Friday, January 23, 2009

আমার কাজলাদিদিরা ( চামু )

ওর আসল নাম হচ্ছে চামেলী। আমার খালাত বোন। কলেজে ৯ এ উঠার সময় এক ছেলের সাথে আমার বাজি হল পরের টার্মে ওর থেকে আমি বেশি চিঠি পাব। কিন্তু টার্ম শুরু হওয়ার পর বুঝতে পারলাম খুবই অসম্ভব ব্যাপার। আমার বাসা থেকেই আমাকে মাসে একখানা চিঠি লেখে। আর ও প্রতি সপ্তাহে ৩-৪টা চিঠি পেয়ে যাচ্ছে। কি আর করা বাজিতে হারব বুঝে গেলাম। কিন্তু চিঠি পাওয়ার খুব ইচ্ছে থেকেই আমি চিঠি লেখা শুরু করলাম। কিন্তু লেখার মানুষ তো আমার বেশি নেই। সেই চিঠি লেখা থেকে মনে হয় আমার পরিবর্তন শুরু হল। ছোটবেলা থেকে যাদের মনে মনে পছন্দ করতাম কিন্তু বলতে পারতাম না চিঠি লিখতে গেলে দেখলাম খুব সহজেই পছন্দের কথা বলা শুরু করলাম। তখন আমার এই খালাত বোনকে চিঠি লেখা শুরু হল। সেও আমাকে উত্তর দিত। শুরু হল আমার চামু আপুর কাহিনী। চামেলী নামটা হারিয়েই গেল। শেষ কবে যে ওকে চামেলী আপু বলে ডেকেছি মনে পড়ে না। আপুও ডাকতামনা। ও হয়ে উঠল আমার এক কাজলা দিদি, চামু।


আমার কাজলাদিদির মধ্যেই ঐ একমাত্র আমার ফ্যামিলির ভিতরে। কিন্তু তবুও ওকে পেতে আমার অনেক দেরি হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আমার যে চিন্তা সবাই বুঝি আমার থেকে আমার ভাইদেরকেই বেশি আদর করে ওর বেলাতেও তাই হয়েছে। তবে এখন ওকে জিজ্ঞেস করি যদি তখন তো আমাকে আদর করতা পান্থ ভাইয়া আর কনকই বেশি আদর পেত তোমাদের তখন সে বলে তোরে কইছে। একটু পরে অবশ্য বলে তুই তো চুপচাপ থাকতি এই জন্য বেশি আদর পাইতি না। কথাটা অবশ্য ভুল না। ছোট থাকতে আমি আদর নিতেই মনে হয় জানতাম না। ইশশ চুপচাপ না হয়ে যদি আরেকটু দুষ্ট হতাম তাহলে মনে হয় ছোটবেলা থেকেই অনেক আদর পেতাম। চিঠি লিখতে লিখতেই চামুকে পাওয়া। এর আগ পর্যন্ত ও ছিল আমার খালাত বোন অন্য সবার মত। তখনই সে আস্তে আস্তে হয়ে উঠল আমার খুব প্রিয় এক আপু। ওর বিয়ের আগ পর্যন্ত প্রতি টার্মে চামুর একটা করে চিঠি পেতাম। আমি অবশ্য লেখতাম অনেক। সবজায়গায় যেমন হয় ওর বিয়ের পর দুরত্ব বেড়ে গেল আপুর সাথে। তখন আমরা কলেজ থেকে বের হব হব। ওরা তখন নতুন ঢাকায় এসেছে আমাদের বাসার পাশেই। আমি কত প্ল্যান করছি যে অনেক মজা হবে অনেক দিন পরে আমি বাসায় ফিরছি। এবার আর বেড়ানো নয় একেবারে বাসাতেই থাকব। আর আমার পাশেই থাকবে আমার আপু চামু। কত কিছু ভাবতাম এই করব ওই করব। কিন্তু সব কিছু শুরু হওয়ার আগেই দেখলাম চামুর বিয়ে হয়ে গেল আর ও চলে গেল কুমিল্লাতে। ঢাকায় আসলাম কিন্তু আমার কল্পনাগুলা আর বাস্তব হল না। ও যখন ঢাকায় আসত প্রতিদিন আমি যেতাম ওর সাথে গল্প করতে কিন্তু কেন যে মেয়েরা বিয়ের পর বদলে যায় সেটা তখনো বুঝতে পারতাম না এখনো পারিনা। ওর সাথে কথা বলতেই ভাল লাগত কিন্তু ও খুব চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। কলেজ থেকে বের হওয়ার পর আর কখনো চিঠি লেখা হয়নি ওকে ও ও কখনো চায়নি। কলেজ থেকে বের হয়ে খুব অল্প দিনের জন্যই বাসায় ছিলাম। এরপর বাইরে চলে আসলাম । চামুর সাথে দুরত্ব বেড়ে যাচ্ছিল একটু একটু করে। ওর দুটি ছেলে হল সংসারকাজে ব্যস্ত আমার আপু। দেশে গেলে এক-দুইবার ওর সাথে দেখা হয় । এরকম করেই হয়ত চলত কিন্তু ও ঢাকা শিফট করল চাকরী নিল। ওর চাকরীটাই আবার আমাকে আমার চামু আপুকে পাইয়ে দিল। অফিসে ও সারাদিনই ইয়াহুতে থাকে। আর আমি তো সারাদিনই ফ্রি। ওর সাথে অনলাইন কথাবার্তা শুরু হল। একসময় আমি খুব মেন্টালি আপসেট ছিলাম। ও সবসময় খালি জিজ্ঞেস করত আমার কি হয়েছে। ওকে কেন কাউকেই ঠিক করে বুঝিয়ে বলতে পারিনি আসলে আমার কি হয়েছিল। যাই হোক আমার এই আপুটাকে আবার ফিরে পেয়ে আমি অসম্ভব খুশি। ওকে আমি অনেক পছন্দ করি আর সেকথাও ও জানে। ওকে যদি জিজ্ঞেস করি জানিস আমাদের ফ্যামিলিতে আমি সবচেয়ে বেশি কাকে পছন্দ করি ও তখন বলে আমাকে। চামু তোকে অনেক ভালবাসি আপু। আদর করিস সবসময় এখন যেমন করিস।

