Wednesday, May 21, 2008

ফিরে দেখা -২৯ জুন ১৯৯৭

আজ ঘুম থেকে উঠলাম ই ফোনটা পেয়ে। শুভ ফোন দিয়ে বলল জাহিদের একটা দুঃসংবাদ আছে। আমরা তিনজন জাপানের একই জায়গায় পড়ি আবার একই ডর্মে থাকি। জাহিদের সাথে আমার সম্পর্ক আজ ১২ বছর আর শুভর সাথে জাপান এসে পরিচয়। জাহিদের দুঃসংবাদ কি হতে পারে সেটা মাথাতেই আসল না। শুনলাম ওর আব্বা মারা গেছেন। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। ভাবলাম কি বলব। জাহিদ কে ফোন দিব কিনা ভাবছি। কিই বা বলা যায় ওকে। জিজ্ঞেস করলাম দেশে যাবি কিনা। যাবে না ও। গতকাল রাতে মারা গেছেন আঙ্কেল আজ দুপুরেই মাটি দিয়ে দিবে গিয়েও পাবে না। বিদেশে থাকি আমরা যে কোন সময় এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে পারি আমরা যে কেউ। এরপর আমি আর শুভ মিলে চুপ করে বসে থাকি অনেকক্ষণ। মনে পড়ল আজ থেকে ১১ বছর আগের কাহিনী। কি দ্রুত সময় যায়।
১৯৯৭ সাল তখন। ক্যাডেট কলেজে পড়ি। কলেজের হাবিজাবি করতে করতেই দিন যায়। আমার আব্বু তখন অসুস্থ। যে কোন দিন একটা দুঃসংবাদ আসতে পারে কিন্তু ক্যাডেট কলেজে এত ঝামেলে সেসব আমার মনে থাকেনা একদমই। আর বয়সটাও তখন এসবের জন্য উপযুক্ত নয়। ১২ বছরের বালক তখন আমি। বাসায় আব্বু অসুস্থ তাই বলে কলেজে আমার খেলাধুলা, দুষ্টামি কিছুই থেমে থাকেনা। প্রতি সপ্তাহে একটা চিঠি পাঠাই বাসায় তাতে জিজ্ঞস করি আব্বু কেমন আছে। আব্বুর সম্বন্ধে আমার খোঁজখবর সেটুকুই। আমাদের পাক্ষিক পরীক্ষা চলছে তখন। সকালে উঠে ক্লাসে গেলাম। পরের পিরিয়ডে বোধ করি সমাজ পরীক্ষা হবে। আমরা সবাই পড়ছি। আমার ক্লাস টিচার তখন ক্লাসে। উনি ডেকে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার লোকাল গার্জিয়ান কে। আমি আর অত পাত্তা দিলাম না । আমার তখন পরের পিরিয়ডের পরীক্ষা নিয়েই চিন্তা। পরীক্ষা শুরু হওয়ার একটু আগে এসে ভিপি স্যারের দফতরীর ডাক ," কামরুল ১০৪৭ কে? আপনাকে ভিপি স্যার ডাকে" । আমার মাথায় আসল কি ব্যাপার এমন কোন ফল্ট তো করিনি যে ভিপি আমাকে ডাকবে। চিন্তা করতে করতে গেলাম ভিপি অফিসে। গিয়ে দেখি আমার খালাত ভাই বসে আছে। তখনই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। আব্বুর কোন সংবাদ। আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার আব্বু কেমন আছে। ভাইয়া বলল আব্বু একটু বেশি অসুস্থ আমাকে দেখতে চেয়েছে। ওভাবে বলাই বুঝি নিয়ম। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না আমার কিন্তু কেন যেন আমি বুঝেও না বোঝার চেষ্টা করতে থাকলাম। বসে আছি ভিপির অফিসের পাশে আর ভাবছি কখন এরা আমাকে ছাড়বে। ৯টা থেকে ১১টা বাজিয়ে দিল তারা অফিসিয়াল কাজ সারতে সারতে। কলেজ থেকে বেরিয়ে বাস স্টেশনে গেলাম। সিলেট থেকে ফেনীর তখন কোন ভাল বাস নেই। যেতেই লাগবে ৭-৮ ঘন্টা। তাও কুমিল্লা হয়ে যেতে হবে। যত তাড়াতাড়ি রওনা হওয়া যায়। ঢাকায় থাকা আব্বু কেন ফেনীতে আমাকে দেখতে চাইল সেটা ভেবেই আমি কনফার্ম হয়ে গেলাম আব্বুকে দাদাবাড়ি নিয়ে গেছে । তাও আমি যাচ্ছি। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। পড়ে জানতে পেরেছিলাম আব্বু মারা গেছেন তার আগের রাতে ১১ টায়। সাথে সাথে রাতের ২টার দিকে আমার কলেজে ফোন করা হয়েছিল কিন্তু কেউ ধরেনি। সকালে আমার খালাত ভাই এসেও অনেক আগেই বসে ছিল কলেজে কিন্তু স্যারদের অফিস টাইম শুরু হয় নি বলে তাড়াতাড়ি কিছু করা যায়নি।
বিকেল ৫টায় আমি এসে ফেনী নামলাম। কেন যেন আমি আমার দাদাবাড়ি না গিয়ে নানার বাসায় আসলাম। এসে দেখি কেউ নেই। এক খালা শুধু আছেন। এসে বোকার মত আমি জিজ্ঞেস করলাম আব্বু কই? আব্বুর দাফন হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। আম্মু আসল আরো ২ ঘন্টা পর। এই দুই ঘন্টা আমি ভেবেছি আম্মুর সাথে কি বলব আমি?
আব্বুকে আমি আর দেখতে পারিনি। আম্মু আমাকে পরে বলেছিল তুই বুঝিস নি ? কেন সরাসরি গ্রামের বাড়িতে যাসনি? ১২ বছরের একটা ছেলের তখন এই বুদ্ধি হওয়ার কথা কি?
আমার তাই আমার আব্বুর মৃত চেহারার কোন স্মৃতি নেই। শেষ যে চেহারা মনে আছে তা হল তার আগের বার কলেজে যাওয়ার সময় আমি বাসা থেকে বের হলাম আব্বু বারান্দায় চেয়ারে বসে আমার দিকে চেয়ে আছে। এটাই আমার আব্বুর শেষ দেখা। এরপর থেকে আমি কতবার আব্বুকে স্বপ্নে দেখি। আব্বুক স্বপ্নে দেখাটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আজ ১১ বছর পরেও তা কমেনি এখনো সপ্তাহে একবার হলেও আব্বুকে আমি স্বপ্নে দেখি। মনে হয় শেষ দেখা হয়নি বলেই। আমার অন্য ভাইরা দেখে না শুধু আমিই।
আজ খুব সেদিনের কথা মনে পড়ছে। খুব খুউব।

