Saturday, April 26, 2008

আপুসোনা --- ১

শুরুর আগে
উৎসর্গ
আমার আপুসোনাকে

এই গল্পের কোন চরিত্রই কাল্পনিক নয়।চরিত্র গুলা বাস্তব তবে নামগুলা নয়।একজনের জীবনে সব ঘটনা না ঘটলেও এর অংশবিশেষ কারো না কারো জীবনে ঘটেছে।তাই কোন চরিত্রের সাথে কেউ কোন মিল খুজে পেলে আশেপাশের চরিত্র গুলোকে খুঁজে নিতে চেষ্টা করতে পারেন।


-হ্যালো, লাবণী কি করছিস?
-ও সাথী একটু বাইরে রে, কি খবর তোর?
-হুমম এইতো ভালো, তুই কি ব্যস্ত?
-না, কেন কি হয়েছে?
-নাহ এমনি, কেমন আছিস?
-ভাল।
তোর সাথে তপুর কথা হয়েছে recently?
-নারে অনেকদিন কথা হয় না। কেনরে কি খবর ওর?
-নাহ মানে বলছিল তোকে নাকি ১টা চিঠি post করেছে পেলি কি না জানেনা।
-ওহহ হ্যা কাল পেয়েছি।কিন্তু পড়া হয়নি একটু ব্যস্ত ছিলাম।
-ও আচ্ছা।
-বাসায় গিয়ে পড়ব।বাকি সব কেমন?
-আচ্ছা তোকে আমি একটু পরে ফোন দিচ্ছি।
-ঠিক আছে, Bye।
-Bye
গত ২মাস ধরে তপু চিঠিতে এত প্যানপ্যান করছে ভালো লাগেনা আর শুন্তে।কি লিখেছে জানি। লিখেছে আপু তুমি আমাকে আদর করনা ফোন কর না এই সেই। মনে মনে ভাবছে লাবণী , আমিও কি ওকে কম পছন্দ করি। কিন্তু কেন যে পিচ্চিটা এত বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে।শুধু আবদার করবে।ওর এত আবদার এত expectation মেটানোটা আমার জন্য বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে ও সেটা বুঝছেইনা। মাঝে কিছু ঝামেলায় পড়ে অনেকদিন ওকে সময় দিতে পারেনি লাবণী তখন থেক শুরু হয়েছে ওর অভিমান। ও এত অভি্যোগ না করলে লাবণী হয়ত নিজে থেকেই ওকে sorry বলত কিন্তু ওর অভিযোগ শুনতে শুনতে কেমন যেন ওর উপর অনীহা এসে গেছে।

তখনই মোবাইলটা আবার বেজে উঠে।
-হ্যা বল সাথী।
-তুই কখন বাসায় ফিরবি রে?
-আমি বাইরে lunch করব একটু পরে।সন্ধ্যা হয়ে যাবে।ভেবে বলল লাবণী।
-ওহহ আচ্ছা ঠিক আছে বাসায় ফিরে আমাকে একটা ফোন দিস।
-কিছু একটা বলতে চাচ্ছিস মনে হয়?
-না ঠিক আছে বাসায় ফিরে ফোন দিস।
-ঠিক আছে।
একটু যেন বিপর্যস্ত মনে হল সাথীকে।মনে হল মাত্রই কান্না থামিয়ে বহু কষ্টে ফোন দিল।এই মেয়েটা আরেক কিসিমের। ২ দিন পর পরই ওর মন খারাপ হয়। আর তখনই ফোন দেয় লাবণীকে।লম্বা দুঃখের কাহিনী শুনতে হয় লাবণীকে। আজ ও বুঝি কিছু একটা হল।