ছোটদি - ৩


আবারো অনেকদিন দেরী হয়ে গেল । আপনার এই ব্যস্ত সময়ের মাঝেও আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন দেখে খুবই ভাল লাগছিল। আপনাকে বলছিলাম আমার ছোটদির গল্প। স্কুল ফাইন্যালের আগ পর্যন্ত আমি বেশ লক্ষীছেলে ছিলাম। কখনো কিছুতে গড়বড় হতে নিলেই ছোটদির কাছে ঠিকই ধরা খেয়ে যেতাম। ওর কথা অমান্য করার ক্ষমতা আমার ছিল না। ওর শাসনে মিষ্টি একটা দিক ছিল। প্রথমে শুরু হত বৃষ্টির মত ঝাড়ি। আমি তখন গোবেচারার মত মুখ করে বসে থাকতাম অপেক্ষা করতাম এরপরের অংশের জন্য। কিছুক্ষণ পরে এসেই আমাকে শতেক রকম ভাবে আদর করে বোঝানো শুরু হত এক পর্যায়ে কেঁদেই দিত। তখন আমাকে কথা দিতে হত আর করব না। শাসনের প্রথম ধাপ থেকে এই অংশের কার্যকরীতা বেশি ছিল। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার সেটা করতে নিলেই ওর মুখখানা চোখের সামনে ভাসত।
আমার বহির্জীবনের সব কান্ডকারখানা ওর কানে চলে আসত। তার কারণ অবশ্য আমার বিশ্বাসঘাতক বন্ধুর দল। আমার খবর রাখার জন্যই কিনা তাদের সবার সাথে আমার ছোটদির বহুত খাতির। ওদের এই গুপ্তচরগিরির জন্য কিছু বলতে গেলেই ওদের স্বীকারোক্তি,” দিদির সাথে মিথ্যা বলব নাকি, তোর চেয়ে দিদির কাছে সত্য বলে আদর পাওয়াটা ঢের বেশি ভাল” আর সাথে জুটত উপদেশ কেন দিদির কথা শুনিনা। সকল অপকর্মের সাথীরা যদি এরকম বলে তাহলে কেমন লাগে বলেন। ওদের বলতাম তোরা করিস কেন। আমার প্রশ্নে অবাক হয়ে ওরা বলত ” আমাদের কি ওইরকম দিদি আছে নাকি চিন্তা করার জন্য”।
আমাকে শিক্ষা দেওয়ার উপায়গুলাও ছিল অন্যরকম। স্কুল ফাইন্যালের আগে একবার বন্ধুরা মিলে প্রাইভেট ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। সিনেমা শেষ করে ফুরফুরে মেজাজা বাসায় ঢুকতেই মেঝদির সাবধানবাণী, ” তোর আজ খবর আছেরে খোকন, প্রাইভেট ফাঁকি দিয়েছিস খবর পেয়ে গেছে ছোট, দেখ কি হয় আজ”। ভয়ে ভয়ে ওর রুমে ঢুকে দেখি সেজেগুজে বসে আছে ও যেন এখনই বের হবে। আমাকে বলল চল বের হবি আমার সাথে। কোথায় যাব জিজ্ঞেস না করেই বের হলাম ওর সাথে। রিক্সা ঠিক করার আগে বলল কোন সিনেমা দেখেছিস বল আমিও দেখব তোর সাথে। আমার তখন মাথায় হাত। বন্ধুদের সাথে দেখা সিনেমা এখন দিদির সাথে কিভাবে দেখি। বার বার বলছি দিদি আর কখনো দেখব না কিন্তু ও কথাই শুনল না। আমাকে নিয়ে রওনা দিল সিনেমা দেখার উদ্দেশ্যে। আর সারা রাস্তা আমি লজ্জায় ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। এরপর দিদি শুরু করল আমাকে বোঝানো। যে কাজ করে লজ্জা লাগে সেটা না করাই কি ভাল না? ওকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর কখনো ওকে