Sunday, May 18, 2008

ফয়েটে দুপুর

রেষ্টুরেন্টে বসে কি খাব মেনুতে চোখ বুলাচ্ছি। এমন সময় ,"আরে আপনাকে বসিয়ে রাখলাম" বলতে বলতে এক তরুণী এসে আমার সামনে বসল। আমি তো ভেবেই পাচ্ছিনা কারো কি আমার সাথে lunch করার কথা ছিল কিনা। কিন্তু তরুণী ভাবতেই মনে মনে পুলকিত হয়ে উঠতে গিয়েই হোঁচট খেলাম। চেহারাতে অতটা পুলকিত হবার কিছু নেই কিন্তু খুবই চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি। মেনুটা ওনার দিকে এগিয়ে দিতেই উনি যা বললেন তাতেই আমি তাকে চিনে ফেললাম।
"আমি তো লাঞ্চে ১ টার বেশি কিছু খাইনা।" মেনু হাতে নিয়েই বলল।
এ তো সেই পেটুক মহিলা উইলিয়াম সমারসেট মম কে যিনি ফতুর করে ছেড়ে দিয়েছেন। আশে পাশে তাকিয়ে বুঝলাম আরে আমি যে ফয়েটে বসে আছি। কিন্তু ইনি এখানে কেন। একেবারে সেই চেহারা, "imposing rather than attractive" ভীত হয়ে উঠেই মানিব্যাগে হাত দিলাম আমি। উনি বসেই আমাকেও ফতুর করার মিশন শুরু করে দিলেন। আর আমি মনে মনে ভাবি সচলায়তনে আর ক্যাডেট কলেজের একটা ব্লগে লেখি কিন্তু ভক্ত হওয়ার তো চান্স নেই ইনি আমাকে পেল কোথায়। বেশিক্ষণ চিন্তা করতে পারলাম না, বিশাল একটা বিল এসে গেল আমার হাতে। কিন্তু মমের যা ছিল না তা আমার আছে একখানা ক্রেডিট কার্ড। তা দিয়ে বিল দিয়ে বেরুতেই তরুণী দেখি হাওয়া।
আমার চোখের সামনে ছেড়া জামা আর বিশাল এক নাবিক টুপী পড়া ancient mariner. জীবে দয়া করার উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে।এবার আর আমার চিনতে দেরী হয় নি। সাথে সাথেই চিনতে পেরেছি। এলবাট্রসটাকে যে কেন উনি মারতে গেলেন সেটা জিজ্ঞেস করতে এগুবো তখনই পেছন থেকে বাচচা একটা ছেলে আমার জামা টেনে ধরল। চিনতে পারলাম জেরীকে। একেই তাহলে বলে integrity। হায়রে কত ভাবে পড়েও এর মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারিনি । ওর হাতের ভারী জিনিস কিভাবে বহন করছে জিজ্ঞেস করতে গিয়েই বুঝে ফেললাম কি বলবে ও। "size dont matter chopping wood"
আমার চারপাশে ছোটবেলায় পড়া সব চরিত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার আমি রেষ্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম জিম আর ডেলাকে খুঁজে বের করার জন্য। কোনার দিক একটা কাপল পেয়ে গেলাম। চুপটি করে ওদের পিছনে বসে ওদের পুতুপুতু প্রেমময় কথাবার্তা শুনেই চিনতে পারলাম ওদের। দুজন দুজনে এত ব্যস্ত তাই আমি আর জানতে পারলাম না ডেলার চুল লম্বা হতে কত সময় লাগল আর জিমই বা ঘড়ির চেইনটা দিয়ে কি করল।

ঘড়ির কর্কশ এলার্মে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। আরে চমতকার একখানা স্বপ্ন দেখলাম তো। গতরাতে প্রথম আলোতে luncheon এর বাংলা অনুবাদ পড়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে hsc তে পড়া ইংরেজির গল্পগুলার কথা মনে পড়ছিল। সেটাই আমার জীবনের প্রথম ইংরেজী সাহিত্য পড়া। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের ইংরেজি সিলেবাস একই থাকার কারণে অনেক বড় ভাইয়াদের সাথেও এই কথা গুলা মিলে। "size dont matter ", " imposing rather than attractive" এই কথা গুলা সবার সামনে বললেই বুঝে ফেলে। এখনকার পোলাপান এইগুলা বুঝে না। ওরা মনে হয় অনেক জানে তবে আমার মনে হয় ইন্টারে থাকতেই ইংরেজি সাহিত্যের ৪টা ছোট গল্পের সাথে পরিচয় অন্তপক্ষে আমার জন্য একটা বিশাল ব্যপার ছিল।