Wednesday, April 23, 2008

মেলায় যাইরে


এত দিন পরে বৈশাখী মেলা নিয়ে কিছু লেখাটা মনে হয় একেবারেই বেমানান হচ্ছে। কি করব জাপানে মেলাটা হল যে গতকাল। অনেকদিন পরে মেলায় গেলাম। অনেকদিন পরে মেলায় যাব বলে বেশ আগ্রহ কাজ করছিল। অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রাখছিলাম কি পরে যাব কখন যাব কিভাবে কাদের সাথে যাব এইসব। কিন্তু যাওয়ার আগেরদিন অনেক ঝামেলা হয়ে আমার সব প্ল্যান গেল ভেস্তে। আগের দিন অলস শনিবার আমি ঘুম থেকে উঠে রান্না করব না ধুনফুন করে পার করে দিব ভাবছি তখনই এক ভাই ফোন করে বলল ফুটবল খেলব চলে আস। আমি আবার খেলাধূলার নাম শুনলে থাকতে পারি না। চলে গেলাম ফুটবল খেলতে। তখন আবার আরেক ভাই বলল খেলে চলে আস আমার এখানে রাতে থাক কাল একসাথে মেলায় যাব। আমিও আর কিছু না ভেবে চলে গেলাম ওনার ওখানে। তখনই মনে হল আরে আমার মাঞ্জা মারার কি হবে। অন্তত পাঞ্জাবি তো লাগবে। ঐ ভাইয়া আবার আমার থেকে অনেক লম্বা। খুঁজে খুঁজে একটা পাঞ্জাবি নামানো হল সেটা আবার তার বিয়ের। পড়ার সময়ই আমাকে হুঁশিয়ার করে দিলেন কিছু হলে খবর আছে। পাঞ্জাবি পড়ে যখন রিহার্স্যাল দিচ্ছি তখকন লুংগি পড়া ছিলাম বলে বাকি সবার মনে পড়ে গেল পাঞ্জাবি লুঙ্গি বেশ মানাবে। যেই কথা সেই কাজ। মানাবের থেকে বেশ জোকস হবে সেটাই আসল কথা। পাঞ্জাবি লুঙ্গি আর উপরে একটা ওড়না পড়েই রওনা দিলাম মেলায়। পাঞ্জাবিটা এত বড় ছিল যে নিচে যে লুঙ্গি ছিল অনেকে বুঝতেই পারেনি। (অবশ্য সাবধানের মার নেই ভেবে লুঙ্গির নিচে কিন্তু জিনস ছিল)।
গেলাম মেলায় , জায়গার নাম ইকেবুকোরো। সেখানে আবার একটা শহীদ মিনার বানানো হয়েছে ৩ বছর আগে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী এসে উদ্বোধন ও করে গিয়েছিলেন। গিয়ে সবার আগে সেটাই দেখতে গেলাম। কেমন যেন খুব ভালো লাগা অনুভব করলাম। আস্তে আস্তে লোকজন বাড়ল। এরপর সৌরভ ভাইর সাথে দেখা।ওনার পিছন থেকে কে যেন বলল আরে এই কি উলুম্বুশ নাকি। আমি চিনতে পারিনি শুধু বললাম না ভাইয়া এখনো অতিথি লেখক। সৌরভ ভাই হুমকি দিয়ে দিলেন যে আজীবন নাকি তাই থাকতে হবে। কি আর করা যাই হোক সচল দুজনের সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল। এরপর আরো অনেকে চলে আসল এক এক বড় ভাই আসে এক এক জন এক এক জিনিস খাওয়ায়। প্রথমে মিষ্টি দিয়ে শুরু করে একে একে সিংগাড়া, জিলাপী, বিরিয়ানি, সমুচা খেলাম। মনে হচ্ছিল দেশেই আছি।
আনিসুল হক এসেছিলেন মেলায়। ওনার সাথে গিয়ে হালকা কথা বলে আসলাম। আমি সৌরভ ভাইর মত ওনাকে দেশের কথা জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। ব্যক্তিগত প্রশ্নই করলাম। এক্সিডেন্টের পর এখন কেমন আছে সেই খবর নেওয়ার ইচ্ছেই ছিল। আর ঐ ভীড়ের মধ্যে দেশের খবর বেশি আঁতলামি হয়ে যেত। এরপর শুরু হল নাচগান।
মেলায় যাওয়ার আমার প্রধান আকর্ষন ছিল এসো হে বৈশাখ -সেই কালজয়ী - গান । কিন্তু কারা যে গানটা গাইল আমি গান বাজনা ভাল বুঝিনা তাও মনে হল এমনটা নয় এরকম করে নয়। ওহ সচলায়তনের সবচেয়ে পছন্দের গান এর সাথে নাচ নিয়ে আসল একটু পরেই এক পিচ্চি মেয়ে (উপস্থাপক তাই বলেছিল । সেই মেয়ের বয়স নাকি ১৫ ) সাথে সাথেই আমার সচলায়তনের মিলার কথা মনে পরে গেল। সেই রূপবানের গান। রায়হান আবীর কে এসেই খবর দিব যে , মিলার নাচ না দেখতে পারি , সেই মেয়ে যে নাচ দিল সেটা মিলার থেকে বোধ করি খুব একটা কম দোলানো হবে না।
মেলার মজাও হল সবার সাথে প্রচুর আড্ডাও হল। কিন্তু শেষ হওয়ার পর ফিরে আসার সময় একটু ছোটবেলায় চলে গেলাম। আমরা ছোট থাকতে রথের মেলায় যেতাম। সেই মজা আমি আর কোনদিন পাইনি। কিছু কিনতে পারতাম না কারন আমাদের সেই বয়সে আমাদের হাতে টাকা থাকত না আর অনেক কষ্ট করে আম্মুর থেকে ২ টাকা নিতে পারতাম তাও বরাদ্দ থাকত পটাশ বলে একটা জিনিসের জন্য। সেটা ছিল বাশ দিয়ে বানান একটা জিনিস যেটা দিয়ে বন্দুকের মত একটা গাছের বিঁ চি মারা যেত। সেটা দিয়ে রথের মেলার পরদিন আমাদের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হত। সেই দিনগুলা কোথায় হারিয়ে গেল। এখন আর কাউকে শুনিনা যে রথের মেলায় যায়। নাকি এখনো কোন এক পিচ্চি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছে আর আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে সব হারাবার জন্য।