না বলে কিছু করব না। সেদিন অবশ্য সিনেমা আমরা ভাই বোন দেখেছিলাম তবে সেটা না। ওই আমাকে নিয়ে গিয়েছিল কোথায় যেন সিনেমা সপ্তাহ চলছিল সেখানে। সেদিন “চিলড্রেন অব হ্যাভেন ” দেখে আমরা ভাই বোন কেঁদে বুকভাসিয়ে দিয়েছিলাম। ফেরার পথে ওকে বলেছি ছোটদি তোকে আমি এর চেয়েও অনেক ভালবাসি। তোর কথা কোনদিন অমান্য করব না দেখিস। দিদি শুধু আমার চুল এলোমেলো করে দিয়েছিল একটুখানি। ওকে দেওয়া প্রতিজ্ঞাটুকু অনেকবারই ভেংগেছি জীবনে তবে প্রতিবারই ওর মায়াবী মুখখানা চোখের সামনে ভেসে উঠেছে আর অপরাধবোধে ভুগেছি।
ততদিনে আপনার সাথে আমার দিদির পরিচয় হয়ে গিয়েছে। ওর চোখেমুখে তখন অন্যরকম আনন্দের আভা দেখতাম।আমি আমার দিদির খুব কাছের বন্ধুও ছিলাম তাই প্রথম দিন থেকেই আপনার কথা ও আমাকে বলেছিল। প্রথম দিন কি বলেছিল জানেন? বলল আজ একটা হ্যংলা ছেলের সাথে দেখা হল । এইটুকুই। এরপর যখন আর্ট গ্যালারীতে আপনার সাথে দেখা হল হঠাৎ করে সেদিন ও উত্তেজনায় টগবগ করছিল। সেদিন ওকে বলেছিলাম তুই বুঝি ঐ হ্যাংলার প্রেমে পড়লি। লজ্জায় রাঙা হয়ে আমার দিদি আমার সাথে পরামর্শ করছিল আপনাকে ফোন করা ঠিক হবে কিনা কিভাবে আপনাকে চাইবে। আমার খুব ভাল লাগছিল কিন্তু কোথায় একটু বুঝি ঈর্ষাও হচ্ছিল। কপট রাগের ভান করে বললাম আমি কিন্তু jealous হয়ে যাচ্ছি। প্রেমে পড়ে আমাকে আদর করার কথা ভুলে যে যাবা খুব ভালই বুঝতে পারছি। আমি এইসব বলতাম যাতে দিদি আমাকে বেশি করে আদর করে। সেটা সেও বুঝত। তাই তো আদর করে বলত তুই আমার পিচ্চিসোনা, আজীবন তোর আদর ঠিক থাকবে।
“তোমার নিজের যখন পিচ্চি হবে তখন?” আবার জিজ্ঞেস করি আমি। হেসে উঠে বলেছিল ” দেখিস কখনোই কম পড়বে না”।
একদিন ক্লাসের এক ছেলে এসে আমাকে বলল “তোর দিদিকে দেখলাম ময়দানের ওদিকে একটা লোকের সাথে। সেটা কি ওনার বয়ফ্রেন্ড?” । প্রশ্নে কি যেন একটা ছিল আমার প্রচন্ড রাগ হল। বিশু না ঠেকালে সেদিন ওকে আচ্ছামত পিটাতাম। বাসায় ফেরার সময় একটা শব্দই মাথায় ঘুরছিল “বয়ফ্রেন্ড”। খুব বিশ্রী লাগছিল শব্দটা। বাসায় এসে দিদির সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করলাম। রাতে ঘুমাবার সময় ও আসল আমার মাথার পাশে বসে আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। একসময় জিজ্ঞেস করল, ” কি হয়েছে পিচ্চি? আমাকে বলবিনা?” সব খুলে বললাম ওকে, কেন যে আমার খারাপ লাগছিল সেটা আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না সেটাও বললাম। সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত দিদি আপনার গল্প করেছিল আমার কাছে। কি যে অসম্ভব ভালবাসত দিদি আপনাকে সেদিনই বুঝেছিলাম।