আপুসোনা ---৪


-কিরে তপু বসে আছিস যে একা এখানে?
-তোমার জন্যই তো বসে আছি আপুমনি।
-কেন রে তোর বন্ধুরা কোথায়?
-ওরা তো চলে গেছে।আমার তো সেই ২টায় ক্লাস শেষ হয়ে গেছে।তোমার routineদেখে তোমার জন্য বসে আছি আমি।
-ধূর গাধা। আমি তো রাতে তোকে ফোন দিবই।
-নারে আপুমনি তোমার কথা এত মনে পড়ছিল যে একটু দেখা না হলে ভালই লাগত না।
-তুই একেবারে পাগল একটা পিচ্চি।
-আরো পিচ্চি হলে ভাল হত।
-কেন রে?
-তোমার আর কাছে কাছে থাকতে পারতাম। কে কি ভাবল ওইটা care করতে হতনা।
-কিইবা এসে যায় বল মানুষজন কি ভাবল না ভাবল।তুই আমার ছোটভাই এটা তুই আর আমি জানলেই তো হল তাইনা।
-আপুমনি এ কথা টা তোমার সবসময় মনে থাকবে তো?সবসময় আমাকে এরকম ভাবে আদর করবি তো আপুমনি?
আস্তে করে তপুর মাথার চুলে একটু হাত বুলিয়ে দেয় লাবণী।পাগলটা কি জানে, যে গতকাল রাতে ও যে সারাক্ষণ ওর কথাই ভেবেছে?ঠিক এসময় ওর গাড়ীটা চলে আসে।
-যাইরে পিচ্চি।
-আপু শোন, ডাকে তপু।
-এইটা রাখ বাসায় গিয়ে খুলে দেখবে। একটা খাম এগিয়ে দেয় তপু।
অবাক লাবণী কিছু বুঝে উঠার আগেই তপু চলে যায়।
বাসায় ফিরে fresh হয়ে এসে নিজের খাটে শুয়ে খামটা খুলে পড়তে শুরু করে লাবণী। সারাটা রাস্তাই ভাবছিল কি লিখেছে পাগলটা

লাবণী আপু
কেমন আছ আপু?খুব অবাক হয়েছ চিঠিটা পেয়ে? তোমার মন খারাপ ভাব কমেছে আপু?তোমার যে কারণে মন খারাপ ঐটা তো আমি ঠিক করতে পারবনা। তোমাকে যে কাল বললাম তমার মন ভাল করে দিব তার জন্যই এই বুদ্ধি।চিঠি পেলে আমার খুব ভালো লাগে। তোমার ও ভালো লাগবে আশা করি। আমার একটা শখ হল মানুষকে চমকে দেয়া। হঠাত করে চিন্তার বাইরে কিছু হলে মানুষ কেমন খুশী হয়ে উঠে ঐটা কল্পনা করতে আমার খুব ভাল লাগে।
আমার না ছোটবেলা থেকেই একটা বড়বোনের খুব আফসোস। আমি কত কল্পনা করি আমার একটা বড় বোন থাকলে এইভাবে আমাকে আদর করত। তুমি কি কখনো ভেবেছ তোমার যদি একটা ছোটভাই থাকত তাহলে তুমি কি করতে? যদি নাও ভাব এখন ভাব কারণ তোমার একটা ভাই হয়েছে তাইনা আপু?
আমি ক্লাসে বসে বসে তোমাকে চিঠি লিখছি। বিকেল বেলা তোমাকে দিব। ইচ্ছে করছে বিশাল একটা চিঠি লিখি।পড়তে পড়তে তোমার যেন শেষই না হয়। আপুমনি আমার , তুমি ভালো থেকো অনেক অনেক বেশি ভাল।একটু ও মন খারাপ করবা না কখনো। সারাটা চিঠি জুড়ে শুধু আমার কথাই লিখলাম তোমার কথা কিছু জিজ্ঞেস করা হলনা।মন কি একটু হলেও ভাল হয়েছে আপু?
তপু

