Tuesday, October 13, 2009

গোলামের গর্ভধারিণী- হুমায়ুন আজাদ

গোলামের গর্ভধারিণী- হুমায়ুন
আজাদ
====================
আপনাকে দেখিনি আমি; তবে আপনি
আমার অচেনা
নন পুরোপুরি, কারণ বাঙলার
মায়েদের আমি
মোটামুটি চিনি, জানি। হয়তো
গরিব পিতার ঘরে
বেড়ে উঠেছেন দুঃক্ষিণী
বালিকারূপে ধীরেধীরে;
দুঃক্ষের সংসারে কুমড়ো ফুলের
মতো ফুটেছেন
ঢলঢল, এবং সন্ত্রস্ত ক'রে
তুলেছেন মাতা
ও পিতাকে। গরিবের ঘরে ফুল
ভয়েরই কারণ।
তারপর একদিন ভাঙা পালকিতে চেপে
দিয়েছেন
পাড়ি, আর এসে উঠেছেন আরেক গরিব
ঘরে;
স্বামীর আদর হয়তো ভাগ্যে
জুটেছে কখনো, তবে
অনাদর জুটেছে অনেক। দারিদ্র্য,
পীড়ন, খণ্ড
প্রেম, ঘৃণা, মধ্যযুগীয়
স্বামীর জন্যে প্রথাসিদ্ধ
ভক্তিতে আপনার কেটেছে জীবন।
বঙ্গীয় নারীর
আবেগে আপনিও চেয়েছেন বুক জুড়ে
পুত্রকন্যা,
আপনার মরদ বছরে একটা নতুন
ঢাকাই
শাড়ি দিতে না পারলেও বছরে বছরে
উপহার
দিয়েছেন আপনাকে একের পর এক
কৃশকায়
রুগ্ন সন্তান, এবং তাতেই আপনার
শুষ্ক বুক
ভাসিয়ে জেগেছে তিতাসের তীব্র
জলের উচ্ছ্বাস।
চাঁদের সৌন্দর্য নয়, আমি জানি
আপনাকে মুগ্ধ
আলোড়িত বিহ্বল করেছে সন্তানের
স্নিগ্ধ মুখ,
আর দেহের জ্যোৎস্না। আপনিও
চেয়েছেন জানি
আপনার পুত্র হবে সৎ, প্রকৃত
মানুষ। তাকে
দারিদ্র্যের কঠোর কামড় টলাবে
না সততার
পথ থেকে, তার মেরুদণ্ড হবে দৃঢ়,
পীড়নে বা
প্রলোভনে সে কখনো বুটদের সেজদা
করবে না।
আপনার উচ্চাভিলাষ থাকার তো কথা
নয়, আপনি
আনন্দিত হতেন খুবই আপনার পুত্র
যদি হতো
সৎ কৃষিজীবী, মেরুদণ্ডসম্পন্ন
শ্রমিক, কিংবা
তিতাসের অপরাজেয় ধীবর। আপনি
উপযুক্ত
শিক্ষা দিতে পারেন নি
সন্তানকে;- এই পুঁজিবাদী
ব্যবস্থায় এটাই তো স্বাভাবিক,
এখানে মোহর
ছাড়া কিছুই মেলে না, শিক্ষাও
জোটে না। তবে এতে
আপনার কোনো ক্ষতি নেই জানি;
কারণ আপনি
পুত্রের জন্যে কোনো রাজপদ, বা ও
রকম কিছুই
চান নি, কেবল চেয়েছেন আপনার
পুত্র হোক
সৎ, মেরুদণ্ডী, প্রকৃত মানুষ।
আপনার সমস্ত
পবিত্র প্রার্থনা ব্যর্থ ক'রে
বিশশতকের এই
এলোমেলো অন্ধকারে আপনার পুত্র
কী হয়েছে
আপনি কি তা জানেন তা, হে অদেখা
দরিদ্র জননী?
কেনো আপনি পুত্রকে
পাঠিয়েছিলেন মুঘলদের
এই ক্ষয়িষ্ণু শহরে, যেখানে
কৃষক এসে লিপ্ত
হয় পতিতার দালালিতে, মাঠের
রাখাল তার
নদী আর মাঠ হ'য়ে ওঠে হাবশি
গোলাম?
আপনি কি জানেন, মাতা, আপনার
পুত্র শহরের
অন্যতম প্রসিদ্ধ গোলাম আজ?
আপনি এখন
তাকে চিনতেও ব্যর্থ হবেন,
আপনার পুত্রের দিকে
তাকালে এখন কোনো মস্তক পড়ে না
চোখে, শুধু
একটা বিশাল কুঁজ চোখে পড়ে।
দশকে দশকে
যতো স্বঘোষিত প্রভু দেখা
দিয়েছেন মুঘলদের
এ-নষ্ট শহরে, আপনার পুত্র তাদের
প্রত্যেকের
পদতলে মাথা ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে
পৃষ্ঠদেশ জুড়ে
জন্মিয়েছে কুঁজ আর কুঁজ; আজ তার
পৃষ্ঠদেশ
একগুচ্ছ কুঁজের সমষ্টি;-
মরুভূমিতে কিম্ভুত
বহুকুঁজ উটের মতোই এখন দেখায়
তাকে।
সে এখন শহরের বিখ্যাত গোলাম
মজলিশের
বিখ্যাত সদস্য, গোলামিতে সে ও
তার ইয়ারেরা
এতোই দক্ষ যে প্রাচীন,
ঐতিহাসিক গোলামদের
গৌরব হরণ ক'রে তারা আজ মশহুর
গোলাম
পৃথিবীর। এখন সে মাথা তার
তুলতে পারে না,
এমনকি ভুলেও গেছে যে একদা তারও
একটি
মাথা ছিলো, এখন সে বহুশীর্ষ
কুঁজটিকেই মাথা
ব'লে ভাবে। খাদ্যগ্রহণের পর
স্বাভাবিক পদ্ধতিও
বিস্মৃত হয়েছে সে, প্রভুদের
পাদুকার তলে
প'ড়ে থাকা অন্ন চেটে খাওয়া ছাড়া
আর কিছুতেই
পরিতৃপ্তি পায় না আপনার পুত্র,
একদা আপনার
স্তন থেকে মধুদুগ্ধ শুষে নিয়ে
জীবন ধারণ
করতো যে বালক বয়সে। এখন সে
শত্রু পাখি
ও নদীর, শত্রু মানুষের, এমন কি
সে আপনার
স্তন্যেরও শত্রু। তার জন্য
দুঃক্ষ করি না, কতোই
তো গোলাম দেখলাম এ-বদ্বীপে
শতকে শতকে।
কিন্তু আপনার জন্যে, হে গরিব
কৃষক-কন্যা, দুঃক্ষী
মাতা, গরিব-গৃহিণী, আপনার জন্যে
বড় বেশি
দুঃখ পাই;- আপনার পুত্রের
গোলামির বার্তা আজ
রাষ্ট্র দিকে দিকে, নিশ্চয়ই তা
পৌঁছে গেছে তিতাসের
জলের গভীরে আর কুমড়োর খেতে,
লাউয়ের
মাঁচায়, পাখির বাসা আর চাষীদের
উঠানের কোণে।
তিতাসের জল আপনাকে দেখলে ছলছল
ক'রে
ওঠে, 'ওই দ্যাখো গোলামের
গর্ভধারিণীকে'; মাঠে
পাখি ডেকে ওঠে, 'দ্যাখো গোলামের
গর্ভধারিণীকে';
আপনার পালিত বেড়াল দুধের বাটি
থেকে
দু-চোখ ফিরিয়ে বলে, 'গোলামের
গর্ভধারিণীর
হাতের দুগ্ধ রোচে না আমার জিভে',
প্রতিবেশী
পুরুষ-নারীরা অঙ্গুলি সংকেত
ক'রে কলকণ্ঠে
বলে, 'দ্যাখো গোলামের
গর্ভধারিণীকে।' এমন কি
প্রার্থনার সময়ও আপনি হয়তো বা
শুনতে পান
'গোলামের গর্ভধারিণী, ধারিণী'
স্বর ঘিরে ফেলছে
চারদিক থেকে। আপনি যখন অন্তিম
বিশ্রাম
নেবেন মাটির তলে তখনো হয়তো
মাটি ফুঁড়ে
মাথা তুলবে ঘাসফুল, বাতাসের
কানে কানে ব'লে
যাবে, 'এখানে ঘুমিয়ে আছেন এক
গর্ভধারিণী
গোলামের।' ভিজে উঠবে মাটি
ঠাণ্ডা কোমল অশ্রুতে।
কী দোষ আপনার? মা কি কখনোও জানে
দশমাস
ধ'রে যাকে সে ধারণ করছে সে মানুষ
না গোলাম?

Sunday, August 2, 2009

এ টেল এট নাইট

-পিচ্চি আমার উপর খুব রাগ হয়েছে ভাইয়া? তখন খুব মেজাজ খারাপ ছিল এইজন্য তোকে বকেছি রাগ করিস না ভাইয়া দেখ আমার কত খারাপ লাগছে।
অভিমানে চোখ ভারী হয়ে আসে পিচ্চিটার, তাকায় না আপুর দিকে।
এবার কিন্তু নিজেই মুখটি হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দিয়ে নিজের দিকে ফেরায় আপু, খুব বেশি রাগ হয়েছে সোনা? আয় আর পড়তে হবে না ঘুমাবি। আজ আমার সাথে ঘুমাবি তুই আমি তোকে গল্প শোনাব।
এবার পিচ্চি ঠিকই কেঁদে দেয়। চোখ মুছতে মুছতে আপুর কোলে উঠে পড়ে।

-এই আপুসোনা তুই বলেছিস গল্প শোনাবি।
- হ্যা বলছিরে সোনা, একটু ঠিক করে নেই। পিচ্চিটার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গল্প ঠিক করে আপু।
এক জংগলে এক খুব দুখী একটা মেয়ে ছিল। তার এই পৃথিবীতে কেউ নাই। একা একা একটি কুড়েঘরে থাকে মেয়েটি...
-ওর কোন পিচ্চিসোনা নাই আপুসোনা?
-ঐ গাধা পিচ্চিসোনা থাকলে কি আর ও দুখী হয়?
-আহারে, তারপর?
-সেই মেয়ে একা একা জঙ্গলে থাকে খাবার জোগাড় করে রান্না করে ,খাওয়া দাওয়া করে আর গুনগুন করে গান করে। রাতের বেলায় ওর গলায় খুবই করুণ গান চলে আসে। সেটা শুনে পশুপাখিরা পর্যন্ত চোখে পানি চলে আসে।
- ও কি রাজকন্যা আপুসোনা?
- আরে না। ও একেবারেই সাধারন একটা মেয়ে। রাজকন্যারা তো খুব সুন্দর হয় এই মেয়ে তো এত সুন্দর না, আমার মত অনেকটা।
- তুই সুন্দর না এটা কে বলেছে? তুই হচ্ছিস পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর।আপুসোনাকে জড়িয়ে ধরে বলে পিচ্চি।
-এইজন্যই তো বলেছিলাম ওই মেয়ের যদি একটি পিচ্চিসোনা থাকত তাহলে কি আর ও দুখী হত। হুমম তারপর শোন সেই মেয়ে কিন্তু মনে মনে একটা রাজপুত্রের জন্য অপেক্ষা করে। ও ভাবতে থাকে একদিন এক রাজপুত্র এসে ওকে নিয়ে যাবে ।
-কেন?
-একবার এক খুব বুড়ো একটা লোক ওর কুড়েঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় পানির তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েছিল । মেয়েটি তখন খুব আদর করে বুড়োটার সেবা করেছিল। বুড়ো খুশি হয়ে বলেছিল মা আমি তোকে বর দিলাম তোর রাজপুত্রের সাথে বিয়ে হবে। মেয়েটি ফিক করে হেসে দিয়ে বলেছিল তুমি কি সন্ন্যাসী? বুড়োও হেসে বলেছিল সন্ন্যাসী না হলে কি বর দেওয়া যায় না? তুই এত লক্ষী একটি মেয়ে তোর বর লাগবে কেন তোর এমনিতেই রাজপুত্রের সাথে বিয়ে হবে।
-তাহলে তো আর বিয়ে হবে না রাজপুত্র আসবে না। পিচ্চির সুচিন্তিত মন্তব্য।
-কেন?
- ওমা তুমি দেখি কিছু জাননা সন্ন্যাসী না হলে কি আর বর কাজ করে?
- করেরে পিচ্চি করে। তুই যদি খুব ভাল কিছু কাজ করিস আর কেউ যদি মন থেকে তোর জন্য দোয়া করে তাহলে কাজ করে। আমিই তো বর পেয়েছি।
- তাই কবে আপুসোনা? তোর সাথে সন্ন্যাসীর দেখা হয়েছিল বুঝি?
- উহু। সন্ন্যাসী না অনেক আগে তখন তুই ছিলি না। আমিও এরকম এক বুড়ো ফকিরকে পানি দিয়েছিলাম। সে আমাকে বলেছিল খুকী তোমার কি চাই।
-কি চাইছিলি তুই?
-আমি বলেছিলাম , আমার পুতুল আমার সাথে কথা বলে না আমার একটা জীবন্ত পুতুল চাই।
-পেয়েছিলি আপুসোনা জীবন্ত পুতুল?
- হ্যা পেয়েছি। তার অল্প কিছুদিন পরেই পেয়েছি।
- কি বলিস আপুসোনা আমাকে দেখাস নি তো।
পিচ্চিটাকে জড়িয়ে ধরে উত্তর দেয় আপুসোনা " তোকে কিভাবে দেখাই , তুইই তো আমার সেই জীবন্ত পুতুল " । বোকার মত হাসে পিচ্চি আপুসোনার আদর পেয়ে।
- তারপর কি হল ঐ মেয়েটার।
- ওহহ, তো সেই মেয়ে বসে থাকে রাজপুত্রের আশায় মনে মনে ভাবে হতেও তো পারে সেই বৃদ্ধ লোকটি কোন ছদ্মবেশী সন্ন্যাসী। রাজপুত্র তো আর আসে না। একদিন এক ছেলে আসল তাকে দেখে কিছুতেই রাজপুত্র মনে হয় না। মেয়েটিকে দেখে মায়া লেগে গেলে ছেলেটির। সে প্রতিদিন সেখানে আসা শুরু করে দিল। মেয়েটি কিন্তু তার সাথে খুব একটা কথা বলে না কারণ সে যে রাজপুত্রের আশায় থাকে। ছেলেটি নানাভাবে মেয়েটিকে খুশি করতে চায় কোনদিন হয়ত জংলী ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে নিয়ে আসে কোনদিন আবার নিয়ে আসে লাল টকটকে গোলাপ। মেয়েটি সেগুলো হাতে নিয়ে বসে বসে কি যেন ভাবে। ছেলেটি মন খারাপ করে আস্তে আস্তে চলে যায়। একদিন সত্যি সত্যি কিন্তু এক রাজপুত্র এই মেয়েটির দুয়ারে আসল। রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়ে এসেছে তার ঘোড়া এবং সে দুজনই ক্লান্ত এবং তৃষ্ণার্ত। মেয়েটি খুশিতে আত্মহারা এতদিনে তার মনের মানুষ আসল বুঝি। সে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল রাজপুত্রের সেবা করে দেবার জন্য। কিন্তু রাজপুত্র তো রাজপুত্র তার এতে মন গলবে কেন। প্রথমেই মেয়েটির দেওয়া পেয়ালায় করে সে পানি খেতে অস্বীকার করল। সে সোনার গ্লাস ছাড়া কোনদিন পানি খায়নি। মেয়েটি একটু দমে যায়। তারপরও রাজপুত্রের জন্য জীবন দেওয়ার জন্য তৈরি থাকে সে। রান্না করে খাওয়াবার চেষ্টা করে রাজপুত্র কে। ক্ষিদেয় কাতর রাজপুত্র খাবার সময় তাই আর সোনার থালার আবদার করে না কিন্তু খাওয়া শেষেই তার রাজরক্ত আবার ফুটে উঠে টগবগ করে। সে মেয়েটিকে ডাকে, " এই তুই এসে আমার পা টিপে দেয়"। একটু অবাক হয়ে উঠে মেয়েটি রাজপুত্রের এহেন কথা শুনে। কিন্তু রাজপুত্রের সেদিকে কোন লক্ষ্য নেই। এমন ৪-৫ টি দাসী প্রতিদিন ওর সেবা করার জন্য প্রস্তুত থাকে সবসময়। মেয়েটি রাজপুত্রের পা টিপে দিতে দিতে চোখের পানি ফেলতে থাকে। সেই ছেলেটি যেটি মেয়েটিকে ভালবেসে ফেলেছি সে কিন্তু চুপিসারে এসে দেখে মন খারাপ করে চলে গেছে। রাজপুত্র ঘুম থেকে উঠে চলে গেল ঘোড়া হাঁকিয়ে। মেয়েটি সেই থেকে কাঁদছে। এমন সময় মেয়েটির সামনে এসে দাড়াল সেই ছেলেটি। এসে ওকে তুলে নিল বুকে। মেয়েটির কান্না বেড়ে গেল দ্বিগুন। ছেলেটি মেয়েটির কান্না মুছে দিল ঘরে নিয়ে গেল এবং বের করে দিল আজকে আনা এতদিনের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোলাপ। এরপর বলল তোমাকে ভালবাসার একটু অধিকার দাও আমায় দেখবে আমি রাজপুত্র না হতে পারি , হাতি ঘোড়ায় ঘাটতি থাকতে পারে কিন্তু আমার ভালবাসায় কোনদিন ঘাটতি পাবে না। মেয়েটি দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল আমাকে ক্ষমা কর আমি আসল রাজপুত্র চিনতে পারিনি তুমিই আমার জীবনের রাজপুত্র।