আমার স্কুল ফাইন্যালের সময় দিদি বাড়াবাড়ি পাগলামি শুরু করে দিয়েছিল। মাষ্টার্স শেষ করে দিদির তখন অঢেল সময়। কাজের মধ্যে হচ্ছে আমার পড়ালেখা, খাওয়াদাওয়ার তদারকী করা। একটু রাত হলেই এসে জোর করে বিছানায় শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত পাছে রাত জেগে শরীর খারাপ করে আর প্রতি খাবার বেলায় হাজারটা বাড়াবাড়ি। প্রতিটা পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এসে দেখতাম আমার দিদি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে খাবার নিয়ে। বন্ধুবান্ধবরা সবাই নিজেদের তখন অনেক বড় মনে করতাম। কারো জন্যই কেউ আসত না। সবাই যখন কে কেমন পরীক্ষা দিল কার পাশে কোন মেয়ে কি জামা পড়ে আসল দেখতে কেমন , কেমন করে না পেরে ওকে জিজ্ঞেস করল এইসব নিয়ে আলোচনা করত আমি তখন দিদির হাতে ভাত খেয়ে পরের পরীক্ষার জন্য বই দেখছি। ছোটদির হাতে খাওয়ার জন্য বন্ধুরা পরে আমাকে টিটকারী দিবে এইসব বলে যদিও খেতে চাইতাম না কিন্তু মনে মনে যে ইচ্ছে করেই ওর হাতে খাওয়ার জন্য আমি বই খুলে পড়ার ভান করতাম সেটা কি ও বুঝত?
পরীক্ষা শেষ হবার দিন খুব মজা হয়েছিল। বন্ধুরা সবাই মিলে দিদিসহ আমরা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। সেদিন দেখেছিলাম প্রিন্সেস ডায়েরী। দিদিই সবার জন্য টিকেট কেটে রেখেছিল আগে থেকেই। এরপর দিদি আমাদের ডিনার করিয়েছিল। খেতে খেতে বেশ আড্ডা হচ্ছিল। প্রদীপ বলল ” আপনি যখন পাশে থাকেন তখন খোকনটা আমাদের একদমই চিনেনা। মাঝে মাঝে মনে হয় আপনার মত একটা দিদি আমার থাকলে খুব ভাল হত”। আমার মায়াবী দিদি তখন বলেছিল ” তোমরা সবাই তো আমার কাছে খোকনের মতই। ” আমি পাশ থেকে বলেছিলাম “ইশশ আমার দিদির ভাগ আমি কাউকে দিলে তো”। বিশু বলেছিল দিদি সত্যি আমার মনে হয় রানুদিকে বাদ দিয়ে আমিও তোমার ভাই হই কিন্তু খোকন এত স্বার্থপর ওর জন্য আর সাহস হয় না।
দিদি আমি আর স্বার্থপর হবনা। প্লিজ তুমি ফিরে আস প্লিজ…