চিঠি পড়তে পড়তে চোখটা ভিজে উঠল লাবণীর।এত ভাল লাগছে ভেজা চোখ টা মুছতেও ইচ্ছা করছে না। কেউ একজন ওকে নিয়ে ভাবছে মন ভালো করে দেওয়ার জন্য ক্লাসের ফাঁকে চিঠি লিখছে।ভাবতেই কেমন জানি লাগছে ওর।বহুদিন পরে ভালবাসার response পেল ও।কি করা যায়। মনে মনে ডাকল পিচ্চিটাকে।“তুই কিভাবে বুঝলি রে চিঠি যে আমার এত পছন্দ। আমি যাকে পছন্দ করি তাকে limit ছাড়িয়ে ফেলি পছন্দ করতে করতে।মাঝে মাঝে মনে হয় এই জন্যই বুঝি পছন্দের মানুষটা পাত্তা দিচ্ছেনা বিরক্ত হচ্ছে। হয়তবা বেশি ভালবাসি বলেই care করছে না।একথা ভেবেই মন খারাপ ছিল রে।তুই তো একেবারে reverse way তে আমার মনটা ভাল করে দিলি।
-লাবণী খেতে আস।বেশিক্ষণ কথা বলা হল না খাওয়ার ডাক চলে আসল।খেতে বসে লাবণীর খুশি ভাব কারো দৃষ্টি এড়ালো না।
-কিরে লাবণী কয়দিন মন মরা করে ছিলি আজ দেখি বেশ খুশি খুশি।
মায়ের কথার কোন জবাব দিল না লাবনী।চুপচাপ খেয়ে উঠে নিজের রুমে এসেই মোবাইল এ রিং দিয়ে দিল

Saturday, May 3, 2008

আপুসোনা----৩


-কিরে তোর মন এত খুশি খুশি কেন?
-আম্মু আজ আমার লাবণী আপুর সাথে কথা হল।ওই যে যে আপুটার কথা আপনাকে বলেছিলাম। খুবই মায়াবতী একটা আপু। আমাকে আজ ও ওর ছোটভাই বানিয়েছে।
-তোর এই বড়বোন শখ আর গেলনা। একদিনেই ভাই বানিয়ে ফেলল।বেশি আপু আপু করিসনা পড়ে দেখিস কষ্ট পাবি।
-আরে নাহ আম্মু। এতদিন তো আমি অনেক কে বোন বানিয়েছি।দুদিন পরে ওরা সরে গেছে এবার তো লাবণী আপুই আমাকে ভাই বানিয়েছে এবার আর কষ্ট পাবনা।
প্রশ্রয়ের হাসি ফুটে উঠল সিপনের মুখে।ছেলেটা তার এত ভালো...
মায়ের সাথে কথা বলে এসে নিজের পড়ার টেবিলে বসে তপু।কিন্তু খুবই ছটফট করছে। সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করছে ওর আপুর কথা।শরৎচন্দ্রের মেঝদিদি বইটা হাতে নিল ও।এইসব বই পড়ে পড়েই ওর মনের ভিতরে বড়বোনের আকাঙ্ক্ষা এত বেশি। আজ মনে হচ্ছে এইরকম বোন শুধু যে বইতেই থাকে তা নয় ওর নিজের ও আছে।সারাক্ষণ কানে বাজছে মিষ্টি একটা সুর “আজ থেকে তুমি আমার ছোটভাই”।পারবে তো এই আপুটা ওর কল্পনার আপুর থেকেও অনেক বেশি করে ওকে আদর করতে।পারবে নিশ্চয়ই।
নাহ কিছু একটা করতে হয় ওর আপুটার জন্য।ভাবে তপু।
আমি থাকতে আমার আপুটার মন খারাপ হয়ে থাকবে আর আমি কিছু করবনা তা কেমন করে হয়।কিন্তু কি করা যায়। একটার পর একটা প্ল্যান আসছে আর বাদ হচ্ছে।এসময়েই মোবাইলটা বেজে উঠল। নাম্বারটা চেনেনা ও তবুও নিশ্চিত জানে এটাই সেই ফোন যার জন্য তখন থেকে মনে মনে অপেক্ষা করছে ও।

