Friday, April 24, 2009

ছোটদি (৪)

অনেক রাত এখন। হঠাৎ করে আজ এত ছোটদির কথা মনে পড়ছে তাই আপনার চিঠির উত্তর দিতে বসলাম। আপনার তো এখন খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। শরীরের যত্ন নিয়েন। নিজের জন্য না হোক আমার দিদিটার জন্য হলেও। আপনার জন্য সবসময় চিন্তা করত আমার দিদি এখনো নিশ্চয়ই করে।
স্কুল ফাইন্যালের পরপরই আমার বাবা মারা গেল। পরীক্ষা শেষ করে আমি তখন মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘুরে বেড়াচ্ছি। প্রতিদিন রাত করে বাসায় ফিরতাম। দিদিরা ঝাড়ি দিত ঠিকই তবে তার মধ্যেও তেমন ঝাঁঝ ছিল না। মাঝে মাঝে বেশি দেরি হয়ে গেল শুধু ছোটদি বলত আমি প্রতিদিন তোর জন্য না খেয়ে বসে থাকি আর তোর টিকিটির কোন খবর থাকে না। তার কিছু আগেই হয়ত আমি পেট ভরে পুরি আর চা খেয়ে এসেছি। সেদিন এমনই আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। বাসায় ঢুকার মুহূর্তে জটলা দেখে দাড়ালাম। ভেতর থেকে কে যেন বলছিল,” খোকনটা এখনো আসল না”। ভিড় ঠেলে নিজের বাসায় ঢুকলাম আমি যেখানে আমি খুব কমই পা ফেলি। দেখলাম বাবার খাটকে ঘিরে সবাই বসে আছে। বড়মা চোখ মুছছে। দিদিদের মুখ শক্ত হয়ে আছে। আমি আমার সবসময়ের নির্ভরতার প্রতীক ছোটদির পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললাম, “কি হয়েছে দিদি?” সবাই ততক্ষণে আমাকে দেখতে পেয়েছে। ছোটদি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল। বোকার মত আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম দিদি বাবা কই? হাউমাউ কান্নার ফাঁকে যা বুঝলাম বাবা আমার হঠাৎ করেই অফিসে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে ডাক্তার দেখিয়ে বাবার এক কলিগ বাসায় নিয়ে আসেন। ওনার থেকে খবর পেয়ে যখন বড়মা দেখতে আসেন তখন আবার বাবার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপর আর বেশি সময় কাউকে দেননি। কখন যে তার হার্ট এত দুর্বল হয়ে পড়েছে কেউ কবর রাখেনি। ছেলে হিসেবে কখনো তার কোন খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি সেদিন তাই খুব বাবাকে ডাকতে ইচ্ছে করছিল। বাবা নাকি শেষ সময়ে কাকে খুঁজছিলেন চারপাশে। সবাই বলছিল তোকেই খুঁজছিল খোকন। একটুও কাঁদিনি আমি তখন। বোকার মত সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষকৃত্য সম্পন্ন করে ছাদে উঠে বসেছিলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগছিল। কেন যেন বাবা মারা যাওয়ায় আমার খুব মায়ের কথা মনে পড়ছিল। এর আগে কখনো মনে পড়েনি। সেই চেহারা মনে করতে না পারা মহিলার কথা ভেবে দুচোখ দিয়ে পানি ঝরা শুরু করল। পেছন থেকে দিদিরা এসে আমার পাশে বসেছিল। কেউ স্বান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। কাঁদতে দিয়েছিল আমাকে প্রাণ ভরে, সাথী হয়েছিল আমার কান্নার। ছোটদি আমাকে জাপটে ধরে মাথাটা আমার কাঁধে দিয়ে রেখেছিল।ওর চোখের পানিতে আমার শার্ট ভিজে যাচ্ছে টের পাচ্ছিলাম। মেঝদি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। আকাশের দিকে তাকিয়েই বললাম, “ আমার মা বহুদিন একা ছিল দিদি, আজ অনেক খুশি হয়েছে তাইনারে দিদি? আমার তো তোমরা সবাই আছ আমার মার যে আর কেউ ছিল না ওখানে”।
বড়মা এসে দাঁড়িয়েছিল পিছনে। “খুব খারাপ লাগছে খোকা”?
প্রথম বারের মত হাউমাউ করে কাঁদলাম আমি। “ আমি কেন একা হব বড়মা। আমার কেন খারাপ লাগবে। মা বলতে তো সবসময় তোমাকেই ভেবেছি। কোনদিন তো মায়ের কথা মনে পড়েনি আজ কেন এত মনে পড়ছে। মায়ের কেন কোন চেহারা আমার একটুও মনে নেই। যতবার চেহারা খুঁজতে যাই তোমার চেহারা চলে আসে”। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম আমি।