-কিরে পিচ্চিসোনা ঘুমিয়ে পড়লি।
সাড়াশব্দ না পেয়ে আপু দেখল পিচ্চি তাকে জড়িয়ে ধরে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে। বালিশ ঠিক করে দিল, ঘুমন্ত ছোট্ট ভাইটা যেন তার একটি এঞ্জেল। পিচ্চিটার কপালে একে দিল চুমুর চিহ্ন।

Thursday, July 9, 2009

ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম

"বিছানায় শুয়ে শুয়ে স্যালাইনের ফোঁটা গুনি। সকাল থেকে চলছে গতকাল রাতে হঠাৎ করে প্রচন্ড পেটে ব্যাথায় অজ্ঞান টাইপ হয়ে যাওয়ার সময় পাশের বাসা থেকে দুলাভাই এসে ঘুমের ওষুধ সিরিঞ্জ পুশ করে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এই স্যালাইন চালু করে দিয়ে গেছেন। অলরেডি একটা শেষ হয়েছে এখন আরেকটা যাচ্ছে। এটাই নাকি শেষ এরপর চলাফেরা করতে পারব। বন্ধুরা এসেছিল দেখতে আম্মু ভীষণ রকম চিন্তিত। সবাই বলছে পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে এই চিন্তাতেই নাকি আমার এরকম হয়েছে। হতেও পারে তবে চিন্তা কি আসলেই করছি। কাল এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। গত একটা বছর এই দিনটার জন্য যা খাটাখাটুনি করেছি অবশেষে তার ফল বের হবে। চিন্তা হওয়াটা একেবারেই অমূলক কিছু না। তবে আমার পরীক্ষা দিয়ে আমি সন্তুষ্ট এবার হয়ত আর আমাকে এসএসসির মত সবাইকে হতাশ করতে হবে না। এসএসসি তে বাসায় সবাই চলে এসেছিল দুর্দান্ত একটা রেজাল্টের অপেক্ষা করে সেলিব্রেশন করার জন্য। আমাদের ফ্যামিলিতে একটা নতুন কিছু হবে সেই চিন্তায় সবাই খুব এক্সাইটেড ছিল। কিন্তু রেজাল্ট শুনে সবাই বড়ই হতাশ হয়েছিল। সবাইকে হতাশ করার দুঃখে আমি চুপ মেরে গিয়েছিলাম অনেক। সেদিন ভেবেছিলাম আর একটা চান্স আছে আমার একটাই। কাল সেইদিন। পরীক্ষা দিয়ে নিজের কোন ভুল বের হয়নি আমার কাছে বলা যায় যা যা লিখেছি সব আমার হিসেবে ঠিক উত্তর দিয়ে এসেছি টেস্ট পরীক্ষার চেয়েও ভাল হয়েছে পরীক্ষা তাও যদি না হয় ... । মর্তুজা বলছিল তপুর যদি না হয় তাহলে বোর্ডের সামনে গিয়ে অনশন করব চিন্তা কইরেন না আন্টি। আম্মু এসে আমাকে বলে যাচ্ছে এত চিন্তা করিস না আল্লাহ যা করেন ভালর জন্যই করেন। অথচ আমি জানি আমার আম্মুই সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করে আছেন আমার রেজাল্ট শোনার জন্য।

সকাল থেকে উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছি। আগের রাতেও ছিলাম বিছানায় শোয়া আর আর শুয়ে থাকার প্রশ্নই আসে না। কিভাবে কখন খবর পাওয়া যাবে তাই নিয়েই ভাবছি। মর্তুজার বাবা মোটামোটি কিভাবে যেন সকালেই খবর পেয়ে যান তাই আশায় আছি উনি কিছু একটা খবর জানাবেন। ১১ টা বেজে গেল দেখে এখন আবার শঙ্কা ভর করেছে আমার মাঝে আবারো... । ফোন দিলাম মীমকে শুনতে পারলাম মর্তুজার বাসায় এখন নাকি সাংবাদিক ওর রেজাল্ট জানলাম ওদের রেজাল্ট জানলাম আর মীমকে বললাম দেখ তো আমার রেজাল্ট জানতে পারিস কিনা। জানার সাথে সাথে আমাকে জানাবে বলল ও, নিজের রেজাল্ট উদযাপনে ব্যস্ত ও। অপেক্ষার প্রহর আর কাটে না। ৪ টা বাজলে কলেজে ফোন করে জানা যাবে তার আগ পর্যন্ত কিভাবে সময় কাটাই। গোসলে ঢুকলাম তখন আম্মু এসে খবর দিল মর্তুজা,মীম, মহিউদ্দিনের রেজাল্ট। মর্তুজার বাবা আম্মুকে ফোন করে জানিয়েছে এখনো আমার রেজাল্ট জানতে পারেন নি জানতে পারলে জানাবেন। হেসে বললাম তাহলে মনে হয় এবারও হয়নি মা এই জন্য আঙ্কেল জানাচ্ছে না। আম্মু মুখ কাল করে ফেললেন। আমি গোসলখানার দরজা আবার বন্ধ করে দিলাম।
গোসল করে বের হয়ে খাওয়া দাওয়া করেছি কিনা মনে নেই। ঘড়ি নিয়ে বসে ছিলাম কখন ৪ টা বাজে। আমার মামা যিনি ফেনীতে থাকেন তাকে দেওয়া হয়েছিল কলেজের ফোন নম্বর উনি ফোন করে খবর নিবেন আমাদের বাসায় ফোন নেই তাই খবর জানার জন্য মামার অপেক্ষায় বসে থাকি আমি। ৪ টা বেজে গেলেও কোন খবর আসে না আমি অস্থির হয়ে উঠি। ওদিকে আমার ছোটমামা যে কিনা তার চারপাশের সবাইকে আমার কথা আগে থেকেই বলে রেখেছে উনি একটা লিস্ট করে রেখেছেন তপুর রেজাল্ট পাওয়ার পর কাকে কাকে জানাতে হবে একটা বিশাল কাগজে, আমাদের অনেক বড় ফ্যামিলি সবাইকে যে সাথে সাথে সুখবরটুকু দেওয়া লাগবে। মামা ফোন দিলেন কলেজে। কলেজ থেকে জানানো হল স্টার ৪ লেটার। আর কিছু না। আমার মামা বিশ্বাস করতে পারেন নি আবার জিজ্ঞেস করেন একই উত্তর। মামা প্রথমেই কুটি কুটি করে ছিড়েন সকালে বানানো লিস্টটুকু। এরপর আমার মেঝখালা যিনি ফেনীতেই থাকেন তাকে ফোন করে দুঃসংবাদ দিলেন। খালা সাথে সাথে ঢাকা আসার প্রস্তুতি নিলেন আমাকে এবং আমার মা কে স্বান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। মামা নিজে অপারগতা প্রকাশ করলেন আমার মাকে খবর জানাবার জন্য উনি জানালেন আমার খালাত ভাই জামশেদ ভাইয়াকে। ওনারা দুজন আলাপ করে অবশেষে জামশেদ ভাইয়া ফোন দিল আমাদের বাড়িওয়ালার বাসায়। আম্মু ফোন ধরতে গেল আর আমি সিড়িমুখে অপেক্ষা করছি। হঠাৎ দেখলাম আম্মু নামছে সেখানে খুশির কোন চিহ্ন নেই। আমি কিছু জিজ্ঞেস করি না আম্মু আমাকে নিয়ে ঘরে ঢুকেন আমি বললাম আমি একটু বের হই। আম্মু কাঁদছে আর আমাকে ধরে রেখেছেন বেরুতে দিবেন না। আমি বললাম আরে মা চিন্তা কইরেন না শুধু স্টার পাব তা হতেই পারে না একটা না একটা প্লেস তো পাবই আমাকে একটু বের হতে দেন। আম্মু বের হতে দেয় না আমি কি করব কে জানে এই জন্য। আমি বের হই জোর করে। বের হয়ে দেখি জামশেদ ভাইয়ার বউ কোথায় যেন যাচ্ছে ওনাকে বললাম মোবাইলটা দিয়ে যাও আমাকে। ও বলল টাকা নাই ১০ টাকা আছে নাও রাখ। ৭ টাকা মিনিটের যুগে একটার বেশি কল করতে পারব না বুঝতে পারলাম। সেটা হাতে নিয়ে দোকানে গেলাম। কলেজে ফোন করে পেলাম না লাইন। এরপর ফোন দিলাম এক ফ্রেন্ড কে ও ও বলল দোস্ত প্লেসের কথা তো কিছু বলল না শুধু বলল স্টার টুকু না নিয়ে শুধু রেজাল্ট নিয়েই কলেজে ফিরে এসেছিলেন তাই প্রথমে কাউকে রেজাল্ট বলা হচ্ছিল না। পরে অনেক ফোন পেয়ে ওনারা প্লেস ছাড়া রেজাল্ট বলা শুরু করেছিল। বাসায় ফিরে এসে ভাবছিলাম কি করি। এরই মধ্যে আমার মায়ের কান্নায় চারপাশের মানুষে আমাদের বাসা ভরে গেছে। সবাই ভেবেছে আমার কি না কি হল কারণ তার আগের দিনও আমি স্যালাইন নিয়ে শুয়ে ছিলাম।
আমার একটা ছোটবেলার বন্ধু আছে নাম রাজীব ও আবার আমার আম্মুর দিকের আত্মীয় । ও এসে বসে ছিল আমার পাশে। ও কে বললাম কি করি বল তো? বলল কারো ফোন নম্বর নেই তোর কাছে? আমি আমার ফোন বুক খুলে বসলাম একটা একটা নাম ওকে পড়ে শোনাই। পড়তে পড়তে মোস্তফা মামুন ( সিকক ) এর নাম বলি। ভাইয়া তখন প্রথম আলোর স্পোর্টস রিপোর্টার। রাজীব বলে ওনাকে ফোন কর। আমি বললাম টাকা নাই মিসকল দিতে পারব কিন্তু উনি আমার নম্বর চিনবেন না। তাও কি মনে করে মামুন ভাইকে মিসকল দিলাম। ২ মিনিট পরেই ফোন বেজে উঠল আমার মোস্তফা মামুন ভাই। আমি ফোন ধরেই গড়গড় করে ভাইয়াকে আমার পরিচয় দিলাম ভাইয়া আমি সিলেট ক্যাডেট কলেজ রিইউনিয়নে আপনার সাথে পরিচয় হয়েছে কামরুল নাম। এটুকু বলতেই ভাইয়া আমাকে বলল, " আরে কামরুল , কংগ্রাচুলেশন ম্যান...... আমি তো জানতাম তুমি শুধু কথাই বলতে পার "। মামুন ভাইকে কখনো বলা হয়নি ভাইয়া ধন্যবাদ কারণ এটুকু বলে বোঝানো যাবে না আমার কৃতজ্ঞতা। ভাইয়া আজীবন মনে রাখব আপনাকে যতদিন বেঁচে থাকব।
তখন বাজে সাড়ে ৫ টা। ফোন কানে ধরেই আমি আম্মুর কাছে আসলাম ফোন রেখে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম বললাম আম্মু আমি পেরেছি। এরপরের কিছু মিনিটের কথা ঠিক বলে বোঝানো যাবে না। আমার মা আবারো কাঁদলেন এবার খুশিতে। আমার জীবন সার্থক হয়ে গেল। ছোট বেলা থেকে এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম মনের গহীন কোনে। আমার মনে হল আমি পৃথিবীতে আর কিছু চাই না আমার আর কিছু লাগবে না। ওদিকে আমার মামা লিস্টটা ছিড়ে ফেলেছেন দেখে আফসোস করতে করতে এবং তাড়াহুড়ো করে যাকে যাকে পারলেন খবর দিলেন। আর আমি তখন স্বপ্নের রাজ্যে সেসময়ের অনুভূতি, ঘটনা পুরোটা চোখ বুঝে দেখতে চাইলে এখনো চোখে ভেসে উঠে কিন্তু প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সত্যিই এরকম দিন সারাজীবনে একবারই আসে। জীবনের একটা দিন ফিরে পেতে চাইলে এই দিনটি হুবহু এইভাবেই আমি চাইব।

