Thursday, June 18, 2009

আপুসোনা, তুই ভালো হয়ে যা

আপুসোনা,
আজ তোর অপারেশন ছিল। আমি তোর অপারেশনের আগে ঠিকমত সময়ে ফোন দিতে পারিনি। কিভাবে পারব বল আমি তো জানতাম না যে আজই তোর অপারেশন হয়ে যাবে। তুই না আমাকে বলেছিলি ১৮ তারিখে হবে। তোর কথা খুব মনে পড়ছিল। তাই যখন তোকে ফোন দিলাম তখন শুনলাম তুই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পড়েছিস। আমার এত খারাপ লাগছিল প্রায় কান্না চলে এসেছিল। শুনলাম অপারেশন এক ঘন্টা পরেই শেষ হয়ে যাবে আর তারও দুই ঘন্টা পরে তোর সাথে কথা বলা যাবে। আমার তখন ১২টা বেজে গেছে। ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়ি সকালে উঠে কথা বলব কিন্তু তোকে অপারেশনের টেবিলে রেখে আমার কি ঘুম আসার কথা বল? আসেওনি। এপাশ ওপাশ করে অবশেষে তোকে ফোন দিলাম। তোর গলা এত দুর্বল শোনাচ্ছিল কেনরে আপুসোনা আমার। অনেক কষ্ট দিয়েছে ডাক্তার গুলা তোকে? তোর কি এখনো ব্যাথা করছে শরীরে। এনেসথেসিয়া এখনো কাটেনি ভাল করে ঘুমে জড়িয়ে যাচ্ছে তোর গলা তাও তুই কত মিষ্টি করে ডাকলি আমাকে পিচ্চি। নিজের অপারেশনের পরও তুই আমাকে জিজ্ঞেস করছিস আমার অপারেশন কবে। তাই অবশ্য করার কথা আমরা দুজন ঠিক করেছিলাম নিজেদের অপারেশনের সময় অন্য জনের কথা ভাবব তাহলে আর নিজেদের কষ্টটা মনে পড়বে না। তোর সাথে কথা বলার পর ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পড়ব। কিন্তু এরপর থেকে আর ঘুম আসছে না শুধু তোর গলা কানে বাজছে। এমন দুর্বল গলা তোর আর কখনো শুনিনি। এত তাড়াতাড়িও আর কখনো ফোন রাখিনি। কখন সকাল হবে কখন আবার তোকে ফোন দিয়ে শুনব পিচ্চিসোনা আমি এখন ভাল হয়ে গেছি তুই চিন্তা করিস না। তোর হাসিটা শুনব।
আপুসোনা সবসময় জানি তোকে আমি অনেক ভালবাসি কিন্তু আজ যখন তোর অপারেশন হচ্ছে ভাবতে ভাবতে চোখে পানি চলে আসল তখন বুঝলাম আমার আপুসোনাটা আমার কত আপন। তুই তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে উঠ আপুসোনা তুই ভাল না হয়ে উঠলে আমার অপারেশন এর সময় কে আমাকে সাহস দিবে। খুব তাড়াতাড়ি আপুসোনা, অনেক অনেক মিস করছি তোকে আমার জাআআন আপ্পি।
তোর পিচ্চিসোনা
২০০৯-০৬-১৮
রাত তিনটা