গঙ্গার পানির কোন বিরাম নেই। এত রাতেও কলকাতার রাস্তায় হাজার মানুষের ভিড়ের একটুও কমতি নেই। শ্মশানের পাশে ঠিকই বসেছে জুয়া আর নেশার আড্ডা। শুধু নক্ষত্রভরা আকাশের নিচে আমরা গুটিকয়েক প্রাণী বিধাতার হাতের পুতুল হয়ে কাঁদতে লাগলাম। তাতে অবশ্য বিধাতার কিছু এসে যায় না। সে তার নিজের হিসাবে ঠিকই আবার ঘটায় একই ঘটনা।
বাবার মৃত্যুর পর আচার রীতি পালনের পর আমি বেশ কিছুদিন চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলাম। বাবা যেই রুমে থাকত সেখানে গিয়ে বসে থাকতাম একা একা। ছোটদি তখন নতুন চাকরী পেল। কলেজে পড়ানো শেষ করে আমাকে খুঁজতে খুঁজতে এসে আমার পাশে বসে থাকত। কখনো ওর কলেজের মজার মজার গল্প বলে আমার মন ভাল করার চেষ্টা করত। খেতে না চাইলে নিজ হাতে মুখে তুলে খাইয়ে দিত।আরো অনেক বেশি করে আদর পেতে থাকলাম ওর কাছ থেকে।
বেশিদিন থাকে নি আমার এই বৈরাগ্য ভাব। কলেজে ভর্তি হবার পর থেকে আমি দুরন্ত হয়ে উঠলাম। বহির্জগতের সাথে আমার পরিচয় ঘটল সর্বান্তকরণে। কিছু নতুন বন্ধুবান্ধব তাদের নিয়ে কফি হাউসে আড্ডা আমার নেশা হয়ে উঠল। শুরু হল আমার দেশোদ্ধারের চিন্তভাবনা। রক্তে যৌবনের গান শুনতে পেলাম আমি। পড়ালেখা নিয়ে পড়ে থাকার থেকে দেশ এর জন্য, অন্যায় এর প্রতিরোধের চিন্তা আমার রক্তে নাচন লাগাল। আমি রাজনীতিতে মেতে উঠলাম। পুরান বন্ধুরা বলত এইসব রাজনীতি হল এই বয়সের হিরোইজম। ওদের কথা তখন আমার গায়ে হূল ফুটাত। ওদের জন্য মায়া হত এখনো ঘরের ননীর পুতুল রয়ে গেল। ভর্তি ফি বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে এইসব নিয়ে নেতারা গরম গরম বক্তৃতা দিত আমাদের রক্ত টগবগ করে উঠত। মিছিল মিটিং শেষে নিজের হাতে পোষ্টার লেখতাম। বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যেত। দেখতাম আমার ছোটদি একা জেগে আছে হয়ত কোন গল্পের বই পড়ছে। আমি আসারা সাথে সাথে খাবার টেবিলে খাবার গরম করে দিত। অপরাধীর মত ওর পাশে বসে পড়তাম খেতে। তখন শুরু হত ওর আমাকে বোঝানো পালা। একসময় ওর উপদেশের মুড শেষ হত। শুরু হত আমাদের ভাইবোনের গল্প।
আলাপে প্রায়ই আপনার কথা উঠে আসত। আপনার কথায় স্বপ্নীল হয়ে উঠত আমার দিদির মুখ। দিদিকে আপনি একটা শাড়ী দিয়েছিলেন। ও যেদিন সেটা পড়ে কলেজে যাচ্ছিল আমি আর মেঝদি ওকে খুব খেপাচ্ছিলাম। লজ্জায় আমার দিদি তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে বেঁচেছিল। এরপর প্রতিদিন দিদি কলেজে বের হওয়ার সময় আমরা ওকে জিজ্ঞেস করতাম কিরে তোর সাংবাদিকের শাড়ী পড়লি না যে। লজ্জা লাল হয়ে আমার দিদি বলত, “ মারব এক থাপ্পড়” । দিদির হাতে কখনো আমার থাপ্পড় খাওয়া হয়নি কিন্তু ও এত সুন্দর করে বলত মারব এক থাপ্পড়। প্রথম বেতন পেয়ে দিদি লিষ্ট করছিল কার জন্য কি কিনবে। আমাকে জিজ্ঞেস করছিল পিচ্চি তোর কি লাগবেরে। কি সব বলেছিলাম মনে নেই কিন্তু যেদিন ও শপিং করে ফিরল তখন দেখি কাকে দিয়ে একটা সাইকেল নামাচ্ছে। বললাম কার জন্য এই সাইকেল । সেই কবে আমি কখন ওর কাছে সাইকেল চেয়েছিলাম ও নাকি বলেছিল চাকরী করে আমাকে সাইকেল কিনে দিবে আজ তাই আমার জন্য সাইকেল কিনে এনেছে। তখন বলেছিলাম তুই কিরে দিদি আমি এখন বড় হয়েছি না সাইকেল না কিনে আমাকে একটা বাইক কিনে দিতি। আজ ও সেই সাইকেল আমার রুমের পাশে থাকে। আমি চড়ি না তাতে কিন্তু প্রতি সপ্তাহে সেটাকে ধুয়ে মুছে চকচকে না করে রাখলে আমার শান্তি হয় না।