Thursday, June 18, 2009

আপুসোনা, তুই ভালো হয়ে যা

আপুসোনা,
আজ তোর অপারেশন ছিল। আমি তোর অপারেশনের আগে ঠিকমত সময়ে ফোন দিতে পারিনি। কিভাবে পারব বল আমি তো জানতাম না যে আজই তোর অপারেশন হয়ে যাবে। তুই না আমাকে বলেছিলি ১৮ তারিখে হবে। তোর কথা খুব মনে পড়ছিল। তাই যখন তোকে ফোন দিলাম তখন শুনলাম তুই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পড়েছিস। আমার এত খারাপ লাগছিল প্রায় কান্না চলে এসেছিল। শুনলাম অপারেশন এক ঘন্টা পরেই শেষ হয়ে যাবে আর তারও দুই ঘন্টা পরে তোর সাথে কথা বলা যাবে। আমার তখন ১২টা বেজে গেছে। ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়ি সকালে উঠে কথা বলব কিন্তু তোকে অপারেশনের টেবিলে রেখে আমার কি ঘুম আসার কথা বল? আসেওনি। এপাশ ওপাশ করে অবশেষে তোকে ফোন দিলাম। তোর গলা এত দুর্বল শোনাচ্ছিল কেনরে আপুসোনা আমার। অনেক কষ্ট দিয়েছে ডাক্তার গুলা তোকে? তোর কি এখনো ব্যাথা করছে শরীরে। এনেসথেসিয়া এখনো কাটেনি ভাল করে ঘুমে জড়িয়ে যাচ্ছে তোর গলা তাও তুই কত মিষ্টি করে ডাকলি আমাকে পিচ্চি। নিজের অপারেশনের পরও তুই আমাকে জিজ্ঞেস করছিস আমার অপারেশন কবে। তাই অবশ্য করার কথা আমরা দুজন ঠিক করেছিলাম নিজেদের অপারেশনের সময় অন্য জনের কথা ভাবব তাহলে আর নিজেদের কষ্টটা মনে পড়বে না। তোর সাথে কথা বলার পর ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পড়ব। কিন্তু এরপর থেকে আর ঘুম আসছে না শুধু তোর গলা কানে বাজছে। এমন দুর্বল গলা তোর আর কখনো শুনিনি। এত তাড়াতাড়িও আর কখনো ফোন রাখিনি। কখন সকাল হবে কখন আবার তোকে ফোন দিয়ে শুনব পিচ্চিসোনা আমি এখন ভাল হয়ে গেছি তুই চিন্তা করিস না। তোর হাসিটা শুনব।
আপুসোনা সবসময় জানি তোকে আমি অনেক ভালবাসি কিন্তু আজ যখন তোর অপারেশন হচ্ছে ভাবতে ভাবতে চোখে পানি চলে আসল তখন বুঝলাম আমার আপুসোনাটা আমার কত আপন। তুই তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে উঠ আপুসোনা তুই ভাল না হয়ে উঠলে আমার অপারেশন এর সময় কে আমাকে সাহস দিবে। খুব তাড়াতাড়ি আপুসোনা, অনেক অনেক মিস করছি তোকে আমার জাআআন আপ্পি।
তোর পিচ্চিসোনা
২০০৯-০৬-১৮
রাত তিনটা

Friday, June 12, 2009

স্বপ্নেরা মর্ত্যে নেমে আসে

বৃহঃ, ২১/০৫/০৯ – ১২:০৫ অপরাহ্ন


আকাশের উপরে ভিত্তিহীন ভাবে ভেসে থাকা স্বপ্নেরা হুড়মুড় করে মর্ত্যে নেমে আসে। অতিকষ্টে আকাশের পরে আজন্ম দুলতে থাকা সংশয়পূর্ণ স্বপ্নেরা সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে শাসন না মেনে ফিরতে না চাওয়া দুষ্ট ছেলের মত, লুটোপুটি খায় কাঁদামাটিতে। আমি চেয়ে চেয়ে ওদের ভূলুণ্ঠিত উচ্ছল চেহারা দেখে ভাবি কিভাবে এতদিন ওরা এত উপরে ছিল। হর্ষধ্বনিতে উন্মাতাল এই পতন দেখে শঙ্কিত আমি বিষ্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে থাকি আমার আশৈশব লালিত স্বপ্নগুলোর দিকে। মাটির সাথে মিশে যাওয়া উদ্দাম নৃত্যরত তাদের দিকে তাকিয়ে আমি চিনতে পারি প্রত্যেককে আলাদা করে। অনেক বড় হয়ে আকাশের সাথে মাথা ঠেকাবার উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন, অন্যায় অত্যাচারে পরিপূর্ণ এই পঙ্কিল সমাজকে এক নিমিষে বদলে দেওয়ার সরল স্বপ্ন, অভিমানী মুহূর্তে পাখির মত ডানা মেলে অনেক দূরে সরে যাওয়ার ছেলেমানুষী স্বপ্ন, কোন এক দুর্বল মুহূর্তে দেখা ন্যায়-অন্যায় ভুলে যাবার অন্যায় স্বপ্ন, স্বপ্নালু সময়ে কাউকে কাছে পাবার স্বপ্ন সবাই আমাকে ভেংচি কাটে, খিলখিল করে হাসে আমার অসহায় অবস্থা দেখে।
আমি তাকিয়েই থাকি। তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার দৃষ্টির শঙ্কা, অসহায় ভাব পরিবর্তন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়ে সেখানে খেলা করে স্বস্তি। উর্ধ্বপানে তাকিয়ে দেখি তারা ঝলমলে আকাশ, চাঁদ আর চাঁদোয়ার সহাবস্থান। বহুদিন আমার আর এই সৌন্দর্য্যের মাঝে বাধা হয়ে ছিল যারা তারা আমার সামনে হুটোপুটি করে খেলা করছে। আমি আরেকবার সৌন্দর্য্য উপভোগ করে নেই এরপর যোগ দেই নৃত্যরত ভূলুন্ঠিত স্বপ্নদের সাথে। চীৎকার করে হাসি, দুহাত মেলে দিয়ে আলিঙ্গন করি মুক্তির আনন্দে। আজন্ম স্বপ্নের চাপে পিষ্ট হওয়া এই ছাপোষা আমি আজ মুক্তপুরুষ।

Friday, June 5, 2009

আমার আপুসোনা - ৫

ক্রিংক্রিংক্রিং………
ধুর ঘুমের মধ্যে রিং ভাল লাগে না। কানের উপর বালিশ দিয়ে আবার ঘুমাবার ট্রাই নিলাম। কিন্তু কে যে এই ফোনটা দিচ্ছে তার কোন বিরক্তি নেই। বালিশ সরিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে আগে ঘড়ি দেখলাম। ৮টা বাজে ইশশ ভার্সিটি বন্ধের এই সময়গুলাতে একদিনও আমি ১২টার আগে উঠিনি। এতক্ষণে আমার কলার এর নাম নজরে পড়ল।
-আরে আপুসোনা তুই?
-কিরে ঘুমাচ্ছিস নিশ্চয়ই। তোর ঘুম ভাঙ্গালাম এজন্য স্যরি।
-ধুর কি যে বলিস আপুসোনা। বিয়ের আগে তো সবসময় আমার ঘুম তুইই ভাঙ্গাতিস। কতদিন আসিস না বাসায়। তোর জামাইটাকে পাইলে আমি এমন মাইর দিতাম।
-হাহাহা, কেনরে আমার জামাই তোর কি ক্ষতি করল।
-না ক্ষতি করবে কেন। এমনি ওনার উপর আমার রাগ। আমার আপুসোনাকে আমার থেকে নিয়ে গেল এই জন্য। কেমন আছেরে ভাইয়া?
-আছে অনেক ভাল আছে। কাল আমরা হেভভি মজা করলাম।
-কি মজা করলি?
-সেটা ফোনে নয় সামনাসামনি বলব।
-তুই আসবি আজ বাসায়? ওয়াও এক্ষুণি চলে আয় আপুসোনা। আমার বন্ধ আছে। আসলে কিন্তু ২-৩ দিন থাকতে হবে।
-নারে আসব না।
-আসবি না? তুই খুব খারাপ একটুও আমার কথা, আম্মুর কথা মনে পড়ে না। কতদিন আসিস না।
-কিরে সেদিন না আসলাম।
-২ সপ্তাহ হয়েছে, আসছিস কিন্তু থাকিস তো না। তোর তো বাবু হয়নি এখন কি এত সংসার। ঘুরবি ফিরবি…
-হাহাহা , তুই এখনো বাচ্চাই রয়ে গেছিস।
- তোর সাথে কেন যে আমি কথা বলি এখনো , তোর উপর আমার কত রাগ তুই জানিস? তোকে যে আমি দুদিন আগে তোর জন্মদিনে চিঠি লেখলাম একটু বললি ও না চিঠি পেয়ে কেমন লাগল।
- ঐ তোকে না আমি সাথে সাথে এসএমএস করে জানালাম যে তোর চিঠি পেয়েছি, খুশি হয়েছি।
-ব্যাস এটুকু? চিঠির উত্তর তো চাইনি বাবা জাস্ট চিঠি পেয়ে একটা বড় মেসেজ দিয়ে বলবি পিচ্চিসোনা তোর চিঠি পাইছি খুব ভাল লাগছে , তুই আমাকে এত ভালবাসিস জেনে চোখে পানি চলে এসেছে……, আমিও তোকে অনেক ভালবাসি হ্যান ত্যান তা না ১ লাইনের একটা এসএমএস। আমার চিঠি লেখাটাই ভুল হইছে তোকে।
-ওরে বাবা আমার পিচ্চিটার দেখি অনেক রাগ হইছে আমার উপর। সেদিন অফিসে কাজ ছিলরে বাবুয়া। আজ তোর রাগ ভাঙাব আয়। আজ আমি অফিসে যাই নি। ইচ্ছে হচ্ছিল না। পেপার খুলে দেখলাম শেরাটনে ঈগলু ফেস্টিভাল চলছে। তুই এসে আমাকে নিয়ে যা। আজ সারাদিন তোর সাথে ঘুরব।
-ওয়াও। তাই নাকি দাড়া আমি এখনই রেডি হয়ে আসছি তোকে নিতে।
-দাঁড়া দাঁড়া, এখনি আসিস না। আমি গাড়ি নিয়ে বের হব। গাড়িটা তোর ভাইয়াকে নামিয়ে দিয়ে আসুক। এরপর। তুই ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হ।
-যো হুকুম আপুসোনা।
-ওহহ শোন , তোর কি রাতে কোন কাজ আছে?
-থাকলেও এখন নাই হয়ে গেল। তোর জন্য আমার সব কিছু বাদ।
-তাহলে আইসক্রিম খেয়ে একটু শপিং এ যাব। সেখান থেকে রাতে চাইনিজ খেয়ে বাসায় ফিরব।
- এই আপুসোনা তোকে একটা রিকোয়েস্ট করি?
-নাহ তোর রিকোয়েস্ট রাখতে পারব না।
-কি রিকোয়েস্ট করব না শুনেই।
- আমি জানি তুই কি বলবি। রাতে বাসায় চলে আয় না আপুসোনা। কালকে তো শুক্রবার।
-তুই কিভাবে আমার কথা আগে থেকে বুঝে যাস আপুসোনা।
-কারণ তুই তো ভাবিস তুইই শুধু আমাকে ভালবাসিস। আমি বাসি না।
-বাসলে কি আর আমার কথাটা ফেলতি। আম্মুও কিন্তু বলছিল অনেকদিন তুই আমাদের বাসায় থাকিস না।
- নারে ভাইয়া কাল তোর ভাইয়ার সাথে একটা পিকনিকে যেতে হবে। আমার যদিও কোন ইচ্ছে নাই তাও ও শখ করেছে না গেলে কেমন হয় তাই না। রবিবার দিন এসে আম্মুর সাথে দেখা করে যাব।
-ঠিক আছে কি আর করব। চাইনিজ কি তুই খাওয়াবি? নাকি আমি মানিব্যাগ নিয়ে বের হব।
-বড় হইছিস মনে হয়?
- আরে না পার্ট নিলাম। গতকাল স্কলারশীপের টাকা পাইছি। শপিং এ যখন যাবি তাহলে ভালই হল, আম্মুর জন্য একটা শাড়ি কিনব আর তোর জন্য কিছু একটা যেটা তোর পছন্দ হয়। আমি অবশ্য শাড়িই প্রেফার করব কিন্তু তোর যেটা খুশি।
- তুই প্রতিবার স্কলারশীপ পেলেই আমাকে শাড়ি দেস। আমার তো লাগবে না ভাইয়া। গত ঈদেই তো একটা দিলি।
-প্রতিবার দেই এইবার কেন বাদ যাবে?
-ওক্কে পাগলা।
-তুই কি কিনবি?
- আমার দেবরের জন্য একটা শার্ট কিনব।
-কেন?
-ওর জন্মদিন সামনে। গিফট।
-কেন??? তোমার দেবরের জন্য তোমার মায়া বেশি। আমার একটুও সহ্য হয় না। কেন তাকে গিফট দিতে হবে। ভাইয়াকে বল উনি দিবে তুমি কেন।
-ঐ শয়তান। কি বলিস তুই? তোর ভাইয়া তো তকে জন্মদিনে গিফট দে তাহলে ঐটা কি?
- তা জানিনা তুই অন্য কাউকে আদর করলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়। আমার আদরের ভাগ কমে যায় বলে মনে হয়।
-তুই একটা আস্ত পাগল আছিস। কবে যে তুই বড় হবি?
-কেন বড় যে হতেই হবে এমন কোন কথা আছে?
-আছে না। তোকে বিয়ে দিব তো। বাসায় একটা বউ আনব না।
- আসলেই দিবি? কবে দিবি বল । আমি তো শুধু তোর কাছেই বাচ্চামি করি। অন্য সব জায়গায় আমি অনেক বড় হয়ে গেছি।
-ইশশ বিয়ের কত শখ? তোকে এখন মেয়ে কে দিবে।
-দরকার নাই তাহলে বিয়ে করার পরেই করি কি বলিস।
- এই তুই খালি কি কথা বলতেই থাকবি? তোর ভাইয়া অফিসে যাবে গুছিয়ে দেই। আমার ও তো রেডি হতে হবে। আজ সারাদিন ভাই বোনে অনেক কথা বলব । অনেকদিনের অনেক কথা জমে আছে ।
- ওক্কেরে আমার জাআআন আপ্পি রাখছি। আমি এখনই চলে আসছি তোর বাসায়। একসাথেই বের হব। তুই আমার জন্য নাস্তা বানা। তোর বাসায় এসে নাস্তা খাব। আম্মু নিশ্চয়ই এখনো আমার জন্য নাস্তা বানায় নাই আমি তো প্রতিদিন ১২টায় ঘুম থেকে উঠছি এখন। তুই ঘুম থেকে জাগালি তুইই নাস্তা খাওয়া।
-চলে আয়, কি খাবি বল?
-তুই যদি ছোটবেলার মত খাওয়ায় দেস তাহলে যা দিবি তাই ।
-পাগল ভাই আমার।
-রাখলাম রে আপু। খুব খুশি লাগছে অনেকদিন পর তোর সাথে আজ সারাদিন ঘুরব।
-ওক্কে বাই ডিয়ার।

Monday, June 1, 2009

অভিমান

আমি এবার বদলে যাব
কাউকে আর চাইব না,
কাউকে ভাল বাসব না,
আমাকেও বাসবে না কেউ।
আমি এবার বদলে যাব।
আর কখনো হাসব না,
ব্যাথা পেলেও কাঁদব না,
ইচ্ছে হলেও ডাকব না,
কারো একটু ডাকের আশায়
পেছন দিকে চাইব না।
আমি এবার বদলে যাব।

-------শনি, ১৬/০৫/০৯

Friday, May 8, 2009

আয় আরেকটি বার আয়রে সখা, প্রাণের মাঝে (০১)

১।
কলেজের দ্বিতীয় দিনেই ফুটবল খেলতে গিয়ে নিজেকে জাহির করার তাগিদ অনুভব করলাম আমি। প্রথম দিনেই সবার দৃষ্টি কাড়তে হবে এমন একটা ভাব নিয়ে ২১-২১ জনে খেলা এ ফর্ম, বি ফর্ম খেলার মাঝেই আমি প্রচুর দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলাম। ২১ জনের মধ্যে আগের দিনের বৃষ্টিতে কাঁদামাখা সেই মাঠে নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে তোলা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। সবার প্রথমে সবাই স্ট্রাইকার হতে চায়, দ্বিতীয়ত যেখানেই বল যায় সেখানেই সবাই হাজির হয়। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। ঠিক তখনই ডি বক্সের সামনে উলটা অবস্থায় বল পেয়ে আমি এইটাকেই শেষ চান্স ভেবে ব্যাকভলি করার জন্য লাফ দিলাম। পায়ে বল লেগেছিল কিনা গোল হয়েছিল কিনা আজ আর মনে নেই। সেদিন গোল দিতে পেরেছি বলে মনে পড়ছে না কিন্তু ঠিকই সবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম। পরেরদিনই আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল সকাল বেলা নিজের হাতকে আর হাত মনে হচ্ছিল না। সেই ব্যাকভলি দিয়ে হাত ফুলে গিয়েছিল। এরপর পাক্কা দেড় মাস হাসপাতালে ছিলাম হাতে প্লাস্টার নিয়ে। সবাই জানত ওদের একটা ক্লাসমেট আছে নাম ও মনে হয় জানত না যে কিনা হাসপাতালে থাকে। ২ সপ্তাহ পরে অবশ্য প্লাস্টার জড়ানো হাত নিয়ে ক্লাস শুরু করেছিলাম। হাসপাতালে থাকার কারণে অনেকদিন পর্যন্ত আমি আমার হাউসের সবার নাম ও জানতাম না। নিজের ফর্মের পোলাপানদের চিনতাম শুধু। তাই আমার সাথে সবার চেনাজানা একটু দেরিতেই হয়েছিল।