Monday, April 14, 2008

প্রমার জন্য

সে অনেক দিন আগের কথা। বলার ভঙ্গিটা রূপকথার মত হলেও একেবারে বাস্তব, নির্মম বাস্তব। তার আগে প্রমার পরিচয়টা দিয়ে দেই। প্রমা আমার ভাগনী হয় সম্পর্কে। আমি তখন সবে কলেজ থেকে বের হয়েছি। ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। একদিন আম্মু এসে নিয়ে গেল লতায় পাতায় এক আপুর বাসায়। আমার খালাত ভাইয়ের চাচাত বোন। আপু বললেও অনেক বড়। বেশ বড় একটা অফিসের বেশ বড় একজন কর্মকর্তা। ওনার হাজব্যান্ড ও। গেলাম ওনার বাসায়। একেবারেই নতুন আমি সেই বাসায়। কিছুক্ষণ পরেই এসে হাজির হল ওনাদের ৩ মেয়ে। একজন আমার থেকে বড় , দ্বিতীয় জন আমার সমান আর ৩য় জন ছোট প্রমা। ছিলাম সেদিন ২ ঘন্টা। আমরা সবাই মিলে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিয়েছিলাম। আমি যেহেতু বেশি কথা বলি আর সদ্য ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হওয়া আমি সারাক্ষণই বকে গেলাম আমার নতুন পাওয়া ভাগনীদের সাথে। সবাই আমাকে কি সুন্দর করে মামা ডাকছিল, আমি অভিভূত। সেই বাসার পরিবেশটা আমার খুব ভাল লেগে গেল। বুঝতে পারলাম এই ৩ বোন খুবই টিপিক্যাল ঢাকার মেয়ে। ওরা পড়ালেখায় ভাল, ভাল স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে পড়তে শিখেছে কিন্তু খুব একটা মানুষের সাথে মেশাটা রপ্ত করতে পারেনি। তাই আমার মত একজন বকর বকর মামা পেয়ে ওরা খুব খুশি।
এর কিছুদিন পরে ওই আপুর অনুরোধে ঢেঁকি গিলে প্রমাকে আমার পড়াতে হয় কিছুদিন। খুব সুন্দর করে মামা ডাকত ও।ওর অন্য দুই বোনের নামের সাথে মিলিয়ে আমি ওকে প্রমি ডাকতাম। তাই একদিন ওর ঝাড়ি ,"মামা বলেন আমার নাম কি?" ঘাবড়ে গেলাম আমি প্রমি বলে ডাকি যখন তখন বুঝতেই পারলাম ওর নাম প্রমি না। তখন থেকে ওর নাম হল প্রমি ওহহ না প্রমা। বেশিদিন পড়ানো হয়নি ওকে আমার। ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায়। এর পর একসময় ও এসএসসি পাশ করল। তখন আমার বিদেশ যাওয়া ঠিকঠাক। ভেবেছিলাম ওর পাশ উপলক্ষে একটা বই উপহার দিব। সেটা আর দেওয়া হয়নি। বিদেশ চলে আসলাম। খুব বুয়েটে পড়ার ইচ্ছা ছিল ওর। আর ক্যাডেট কলেজ সম্বন্ধে আগ্রহ। বুয়েটে কিভাবে ঢুকবে সেটা নিয়ে অনেক কথা বলত। আমিও তাকে বলতাম তোমার চিন্তার কিছু নেই, বড় দুই আপুর মত তুমিও বুয়েটেই পড়বা। যতবার ওর বাসায় যেতাম ততবারই প্রথম কথাটা শুরু করত "মামা..." বলে।