বাবা কতদিন কতদিন দেখি না তোমায়...


অনেক বছর হল, আর ২ মাস পার হলে ১২ বছর হবে। আব্বুকে নিয়ে কখনো কোথাও কিছু লেখা হয়নি। শেষ যখন আব্বুকে দেখেছি সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে। অল্প একটু চেষ্টা করলেই দেখতে পাই ক্যাডেট ড্রেস পড়ে আমার ঘর থেকে মামার সাথে বের হয়ে যাওয়া দৃশ্য। আমার আব্বু বসে আছে বারান্দায়। আমি অনেকদুর এগিয়ে গিয়ে একবার দাঁড়িয়ে ছিলাম এরপর পিছনে তাকিয়েছিলাম। সেই দৃশ্য আমার চোখে ভাসে, আব্বু বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে আছে। তারপর আমি উঠে পড়েছিলাম রিকশায়। ক্লাস ৮ এ পড়ি তখন , জুনিয়র আসেনি তখনো। জুনিয়র আসার ৫ দিন আগে আবার যখন বাসায় এসেছিলাম তখন আর আব্বুকে পাইনি, সিলেট থেকে আমি আসতে আসতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল তার আগেই আব্বুর কবর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আব্বুর স্মৃতি স্মরণ করলে তাই আমার সেই চেয়ারে বসে থাকা দৃশ্যটা সবার আগে মনে পড়ে। আমাদের সেই বাসায় আমরা এখন আর থাকি না তবে সেই বাসার সেই বারান্দায় আমি আজো তাকাই সেদিক দিয়ে গেলেই।
বাবা কতদিন কতদিন দেখি না তোমায়...