হাসপাতালে থাকতেই জাহিদের সাথে পরিচয়। কোন একদিন ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল । কলেজের খাবার খেতে পারেনা। বেশ কয়েকবার বমি করেছে। হাসপাতালে আসাতে আমি পুরান রোগী হিসেবে ক্লাসমেটকে বরণ করলাম। কিন্তু সেখানে তেমন কিছু অন্তরঙ্গতা হল না। আমার আগেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেল। ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব শুরু হল বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে। তখন আমাদের নভিসেস প্যারেড শেষ আমরাও কলেজের ক্যাডেট হয়ে গেছি। বাস্কেটবল নতুন খেলা দেখে আমরা বেশ কসরত করে সেটা শেখার চেষ্টা করি। তার মধ্যে আমি আর জাহিদ ও আছি। যারা আমাদের শেখায় তারাও খুব যে পারে তা না ওরা একটু লম্বা এই জন্যই বল নিয়ে কিসব করে দেখায় আমাদের। আমরা হা হয়ে তাকিয়ে থাকি। কখন থেকে যে আমরা একেবারে টিম হয়ে খেলা শুরু করে দিলাম মনে নেই। তবে জাহিদের সাথে আমার মনে পড়ে না আমি আর ও কোনদিন এক দলে ছিলাম। কেমন করে খেলতে খেলতে আমরা দুজনই একই পর্যায়ের খেলোয়াড় হয়ে গেলাম। যার কারণে দল ভাগ করার সময় প্রথমেই আমাদের দুজনকে দুদিকে দিয়ে দেওয়া হত। আমরাও সেই দুই দলের হয়ে প্রতিদিন খেলার মাঝে এবং আগে পরে গলা ফাটিয়ে নিজেদের মাঝে ঝগড়া করতাম। ক্লাস ৮ পর্যন্ত আমি আর জাহিদ প্রায়ই খেলার মাঝে একে অপরের সাথে লাগালাগি করেছি। সেই ঝগড়াই আমাদের কাছে এনে দিয়েছে। খেলা শেষে প্রতিদিন একসাথে আবার হাউসে ফিরতাম। পরেরদিন আবার ঝগড়া। একসময় দেখলাম আমরা শুধু খেলার সময়টুকুই আলাদা থাকি।
৩।
পরীক্ষার সময় ও আমাদের আগে পরে বসা নিয়ম হয়ে গেল। কেমন কেমন করে যেন ও আমার আগে পিছে কিংবা কোনাকোনি থাকতই। আর আমরা ২ জন এক সিট ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকলে আর কিছু লাগত না। ফর্মের মাঝে হয়েছে এমন খুব কম পরীক্ষাই ছিল যেটাতে আমাদের দুজনের অবজেক্টিভ এর মার্কস আলাদা আসত। তাই ওকে শুধু সাবজেকটিভ দিয়ে পিছনে ফেলতে খুবই কষ্ট হত। ওকে নিয়েই ভয় পেতাম এই বুঝি আমাকে ছুড়ে ফেলে দিল আমার পজিশন থেকে। কিন্তু কি একটা অবহেলা ছিল ওর মাঝে। এমন ভাব আমি পারি কিন্তু করব না। কখনোই পড়ালেখায় সেইরকম সময় দেয়নি ও। এসএসসি পরীক্ষার পর আমাকে বলেছিল তুই ও ফার্স্ট হবার মত পড়িস নি আমিও না। তাই আফসোস নাই। সেদিন মনে মনে বলেছিলাম এবার পড়ব। কিন্তু ওর মনে হয় এইসব খুব একটা কিছু এসে যেত না। এইচএসসি পরীক্ষার আগে টেস্ট এর পর আমরা অনেকেই যখন রাত জাগি, কেউ পড়ার ভান কেউ বা বই নিয়ে গার্ডদের আনাগোনা পর্যবেক্ষণ করে কাটাত কখন ডাব পাড়তে যাবে কিংবা সিগারেট খাবে তখন তার অর্ধেক ঘুম পার হয়ে গেছে। ওর রুমমেট অন্য রুমে গিয়ে সময় কাটাত যাতে ওর ঘুমের সমস্যা না হয়। আমাদের আরেক বন্ধুর আফসোসই ছিল যে হাউসের সবাইকে ডাব খাইয়েছি শুধু জাহিদ ছাড়া। তারপরও রেজাল্ট বের হবার পর দেখা গেল মেরিট লিস্টে খুব ভাল পজিশনে ও। আমি শুধু ভাবি ভাগ্যিস ও আমাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়নি কখনো।
৪।
কার্ড খেলতাম আমরা খুব। সেই ক্লাস ১১ থেকে ২৯ খেলতাম পাগলের মত। ছুটিতে এসে কত রাত যে পার করে দিয়েছি শুধু কার্ড খেলে তার গুনতি নেই। বুয়েটে ঢুকেও ডেল ক্যাফেতে বসে বসে শুধু কার্ডই খেলতাম ( আমাদের জন্যই কিনা ডেল ক্যাফে পরে বন্ধ করে দিল কোন অনুষ্ঠান ছাড়া ঢোকা যেত না। এখন কি অবস্থা কে জানে) । বুয়েটে এসে আমাদের উন্নতি হল আমরা ব্রিজ খেলা শিখলাম। কত ক্লাস যে বাং মেরেছি কার্ড খেলার জন্য। জাহিদের কার্ড খেলার স্টাইল যেই ওর সাথে খেলেছে মনে থাকবে নিশ্চয়ই। এমন ভাব ধরত যেন সমস্ত ভাল কার্ড ওর কাছেই। এমন ভাবে কল দিত যেন তোলা কোন ব্যাপারই না। খেলা হারার পর ও এমন ভাব মনে হত ওর মন ছিল না খেলায় নইলে ওকে হারাতে পারে এমন কেউ আছে নাকি। গুড প্লেয়ার আর ভাল খেলোয়াড় এই দুইটার একটা পার্থক্য ছিল আমাদের মাঝে। যে ভাল কার্ড পায় তারপর খেলা তুলে সে গুড প্লেয়ার আর যে কিছু না পেয়েও মাথা খাটিয়ে খেলে সে খেলা তুলতে না পারলেও ভাল খেলোয়াড়। নিজেকে ভাল খেলোয়াড় দাবি করে আসল জাহিদ আজীবন। ওর সাথে কার্ড খেলা খুবই মিস করি। এখন আর খেলে না ও। সেদিন প্রায় ৫ বছর পর এক রাত ওর সাথে কার্ড খেললাম। জীবনেও ভাবি নাই আর কখনো জাহিদের সাথে কার্ড খেলব।
৫।
৯৬ থেকে ২০০৯ আজ ১৩ বছর আমি আর জাহিদ একসাথে। কলেজ থেকে বের হয়ে একসাথে বুয়েট কোচিং করে বুয়েটে একসাথে প্রতিটা দিন আড্ডা দিয়ে একইসাথে জাপানে পাড়ি দিয়েছি আমরা। মাঝে ৩ বছর দুজন দুইটা ইন্সটিটিউশনে ছিলাম এখন আবার একসাথে। আমার পাশের বিল্ডিং এই থাকে (অবশ্য বউ নিয়ে … ) । বন্ধু হিসেবে জীবনে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছি ওর সাথে। মাঝে মাঝে মনে হয় ভাব প্রকাশে এখন মনে হয় আর আমাদের কথা বলার ও দরকার হয় না। এই লম্বা সময়ে যে ওর সাথে রাগ করিনাই এমন না। অনেক বার ওর অনেক কাজে ক্ষেপে গিয়েছি ভেবেছি আর কখনো কথাই বলব না, কখনো বা ভেবেছি শালা মজাতেই আছে অনেক বদলে গেছে আমার আর এখন দরকার নেই কিন্তু কেমন করে যেন আবার ঠিক হয়ে গেছে তা আর মনে নেই। মনে আছে সর্বোচ্চ এক মাস ওর সাথে কথা না বলে থেকেছিলাম কলেজে ক্লাস ৯ এ থাকার সময়। কেন লেগেছিলাম তাও মনে আছে কিন্তু এখানে লেখতে গিয়ে মনে হচ্ছে এত ছেলেমানুষ ছিলাম সেটা আমার আর ওর মাঝেই থাক। ১৩ বছর অল্প সময় না। তাই আজ বন্ধুদের নিয়ে কিছু লেখতে গিয়ে ওর নামই প্রথমে মনে পড়ল।
ভাল থাকিস দোস্ত।

Friday, April 24, 2009

ছোটদি (৪)

অনেক রাত এখন। হঠাৎ করে আজ এত ছোটদির কথা মনে পড়ছে তাই আপনার চিঠির উত্তর দিতে বসলাম। আপনার তো এখন খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। শরীরের যত্ন নিয়েন। নিজের জন্য না হোক আমার দিদিটার জন্য হলেও। আপনার জন্য সবসময় চিন্তা করত আমার দিদি এখনো নিশ্চয়ই করে।
স্কুল ফাইন্যালের পরপরই আমার বাবা মারা গেল। পরীক্ষা শেষ করে আমি তখন মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘুরে বেড়াচ্ছি। প্রতিদিন রাত করে বাসায় ফিরতাম। দিদিরা ঝাড়ি দিত ঠিকই তবে তার মধ্যেও তেমন ঝাঁঝ ছিল না। মাঝে মাঝে বেশি দেরি হয়ে গেল শুধু ছোটদি বলত আমি প্রতিদিন তোর জন্য না খেয়ে বসে থাকি আর তোর টিকিটির কোন খবর থাকে না। তার কিছু আগেই হয়ত আমি পেট ভরে পুরি আর চা খেয়ে এসেছি। সেদিন এমনই আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। বাসায় ঢুকার মুহূর্তে জটলা দেখে দাড়ালাম। ভেতর থেকে কে যেন বলছিল,” খোকনটা এখনো আসল না”। ভিড় ঠেলে নিজের বাসায় ঢুকলাম আমি যেখানে আমি খুব কমই পা ফেলি। দেখলাম বাবার খাটকে ঘিরে সবাই বসে আছে। বড়মা চোখ মুছছে। দিদিদের মুখ শক্ত হয়ে আছে। আমি আমার সবসময়ের নির্ভরতার প্রতীক ছোটদির পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললাম, “কি হয়েছে দিদি?” সবাই ততক্ষণে আমাকে দেখতে পেয়েছে। ছোটদি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল। বোকার মত আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম দিদি বাবা কই? হাউমাউ কান্নার ফাঁকে যা বুঝলাম বাবা আমার হঠাৎ করেই অফিসে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে ডাক্তার দেখিয়ে বাবার এক কলিগ বাসায় নিয়ে আসেন। ওনার থেকে খবর পেয়ে যখন বড়মা দেখতে আসেন তখন আবার বাবার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপর আর বেশি সময় কাউকে দেননি। কখন যে তার হার্ট এত দুর্বল হয়ে পড়েছে কেউ কবর রাখেনি। ছেলে হিসেবে কখনো তার কোন খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি সেদিন তাই খুব বাবাকে ডাকতে ইচ্ছে করছিল। বাবা নাকি শেষ সময়ে কাকে খুঁজছিলেন চারপাশে। সবাই বলছিল তোকেই খুঁজছিল খোকন। একটুও কাঁদিনি আমি তখন। বোকার মত সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষকৃত্য সম্পন্ন করে ছাদে উঠে বসেছিলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগছিল। কেন যেন বাবা মারা যাওয়ায় আমার খুব মায়ের কথা মনে পড়ছিল। এর আগে কখনো মনে পড়েনি। সেই চেহারা মনে করতে না পারা মহিলার কথা ভেবে দুচোখ দিয়ে পানি ঝরা শুরু করল। পেছন থেকে দিদিরা এসে আমার পাশে বসেছিল। কেউ স্বান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। কাঁদতে দিয়েছিল আমাকে প্রাণ ভরে, সাথী হয়েছিল আমার কান্নার। ছোটদি আমাকে জাপটে ধরে মাথাটা আমার কাঁধে দিয়ে রেখেছিল।ওর চোখের পানিতে আমার শার্ট ভিজে যাচ্ছে টের পাচ্ছিলাম। মেঝদি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। আকাশের দিকে তাকিয়েই বললাম, “ আমার মা বহুদিন একা ছিল দিদি, আজ অনেক খুশি হয়েছে তাইনারে দিদি? আমার তো তোমরা সবাই আছ আমার মার যে আর কেউ ছিল না ওখানে”।
বড়মা এসে দাঁড়িয়েছিল পিছনে। “খুব খারাপ লাগছে খোকা”?
প্রথম বারের মত হাউমাউ করে কাঁদলাম আমি। “ আমি কেন একা হব বড়মা। আমার কেন খারাপ লাগবে। মা বলতে তো সবসময় তোমাকেই ভেবেছি। কোনদিন তো মায়ের কথা মনে পড়েনি আজ কেন এত মনে পড়ছে। মায়ের কেন কোন চেহারা আমার একটুও মনে নেই। যতবার চেহারা খুঁজতে যাই তোমার চেহারা চলে আসে”। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম আমি।
গঙ্গার পানির কোন বিরাম নেই। এত রাতেও কলকাতার রাস্তায় হাজার মানুষের ভিড়ের একটুও কমতি নেই। শ্মশানের পাশে ঠিকই বসেছে জুয়া আর নেশার আড্ডা। শুধু নক্ষত্রভরা আকাশের নিচে আমরা গুটিকয়েক প্রাণী বিধাতার হাতের পুতুল হয়ে কাঁদতে লাগলাম। তাতে অবশ্য বিধাতার কিছু এসে যায় না। সে তার নিজের হিসাবে ঠিকই আবার ঘটায় একই ঘটনা।
বাবার মৃত্যুর পর আচার রীতি পালনের পর আমি বেশ কিছুদিন চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলাম। বাবা যেই রুমে থাকত সেখানে গিয়ে বসে থাকতাম একা একা। ছোটদি তখন নতুন চাকরী পেল। কলেজে পড়ানো শেষ করে আমাকে খুঁজতে খুঁজতে এসে আমার পাশে বসে থাকত। কখনো ওর কলেজের মজার মজার গল্প বলে আমার মন ভাল করার চেষ্টা করত। খেতে না চাইলে নিজ হাতে মুখে তুলে খাইয়ে দিত।আরো অনেক বেশি করে আদর পেতে থাকলাম ওর কাছ থেকে।
বেশিদিন থাকে নি আমার এই বৈরাগ্য ভাব। কলেজে ভর্তি হবার পর থেকে আমি দুরন্ত হয়ে উঠলাম। বহির্জগতের সাথে আমার পরিচয় ঘটল সর্বান্তকরণে। কিছু নতুন বন্ধুবান্ধব তাদের নিয়ে কফি হাউসে আড্ডা আমার নেশা হয়ে উঠল। শুরু হল আমার দেশোদ্ধারের চিন্তভাবনা। রক্তে যৌবনের গান শুনতে পেলাম আমি। পড়ালেখা নিয়ে পড়ে থাকার থেকে দেশ এর জন্য, অন্যায় এর প্রতিরোধের চিন্তা আমার রক্তে নাচন লাগাল। আমি রাজনীতিতে মেতে উঠলাম। পুরান বন্ধুরা বলত এইসব রাজনীতি হল এই বয়সের হিরোইজম। ওদের কথা তখন আমার গায়ে হূল ফুটাত। ওদের জন্য মায়া হত এখনো ঘরের ননীর পুতুল রয়ে গেল। ভর্তি ফি বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে এইসব নিয়ে নেতারা গরম গরম বক্তৃতা দিত আমাদের রক্ত টগবগ করে উঠত। মিছিল মিটিং শেষে নিজের হাতে পোষ্টার লেখতাম। বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যেত। দেখতাম আমার ছোটদি একা জেগে আছে হয়ত কোন গল্পের বই পড়ছে। আমি আসারা সাথে সাথে খাবার টেবিলে খাবার গরম করে দিত। অপরাধীর মত ওর পাশে বসে পড়তাম খেতে। তখন শুরু হত ওর আমাকে বোঝানো পালা। একসময় ওর উপদেশের মুড শেষ হত। শুরু হত আমাদের ভাইবোনের গল্প।
আলাপে প্রায়ই আপনার কথা উঠে আসত। আপনার কথায় স্বপ্নীল হয়ে উঠত আমার দিদির মুখ। দিদিকে আপনি একটা শাড়ী দিয়েছিলেন। ও যেদিন সেটা পড়ে কলেজে যাচ্ছিল আমি আর মেঝদি ওকে খুব খেপাচ্ছিলাম। লজ্জায় আমার দিদি তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে বেঁচেছিল। এরপর প্রতিদিন দিদি কলেজে বের হওয়ার সময় আমরা ওকে জিজ্ঞেস করতাম কিরে তোর সাংবাদিকের শাড়ী পড়লি না যে। লজ্জা লাল হয়ে আমার দিদি বলত, “ মারব এক থাপ্পড়” । দিদির হাতে কখনো আমার থাপ্পড় খাওয়া হয়নি কিন্তু ও এত সুন্দর করে বলত মারব এক থাপ্পড়। প্রথম বেতন পেয়ে দিদি লিষ্ট করছিল কার জন্য কি কিনবে। আমাকে জিজ্ঞেস করছিল পিচ্চি তোর কি লাগবেরে। কি সব বলেছিলাম মনে নেই কিন্তু যেদিন ও শপিং করে ফিরল তখন দেখি কাকে দিয়ে একটা সাইকেল নামাচ্ছে। বললাম কার জন্য এই সাইকেল । সেই কবে আমি কখন ওর কাছে সাইকেল চেয়েছিলাম ও নাকি বলেছিল চাকরী করে আমাকে সাইকেল কিনে দিবে আজ তাই আমার জন্য সাইকেল কিনে এনেছে। তখন বলেছিলাম তুই কিরে দিদি আমি এখন বড় হয়েছি না সাইকেল না কিনে আমাকে একটা বাইক কিনে দিতি। আজ ও সেই সাইকেল আমার রুমের পাশে থাকে। আমি চড়ি না তাতে কিন্তু প্রতি সপ্তাহে সেটাকে ধুয়ে মুছে চকচকে না করে রাখলে আমার শান্তি হয় না।

