলার কোন বিষয় থাকেনা তাও ফোন দেই শুধুই মায়ের গলাটা শোনার জন্য।
সেই মায়ের সাথে আমি গত ৩ দিন ধরে কথা বলিনি। এমনিতে ব্যস্ত থাকার জন্য যদি না পারতাম তাহলে সমস্যা হতনা। ব্যাপারটা হল আম্মুর সাথে আমি অভিমান করে ফোন করিনি। এমন কি আম্মু একবার ও কোন মেসেজ কেন পাঠাচ্ছেনা যে কেন আমি ফোন করছিনা কেন আমার অভিমান ভাংগাচ্ছেনা এইটা ভেবে ভেবে এই উইকএন্ড আমার খুবই বিশ্রী গেল। যতই ভাবি আমিই আগে ফোন করি ততই আমার অভিমান বেড়ে যাচ্ছিল কেন আম্মু আমার কথা ভাবছেনা। ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল নেটে। ভয়েস করছিলাম ছোটভাই এর সাথে। সেদিন সকালেই আম্মুর সাথে তার আবার কি নিয়ে বেশ লাগালাগি হয়ে গেছে সেটাতে আবার আমার কিঞ্চিত অবদান আছে। তাই আম্মুকে ডাকলাম নেটে কথা বলব। ওমা রাগে তিনি আসলেনই না নেটের সামনে। অভিমানটা শুরু হল আমার তখন। ভাবলাম যখন আবার না বলবে ততদিন ফোন করবনা। অভিমান করে পড়লাম তো বিপদে। অভিমান একটা রিস্কি শট একেবারে পুল আর হুক তাও বাশার সাহেবের। কেউ অভিমান ভাঙ্গাতে না আসলে মহা বিপদ। নিজে থেকে তো আর অভিমান থেকে সরে আসা যায়না। একেবারে কট খেতে হয়। আমার হয়েছে সেই অবস্থা। আম্মু ও দেখি আর কিছু বলেনা। পরে খবর পেলাম ঐদিন আম্মুর বোন মানে আমার খালার বাসায় তার দাওয়াত ছিল আড্ডা দিয়ে আর মনে পড়ে নাই সকালে যে তিনি আমার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলেন নি। এদিকে তো আমার কাহিল অবস্থা। পরের দিন বাসায় একা বসে বসে আমার মা নাকি খালি ফোনের দিকে তাকায়। আমি তো ভাবছি আমি আর ফোনই করবনা। ২ দিন পরে নেটে এসে আমার ছোটভাই বলল আম্মু তোমাকে ফোন করতে বলেছে।
আমি তো এই অপেক্ষাতেই ছিলাম সাথে সাথে ফোন দিলাম। প্রথম কথাতেই অভিমান পুরা ফেটে ফেটে পড়ছে। এই পাশেও আবার সেই পাশেও। আমিতো কথাই বলতে পারছিলাম না গলা ধরে আসছিল। আম্মু বলে কাল সারাদিন আমি একা বাসায় তুই একবার ফোন ও করলিনা মায়ের উপর রাগ করে থাক ফোন আর করা লাগবে না। আর আমি কি বলব শুধু এটাই বললাম আগেরদিন তো মজায় ছিলেন আমার কথা মনে পড়েনাই। একদিন একা থেকেই কষ্ট পেলেন আর আমি যে বছরের পর বছর একা থাকি ... আর কিছু বলতে পারিনি গলা ধরে এসেছে।
তবে ২টা দিন খুব কষ্টে গিয়েছে। হয়ত আমার মাও কষ্ট পেয়েছে কাল আমার কথা শুনে। তবে কথা বলে যে কি শান্তি পেলাম। মা খুবই সরি ...