আমার আব্বু একেবারেই একজন পারিবারিক মানুষ ছিলেন। নিজের পরিবার ছাড়া তার কোন বড় আদর্শ ছিল না। আর ১০ জন সাধারণ মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীদের মতই তিনি সংসার চালাতেন আর মনে একটা বিশাল আশা নিয়ে রাখতেন তার ছেলেগুলা পড়ালেখায় অনেক বড় হবে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার আগে এবং বিকেলে বাসায় ফিরে সন্ধ্যার পর থেকে ৯ টা পর্যন্ত নিজেই আমাদের পড়াতেন। অঙ্ক আর ইংরজি ছাড়া আর কোন সাবজেক্ট তার কাছে পাত্তা পেত না। এই দুইটা পড়তে পড়তে জান কাহিল হয়ে যেত আমাদের। অন্য সাবজেক্টের হোমওয়ার্ক ও আমাদের অনেক কষ্ট করে করতে হত। তার কাছেই জেনেছিলাম আমাদের যেহেতু আর কিছু নেই এই পড়ালেখাই আমাদের একমাত্র পুঁজি। একে সম্বল করেই এগুতে হবে জীবনে উপরে উঠতে হলে। সবচেয়ে কষ্ট হত যেদিন এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিত। সবসময় বৃহস্পতিবারে রেজাল্ট দিত আর শুক্রবারে আব্বু বাজার থেকে পেপার কিনে আনত। সেটা পড়তে পড়তে আমাদের উপর চলত অবিরাম গালিগালাজ। আমরা কেন কিছু পারিনা এই দেখ কত ছেলেপিলে স্ট্যান্ড করে ফেলতেছে। তখন মনে মনে সেইসব স্ট্যান্ড করা ছেলেদের কত গালিগালাজ করেছি। নিজে করে দেখাব এইরকম ভাবার সাহস তখনো পাইনি কারণ স্ট্যান্ড করে তো টিভি, পেপারের ছেলেরা তারা কি মর্ত্যে বাস করে নাকি। আমার বাবাও কোনদিন মনে হয় এইরকম স্বপ্ন দেখেনি। কারণ আব্বু তখন তার অফিসে কলিগদের ছেলেরা স্টার মার্ক্স পেয়ে গোল্ড মেডেল পাচ্ছে এইসব গল্প শোনাত আমাদের। আমরাও সেটার আশা করতাম। স্টার মার্কস পাব গোল্ড মেডেল পেলে আব্বুর অফিসে বসরা বলবে, " জয়নাল সাহেবের ছেলেটা তো অনেক ব্রেইনি"। আমার আব্বু বিগলিত হাসি দিবে। এরচেয়ে অনেক বেশি আনন্দ দেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহ যখন আমাকে দিল তখন আব্বু এসবের অনেক ঊর্দ্ধে। ওপার থেকে কি এপারের কিছু দেখা যায়? আনন্দিত হবার ক্ষমতা কি থাকে? ২০০২ এর সেই দিন আমার খুব বলত ইচ্ছে করছিল , " আব্বু স্ট্যান্ড করা ছেলেদের শুধু যে পত্রিকার পাতায় দেখা যায় তাই না , আপনার ছেলের ছবি আজ পত্রিকার পাতায়"।