বাবা কতদিন কতদিন দেখি না তোমায়...


অনেক বছর হল, আর ২ মাস পার হলে ১২ বছর হবে। আব্বুকে নিয়ে কখনো কোথাও কিছু লেখা হয়নি। শেষ যখন আব্বুকে দেখেছি সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে। অল্প একটু চেষ্টা করলেই দেখতে পাই ক্যাডেট ড্রেস পড়ে আমার ঘর থেকে মামার সাথে বের হয়ে যাওয়া দৃশ্য। আমার আব্বু বসে আছে বারান্দায়। আমি অনেকদুর এগিয়ে গিয়ে একবার দাঁড়িয়ে ছিলাম এরপর পিছনে তাকিয়েছিলাম। সেই দৃশ্য আমার চোখে ভাসে, আব্বু বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে আছে। তারপর আমি উঠে পড়েছিলাম রিকশায়। ক্লাস ৮ এ পড়ি তখন , জুনিয়র আসেনি তখনো। জুনিয়র আসার ৫ দিন আগে আবার যখন বাসায় এসেছিলাম তখন আর আব্বুকে পাইনি, সিলেট থেকে আমি আসতে আসতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল তার আগেই আব্বুর কবর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আব্বুর স্মৃতি স্মরণ করলে তাই আমার সেই চেয়ারে বসে থাকা দৃশ্যটা সবার আগে মনে পড়ে। আমাদের সেই বাসায় আমরা এখন আর থাকি না তবে সেই বাসার সেই বারান্দায় আমি আজো তাকাই সেদিক দিয়ে গেলেই।
বাবা কতদিন কতদিন দেখি না তোমায়...


আমার আব্বু একেবারেই একজন পারিবারিক মানুষ ছিলেন। নিজের পরিবার ছাড়া তার কোন বড় আদর্শ ছিল না। আর ১০ জন সাধারণ মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীদের মতই তিনি সংসার চালাতেন আর মনে একটা বিশাল আশা নিয়ে রাখতেন তার ছেলেগুলা পড়ালেখায় অনেক বড় হবে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার আগে এবং বিকেলে বাসায় ফিরে সন্ধ্যার পর থেকে ৯ টা পর্যন্ত নিজেই আমাদের পড়াতেন। অঙ্ক আর ইংরজি ছাড়া আর কোন সাবজেক্ট তার কাছে পাত্তা পেত না। এই দুইটা পড়তে পড়তে জান কাহিল হয়ে যেত আমাদের। অন্য সাবজেক্টের হোমওয়ার্ক ও আমাদের অনেক কষ্ট করে করতে হত। তার কাছেই জেনেছিলাম আমাদের যেহেতু আর কিছু নেই এই পড়ালেখাই আমাদের একমাত্র পুঁজি। একে সম্বল করেই এগুতে হবে জীবনে উপরে উঠতে হলে। সবচেয়ে কষ্ট হত যেদিন এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিত। সবসময় বৃহস্পতিবারে রেজাল্ট দিত আর শুক্রবারে আব্বু বাজার থেকে পেপার কিনে আনত। সেটা পড়তে পড়তে আমাদের উপর চলত অবিরাম গালিগালাজ। আমরা কেন কিছু পারিনা এই দেখ কত ছেলেপিলে স্ট্যান্ড করে ফেলতেছে। তখন মনে মনে সেইসব স্ট্যান্ড করা ছেলেদের কত গালিগালাজ করেছি। নিজে করে দেখাব এইরকম ভাবার সাহস তখনো পাইনি কারণ স্ট্যান্ড করে তো টিভি, পেপারের ছেলেরা তারা কি মর্ত্যে বাস করে নাকি। আমার বাবাও কোনদিন মনে হয় এইরকম স্বপ্ন দেখেনি। কারণ আব্বু তখন তার অফিসে কলিগদের ছেলেরা স্টার মার্ক্স পেয়ে গোল্ড মেডেল পাচ্ছে এইসব গল্প শোনাত আমাদের। আমরাও সেটার আশা করতাম। স্টার মার্কস পাব গোল্ড মেডেল পেলে আব্বুর অফিসে বসরা বলবে, " জয়নাল সাহেবের ছেলেটা তো অনেক ব্রেইনি"। আমার আব্বু বিগলিত হাসি দিবে। এরচেয়ে অনেক বেশি আনন্দ দেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহ যখন আমাকে দিল তখন আব্বু এসবের অনেক ঊর্দ্ধে। ওপার থেকে কি এপারের কিছু দেখা যায়? আনন্দিত হবার ক্ষমতা কি থাকে? ২০০২ এর সেই দিন আমার খুব বলত ইচ্ছে করছিল , " আব্বু স্ট্যান্ড করা ছেলেদের শুধু যে পত্রিকার পাতায় দেখা যায় তাই না , আপনার ছেলের ছবি আজ পত্রিকার পাতায়"।


ছোটবেলা থেকেই আমার ধারণা আমার আব্বু আমাকে কম আদর করে। এখনো এই ধারণা বদলায়নি। এরকম হতেই পারে এক ঘরে সব ছেলেকে সমান আদর করবে এরকম হয় না। আমিও অনেক ঘাউরামি করতাম। শুক্রবারের দুপুরের খাবারটাই শুধু সপ্তাহে একদিন আমরা আব্বুর সাথে খেতে পারতাম। সেদিন বাজার হত হয়ত মাছ কিনে আনা হত , সেটা থাকত আর আমার আব্বুর বাতিক হিসেবে একগাদা সবজি। সবজি আমি কোনকালের পছন্দ করতে পারি নি বিশেষ করে করলা। এই তিতা জিনিস মানুষ কেমন করে খায় আমি আজও বুঝিনা। আব্বুর সামনে খাওয়া তাই সবাইকেই ওটা খেতে হবে। কিন্তু আমি খাব না তাই প্রথমে ভাত নিয়েই অন্য তরকারী নিয়ে নিচ্ছিলাম। চোখে পড়ে গেলাম আব্বুর। কেন আমি সবজি খাব না সেই জন্য তখনই আমাকে কান ধরে ১০ বার উঠবস করতে বলল। রাগে অপমানে আমি সেদিন শুধু করলা দিয়েই ভাত খেয়েছিলাম। আমাদের বাসায় এখন আর করলা রান্না হয়না বুঝি যে তখন সবাই অনেক কষ্ট করে অপছন্দের খাবার খেত। এখনো কোথাও করলা দেখলে আমার চোখে সেই দিনের দৃশ্য ভেসে উঠে। মানুষের এই ফ্ল্যাশব্যাক সিস্টেম বড়ই অদ্ভুত অন্তত ১৫-১৬ বছর আগের ঘটনা এখনো চোখ বুঝলে সাথে সাথে চোখে ভেসে আসে।


তখন ক্লাস ৫ এ পড়ি মনে হয় বন্ধুদের সাথে অন্য স্কুলের ছেলেদের সাথে ফুটবল ম্যাচ ফেলা হয়েছে। সকাল থেকে আম্মুকে ঘ্যানঘ্যান করছিলাম আব্বুকে বলার জন্য। আব্বুর কাছে সরাসরি আবদার জানাবার সাহস ছিল না আমার তার উপর শুক্রবার সারাদিন আব্বুর প্ল্যান থাকে আমাদের পড়াবার। অনেক কষ্টে আব্বুকে আম্মু রাজি করাল ১১টা পর্যন্ত মন দিয়ে পড়লে আমাকে খেলতে যাবার অনুমতি দেওয়া হবে। শুধু মন কেন আমি মন দেহ সব ঢেলে দিলাম পড়ায় ১১টা বাজার সাথে সাথে উঠে বাইরে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম হঠাৎ আব্বুর কি মনে হল কি জানি বলল আমার খেলতে যাবার দরকার নেই। এ কথা শুনে তো আমার প্রাণ ফেটে যাচ্ছিল এই ভেবে যে তাহলে এতক্ষণ কষ্ট করে পড়লাম কেন। রান্নাঘরে গিয়ে আম্মুর সাথে ঘ্যানঘ্যান করার শাস্তি পেয়েছিলাম সাথে সাথেই।
মনে হচ্ছে খুব কষ্টের স্মৃতি কিন্তু এখন ভাবতে ভাল লাগে। আমি সবার সাথে আমার আব্বুর কথা যখন বলি খুব সাধারণ ভাবেই বলি খারাপ ভাল রাগ একেবারে সাধারণ ভাবেই বলে যাই। আব্বু নেই দেখে কোন রকম আবেগ তুলে আনিনা তাই অনেকে ভাবে আব্বুর উপর আমার রাগ আছে। আসলে একেবারেই তা না। আব্বুর সাথে আমার বাপ-ছেলের সম্পর্কই ছিল। ছোট ছিলাম তাই শাসন খেয়েছি বড় হলে হয়ত সম্পর্কটা অনেক মধুর হত সেই সুযোগ পাইনি। আর আনন্দের স্মৃতি থেকে এইসব শাসনের স্মৃতিই বেশি মনে থাকে। কলেজে যাবার সুবাদে ৩ ভাইয়ের মধ্যে আমিই একমাত্র আব্বুর চিঠি পেয়েছিলাম। সব জমানো ছিল। প্রায় ১৭ খানা চিঠি যক্ষের ধনের মত জমিয়ে রেখেছিলাম। আমার বড় ভাই সেগুলা কোথায় যেন গুছিয়ে রাখল অনেকদিন দেখিনা। দেখি দেশে গেলে খুঁজে দেখতে হবে।

Tuesday, April 7, 2009

ভালবাসি

তুমি ফিরে আসবে কখনো ভাবিনি।
ফিরে আসাতেই বুঝলাম ,
তোমাকে কতটা ভালবাসি।
যে রাগে তোমাকে ভুলতে চেয়েছিলাম
সেটা অবুঝের অভিমান।

আবার যেদিন

ভিতরের মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছে
অনেকদিন আগেই।
আবার যেদিন মানুষ হব
বাংলায় রাজাকার থাকবে না।

অনিকেত প্রান্তর

তোমার আর আমার মাঝে এখন
এক সমুদ্র দূরত্ব।
সেখানে কিছু নেই,
না দুঃখ, না হাহাকার
নেই কোন অভিমান।

Sunday, April 5, 2009

আজ রবিবার

আজ রবিবার , খুব সুন্দর একটা দিন হবে হবে করেও দিনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে এসে দেখি মোবাইলে মিসকল। কার কল হতে পেরে ভাবতে ভাবতে মোবাইল হাতে নিয়েই দেখি আমার আপুসোনার। আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। দুমিনিট আগে ফোনটা আসতে পারত কিংবা আমিও ২ মিনিট পরে মুখ ধুতে যেতে পারতাম। মোবাইলের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে থাকতে মনে হল আমি কল দেই। অনেক অনেক দিন পরে আমার আপুসোনাটাকে ফোন দিলাম। ও ধরেই পিচ্চি বলে একটা ডাক দিল আমার মনটা ভরে গেল। এরপর লাইন কেটে দিয়ে আবার নিজেই করবে বলল। আমি তখন ভাবছি আমার আজকের রবিবারটা অসাধারণ কাটবে।
আমার আপুসোনাটাকে আমি কেন এত ভালবাসি তার কোন উত্তর আমার জানা নেই। শুধু জানি আমার জন্য সে অনেক অনেক স্পেশাল একটা মানুষ। আর ওকে আপুসোনা না ডাকলে ওর কাছ থেকে একদিন পিচ্চি ডাকটা না শুনলে আমার ভাল লাগে না। এর জন্য আমার ভবিষ্যতে অনেক দুঃখ আছে আমি জানি তাও আমি ওকে ভাল না বেসে পারি না। আমার আপুসোনাটা আমার জাআআআন । ভাবতে ভাবতেই ওর ফোন চলে এল। এত সুন্দর করে পিচ্চি ডাকে আমি নিজেও বুঝিনা এত মিষ্টি কেন ওর পিচ্চি ডাকটা। গত ২ দিন আমার সাথে যোগাযোগ করে নি বলে স্যরি হল। আমি একটু আহ্লাদ করার আগের সবচেয়ে মন খারাপ করা খবরটা দিল। ওর একটা অসুখ ধরা পড়েছে। আমি খালি ভাবছি কেন আমার আপুসোনার এত অসুখ হবে। কেন ও এত কষ্ট পাবে। ফোন রাখার পর থেকে শুধু ওর কথাই মনে পড়ছে। আর আল্লাহকে বলছি আল্লাহ আমার আপুসোনাটাকে প্লিজ আর কষ্ট দিও না। অসুখটা যেন খারাপ কিছু না হয় খুব তাড়াতাড়ি যেন অল্প কিছু ট্রিটমেন্ট এই ভাল হয়ে যায়। কেন যেন ফোন রাখার পর থেকে একটা মিনিট ও মাথা থেকে আপুসোনা শব্দটা তাড়াতে পারছিনা।
আপুসোনা আমার , আমার জাআআআআন আপ্পি, তুই তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যা। যে কোন কিছুর বিনিময়ে তোর সুস্থতা কামনা করছি সবার আগে। ভাল থাকিস আপুসোনা অনেক অনেক বেশি ভাল।