Friday, June 12, 2009

স্বপ্নেরা মর্ত্যে নেমে আসে

বৃহঃ, ২১/০৫/০৯ – ১২:০৫ অপরাহ্ন


আকাশের উপরে ভিত্তিহীন ভাবে ভেসে থাকা স্বপ্নেরা হুড়মুড় করে মর্ত্যে নেমে আসে। অতিকষ্টে আকাশের পরে আজন্ম দুলতে থাকা সংশয়পূর্ণ স্বপ্নেরা সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে শাসন না মেনে ফিরতে না চাওয়া দুষ্ট ছেলের মত, লুটোপুটি খায় কাঁদামাটিতে। আমি চেয়ে চেয়ে ওদের ভূলুণ্ঠিত উচ্ছল চেহারা দেখে ভাবি কিভাবে এতদিন ওরা এত উপরে ছিল। হর্ষধ্বনিতে উন্মাতাল এই পতন দেখে শঙ্কিত আমি বিষ্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে থাকি আমার আশৈশব লালিত স্বপ্নগুলোর দিকে। মাটির সাথে মিশে যাওয়া উদ্দাম নৃত্যরত তাদের দিকে তাকিয়ে আমি চিনতে পারি প্রত্যেককে আলাদা করে। অনেক বড় হয়ে আকাশের সাথে মাথা ঠেকাবার উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন, অন্যায় অত্যাচারে পরিপূর্ণ এই পঙ্কিল সমাজকে এক নিমিষে বদলে দেওয়ার সরল স্বপ্ন, অভিমানী মুহূর্তে পাখির মত ডানা মেলে অনেক দূরে সরে যাওয়ার ছেলেমানুষী স্বপ্ন, কোন এক দুর্বল মুহূর্তে দেখা ন্যায়-অন্যায় ভুলে যাবার অন্যায় স্বপ্ন, স্বপ্নালু সময়ে কাউকে কাছে পাবার স্বপ্ন সবাই আমাকে ভেংচি কাটে, খিলখিল করে হাসে আমার অসহায় অবস্থা দেখে।
আমি তাকিয়েই থাকি। তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার দৃষ্টির শঙ্কা, অসহায় ভাব পরিবর্তন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়ে সেখানে খেলা করে স্বস্তি। উর্ধ্বপানে তাকিয়ে দেখি তারা ঝলমলে আকাশ, চাঁদ আর চাঁদোয়ার সহাবস্থান। বহুদিন আমার আর এই সৌন্দর্য্যের মাঝে বাধা হয়ে ছিল যারা তারা আমার সামনে হুটোপুটি করে খেলা করছে। আমি আরেকবার সৌন্দর্য্য উপভোগ করে নেই এরপর যোগ দেই নৃত্যরত ভূলুন্ঠিত স্বপ্নদের সাথে। চীৎকার করে হাসি, দুহাত মেলে দিয়ে আলিঙ্গন করি মুক্তির আনন্দে। আজন্ম স্বপ্নের চাপে পিষ্ট হওয়া এই ছাপোষা আমি আজ মুক্তপুরুষ।