Sunday, January 18, 2009

অপলাপ-৩

মাঝে মাঝে সময় এত দীর্ঘ ঠেকে
ঘুম না আসা মাঝরাতে,
যখন ঘড়ির টিকটিক
জগতের একমাত্র শব্দ বলে মনে হয়।
সমস্ত বিশ্বে একা আমি জাগ্রত।
বিছানায় এপাশ ওপাশে ঘুমাবার আকুলতা।
তখনই,
জেগে জেগে দেখা স্বপ্নে তোমার আগমন।
অদ্ভুত এক মায়াবী কন্ঠে ডাক দাও আমাকে,
আমি প্রবেশ করি আমার কল্পনায়।
স্পর্শ করা দূরত্বে তুমি আর তোমার মায়া
নাকি তুমিই মায়া।
কল্পনার লাগামছাড়া ঘোড়া হঠাৎ হোঁচট খায়…
একা আমি আমার বিছানায়।

Wednesday, January 14, 2009

প্রবাসে প্রলাপ ০০২

মঙ্গল, ১৩/০১/০৯ – ৪:৪৭ অপরাহ্ন

কলেজে থাকতে জুনিয়র থাকতে জ্বর আসলে বেশ ভাল লাগত। কলেজ হাসপাতাল ছিল সেইরকম জায়গা। সবচেয়ে খাইষ্টা সিনিয়র ভাই ও জানি ঐখানে কেমন অন্যরকম হয়ে যাইত। সিনিয়র হওয়ার পর অবশ্য হাসপাতাল থেকে হাউসে থাকতেই বেশি ভাল লাগত। জ্বর হলে তাই নিজের কাছে থাকা প্যারাসিটামল দিয়ে চালিয়ে দিতাম। হাসপাতালে গেলে এক্সিকিউজ দিলে গেমস করতে পারব না এই জন্য। কিন্তু বাসায় আসলে আমার খালি মনে হত একবার জ্বর হলে মন্দ হয় না। আমার প্রচন্ড জ্বর হবে আম্মু পাশে বসে একটু পর পর কপালে হাত দিয়ে দেখবে, একসময় ঠান্ডা পানি এনে মাথায় পানি দিবে, আমি খেতে চাইব না আম্মু খাইয়ে দিবে। বেশ একটা ভাব। ঐ সময় মনে হয় সবারই একটু আলাদা ভাবে গুরুত্ব পাওয়ার রোগ থাকে হোক না সেটা অসুস্থতার মধ্য দিয়ে। আমার সেই ভাবটা এখনো যায়নি। দেশে গেলে একবার এই কথা বলার পর হালকা একটু জ্বরেই দেখলাম আম্মু এসে আমার মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছে। যদিও জানতাম যে সেটা জ্বর না হালকা গা গরম ছিল তাও আমার বেশ ভাল লাগছিল।