Wednesday, March 18, 2009

আমার কাজলাদিদিরা -শেষ পর্ব (আপুসোনা)

এইচ,এস,সি পরীক্ষার আগের শেষ ছুটিতে কলেজ থেকে ঢাকা আসলাম। রাত জেগে পড়ালেখা করি আর দিনের অর্ধেকটা সময় ঘুমাই। রাতের ১০টা না বাজলে আমি পড়া শুরু করতে পারি না।কোন স্যারের কাছে পড়তাম না বলে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে হলে মাঝে মাঝে বিকেলে যেতাম কোথাও। সেখানেই শুনলাম ওমেকায় নাকি এক ভাইয়া আছে আলী ভাই (পিসিসি) অসাধারণ কেমিষ্ট্রি পড়ায়। বাকি সব বিষয় নিজে নিজে সাইজ করে ফেললেও কেমিষ্ট্রি বিশেষ করে ২য় পত্র তখনো খালি মুখস্ত আর ভুলে যাওয়ার বৃত্তেই ছিলাম। ভাবলাম একবার গিয়ে দেখে আসি। পোলাপান বলল ওমেকায় নাকি ক্যাডেটদের জন্য একটা প্রিপ্যারেশন ক্লাস হচ্ছে বহুত কলেজের পোলাপান আসে। মর্তুজার সাথে গেলাম ওমেকায়। প্রথম দেখেই মিজান ভাই এমন গড়গড় করে আমার নাম ঠিকানা বলতে লাগল ভাবলাম কি ব্যাপার আমার সাথে তো এনার এর আগে দেখা হয়নি। যাই হোক উনি বলল উপরে চলে যা একটা ফিজিক্স ক্লাস হচ্ছে তারপর আলী ক্লাস নিবে। কোথায় ওয়েট করব খুঁজে না পেয়ে ক্লাসেই ঢুকলাম। দেখলাম চশমা পড়া একটা আপু ক্লাস নিচ্ছে। ক্লাসে ঢুকে অসংখ্য ক্যাডেটের সাথে হাই হ্যালো করাটাই প্রধান কাজ হয়ে গেল। হঠাৎ করেই আপুটা আমাদের চুপ করতে বলল। প্রথমবারের মত ওনার দিকে তাকালাম। ওর কথা খুব সুন্দর। কিছুক্ষণ কথা শুনে আমরা সবাই তার ভক্ত হয়ে গেলাম। ক্লাস শেষে সবাই আপু কি করে কোথায় পড়ে সেই খবর নিচ্ছিল। সেদিন বাসায় ফিরে ওর নামটা আর আমার মনে থাকল না কিন্তু সেই চেহারা মাথার ভিতর থেকে গেল। আমার মনে হচ্ছিল এত মায়াবী চেহারা আমি আর দেখিনি। সেদিন থেকে আমি সবসময় আমার কল্পনার বোনটার একটা চেহারা বানিয়ে নিলাম। সেটা হুবহু ওর মতই দেখতে। এরপর কলেজে গেলাম ইন্টার পরীক্ষা দিলাম রেজাল্ট হল ওমেকায় ভর্তি কোচিং করলাম আর কোনদিন ওর সাথে দেখা হয়নি। পরে শুনেছি সেদিনই ওর প্রথম এবং শেষ কোচিং এ ক্লাস নেওয়া ছিল। আমি ওর নাম ভুলে যেতাম বন্ধুদের বলতাম ওই আপুটার কি জানি নাম ছিল?
ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সেই মায়াবী আপুটা যেই ভার্সিটিতে পড়ে সেখানে চান্স পেলাম। মাঝে মাঝে দেখা হয় কিন্তু পরিচয় নেই তাই কথা বলি না। আমার বন্ধুদের দুএকজনের সাথে দেখি আপুর হাই হ্যালো চলে। আমিও পাশে থাকি একটু হয়ত হাসি দেয় , আর আমি সবসময় ভাবি আপুর সাথে পরিচয় করতেই হবে। এক বছরের মাথাতে জাপান চলে আসলাম। আর কখনো ওর সাথে দেখা বা যোগাযোগ হওয়ার কথা না। প্রথম যখন দেশে গিয়েছিলাম সেবার জ়ে এম বি সারা দেশে যেদিন বোমা মেরেছিল বুয়েটে সেদিন ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল। জিজ্ঞেস করেছিলাম আপু ভাল আছেন? মনে হয় সরাসরি সেটাই আপুর সাথে আমার প্রথম কথা। ২০০৬ সালের এপ্রিল এ ছুটি কাটাচ্ছিলাম হঠাৎ কি মনে হতে অরকুটে আপুর একটা ছবি দেখে আপুকে একটা মেসেজ দিলাম। এরপর ভুলে গেলাম। কিছুদিন যেতেই দেখি সেখানে আপুর ফিরতি কমেন্ট, "তোমাকে মেইল করেছিলাম পাওনি" । আমি তো অবাক হয়ে গেলাম আমাকে মেইল করল কখন। হটমেইলের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে স্প্যাম ফোল্ডারে গিয়ে আপুর মেইল পেলাম। এরপর আপুকে মেসেঞ্জারে এড করলাম । আমার তখন ছুটি চলছে আর আপুর ও তখন মনে হয় কিছু একটা নিয়ে ক্লাস বন্ধ। প্রথম যেদিন কথা হয়েছিল আমার মনে আছে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম ও কি সুন্দর আদর করে কথা বলে। যখন ভাইয়া বলে ডাকে তখন মনে হয় আমি আসলেই ওর আপন ভাই। কত আগে থেকে ওকে আমি আপু হিসেবে ভাবা শুরু করেছিলাম সেই তার থেকে এমন ফিডব্যাক পেয়ে আমি খুশিতে আত্মহারা । সেদিন কোন কারণে ওর মন খারাপ ছিল। ওকে বললাম আপু চিন্তা করবেন না আপনার মন ভাল করে দিব। পরের দিন ক্লাসে বসে ওকে একটা চিঠি লিখলাম। পোষ্ট করলে পাবে দেরিতে তাই স্ক্যান করে মেইলের সাথে এটাচ করে পাঠিয়ে দিলাম। হাতে লেখা চিঠি দেখে ও অসম্ভব খুশি হল। আমাকে বলল তোর মত আমার যদি একটা ছোট ভাই থাকত। এই কথা শোনার জন্য সেই ছোটবেলা থেকে আমি অপেক্ষা করেছি। এই প্রথম কেউ আমাকে ভাই বানাতে চাইল।
আপুর সাথে আমার প্রতিদিন কথা বলা শুরু হল। ও আমাকে পিচ্চি বলে ডাকে। আর আমি মনের আনন্দে সারাদিন আপু আপু করতে থাকি। কথায় কথায় ওর সাথে আমার সম্পর্ক এরকম হয়ে গেল আমার আর মনেই হয় না আমার কখনো বোন ছিল না। সবাইকে বলে বেড়াই আমার বোন আছে। আপনি থেকে কখন যে ও তুমি হয়ে তুই হয়ে গেল নিজেই টের পেলাম না। নেটে এসে বসে থাকতাম কখন আমার আপুটা আসবে। ও নেটে এসে আমাকে না দেখলেই মোবাইলে মেসেজ দিত ," পিচ্চিসোনা তুই কোথায়? আপুর সাথে কথা না বলেই ঘুমিয়ে পড়েছিস?" আমি যেখানেই থাকি না কেন ঘুমে হলেও সেই মেসেজ পেয়ে নেটে এসে বসি। ভাই বোন রাজ্যের অকাজের কথা বলি। এরপর হঠাৎ করে ওর খেয়াল হয় আমার অনেক রাত হয়ে গেছে। ঝাড়ি মেরে আমাকে ঘুমাতে পাঠাত । যেদিন রান্না করতাম না সেদিন গিটার স্ম্যাশ করত আমার মাথায়। ওর ঝাড়েই খেয়ে যে কতদিন ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রান্না করেছি। আগে না খেয়েই কাটিয়ে দিতাম কত দিন, ওর মায়াবী শাসনে সেসব বন্ধ হল। রাতে যেদিন হঠাৎ করে ঘুম আসতে চাইত না তখন ওর মোবাইলে মেসেজ দিতাম আপুমনি, ঘুম আসছে না আমার। ও মেসেজ দিত , " তুই চোখ বন্ধ কর আপু তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ঘুম এসে পড়বে"। সত্যি সত্যি যেন ওর হাতের স্পর্শ পেতাম। দিনে দিনে ওর সাথে থাকতে থাকতে আমি নিজেকে আরো ছোট ভাবতে লাগলাম। মনে হত আমি বুঝি ৪-৫ এ পড়া পিচ্চি আর ও আমার জানের জান আপুসোনা। ও আমাকে বলত , " পিচ্চি আমি যখন কাউকে ভালবাসি তখন একেবারে এত্ত ভালবাসি দেখিস আবার তুই বিরক্ত হয়ে যাইস না"। আমি মনে মনে বলি আপু আমি আজীবন এরকম আদরই চেয়েছি রে। ওকে আমি কত্ত নামে ডাকা শুরু করলাম। কখনো আপু, কখনো আপুমনি, কখনো আপুনি, কখনো আপ্পি। তবে ও ছিল আমার আপুসোনা। এত ভাবে ডেকেও আমি নিজের ভাব কখনো প্রকাশ করতে পারিনি। চিঠি লিখে ওর কাছে আসা এই জন্য মনে হয় ইচ্ছা হলেই আমি ওকে চিঠি লেখতাম। হয়ত একটা বোরিং ক্লাস হচ্ছে আমি হঠাৎ এক পেজ নিয়ে লেখা শুরু করে দিতাম।