Friday, June 5, 2009

আমার আপুসোনা - ৫

ক্রিংক্রিংক্রিং………
ধুর ঘুমের মধ্যে রিং ভাল লাগে না। কানের উপর বালিশ দিয়ে আবার ঘুমাবার ট্রাই নিলাম। কিন্তু কে যে এই ফোনটা দিচ্ছে তার কোন বিরক্তি নেই। বালিশ সরিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে আগে ঘড়ি দেখলাম। ৮টা বাজে ইশশ ভার্সিটি বন্ধের এই সময়গুলাতে একদিনও আমি ১২টার আগে উঠিনি। এতক্ষণে আমার কলার এর নাম নজরে পড়ল।
-আরে আপুসোনা তুই?
-কিরে ঘুমাচ্ছিস নিশ্চয়ই। তোর ঘুম ভাঙ্গালাম এজন্য স্যরি।
-ধুর কি যে বলিস আপুসোনা। বিয়ের আগে তো সবসময় আমার ঘুম তুইই ভাঙ্গাতিস। কতদিন আসিস না বাসায়। তোর জামাইটাকে পাইলে আমি এমন মাইর দিতাম।
-হাহাহা, কেনরে আমার জামাই তোর কি ক্ষতি করল।
-না ক্ষতি করবে কেন। এমনি ওনার উপর আমার রাগ। আমার আপুসোনাকে আমার থেকে নিয়ে গেল এই জন্য। কেমন আছেরে ভাইয়া?
-আছে অনেক ভাল আছে। কাল আমরা হেভভি মজা করলাম।
-কি মজা করলি?
-সেটা ফোনে নয় সামনাসামনি বলব।
-তুই আসবি আজ বাসায়? ওয়াও এক্ষুণি চলে আয় আপুসোনা। আমার বন্ধ আছে। আসলে কিন্তু ২-৩ দিন থাকতে হবে।
-নারে আসব না।
-আসবি না? তুই খুব খারাপ একটুও আমার কথা, আম্মুর কথা মনে পড়ে না। কতদিন আসিস না।
-কিরে সেদিন না আসলাম।
-২ সপ্তাহ হয়েছে, আসছিস কিন্তু থাকিস তো না। তোর তো বাবু হয়নি এখন কি এত সংসার। ঘুরবি ফিরবি…
-হাহাহা , তুই এখনো বাচ্চাই রয়ে গেছিস।
- তোর সাথে কেন যে আমি কথা বলি এখনো , তোর উপর আমার কত রাগ তুই জানিস? তোকে যে আমি দুদিন আগে তোর জন্মদিনে চিঠি লেখলাম একটু বললি ও না চিঠি পেয়ে কেমন লাগল।
- ঐ তোকে না আমি সাথে সাথে এসএমএস করে জানালাম যে তোর চিঠি পেয়েছি, খুশি হয়েছি।
-ব্যাস এটুকু? চিঠির উত্তর তো চাইনি বাবা জাস্ট চিঠি পেয়ে একটা বড় মেসেজ দিয়ে বলবি পিচ্চিসোনা তোর চিঠি পাইছি খুব ভাল লাগছে , তুই আমাকে এত ভালবাসিস জেনে চোখে পানি চলে এসেছে……, আমিও তোকে অনেক ভালবাসি হ্যান ত্যান তা না ১ লাইনের একটা এসএমএস। আমার চিঠি লেখাটাই ভুল হইছে তোকে।
-ওরে বাবা আমার পিচ্চিটার দেখি অনেক রাগ হইছে আমার উপর। সেদিন অফিসে কাজ ছিলরে বাবুয়া। আজ তোর রাগ ভাঙাব আয়। আজ আমি অফিসে যাই নি। ইচ্ছে হচ্ছিল না। পেপার খুলে দেখলাম শেরাটনে ঈগলু ফেস্টিভাল চলছে। তুই এসে আমাকে নিয়ে যা। আজ সারাদিন তোর সাথে ঘুরব।
-ওয়াও। তাই নাকি দাড়া আমি এখনই রেডি হয়ে আসছি তোকে নিতে।
-দাঁড়া দাঁড়া, এখনি আসিস না। আমি গাড়ি নিয়ে বের হব। গাড়িটা তোর ভাইয়াকে নামিয়ে দিয়ে আসুক। এরপর। তুই ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হ।
-যো হুকুম আপুসোনা।
-ওহহ শোন , তোর কি রাতে কোন কাজ আছে?
-থাকলেও এখন নাই হয়ে গেল। তোর জন্য আমার সব কিছু বাদ।
-তাহলে আইসক্রিম খেয়ে একটু শপিং এ যাব। সেখান থেকে রাতে চাইনিজ খেয়ে বাসায় ফিরব।
- এই আপুসোনা তোকে একটা রিকোয়েস্ট করি?
-নাহ তোর রিকোয়েস্ট রাখতে পারব না।
-কি রিকোয়েস্ট করব না শুনেই।