বিদেশের অবস্থাটা ঠিক তার উলটা। যারা বাইরে থাকেন (অবশ্যই একা ) এবং কখনো অসুস্থ হয়েছেন তারা অবশ্যই বুঝতে পারবেন। গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে টের পেলাম গায়ের তাপমাত্রা বাড়ছে। তার দুদিন আগে একটু মাথায় বৃষ্টির পানি পড়েছিল খুব একটা পাত্তা দেইনি আমি। শুক্রবার রাতের বেলা বুঝতে পারলাম এইটা আর গা গরমে থাকবে না জ্বরে পরিণত হবে। শনিবার সারাদিন নজরদারিতে রাখলাম কি হয়। রাতের বেলা মনে হল আর মনে হয় পারা যাবে না। জ্বর যদি আরো বাড়ে রান্নাবাড়া খাওয়া দাওয়া সর্বোপরি একা একা থাকা অসম্ভব একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আমার এখানে যে কোন সময় একা একা লাগলেই কিংবা কোথাও যাওয়ার কথা ভাবলেই কিংবা কাউকে জ্বালানোর দরকার পড়লেই মনে পড়ে এরকম ২-১ খানা জায়গা আছে ( কি লাকি আমি )। তার মধ্যে একটা জায়গা হল সাকেবভাই (মকক) এর বাসা। ঐ বাসায় আমি এত যাই অনেকে আমাকে সেখানকার সাবলেট বলেই মনে করে। বিশেষ করে গত মাসের বন্ধে আমি মাসের ৩টা উইকএন্ডই ঐখানে কাটিয়েছি। যাই হোক সেখানে চলে যাব কিনা যখন ভাবছি তখনই তন্বী আপুর (সাকেব ভাইর বৌ) মেইল পেলাম আপু বলছে কাজ না থাকলে চলে যেতে ওনার ওখানে। তাই কোন রকম দ্বিতীয় চিন্তা না করেই চলে গেলাম সেখানে। সেই রাত ভালভাবে থাকলেও পরেরদিন শুরু হল জ্বর বাড়া । আমি আবার অনেক পন্ডিত জ্বরের অষুধ খাওয়ার ব্যাপারে অনেক পন্ডিতি করে না খাওয়া ঠিক করলাম। কিন্তু মঙ্গলবারে একটা ক্লাসে যেতেই হবে তাই শেষ পর্যন্ত আর না খেয়ে পারলাম না। গত রাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল যার কারণে আজ ক্লাসখানা করতে পারলাম কিন্তু ক্লাস করে বাসায় ফিরে এসে দেখি আবারো আসছেন তিনি।

গতদুদিন জ্বরে পড়ে থাকলেও বুঝতে পারিনি কিছুই। সাকেব ভাই তন্বী আপু এমন ভাবে আমার সেবা করছিলেন খুব লজ্জাই লাগছিল। ৩ বেলা গরম কোকোয়া, রান্না করে খাওয়ানো , সারাক্ষণ জ্বরের হালহকিকত নেওয়া সত্যিই বড় লজ্জা লাগছিল। মুখে ধন্যবাদ বলতে আরো অস্বস্তি লাগছিল। তাই বলা হয়নি। আজ নিজের ঘরে বসে যখন থার্মোমিটারে জ্বর মাপলাম কেউ যখন জিজ্ঞেস করল না “কত?” তখন বুঝতে পারলাম গত দুদিন আর আজকের পার্থক্য। বাঙ্গালী স্বভাবটা আমার মাঝেও আছে হাসপাতালে যাওয়ার অনীহা, আজ হাসপাতালে যাওয়া দরকার ছিল। সকালে জ্বর ছিল না দেখে ভাবলাম ভাল হয়ে গিয়েছি এখন ভাল হওয়া টের পাচ্ছি।