একদিন পরীক্ষা চলছিল তখন আমার, পরীক্ষা দিয়ে এসে ঘুমিয়েছি দুপুরে আগের রাত জাগার কারণে হেভভি ঘুম যখন আসল তখনই অফিস থেকে আমাকে ডাকল কি নাকি রেজিষ্ট্রি করা জিনিস এসেছে। মেজাজ খারাপ করে গেলাম কিন্তু তখনো বুঝিনি আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। গিয়ে দেখি একটা বিদেশি খাম প্রাপকের জায়গায় আমার নাম। আর বাম দিকে একটা অসম্ভব প্রিয় নাম। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। এর আগে অনেককেই অনেক ভাবে আমি সারপ্রাইজ দেবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এই চিঠি পেয়ে বুঝতে পারলাম আসল সারপ্রাইজ কি জিনিস। খুব ছোট্ট একটা চিঠি কিন্তু কতবার যে সেটা আমি পড়েছি। দিনে দিনে রকেটের গতিতে আমার আপুসোনা আমার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেল। এমন কোন দিন নেই যে ওকে আমার মনে পড়ত না। আর প্রতিদিন রাতে তো কথা হতই। সারাদিন অপেক্ষা করতাম ওর নেটে আসার জন্য। বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য ওর পরীক্ষা তখন পিছিয়ে গেছে। আমার থেকে খুশি আর কে তখন। বাসায় আমার আম্মু, ভাই সবার তখন আমার মুখে ওর নাম শুনে শুনে মুখস্ত হয়ে গেছে। আমি সবাইকে বলে বেড়াই পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবতী মেয়েটি আমার বোন। এর পর দেশে গিয়েছিলাম দুমাস পরে। প্লেন থেকে নেমেই আমার আপুসোনার ফোন আসল। এরপর প্রতিদিন রাতে ও আমাকে ফোন করত। ওর সাথে প্রথম যেদিন দেখা করতে গিয়েছিলাম সেদিন বড় আপুর জন্মদিন ছিল। আপু আমাকে লাঞ্চ করাল। প্রথম দেখলাম আমার আপুসোনাকে, প্রথম ওর কাছাকাছি গেলাম। মনেই হল না যে ওকে আমি চিনেছি মাত্র কিছুদিন আগে। ওর ফ্যামিলির সবাই আমাকে ওর ছোট ভাই হিসেবেই নিল। আপু হয়ে গেল আম্র বড় আপু আর ওনার হাজব্যান্ড আমার ও ভাই। ওদের ফ্যামিলির সাথে আশুলিয়ায় একটা ডিনার করতে গিয়েছিলাম আমি সামনের সিটে বসে আছি হঠাৎ আপু পিছন থেকে আমার চুল এলোমেলো করে দিল। অসম্ভব ভাল লাগায় চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছিল। ওর আদর পেয়ে আমার তখন মনে হচ্ছিল আমার আপন বোন থাকলেও বুঝি এইরকম আদর করতে পারত না। ছোট বেলা থেকে বোন না থাকার কারণে বিধাতার কাছে যে অভিমানটুকু আমার ছিল সব চলে গেল ওকে পেয়ে।
বন্ধুবান্ধবের বহুত পচানো খেয়েছি ওকে নিয়ে অনেকে অনেক রকম টিটকারী করত। মেজাজ খারাপ হত, আপুকে বলতাম। বলতাম আপু তুই কেন আমার আপন আপু হইলি না তাহলে তো ওরা এরকম করত না। আপু বলত, " তুই আমার ভাই এটা আমরা জানলেই হবে বাইরের মানুষ কি ভাবল সেটা আমলে নিস না।" দেশ থেকে ফিরে বাসার জন্য দেশের জন্য যখন অসম্ভব মন খারাপ তখন আপুও ছিল না দেশে। ইন্ডিয়ায় ছিল ও। ও দেশে ফিরে এসেই আমাকে একটা মেসেজ পাঠাল, " বাবুয়া, তোকে আমি এখন থেকে বাবুয়া ডাকব। দেশে ফিরে তুই নাই দেখে এত্ত খারাপ লাগছে আমার মনটা হুহু করছে তোর জন্য, যদিও দেখা হত না কিন্তু তাও মনে হত দেশেই তো আছিস। আন্টি কিভাবে তোকে ছেড়ে থাকে?"
এই মেসেজ পড়ে আমার চোখে পানি চলে আসল। আমার আপুসোনাটা সত্যি পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবী মেয়ে। আবার শুরু হল আপুর সাথে আমার নেট কথোপকথন। আমার একাকী জীবনে ও ছিল বদ্ধ ঘরের মাঝে একমাত্র জানালার মত। আমার খারাপ লাগা, ভাল লাগা, একা লাগা, সব কথা আমি ওর কাছে বলতাম। কখনো ভাবিনি ও বিরক্ত হবে। এ ছিল আমার দাবীর মত। আমি ওর ছোটভাই ওকে বিরক্ত করতে পারাটাও আমার অধিকার ভাবতাম। তাই মন খারাপ হলেই ওকে ডাক দিতাম আপুসোন একটু ক্ষনের জন্য হলেও আয় একবার নেটে। আমার কোন চাওয়াই অপূর্ণ থাকত না। না আসতে পারলেও আদর করে এমন একটা এসএমএস দিত সেটাতেই আমার মনটা ভরে যেত। আমার মা আমাকে সাবধান করে দিত। দেখ তপু এত আপু আপু করিস না পরে কষ্ট পাবি। আমি মানতেই চাইতাম না এ যে আমার আপুসোনা। আরেক জন্মে আমরা যে আসলেই ভাই বোন ছিলাম। ওকে বলতাম আপুসোন তুই আমার টুইন বোন হ। টুইন জিনিসটা আমার খুবই কিউট লাগে। এখন লিখতে গিয়ে কত ছোটখাট মজার কথা মনে পড়ছে তাই লেখা অনেক আস্তে আগাচ্ছে। হঠাৎ করে ছন্দপতন হল। আমার আপুসোনা ওর পার্সোনাল জীবনে এলোমেলো হয়ে গেল। আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম তখন আপুর পাশে থেকে আপুর মন ভাল করার জন্য। কিন্তু ছোটভাইর সাথে শেয়ার করাটা একসময় আর ওর ভাল লাগল না। বড় বেশি জটিল হয়ে গেল আমার সবসময়ের হাসিখুশি আপুসোনাটার জীবন। আমি আমার আপুসোনার কাছে আর থাকতে পারলাম না। নেটে এসে আমাকে আর ডাকে না। আমি থাকলেও কথা বার্তা বলে না তেমন একটা। আমি এপাশ থেকে বকবক করতে করতে হঠাৎ টের পাই ও আমার কথা শুনছে না। তীব্র অভিমান হল আমার। কদিন আমিও সরে থাকার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ততদিনে আপুকে ছাড়া আমার চলে না। আবার এসে ওকে নক করি, ন্যাগ করি। আপুও বিরক্ত হতে থাকে কিন্তু আমার তখন বুঝেও কিছু করার নেই। একদিন ওকে অভিমান নিয়ে সব কথা বলেই ফেললাম কেন আপু এখন আর আমাকে আগের মত আদর করে না। ও স্যরি হল বলল পিচ্চি তোর আপুসোনাটা অনেক খারাপ শুধু নিজের জীবন নিয়েই চিন্তা করে তোর কথা ভুলে গিয়েছিল। ওর আদর মাখা কথা গুলা শুনে আমি আবার ঠিক হয়ে গেলাম। আপুকে বললাম আপু তুমি প্লিজ আবার আগের মত হয়ে যাও। কিন্তু আমি তখন বুঝিনি যা একবার চেঞ্জ হওয়া শুরু করে তা আর কখনো আগের মত হয়ে ফিরে আসে না। এরপর ও আপুর সাথে আমার কথা বার্তা হত। হঠাৎ করে অনেকদিন আপুকে নেটে দেখলাম না। ওর সাথে কথা না বললে আমার তখন পেটের ভাত হজম হয় না টাইপ। কিন্তু ও তখন নিজের ঝামেলা নিয়ে এত ব্যস্ত আমার দিকে তাকাবার ফুরসত নেই ওর। আমার ছেলেমানুষী কথাবার্তা শোনার সময় দিতে ওর বিরক্ত লাগল। অসম্ভব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি তাও প্রতিদিন ওর জন্য নেটে বসে থাকি আর ঘুমাবার আগে ওকে মেইল করে শুতে যাই। সারাদিন মোবাইলে তাকিয়ে থাকি এই বুঝি আমার আপুসোনার একটা মেসেজ আসবে আমার মোবাইলে লেখা থাকবে পিচ্চিসোনা তুই কি আপুর উপর রাগ করেছিস? কত্ত দিন তোর সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না। যেই আপু আগে আমাকে বলত , ” বাবুয়া তুই সবসময় হাসিখুশি থাকবি তোর হাসিমুখ না দেখলে বড় অস্বস্তি লাগে” সেই আপু এখন আমার খবর নেয় না। নিজেকে আমি বুঝাই আমার আপুসোনার এখন ক্রিটিক্যাল সময় যাচ্ছে। এটা কেটে গেলেই আবার আমার আপুসোনা আগের মত হয়ে যাবে। এ হল বড় হবার যন্ত্রণা। তখন মনে হত কেন আরো ১০ বছর আগে আমি আমার এই আপুসোনাকে কাছে পেলাম না। ও নানা সময়ে এমন অনেক কাজ করেছে যেটা স্পষ্টতঃ আমাকে বোঝানো যে আমি ওকে বিরক্ত করছি, আমার হাত থেকে নিস্তার পাবার জন্য ও অনেক সময় মিথ্যা কথাও বলত। আমি সবই বুঝতাম কিন্তু সরতে পারছিলাম না। বোনটাকে হারিয়ে ফেলব এ জিনিস আমি যে কখন ভাবিনি। আমার মা আমাকে বোঝাত, তুই তো ওর আপন বোন না ও কেন তোর জন্য এত করবে, তোর জন্য নিজের ঝামেলা বাড়াবে। আমি সব শুনি আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি, ” এভাবে ঝেড়ে ফেলবিই যদি তাহলে কেন এত আদর করেছিলি”। তুইই তো বলেছিলি যে খুব বেশি ভালবাসবি আমাকে আমি যেন বিরক্ত না হই। এখন কেন আমার ভালবাসা তোর কাছে বিরক্ত লাগে। এখন কেন তোর মনে হয় আমার এক্সপেক্টশন বেশি, আমি অবুঝ । আমাকে পিচ্চি বানিয়েই তো তুই আদর করতি। আমার তো বুঝার কথা না। আমি তো তোর পিচ্চিসোনা , বাবুয়া ছিলাম।
কত বার ভেবেছি আর কখনো ওর কাছে যাব না। ওকে নিয়ে ভাবব না। কিন্তু তা কি আর পারা যায়। মাঝে মাঝে কষ্টে ভাবতাম আমার মত কষ্ট আপু তুইও পাবি। সাথে সাথে ভাবতাম এ কি বলি আমি। আমার আপুসোনা কেন কষ্ট পাবে। ও সুখে থাকুক সারাজীবন। ওর জীবনের সব কষ্ট যদি আমি ভোগ করে দেই তারপর যদি ওর আর কখনো হাসি মুখ মলিন না হয় তাহলে আমি রাজি। একটা সময় আরো কিছু ঘটনা ঘটাতে সহ্য করতে না পেরে আমি হাল ছাড়লাম। ওর থেকে সরে আসলাম। বন্ধ করলাম ওকে মেইল করা। ততদিনে ওর সাথে আমার যোগাযোগ একেবারে শূন্যের কোঠায়। আমি মেইল করলেও ও তখন আর উত্তর দেয় না। সব ছেড়ে আমি তখন আমার আপুসোনার সাথে কাটানো ৭ মাসের স্মৃতি ঘাটি। পুরান মেইল পড়ে নতুন করে আদর অনুভব করার চেষ্টা করি। আমার মা আমাকে অনেকভাবে বুঝায় আমার মন ভাল করার চেষ্টা করে। বলে তুই কি আমার থেকে তোর আপুকে বেশি ভালবাসিস নাকি। আমি হাসি, কি বলে আম্মু। আমার মা না থাকলে সেই সময় পার করা আমার পক্ষে সম্ভব হত না। আমার মা আমাকে ভুল বুঝেনি এজন্য আমার মায়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি জানি আমার সেই সময়ের অবস্থা দেখে কেউ যদি অন্য কিছু ভাবত তাহলে তাকে খুব একটা দোষ দেওয়া যেত না। আমার অবস্থা বুঝার মত পরিস্থিতি ছিল শুধু আমার আপুসোনার। সেই যখন বুঝেনি তাহলে আর কি।
সময় গেলে নাকি সব কিছুই হালকা হয়ে যায়। কিন্তু এখনো আমি আমার আপুসোনার সাথের সেই ৭ মাসকে অসম্ভব মিস করি। প্রতি রাতে ভাবি আজ যদি আসে একটা মেসেজ যে পিচ্চি আয় নেটে কত্তদিন তোর সাথে আড্ডা দেই না। অসুস্থ হলে ভাবি এই বুঝি আপুসোনা ফোন করবে।
আমার আপুসোনার জীবনের জটিলতা কেটে যায় একসময়। চাকরী হয় ওর। বিয়েও হয়। জীবনে অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে ও। এখন আর আমাকে ফিল করলেও আগের মত সময় দেওয়া ওর পক্ষে সম্ভব নয়। আমিও ওকে অনেক বুঝতে পারি ওর অপারগতাটুকু আমাদের সম্পর্কের লিমিটটুকু।তোর পিচ্চি অনেক বড় হয়ে গেছেরে আপু। এখন আর অবুঝ নেই। আমাকে ও এখন নিয়মিত মেসেজ দেয়। আমার খবর নেয়। হঠাৎ হঠাৎ ফোন ও। দেশ থেকে আসা একটা ফোন এমনিতেই কত আকাঙ্খিত আর তা যদি হয় এরকম একজন প্রিয় মানুষের। ফোনে ওর নাম্বার দেখলেই আমার মন অসম্ভব ভাল হয়ে যায়। মন যখন খারাপ থাকে খুব তখন খুব করে চাইতে থাকি ওর একটা ফোন আসুক। ওকে এখন আর আমি ফোন করিনা, চিঠি লেখিনা। কথাটা মনে হয় ভুল বললাম। ফোন করিনা ঠিকই কিন্তু প্রায় রাতেই ওর সাথে কল্পনায় ফোনে কথা বলি আমি। চিঠি হয়ত পাঠাই না তবে ওকে লেখা চিঠি জমা হয় আমার ডায়েরীতে। ওর শান্ত জীবনে আমি আর বিরক্ত করতে চাই না। আমার আপুসোনা সুখে থাকুক অনেক। ও যেন আর কখনো আমার কোন আচরণে বিরক্ত না হয় এজন্য সবসময়ই সতর্ক থাকি আমি যদিও সম্পর্কের এইসব আরোপিত জিনিসে আমার অনেক আপত্তি। আমি জানি হয়ত ও এখন আমাকে আগের মত পিচ্চিসোনা , বাবুয়া ডেকে আদর করে ওর আদর প্রকাশ করে না তবে আমি এখনো ওর ছোটভাই আছি। আমি এইটা বিশ্বাস করতে চাই। সত্য কিনা নাই বা নিলাম তার খবর।
আমার আপুসোনা আজীবন আমার কাছে আপুসোনাই থাকবে। হয়ত জীবনের নানা ঝামেলায় দুদিন পরে ওর সাথে আমার এখন যে নিয়মিত যোগাযোগটা আছে সেটাও থাকবে না। হয়ত ব্যস্ততার কারনে ও আর আমার কথা মনে করার সময় ও পাবে না। আমিও হয়ত ওর কথা ভাবতে ভাবত আর কোন পাত্তা না পেতে পেতে একসময় ওর কথা ভুলে যাব, তখন আর আজকের মত আপুসোনা আপুসোনা করব না, আমার জীবনেও হয়ত অনেক ব্যস্ততা আসবে , আরো অনেক কাছের মানুষ আসবে যাদের ভীড়ে একসময়ের সেই অসম্ভব ভাললাগা ৭ মাস বিস্মৃত হয়ে যাবে তবুও কোন একদিন যদি এই লেখা কিংবা আমার আপুসোনার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু একটা আমার চোখে পড়ে সেদিন আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব এমন একটা আপুসোনা আমার ছিল। শুধু একটাই আফসোস আল্লাহ যদি ওকে আমার নিজের আপন আপু করে দিত তাহলে প্রাণ ভরে ওকে ভালবাসতে পারতাম।
আপুসোনা তুই অনেক অনেক সুখে থাক। তোর সব দুঃখ যদি আমি নিয়ে নেই তারপর যদি তোর আর কখনো দুঃখ না আসে তাহলেও আমার এতটুকু কষ্ট থাকবে না। আমি জানিনা তোমার হয়ত মাঝে মাঝে মনে হতে পারে তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছ সেজন্য তোমাকে বলছি আমি যতটুকু কষ্ট পেয়েছি তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। তবে সবাই সেইরকম জায়গায় যেতে পারে না। এতটুকু কষ্ট দেওয়ার জন্য একটা যোগ্যতা লাগে। তুমি সেই যোগ্যতা অর্জন করেছিলে। আমার সবচেয়ে কষ্ট লাগত একটা কথা ভেবে একদিন আসবে যখন তুমি আমাকে ইগনোর করলেও আমি কষ্ট পাব না কারন তুমি তখন আর আমার আপুসোনা থাকবে না। আপুসোনা তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি। আমার এই ছোট্ট জীবনে আমি আমার ফ্যামিলির বাইরে তোমার থেকে বেশি ভাল আর কাউকে কখনো বাসিনি।

Wednesday, March 11, 2009

আমার কাজলাদিদিরা ( তন্বীআপু )

তন্বী আপু কিন্তু আমাকে এখনো আপু বানাবার পারমিশন দেয়নি। উনি খুব ভালভাবেই আমার এই আপু বানাবার রোগ সম্বন্ধে অবগত। এবং প্রথম দিন থেকেই ওনার কাছে ওয়ার্নিং পেয়ে পেয়ে এখনো ওনাকে আপু বানানো হয়নি। কিন্তু এই সিরিজের অন্য সবার সাথে ওনার অনেক মিল তাই ওনাকে নিয়েও লেখা যাক।
জাপানে আসার পর শুনলাম আমাদের এই স্কলারশীপের এই প্রোগ্রামটায় যারা এসেছে আমাদের সিনিয়র সবাই ছেলে শুধু একটা বড় আপু আছে নাম ও জেনে গেলাম তন্বী। ৪-৫ মাস পরে ওনার সাথে যখন দেখা হল তখনো খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হবার চান্স পেলাম না। আমাদের সিনিয়র ব্যাচের সাথে ওনার সম্পর্ক অনেক বেশি ভাল থাকার কারণে আমরা খুব একটা পাত্তা পেলাম না। যাই হোক সেইরকম ভাবেই চলছিল। ঠিক কখন যে ওনার কাছে আসলাম বলতে পারব না তবে একটা ঘটনা আমার এখনো আমি সবাইকে বলে বেড়াই। জাপানে এসে হালাল খাওয়ার চেষ্টা করার কারণে বাইরের কিছুই প্রায় খেতে পারি না। সবচেয়ে কষ্ট লাগে মজার মজার কেক এবং আইস্ক্রিম খেতে না পেরে। এই রকম একবার কোথাও বলার কারণে সেবার ওনার বাসায় যাবার পর উনি আমাকে কেক বানিয়ে খাইয়েছিল। আমি আপুর সেই কেক খেয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কেক কতটা মজা ছিল মনে নেই কিন্তু মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আমার জন্য এত কষ্ট করে কেক বানাবার কারণে। এরপর থেকেই আপুর ভক্ত হয়ে গেলাম।