Thursday, May 1, 2008

আপুসোনা ---২


-আপনি লাবণী আপু।
বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে একাই বসে ছিল লাবণী।হঠাৎ করে সামনে একটি ছেলে।আপু ডাক শুনে বোঝা গেল জুনিয়র।
-হ্যা তোমাকে চিনিনা কিন্তু প্রায়ই দেখি।
-আমিও দেখি আপু আপনাকে। আগে থেকেই চিনি।omecay BUET admission এর একটা class নিয়েছিলেন আপ্নি।সেদিন থেকেই তো আমি আপনার ফ্যান। ওহ আপু আমার নাম তপু।CSEতে ০২ ব্যাচ।আপনাকে প্রতিদিন দেখি ভাবি কথা বলব কিন্তু আপনি বন্ধুদের সাথে থাকেন আর কেমন যেন বলা হয়ে উঠে না।এক নাগাড়ে কথা বলে একটু থামল তপু। মিষ্টি করে হাসল।
গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছিল লাবণী।কয়েকদিন ধরেই personal কিছু ব্যাপারে মনটা ভালো নেই ওর।হঠাৎ করে এই ছেলেটির কথা শুনে খুব ভালো লেগে গেল ওর। মনে মনে ভাবল এরকম একটা ছোটভাই থাকলে মন্দ হতনা।
-তাই নাকি ভাইয়া। কথা বললেই পারতে। আরো আগেই পরিচয় হত তাহলে তোমার সাথে।
এমনিতেই লাবণী খুব মিষ্টি করে কথা বলে।তার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে তপু পুরো অভিভূত। কতদিন ও ভেবেছে এই লাবণীটা যদি ওর আপন বড় বোন হত। একটা বড় বোনের আকাঙ্খা ওর সেই ছোটবেলা থেকেই। কত জনকে নিয়ে যে বড় বোন কল্পনা করেছে ও। বলাই বাহুল্য লাবণী ও তাদের মধ্যে একজন।
-better late than never আপু। বলেই পাশে বসল তপু। আপনার সাথে গল্প করি আপু একটু?
-অবশ্যই ভাইয়া। আমার গাড়ী আসার wait করছি। ততক্ষণ বকবক করা যায়।
হাহা করে হেসে উঠল তপু। হাসিটা বেশ প্রাণখোলা ওর।দেখতে ভারি ভালো লাগল লাবণীর।
-আপনি বকবক করবেন?আপনার ঐ চশমা দেখে আপনাকে খুব গুরুগম্ভীর মনে হয়।
-তাই নাকি? এ কথা শুনে একটু আনমনা হয়ে পড়ে লাবণী।একই কথা আরো একজন বলেছিল।“চশমা তে তোমাকে খুব গম্ভীর লাগে”।
-আপু হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেন যে...
-ও না কিছু না এমনিতেই। মনটা ভালো নেই কিছুদিন ধরেই।
-হুমম বোঝা যায়। সবসময় তো বন্ধুদের সাথেই থাকেন আজ একা একা বসে আছেন।আমার জন্য অবশ্য ভালোই হল।আপনার সাথে পরিচয় হয়ে গেল।কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ।
-না তা হবে কেন প্রতিবাদ করে লাবণী।আমারো তো ভাল হল একটা ছোটভাই পাওয়া গেল।আমার তো কোন ভাই নেই।
-সত্যি বলছেন আপু? আমাকে আপনার ছোট ভাই বানাবেন? নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারেনা তপু।। আমার ও তো কোন বোন নেই। আমার সেই ছোটবেলা থেকেই একটা বড় বোনের যে কি শখ। আমাকে আপনার ছোট ভাই বানিয়ে নিন।
-okk বানিয়ে নিলাম।
এসময়ই গাড়ী চলে আসল লাবণীর। খুবই ভালো লাগছিল ওড় ছেলেটির বাচ্চা বাচ্চা কথা শুন্তে।মনে হচ্ছিল আসলেই বুঝি ওর ছোটভাই। অনেকদিন পর ওর সামনে এসে হাজির হয়েছে।গাড়ীতে উঠার আগে বলল,
-আজ থেক তুমি আমার ছোটভাই।তোমার ফোন নম্বরটা দাও রাতে ফোন করব আমি।
যাই ভাইয়া আজ আমি।বাসায় চিন্তা করবে।
-আল্লাহ হাফেজ আপু। সাবধানে যেও।মনের আজান্তেই তুমি ডাকল তপু।
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে গাড়ীতে উঠে গেল লাবণী। গাড়ী ছাড়ার আগে আলতো করে হাতটা নাড়ল ছোট্টভাইটার উদ্দেশ্যে।