প্রবাসে প্রলাপ - ০০১

রবি, ৪/০১/০৯ – ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

একটা শীতের বন্ধ শেষ করলাম। আজ ছুটির শেষ দিন তাই মনটা বড়ই উশখুশ করছে। ছুটি শেষের অনুভূতি মনে হয় সবারই একরকমই হয়। কিন্তু ছুটি শুরুর অনুভূতিগুলো বিদেশে যারা থাকে তাদের একটু অন্যরকম। এবার যেমন ছুটি শুরু হবার আগে ভাবছিলাম কি যে করি। ছোট্ট একটা ছুটি খুব বেশি কিছু করার ও নেই। প্রতিটা ছুটির আগে যেমন নিজের টাকা পয়সা মিলিয়ে দেখি দেশে যাওয়া যাবে কিনা এবারও তেমন। যদিও জানি বছরে দুইবার দেশে যাবার সামর্থ্য এখনো হয়নি তাও এই যাব যাব ইচ্ছেটা তাড়াতে পারিনা। বাংলাদেশের খেলা আছে তাই ভাবলাম শুয়ে শুয়ে বাংলাদেশের খেলা দেখে দেখেই ছুটি কাটাব। কিন্তু বড়ই আচানক ভাবে একটা গ্রুপ তৈরি হয়ে গেল তাই আর আমাকে বোরিং ভাগে ছুটি কাটাতে হল না। বেশ মজাই হল বলা যায়। লাষ্ট ১০ দিনের এক রাত ঠিকমত ঘুমিয়েছি। আর প্রতিদিনই ঘুমাতাম ভোর ৬টায়। রাত জুড়ে আড্ডা মারা আর খেলা। আগে রাত জুড়ে আমরা কার্ড খেলতাম। কিন্তু ইদানিং আমাদের আড্ডাতে মানুষ এত বেশি হয় কার্ড খেলা আর হয়ে উঠে না । কার্ড খেললে অনেককেই বসে থাকতে হয়। আড্ডা দিতে দিতে যখন সকাল হয়ে যায় তখন ঘুমাতে গেলে কেমন যেন একটা খারাপ লাগায় আক্রান্ত হই আমি। পৃথিবী জুড়ে মানুষ যখন ঘুম থেকে উঠছে আমি তখন ঘুমাতে যাচ্ছি।
যে বাংলাদেশের খেলা দেখে দিন পার করব বলে ঠিক করেছিলাম তা আর দেখা হল না সেইরকম ভাবে। যদিও এরই মাঝে বাংলাদেশে প্রথম টেষ্ট এ খুবই ভাল খেলা দেখিয়ে দিল ভেবেছিলাম বুঝি জিতেই যাবে তাও যা করেছে তাই বা খারাপ কি। আমার ছুটির মধ্যে আরেকটা যেটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল তা হল বাংলাদেশের নির্বাচন। সবার পূর্বধারণা মত আওয়ামীলীগ প্রচুর আসন পেয়ে গেল। তাতে আবার আমি একটু শংকিত হয়ে উঠলাম। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা অনেক সাবধানে অনেক ভাল ভাল কথা বলছেন। জানিনা সত্যি সত্যি তিনি এইসব ধরে রাখতে পারবেন কিনা। পাহাড় সমান আসন পেয়ে তিনি কিন্তু পাহাড় সমান চাওয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এ কথা কি তিনি বুঝতে পারছেন কিনা কে জানে ? এই ৫ বছর আমাদের জাতির জন্য একটা বিশাল গুরুত্বপূর্ণ সময় বলেই আমার মনে হয়। আমাদের রাজনীতির চরিত্র বদলের এইটাই সময়। শুধুমাত্র প্রয়োজন সবার সদিচ্ছা এবং গত ২ বছরের শিক্ষা। কিন্তু ভয় লাগে কুকুরের লেজ নাকি ১০ মন ঘিয়েও সোজা হয় না।
একটা জিনিসে শান্তি পেলাম এরশাদ প্রেসিডেন্ট হবে না জেনে। এরশাদ প্রেসিডেন্ট হবে এটা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছিল অন্য যারা হবে তারা কি এরশাদ থেকে ভাল কিনা। কিন্তু আমি খুবই ইমোশনাল। রাজনীতি সম্বন্ধে আমার বুদ্ধি হওয়ার পরের প্রথম ঘটনাই হল ৯০ এর গণ আন্দোলন। তখন থেকেই অল্প অল্প করে আমি স্বৈরাচার সম্বন্ধে জেনেছি। তাই আমি কখনো মেনে নিতে পারি না সেই এরশাদ আবার প্রেসিডেন্ট হবে। প্রেসিডেন্টের তেমন কোন ক্ষমতা নেই এটা জেনেও এরশাদ যেমন ঘাউরামি করে ওটা হতে চায় আমিও তেমনই ঘাউরামি করে ও প্রেসিডেন্ট হবে এইটার বিপক্ষে। রাজাকার দের বিচার আসলেই হবে কিনা তা আমি জানিনা কিন্তু একভাবে সামাজিক বিচার তাদের হয়েছে বলেই আমার ধারণা। এইভাবে আমরা সামাজিক ভাবেই রাজাকারদের বিতাড়িত করতে পারব আমাদের সমাজ থেকে । অনেকের কাছেই শুনি এত বছর পর রাজাকার ইস্যু টা ব্যবহার না করে সবাই মিলে দেশ গড়াই নাকি লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমি এটাও মানতে পারিনা। রাজাকার কে এখনো আমি আমার দেশের একজন মানতে পারি না।
অনেক বকে ফেললাম। আজ নাহয় বন্ধ করি।