- আমি জানি তুই কি বলবি। রাতে বাসায় চলে আয় না আপুসোনা। কালকে তো শুক্রবার।
-তুই কিভাবে আমার কথা আগে থেকে বুঝে যাস আপুসোনা।
-কারণ তুই তো ভাবিস তুইই শুধু আমাকে ভালবাসিস। আমি বাসি না।
-বাসলে কি আর আমার কথাটা ফেলতি। আম্মুও কিন্তু বলছিল অনেকদিন তুই আমাদের বাসায় থাকিস না।
- নারে ভাইয়া কাল তোর ভাইয়ার সাথে একটা পিকনিকে যেতে হবে। আমার যদিও কোন ইচ্ছে নাই তাও ও শখ করেছে না গেলে কেমন হয় তাই না। রবিবার দিন এসে আম্মুর সাথে দেখা করে যাব।
-ঠিক আছে কি আর করব। চাইনিজ কি তুই খাওয়াবি? নাকি আমি মানিব্যাগ নিয়ে বের হব।
-বড় হইছিস মনে হয়?
- আরে না পার্ট নিলাম। গতকাল স্কলারশীপের টাকা পাইছি। শপিং এ যখন যাবি তাহলে ভালই হল, আম্মুর জন্য একটা শাড়ি কিনব আর তোর জন্য কিছু একটা যেটা তোর পছন্দ হয়। আমি অবশ্য শাড়িই প্রেফার করব কিন্তু তোর যেটা খুশি।
- তুই প্রতিবার স্কলারশীপ পেলেই আমাকে শাড়ি দেস। আমার তো লাগবে না ভাইয়া। গত ঈদেই তো একটা দিলি।
-প্রতিবার দেই এইবার কেন বাদ যাবে?
-ওক্কে পাগলা।
-তুই কি কিনবি?
- আমার দেবরের জন্য একটা শার্ট কিনব।
-কেন?
-ওর জন্মদিন সামনে। গিফট।
-কেন??? তোমার দেবরের জন্য তোমার মায়া বেশি। আমার একটুও সহ্য হয় না। কেন তাকে গিফট দিতে হবে। ভাইয়াকে বল উনি দিবে তুমি কেন।
-ঐ শয়তান। কি বলিস তুই? তোর ভাইয়া তো তকে জন্মদিনে গিফট দে তাহলে ঐটা কি?
- তা জানিনা তুই অন্য কাউকে আদর করলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়। আমার আদরের ভাগ কমে যায় বলে মনে হয়।
-তুই একটা আস্ত পাগল আছিস। কবে যে তুই বড় হবি?
-কেন বড় যে হতেই হবে এমন কোন কথা আছে?
-আছে না। তোকে বিয়ে দিব তো। বাসায় একটা বউ আনব না।
- আসলেই দিবি? কবে দিবি বল । আমি তো শুধু তোর কাছেই বাচ্চামি করি। অন্য সব জায়গায় আমি অনেক বড় হয়ে গেছি।
-ইশশ বিয়ের কত শখ? তোকে এখন মেয়ে কে দিবে।
-দরকার নাই তাহলে বিয়ে করার পরেই করি কি বলিস।
- এই তুই খালি কি কথা বলতেই থাকবি? তোর ভাইয়া অফিসে যাবে গুছিয়ে দেই। আমার ও তো রেডি হতে হবে। আজ সারাদিন ভাই বোনে অনেক কথা বলব । অনেকদিনের অনেক কথা জমে আছে ।
- ওক্কেরে আমার জাআআন আপ্পি রাখছি। আমি এখনই চলে আসছি তোর বাসায়। একসাথেই বের হব। তুই আমার জন্য নাস্তা বানা। তোর বাসায় এসে নাস্তা খাব। আম্মু নিশ্চয়ই এখনো আমার জন্য নাস্তা বানায় নাই আমি তো প্রতিদিন ১২টায় ঘুম থেকে উঠছি এখন। তুই ঘুম থেকে জাগালি তুইই নাস্তা খাওয়া।
-চলে আয়, কি খাবি বল?
-তুই যদি ছোটবেলার মত খাওয়ায় দেস তাহলে যা দিবি তাই ।
-পাগল ভাই আমার।
-রাখলাম রে আপু। খুব খুশি লাগছে অনেকদিন পর তোর সাথে আজ সারাদিন ঘুরব।
-ওক্কে বাই ডিয়ার।

Monday, June 1, 2009

অভিমান

আমি এবার বদলে যাব
কাউকে আর চাইব না,
কাউকে ভাল বাসব না,
আমাকেও বাসবে না কেউ।
আমি এবার বদলে যাব।
আর কখনো হাসব না,
ব্যাথা পেলেও কাঁদব না,
ইচ্ছে হলেও ডাকব না,
কারো একটু ডাকের আশায়
পেছন দিকে চাইব না।
আমি এবার বদলে যাব।

-------শনি, ১৬/০৫/০৯