বিদেশে সকালে ঘুম থেকে উঠেই নেটে ঢুকে প্রথম আলো টা খুলি। সেদিন ও খুলেছি। পেপার পড়া ছাড়া সেদিন কোন কাজ ছিল না। টার্ম শেষ। ক্লাস নেই। তাই পুরা পেপারটাই খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ছিলাম। ছোট্ট একটা নিউজে চোখ আটকে গেল। দেখলাম একটা কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। অনেক দিনই এইসব খবর পড়ি। কিন্তু সেদিন নামটা দেখে বুকটা ফাঁকা হয়ে গেল। এ যে প্রমা। সাথে সাথে বাসায় ফোন করে বললাম খবর নিতে। আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছিলাম এ যেন অন্য কোন প্রমা হয়। কিন্তু নাম ঠিকানা কলেজের নাম সব যে মিল। তার কিছুদিন আগেই আমি ওদের বাসায় ফোন করেছিলাম। বড় দুটার সাথে কথা বলেছি। ওর তখন টেস্ট চলছিল। তাই ওর সাথে কথা হয়নি। আমাকে পরে মেইল করেছিল এই বলে যে, মামা সেদিন আপনার সাথে কথা বলতে পারিনি খুব খারাপ লেগেছে। আপুরা কি মজা করে আপনার সাথে কথা বলল। আমার যখন পরীক্ষা শেষ হবে তখন একবার ফোন করবেন।
ঠিক করে রেখেছিলাম আর কিছুদিন পরে যখন দেশে যাব আমার এই ভাগনীটার জন্য একটা উপহার নিয়ে যাব। কিন্তু সে আমার উপহার নিতে চায়নি। চলে গেছে । ভাইয়ার ট্রান্সফার হয়েছিল ইন্ডিয়াতে। উনি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন সেখানে গিয়ে। তাই আপুও সেখানে গিয়ে বেশ কিছুদিন ছিলেন তখন। প্রায় ২-৩ মাস হয়ে যাওয়ার পর প্রমা যেতে চেয়েছিল সেখানে। এই নিয়ে আপুর উপর অভিমান করে চলে গেল ও। কি বোকা মেয়েটা। বুঝল না কিছুই। আমার প্রায়ই মনে হত কেন এই বোকামিটা করল ওর মত একটা বুদ্ধিমতী মেয়ে। আমি দেশে গিয়ে ওর বাসায় গিয়েছিলাম। আপু আমাকে দেখেই কান্না শুরু করেছিল। বারবার বলছিল আমার মেয়েটা তপুকে খুব পছন্দ করত। আজ আমার বাসাটায় কত আনন্দ হত আমার মেয়েটা থাকলে কত খুশি হত, আর আমি ভাবছিলাম কখন ভিতরের রুম থেকে একটা মুখ বের হয়ে আসবে বলবে "মামা..."।
আজ এতদিন পরে কাল রাতে ওকে স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নে মামা বলে ডাকেনি। তাই ওর কথা মনে পড়ল খুব। কেমন আছে আমার ভাগনীটা। ভাল থেকো প্রমা যেখানেই আছ। তোমার গিফট টা আমার কাছে রয়ে গেছে। যেদিন আবার দেখা হবে সেদিন চেয়ে নিও কিন্তু।