শুভ জন্মদিন

আজ ১৪ জানুয়ারী একেবারেই প্রথম প্রহর। মাত্র ১২টা বাজল। আমার জন্মদিন। ১২ টা বাজার সাথে সাথে নিজেকে নিজেই উইশ করলাম। এরপর আসলাম এখানে কিছু লিখতে। ২৬ তম জন্মদিন। জন্মদিন এর এই সময়টা কেমন কাটে সেটা নিয়ে জানুয়ারী মাস আসলেই আমার খুব কল্পনা বাড়ে। কোনবারই কল্পনা মিলে না। তাও কল্পনা করতে মজাই লাগে। চিন্তা করি ১২ টা বাজার সাথে সাথে নিশ্চয়ই অনেকে আমাকে উইশ করার চেষ্টা করবে । সেই অনেকেরা প্রতিবারই ভুলে যায় কিন্তু আমি আশা ছাড়ি না। বেটার লাক নেক্সট টাইম।
বাসা থেকে আম্মু একটা এসএমএস কিংবা ফোন করার কথা। এইটা অন্তত মিস হবার কথা না। এখনো কেন আসছে না বুঝতে পারছিনা। কনকের তো ভুলে যাওয়ার কথা না। মনে হয় লাইন পাচ্ছে না। কলেজে থাকতে অবশ্য কনক সবসময় ভুলে যেত। রাতের বেলা গিয়ে আমি ওকে মনে করিয়ে দিতাম। আরেকটা কথা মনে পড়ছে পিয়াপুকে নিয়ে। পিয়াপুকে আমি সবসময় ১৪ জানুয়ারী ফোন দিতাম গল্প করতাম কিন্তু কখনই বলতাম না । ওর মনেও থাকত না বুঝতও না। সববার মনে হত ফোন রাখার সময় বলব আজ আমার জন্মদিন ছিল আপু। কিন্তু বলা আর হয়ে উঠেনি। একদিন এইরকম ফোন করার পর পান্থ ভাইয়া ফোন করে ওকে জানিয়ে দিল তপুর জন্মদিন ছিল এই জন্য ও তোমাকে ফোন করেছিল তুমি কেন বুঝলা না। এরপর থেকে ওকে ফোন করা বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ ওকে ফোন করলেই ও সবার আগে চিন্তা করে হয়ত আজ আমার জন্মদিন। দেখা যাবে আমি যদি ২০ তারিখেও ফোন করি সে আমাকে উইশ করবে।
আমার আপুসোনাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করতাম । অনেক সুন্দর সুন্দর কল্পনা করতাম কিভাবে ও আমাকে উইশ করবে। গতবছর ওর মনে ছিল না। এইবার তো আরো মনে থাকবে না। কখনই খুব সুন্দর কিছু পাইনি তাই কেন যেন কিছু কল্পনা করতে গেলে ওর থেকে খুব সুন্দর করে একটা উইশের কথা মনে পড়ে।
আগে বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে উইশ বাদ পড়ত না। শামস,মীম,মর্তুজার কি এবার মনে পড়বে আমার জন্মদিনের কথা। আমি এখন আর ওদের উইশ করি না বিদেশ থেকে।ওরাও হয়ত করবে না। না করুক কিন্তু মনে পড়বে কি? কে জানে। নাহ এবার মনে হয় কেউ উইশ করবে না। ঘুমিয়ে পড়ি। নিজেকে নিজেই উইশ করি। তাও মনের ভিতরে আশা যায় না। হয়ত বাংলাদেশ সময় ১২ টায় কেউ করবে। হাহাহা।
এনিওয়ে
"শুভ জন্মদিন"