Saturday, March 8, 2008

আমার আপুসোনা-১

-আপু , তুমি কি করছ?
- কেনরে, এইত একটু কাজ করছি। কিছু বলবি?
-তোমার সাথে একটু গল্প করি। অনেকদিন কথা হয়না। এত ব্যস্ত তুমি।
-আয় বস তুই। আমি হাতের কাজটা শেষ করে ফেলি।
আমি বসলাম আপুর বিছানায়। শীতকালটা সবে জমে এসেছে। লেপের তলায় ঢুকে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে এসে আপুও বসল।
-এত ব্যস্ত থাকি। নতুন চাকরী তো তাই অনেক ঝামেলা থাকেরে পিচ্চি। তোর খবর কি। পড়ালেখা কেমন চলছে?
-এইত রে আপু। তুই চাকরীতে ঢুকার পর আমার একদম ভাল লাগেনা। আগে ভার্সিটিতে ছিলি একসাতে যেতাম কত গল্প করতাম। এখন তো তোকে পাইইনা। অফিস থেকে এসে এত টায়ার্ড থাকিস কথা বলব কি। তোকে আমি অনেক মিস করিরে আপু। সেই ছোটবেলা থেকে তুইই তো আমার সব। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। বলতে বলতে গলাটা ধরে আসে আমার।
-পাগল, বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে আমার আপুসোনা।
-নতুন চাকরী তো দেখ একটু পুরান হয়ে গেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
-তাই বলে বন্ধের দিনগুলাতেও এত কাজ করতে হবে।
দুই ভাই-বোন আমরা টুকটুক করে গল্প করতে থাকি। আগের মত যখন একরুমে আমাদের দুজনের বিছানা ছিল। দুটা সিঙ্গেল বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমাদের গল্প চলত রাতের পর রাত। মাঝে মাঝেই আম্মুর ঝাড়ি , " ঘুমাবি না তোরা?"অনেকদিন পরে আজ আবার সেইরকম অনুভব করছি। দূর ছাই কেন যে মানুষ চাকরীতে ঢুকে। আমি কোনদিন চাকরি করবনা।
-আপু তোমরা বিয়ে করবে করবে কবে?
-কেন? এখনই আমাকে তাড়িয়ে দিবি?
-আরে না তা বলেছি নাকি? আপুকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরি আমি। মনে হয় তা না হলে চলে যাবে ও এখনই।
-আরেকটু গুছিয়ে নেই। এরপর।
-তোমাদের খুব মানাবে। ভাইয়াকে আমার খুব পছন্দ।
কিন্তু আপু বিয়ে হলে তুই এই বাসা থেকে চলে যাবি তাইনা?
-তাতো যেতেই হবেরে। মেয়ে যে ।
-আপু আমি খুব একা হয়ে যাব যে। তোর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমাকে এইরকম আদর করবি?
উত্তরে কিছু বলে না আমার আপুসোনা। চুলে হাত বুলানো হাতটা আমার চুলগুলোকে আঁকড়ে ধরে। ওর এই চুলে হাত বুলানোটা যে আমার এত ভাল লাগে।
- তুই ঘুমাবি না?
-ঘুম আসেনা যে আপু। এই জন্যইতো আজ তোকে বিরক্ত করতে আসলাম।
-চল তোর রুমে। তোকে আমি ঘুম পাড়িয়ে দিব।

শুয়ে আছি আমি। আর আমার আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। ছোটবেলায় ওই আমাকে ঘুম পাড়াত এই ভাবে। আম্মুর কাজ তাই অনেক কমে গিয়েছিল। আমি চোখ বন্ধ করে ওর আদরটুকু উপভোগ করি। অসম্ভব ভাল লাগে আমার সেই সাথে কোথায় যেন একটু কষ্ট। একসময় আমার নড়াচড়া নেই দেখে ও মনে করে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। এরপর আমার কপালে একটা চুমু দেয় ও। তারপর গায়ের কম্বলটা টেনে টুনে চলে যায়। ঘুমাবার ভান করে আমি চোখ মিটিমিটি করে দেখি ওর মায়াবী মুখে অন্যরকম মমতা আর চোখের কোনে চিকচিক করছে পানি। আমার আপুসোনা আমার জাআআন আপ্পি।

[ আমার কোন আপু নেই। আমার কল্পনার আপুসোনা এইভাবেই আমাকে আদর করে সবসময়।]