ছোটবেলা থেকেই আমার ধারণা আমার আব্বু আমাকে কম আদর করে। এখনো এই ধারণা বদলায়নি। এরকম হতেই পারে এক ঘরে সব ছেলেকে সমান আদর করবে এরকম হয় না। আমিও অনেক ঘাউরামি করতাম। শুক্রবারের দুপুরের খাবারটাই শুধু সপ্তাহে একদিন আমরা আব্বুর সাথে খেতে পারতাম। সেদিন বাজার হত হয়ত মাছ কিনে আনা হত , সেটা থাকত আর আমার আব্বুর বাতিক হিসেবে একগাদা সবজি। সবজি আমি কোনকালের পছন্দ করতে পারি নি বিশেষ করে করলা। এই তিতা জিনিস মানুষ কেমন করে খায় আমি আজও বুঝিনা। আব্বুর সামনে খাওয়া তাই সবাইকেই ওটা খেতে হবে। কিন্তু আমি খাব না তাই প্রথমে ভাত নিয়েই অন্য তরকারী নিয়ে নিচ্ছিলাম। চোখে পড়ে গেলাম আব্বুর। কেন আমি সবজি খাব না সেই জন্য তখনই আমাকে কান ধরে ১০ বার উঠবস করতে বলল। রাগে অপমানে আমি সেদিন শুধু করলা দিয়েই ভাত খেয়েছিলাম। আমাদের বাসায় এখন আর করলা রান্না হয়না বুঝি যে তখন সবাই অনেক কষ্ট করে অপছন্দের খাবার খেত। এখনো কোথাও করলা দেখলে আমার চোখে সেই দিনের দৃশ্য ভেসে উঠে। মানুষের এই ফ্ল্যাশব্যাক সিস্টেম বড়ই অদ্ভুত অন্তত ১৫-১৬ বছর আগের ঘটনা এখনো চোখ বুঝলে সাথে সাথে চোখে ভেসে আসে।


তখন ক্লাস ৫ এ পড়ি মনে হয় বন্ধুদের সাথে অন্য স্কুলের ছেলেদের সাথে ফুটবল ম্যাচ ফেলা হয়েছে। সকাল থেকে আম্মুকে ঘ্যানঘ্যান করছিলাম আব্বুকে বলার জন্য। আব্বুর কাছে সরাসরি আবদার জানাবার সাহস ছিল না আমার তার উপর শুক্রবার সারাদিন আব্বুর প্ল্যান থাকে আমাদের পড়াবার। অনেক কষ্টে আব্বুকে আম্মু রাজি করাল ১১টা পর্যন্ত মন দিয়ে পড়লে আমাকে খেলতে যাবার অনুমতি দেওয়া হবে। শুধু মন কেন আমি মন দেহ সব ঢেলে দিলাম পড়ায় ১১টা বাজার সাথে সাথে উঠে বাইরে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম হঠাৎ আব্বুর কি মনে হল কি জানি বলল আমার খেলতে যাবার দরকার নেই। এ কথা শুনে তো আমার প্রাণ ফেটে যাচ্ছিল এই ভেবে যে তাহলে এতক্ষণ কষ্ট করে পড়লাম কেন। রান্নাঘরে গিয়ে আম্মুর সাথে ঘ্যানঘ্যান করার শাস্তি পেয়েছিলাম সাথে সাথেই।
মনে হচ্ছে খুব কষ্টের স্মৃতি কিন্তু এখন ভাবতে ভাল লাগে। আমি সবার সাথে আমার আব্বুর কথা যখন বলি খুব সাধারণ ভাবেই বলি খারাপ ভাল রাগ একেবারে সাধারণ ভাবেই বলে যাই। আব্বু নেই দেখে কোন রকম আবেগ তুলে আনিনা তাই অনেকে ভাবে আব্বুর উপর আমার রাগ আছে। আসলে একেবারেই তা না। আব্বুর সাথে আমার বাপ-ছেলের সম্পর্কই ছিল। ছোট ছিলাম তাই শাসন খেয়েছি বড় হলে হয়ত সম্পর্কটা অনেক মধুর হত সেই সুযোগ পাইনি। আর আনন্দের স্মৃতি থেকে এইসব শাসনের স্মৃতিই বেশি মনে থাকে। কলেজে যাবার সুবাদে ৩ ভাইয়ের মধ্যে আমিই একমাত্র আব্বুর চিঠি পেয়েছিলাম। সব জমানো ছিল। প্রায় ১৭ খানা চিঠি যক্ষের ধনের মত জমিয়ে রেখেছিলাম। আমার বড় ভাই সেগুলা কোথায় যেন গুছিয়ে রাখল অনেকদিন দেখিনা। দেখি দেশে গেলে খুঁজে দেখতে হবে।

