Sunday, June 29, 2008

আমার আপুসোনা-২

(এক স্বপ্নের সকাল)

-তপুউউউউ , উঠলি তুই?
-উমমম...
-এই নিয়ে আমি ১০ বার ডাকলাম । উঠ।
-হুমম এইতো আপু আর একটু।
-নাহ আর একটুও না। তোর না আজ ক্লাস আছে।
-আরে আপু কি কর , বালিশ সরাও কেন। উঠতেছি তো।
উফফ কি যে সমস্যা। এই বৃষ্টির সকালে কি আর কোথাও যেতে ভাল লাগে। আজকে ক্লাস আছে কিন্তু এর থেকে এই বৃষ্টিতে ঘরে বসে ১১টা পর্যন্ত ঘুমানোর উপরে কিছু কি আছে? এর জ্বালায় কি আর হইল।উঠে মুখ ধুতে যেতে যেতে ভাবলাম আমি। সকাল ৭ টার মধ্যে বের হতে হবে। নইলে প্রথম ক্লাসটা পাওয়ার কোন চান্স নাই।
-এইতো লক্ষী ভাই আমার। আয় তাড়াতাড়ি নাস্তা করে ফেল।
-কিরে আপু তুই যে আজ এখনো তৈরী হোস নাই। তুই যাবিনা অফিসে?
আপুর চাকরীটা হয়ে যাওয়ার পর আম্মুর খুব উপকার হইছে। সকালে আম্মুকে এখন আর উঠতে হয় না। আপু উঠে নাস্তা বানায় তারপর আমাকে জাগায়। আমরা ভাই বোন একসাথে খেয়ে বের হয়ে পড়ি। তার আগে ও যখন ভার্সিটিতে ছিল তখন এই কাজ করত আম্মু। আমাদের দুজনকে জাগাতেই আম্মুর আধা ঘন্টা লাগত। রাতে তো আমরা দুজন দুজনের বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প করতে করতে ঘুমাতাম যখন তখন ঘুমিয়ে নিজে নিজে এত সকালে উঠা অসম্ভব ব্যাপার ছিল। গত ৩-৪ মাস আপুর এই নতুন ডিউটি। বোন গুলা একটা সময় এসে পুরা মায়ের মত হয়ে পড়ে। এই জিনিসটাই আমি ঠিক বুঝিনা। আমার বোনটা একাধারে আমার বোন , বন্ধু , এখন আবার মাঝে মাঝে মায়ের ভূমিকাও নিয়ে নেয়। আমার সব কিছু আমার আপুসোনা।
- ভুলে গেলি? আজ তো আমার অফিসে যাওয়া লাগবে না। কাল রাতে না তোকে বললাম। আমার একটা ট্রেনিং আছে মালয়েশিয়ায় ৭ দিনের জন্য। আজ রাতে ফ্লাইট। এই জন্য আজ অফিস নাই।
-ওহহো, আমি তো ভুলেই গেছি? তাহলে তুই ঘুম থেকে উঠলি কেন?
-এমনি অভ্যাস হয়ে গেছে তো তাই।
ধুর আমার আজ ভার্সিটি যাওয়ার ইচ্ছাটাই চলে গেল। বাদ যাবনা, দেখি কাউকে মেসেজ করে দিব প্রক্সিগুলা দিয়ে দিবে।
-আমি আজ যাব না ক্লাসে। ঘোষণা দিলাম আমি
-যাবিনা মানে? কেন?
-নাহ আমারো আজ শরীর ভাল লাগছে না। আর তুই থাকবিনা আগামী ৭ দিন আমি আজ সারাদিন তোর সাথে থাকি।
-এইটা কোন কথা হইল। আমার তো আজ অনেক কাজ থাকবে। ব্যাগ গুছাতে হবে । আরো কত কি।
-হইল আমি যাবনা ঠিক করছি। আয় আমরা ভাইবোন এখন নাস্তা করে আড্ডা দেই । সকালে উঠলে দিন অনেক বড় হয়ে যায়।
-নাহ , ফাজলামি নাকি। তাড়াতাড়ি নাস্তা কর ক্লাস করে আয় ।
ধুত্তোরি ওকে যে এখন কিভাবে রাজি করাই। বুঝেছি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে। আমার একদমই আজ ওর কাছ থেকে যেতে ইচ্ছে করছে না। আমার বুদ্ধি হবার পর থেকে ওকে ছাড়া আমি খুব বেশি থাকিনি। প্রথম যেদিন ও এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে খালার বাসায় বেড়াতে গেল কয়দিন থাকবে ভেবে। সেই রাতে আমি এয়সা কান্না দিলাম। (কেউ অবশ্য দেখে ফেলেনি এইটাই স্বস্তির কথা) পরেরদিন দুপুরে দেখি ও চলে আসল আবার। কেন আসল আমি আর জিজ্ঞেস করিনি। ও এসেছে তাতেই আমার মজা ১ দিনেই দেখি আমাদের ভাইবোনের কথার পাহাড় জমে গেছিল। তবে আমি কিন্তু ঠিকই আমার পরীক্ষার পর বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার গিয়ে ঘুরে এসেছি ৭ দিনের জন্য। প্রতিদিন অবশ্য রাতে ও ফোন করত একগাদা উত্তর দিতে হইত। খাইছি কিনা, হোটেল এর খাবার খেতে পারছি কিনা, সমুদ্রের বেশি দূরে গেছি কিনা আরো কত কি। আমার অবশ্য তখন মনে হইত আমি কি আর ছোট আছি কিন্তু সেটা বলতে পারতাম না ।
হঠাৎ করেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর তো বেশিদিন নাই। ওর তো বিয়ে হয়ে যাবে। আমি তখন কি করব।ও তো এই বাসা থেকে চলে যাবে । মন খারাপ নিয়েই ব্যাগ গোছাই। খেয়াল করে ও। আমার কোন কিছুই কখনো ওর চোখ এড়ায় না।
-কিরে ভাইয়া কি হইল তোর। ক্লাস তো আজ তোর ২টা মাত্র যাবি আর করে চলে আসবি। তুই আসলে আমি আজ তোকে নিয়ে বের হব আইস্ক্রিম খেতে। লক্ষী ভাইয়া আমার। কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ও।
আমি নাস্তা করতে থাকি কিছু বলি না। ও ও আমার কাছ থেকে সরে না।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই থাকে। আমার খুব কান্না পেয়ে যায় হঠাৎ। ওকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব। কেন ওর বিয়ে হবে।
নাস্তা শেষ করি আমি। আর বেশি দেরী করলে ভার্সিটির বাসটা মিস হবে আমার। ব্যাগটা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলি আসিরে আপু। তারপর হঠাৎ বলি মালয়েশিয়ায় গিয়ে তোর আমার জন্য খারাপ লাগবে না আপু?
ওতো মনে হয়ে কেঁদেই দিল। আমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে পড়ি ।
গেট থেকে বের হতেই আমার মোবাইলে ফোন।
-পিচ্চি, তোর আজ ক্লাস করার দরকার নাই। চলে আয় ভাইবোন মিলে সারাদিন গল্প করব। একদিন ক্লাস না করলে কিছু হয়না। প্রক্সি সার্ভার চালু করে দে।
আমি আর কিছু বলি না।কলটা কেটে শামসকে মেসেজ করে দেই, "দোস্ত আজ ভার্সিটিতে আসতে পারতেছিনা। তুই আমার পার্সেন্টেজটা ব্যবস্তা করে দিস।"