Tuesday, April 7, 2009

ভালবাসি

তুমি ফিরে আসবে কখনো ভাবিনি।
ফিরে আসাতেই বুঝলাম ,
তোমাকে কতটা ভালবাসি।
যে রাগে তোমাকে ভুলতে চেয়েছিলাম
সেটা অবুঝের অভিমান।

আবার যেদিন

ভিতরের মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছে
অনেকদিন আগেই।
আবার যেদিন মানুষ হব
বাংলায় রাজাকার থাকবে না।

অনিকেত প্রান্তর

তোমার আর আমার মাঝে এখন
এক সমুদ্র দূরত্ব।
সেখানে কিছু নেই,
না দুঃখ, না হাহাকার
নেই কোন অভিমান।

Sunday, April 5, 2009

আজ রবিবার

আজ রবিবার , খুব সুন্দর একটা দিন হবে হবে করেও দিনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে এসে দেখি মোবাইলে মিসকল। কার কল হতে পেরে ভাবতে ভাবতে মোবাইল হাতে নিয়েই দেখি আমার আপুসোনার। আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। দুমিনিট আগে ফোনটা আসতে পারত কিংবা আমিও ২ মিনিট পরে মুখ ধুতে যেতে পারতাম। মোবাইলের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে থাকতে মনে হল আমি কল দেই। অনেক অনেক দিন পরে আমার আপুসোনাটাকে ফোন দিলাম। ও ধরেই পিচ্চি বলে একটা ডাক দিল আমার মনটা ভরে গেল। এরপর লাইন কেটে দিয়ে আবার নিজেই করবে বলল। আমি তখন ভাবছি আমার আজকের রবিবারটা অসাধারণ কাটবে।
আমার আপুসোনাটাকে আমি কেন এত ভালবাসি তার কোন উত্তর আমার জানা নেই। শুধু জানি আমার জন্য সে অনেক অনেক স্পেশাল একটা মানুষ। আর ওকে আপুসোনা না ডাকলে ওর কাছ থেকে একদিন পিচ্চি ডাকটা না শুনলে আমার ভাল লাগে না। এর জন্য আমার ভবিষ্যতে অনেক দুঃখ আছে আমি জানি তাও আমি ওকে ভাল না বেসে পারি না। আমার আপুসোনাটা আমার জাআআআন । ভাবতে ভাবতেই ওর ফোন চলে এল। এত সুন্দর করে পিচ্চি ডাকে আমি নিজেও বুঝিনা এত মিষ্টি কেন ওর পিচ্চি ডাকটা। গত ২ দিন আমার সাথে যোগাযোগ করে নি বলে স্যরি হল। আমি একটু আহ্লাদ করার আগের সবচেয়ে মন খারাপ করা খবরটা দিল। ওর একটা অসুখ ধরা পড়েছে। আমি খালি ভাবছি কেন আমার আপুসোনার এত অসুখ হবে। কেন ও এত কষ্ট পাবে। ফোন রাখার পর থেকে শুধু ওর কথাই মনে পড়ছে। আর আল্লাহকে বলছি আল্লাহ আমার আপুসোনাটাকে প্লিজ আর কষ্ট দিও না। অসুখটা যেন খারাপ কিছু না হয় খুব তাড়াতাড়ি যেন অল্প কিছু ট্রিটমেন্ট এই ভাল হয়ে যায়। কেন যেন ফোন রাখার পর থেকে একটা মিনিট ও মাথা থেকে আপুসোনা শব্দটা তাড়াতে পারছিনা।
আপুসোনা আমার , আমার জাআআআআন আপ্পি, তুই তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যা। যে কোন কিছুর বিনিময়ে তোর সুস্থতা কামনা করছি সবার আগে। ভাল থাকিস আপুসোনা অনেক অনেক বেশি ভাল।