আপুর সাথে কোন যোগাযোগ হত না আমার। থাকতাম ও অনেক দূরে। কিন্তু সেবার যখন আমার খুব খারাপ সময় যাচ্ছে আমি যখন কারো সাথে শেয়ার করতে না পেরে একা একা আরো বেশি বিষন্নতায় ডুবছিলাম হঠাৎ করেই আপু আমার খবর নেওয়া শুরু করেছিল। জানিনা কেন হঠাৎ আমার কথা আপুর মনে আসল কিন্তু তখন আমার একজনের কেয়ারিং খুব বেশিভাবেই দরকার ছিল। আমি সবসময় সবকিছু শেয়ার করতে পারিনি কিন্তু যখন আপু আমার খবর নিত তখন খুব ভাল লাগত। এইভাবে চলতে চলতে কখন যেন দেখি আপুর সাথেই এখন ফোনে সবচেয়ে বেশি কথা বলা হয়। টোকিওতে আসার পর আপুরা বাসা নিল সেই বাসাতেও উইকএন্ড আসলেই আমার যাতায়াত শুরু হয়ে গেল। গত ১ বছরের অসংখ্য উইকএন্ড আমি কাটিয়েছি আপুর বাসায়। গত মাসে যখন জ্বরে পড়েছিলাম তখনো সবার আগেই মনে পড়ল একা একা এখানে রুমে না থেকে আপুর বাসায় চলে যাই। আমি জানি আপু বিরক্ত হবে না তাই অনেকটা ছোট ভাইর দাবি নিয়েই রাতের বেলা চলে গিয়েছিলাম আপুর বাসায়। আপু এবং সেই সাথে ভাইয়া দুজনেরই তখন টার্ম শেষ হবার অসম্ভব কাজের চাপ। তারপরও আমার জ্বালাতন ওনারা একেবারে আপন ভাইবোনের মতই হাসিমুখে সহ্য করেছেন। আমার একবার ও কিছু মনে হয়নি । মনে হয়েছে এইটাই স্বাভাবিক।
আমার এই সিরিজের অন্য সবাই কোনভাবেই এই লেখার কথা জানেনা। একমাত্র তন্বী আপুই আগে থেকেই এই লেখার কথা জানে। গত সপ্তাহেই ভাইয়া ওয়ার্নিং দিয়ে আপুকে বলেছে তোমাকে মনে হয় তপু টার্গেট করেছে। আমি হেসে বললাম নাহ ভাইয়া আমার আর কোন টার্গেট নেই। আমার আর বোনের দরকার নাই। তাও আজ এই লেখাটা লিখে ফেললাম আপুকে নিয়ে।কারণ আর একটু পরেই আপুর জন্মদিন ।

শুভ জন্মদিন আপু

অনেক প্ল্যান করেছিলাম আপু, আপনার জন্মদিনে অনেক কিছু করব। মানুষকে চমকে দিতে আমার ভাল লাগে। এবার ভেবেছিলাম আপনার জন্মদিনে ১২টার দিকে গিয়ে হাজির হব। কিন্তু এমন এক ঝামেলায় পড়লাম। অসুখটা হবার আর সময় পেল না। নড়তে চড়তেই কষ্ট হচ্ছে। অসুখ হলে আপনার ওখানে চলে যাবারই কথা কিন্তু হাসপাতালে যেতে হবে তাই তাও যেতে পারছিনা। নইলে কি আর আজ এখানে বসে বসে আপনাকে নিয়ে লেখতে হয়? ভাইয়া নিশ্চয়ই আপনাকে বলছে আমি বলেছিলাম না তপু তোমাকে টার্গেট করেছে। কি করব আপু অন্য সবার সাথে আপনার এত মিল শুধু পারমিশনটাই পাইনি আপু বানাবার। সেদিন যখন হঠাৎ করে আপনার বাসায় চলে গেলাম, শুভ বলছিল তুই কত লাকি জাপানে এসেও তোর রাস্তায় বের হয়ে কারো বাসায় চলে যাবার জায়গা আছে। আসলেই আপু আমি অনেক ভাগ্যবান। এই এক জীবনে অনেকের ভালবাসা পেয়েছি। অনেক জ্বালাই আপনাদের কিন্তু কখনো আমার মনে আসেনি আপনারা বিরক্ত হবেন কিনা। এই স্বাভাবিকভাবে জ্বালাবার স্বাধীনতা পেয়েই আমি অনেক খুশি আপু আপনাকে আমার কাজলাদিদি হতে হবে না।
আপনার এই জন্মদিনে অনেক অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আপনার সকল আশা পূরণ হোক । আপনাদের ব্যাপারে একটা কথা আমি সবসময় ভাবি কখনো বলা হয়নি মনে হয়। আমার দেখা সবচেয়ে সবদিক দিয়ে কমপ্লিট হ্যাপি কাপল হচ্ছেন আপনি আর ভাইয়া । আপনাদের দুজনের যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে দুজন দুজনকে অনেক ভাল ভাবে চিনেন এবং দুজনের প্রতি দুজনের ভালবাসার সাথে সাথে রেসপেক্ট অনেক বেশি। আজীবন এরকম সুখী থাকুন আপু।

Monday, February 23, 2009

আমার কাজলাদিদিরা ( বনানীদি )

ও আমাকে রূপাই বলে ডাকে। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম রূপাই কেন? এই নামটা নাকি ওর খুব পছন্দের নাম। জসীমউদ্দীনের নকশী কাঁথার মাঠ এর নায়কের নাম। সেই থেকে আমি ওর রূপাই। আর ও আমার দিদি। জাপান থেকে সেবার দেশে যাচ্ছি যাওয়ার আগে ওকে ফোন দিয়ে কেমন আছে জিজ্ঞেস করলাম। দেখি ওর মন অসম্ভব খারাপ। আমাদের জাপানে যত পিচ্চিকাচ্চা আছে সবার ও বৌদি। সবাইকে ও আদর করে একেবারে নিজের বাচ্চার মত। ছোট যতগুলা আসে সবার জন্যই ওর বাসা অবারিত সবসময়। তাই সবাই আমরা সেই ছোটবেলা থেকেই ওর মায়া নিয়ে বড় হয়েছি। সেবার দেশে যাবার আগ পর্যন্ত ও আমার সেরকম বৌদিই ছিল। সেই ফোনে ওর মন এত খারাপ দেখে আমার এত খারাপ লাগল , আমাকে বলল , "তুমি কবে আসবা? তাড়াতাড়ি চলে আইস"।
এয়ারপোর্টে বসে বসে ভাবছিলাম কি করলে বৌদির মন ভাল হবে। দাদার থেকে বাসার ঠিকানা নিলাম আর বললাম বৌদিকে না বলতে। দেশে গেলাম কয়েকদিন এমনি এমনিই কেটে গেল। তারপর এক রাতে সবাই যখন ঘুমাচ্ছে তখন আমি উঠে মানিব্যাগ থেকে ঠিকানাটা বের করে একটা চিঠি লেখলাম। খুব বড় চিঠি লেখিনি কিন্তু তা পোষ্ট করার ১৪ দিন পর বিশাল একটা চিঠি পেয়ে গেলাম। বুঝলাম ও যে কি অসম্ভব খুশি হয়েছে। ও মনে হয় জীবনে কল্পনাও করতে পারেনি আমি দেশে গিয়ে ওকে চিঠি লেখব। সেবার ওর আরো একটা চিঠি পেয়েছিলাম। সেবার দেশ থেকে এসেই ও আমার দিদি আর আমি ওর রূপাই। ও থাকত টোকিওতে আর আমি তখন থাকতাম টোকিও থেকে অনেক দূরে। আমার দিদির সাথে সব আহ্লাদ তাই চলত মেইলে মেইলে। ও অবশ্য সবারই খুব প্রিয় মানুষ। আমাদের এখানে সব পিচ্চিকাচ্চার (যারা গত ৪-৫ বছর এখানে এসেছি ) কাছে বৌদি মানেই আদরযত্ন। এত জনের মাঝেও আমি নিজেকে ওর স্পেশাল ভেবে অসম্ভব আনন্দ পাই কারণ আর সবার কাছে ও বৌদি আর আমার সে দিদি আর আমি যে ওর রূপাই।
টোকিও আসার পর থেকে মাসের অন্তত ২টা উইকএন্ড আমি ওখানে কাটাই। গত বছর ওর জন্মদিনে ওকে চমকে দেওয়ার জন্য রাত ১২টায় গিয়ে ওর বাসায় হাজির হয়েছিলাম। ভয় পেয়ে গিয়েছিল প্রথমে তারপর আমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিল। আসার সময় ওর লেটার বক্সে জন্মদিনের চিঠি ফেলে এসেছিলাম। রাতের বেলায় একটা অসম্ভব মায়াবী মেইল পেয়েছিলাম, আমার চিঠি লেখা সার্থক হয়েছিল।
ও দেশে গিয়েছিল ১ মাসের জন্য সম্প্রতি। উইকএন্ডে যখন দেখি কিচ্ছু করার নেই তখন মনে হত আহারে আমার দিদিটা থাকলে তো চলে যেতে পারতাম। ও অনেকটাই আমার মত।আমার মতই অনেক অনেক বেশি ইমোশনাল মনে হয় আমার থেকেও বেশি। আমাকে প্রায়ই বলে আমি যাদের অনেক ভালবাসি তারাই আমাকে কষ্ট দেয়। দেখ তোর যদি মনে হয় পরে পর হয়ে যাবি তাহলে এখনই চলে যা এখন হলেও একটু সময় আছে । আমি কিছু বলিনা। মনে মনে বলি, একই কথা তো আমারও দিদি যদি পরে দূরে চলেই যাবি তাহলে কেন কাছে এলে। সবসময় তোমার মুখে রূপাই শোনার জন্য অপেক্ষা করব দিদি।

Sunday, February 15, 2009

আমার কাজলাদিদিরা ( নিশু আপু )

২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল দেশ ছাড়লাম। কোন রকম এপ্রিলফুল ছাড়াই আমরা জাপানে চলে আসলাম। বন্ধুরা মজা করে বলছিল তোদের নিশ্চয়ই প্লেনে তুলে চিটাগং নিয়ে নামিয়ে দিবে। চিটাগং এর ভাষা না বুঝে তোরা মনে করবি আসলেই জাপানে আসছিস। এরকম আরো অনেক মজার কথা বলে অনেকেই মন ভাল করার চেষ্টা করছিল। যখন আসছিলাম তখন ভেবেছি ৪-৫ বছর মনে হয় আর দেশে আসতে পারব না বন্ধুদের সাথে দেখা হবে না, বাসায় থাকা হল না। প্রবাসী জিনিস কি জানিনা তবে জানি সেটা শুধুই একা একা থাকতে হয় । বাসা থেকে বের হয়েছিলাম সেই ১৯৯৬ সালে কিন্তু তখনো খুব একটা একা থাকতে হয় নি। প্রথম ১ মাসের মধ্যেই বুঝে গিয়েছি বন্ধুরাই আমার সব। কিন্তু প্রবাসের একাকীত্বের কথা গল্প উপন্যাসে পড়েছি এবার নিজে অনুভব করতে যাচ্ছি। এক বন্ধু একটা ডায়েরী দিয়েছিল প্রথম পাতায় একটা বিশাল চিঠি লিখে। আরেক বন্ধুর ৫ পাতা লম্বা চিঠি প্লেনে পড়ে পড়ে কাঁদছিলাম। প্লেন থেকে নেমে আর কাঁদার সময় ও নেই, চারপাশে উদ্ভট সব লেখা কিচ্ছু বুঝিনা কারো কথা কিছু বুঝতে পারছি না মনে হচ্ছে ভিনগ্রহে এসেছি। বিদেশে আসলে ইংরেজি শুনব হালকা নিজের ইংরেজি জ্ঞান দিয়ে ২০% বুঝে যাব এইরকম ধারণাই ছিল কিন্তু এরা যে ইংরেজি বলে না। নিজের রুমে এসে দেখলাম এখানেও ক্যাডেট কলেজের মত অনেকটা রিসিভ করার ব্যাপার আছে। অনেক সিনিয়র এসে আমাদের প্রথম দিন রিসিভ করল। কিন্তু তারপর সবাই যাওয়ার পর নিজের একলা রুমে কান্না করে নিলাম খানিক ক্ষণ। নিজের একটা সিংগেল রুম থাকবে বাসায় এইরকম অনেক চিন্তা করতাম কিন্তু নিজের রুমে চারদিকে তাকালেই খালি শূণ্যতা চোখে পড়ছিল। একা একা থাকা কত কষ্টের প্রথম দিনেই বুঝে ফেললাম।
এরকম করেই দিন কাটছিল জাপানে। ঠিক কবে মনে নেই তবে ২-৩ মাস পরে আমাদের ডর্মে একটা অনুষ্ঠান হয় সেখানে আমাদের অনেক বড় ভাই ভাবী এসেছিল। সেদিনই প্রথম দেখা ওর সাথে। ওকে ডাকতে পাঠানো হয়েছিল আমাকে। আমি চিনিনা আমাকে বলল ওখানে গিয়ে যাকে মনে হবে বাংলাদেশি তাকেই ডাকবা। সালোয়ার কামিজ পড়া থাকাতে কোনটা বাংলাদেশি বুঝতে আমার সমস্যা হয়নি। এরপর আর কোন যোগাযোগ হয়নি। অনেকদিন পরে আরেকটা দাওয়াতে ওর সাথে প্রথম কথা হয় পরিচয় হয়। খুবই সাধারণ ভাবে অন্য সবার সাথে যেমন কেমন আছি জাপানে এসে কেমন লাগছে এইরকম কথাই হয়েছিল মনে হয়। ডিসেম্বরের কোন একদিন ওর ডর্মে দাওয়াত খেতে গিয়ে মনে হয় প্রথম ওর সাথে সেরকম ভাবে কথা হল। ও নিজেও তখন অনেক একা ছিল। জাপানে কারো সাথে তেমন যোগাযোগ নেই ওর। সেই সময়ই ওর অনেক কাছে চলে আসলাম আমি। টোকিওর একটা বছর কেমন করে যেন কেটে গেল। টোকিওর বাইরে কলেজে গিয়ে দেখি এতদিন টোকিওতে ছিলাম সেটা যে কত ভাল ছিল। সারা শহরে আমি একাই বাঙ্গালী। মোবাইল হাতে না নিলে বাংলায় কথা বলতে পারি না। জাপানে কথা বলার মত সেরকম কেউ নাইও। তখন আপুর সাথে কথা বলতাম অনেক। কখন যে আপনি থেকে তুমিতে চলে গেলাম । ও তখন পার্ট টাইম করত বাসায় ফিরত রাত ১১টার দিকে। প্রতিদিন বাসায় ফিরেই নেটে এসেই কথা বলতাম আমরা ভাই বোন। বাদ যেত না একদিনও। আমারো কোন কাজ না থাকলেও ওর জন্য নেটে বসে থাকতাম। ওর সারাদিনের গল্প আমার গল্প বলে তারপর ঘুমাতে যেতাম। কত কথা যে হত। আমাকে বলত না এমন কোন কথা নেই ওর। মনে আছে ওর বিয়ের একটা প্রোপোজাল এসেছিল ছেলে মালয়েশিয়ায় থাকে। সেদিন আমি ডায়েরীতে লেখেছিলাম আমার এই আপুটা যদি জাপান থেকে চলে যায় তাহলে আমার কত খারাপ লাগবে। ভাগ্যিস ওর সেই প্রস্তাব বেশি আগায়নি। এরপর ঈদের দিন জাপানে একা একা কিভাবে ঈদ করব খুঁজে না পেয়ে আমি ২ দিনের জন্য টোকিও চলে গিয়েছিলাম ওর সাথে ঈদ করতে।
২০০৬ এর বিশ্বকাপ আমরা একসাথে দেখেছিলাম যদিও দুজন ভিন্ন জায়গায় থেকে। ইয়াহু চ্যাটে ভয়েস দিয়ে আমরা ভাই বোন খেলা দেখতাম আর কথা বলতাম। ওর পছন্দ ছিল ব্রাজিল আর ইতালি। আর আমি আর্জেন্টিনা। খুব খেপাতাম ওকে। ইতালি ফ্রান্সের ফাইনাল খেলায় আমি ফ্রান্স আর ও ইতালি। ঐ জিতেছিল কিন্তু আমি তবুও ওকে অনেক পচিয়েছিলাম। মনে আছে যেদিন ও ভাল কিছু রান্না করত সেদিন জোর করে আমাকেও কিছু না কিছু রান্না করাত। তারপর বলত আস ভাইয়া আমরা একসাথে খাই। হাহাহহা। দুজন দু জায়গায় থেকে আমরা একসাথে খেতে খেতে গল্প করতাম।
২০০৭ সালের প্রথম দিকেই হঠাৎ করেই আমি অনেক ডিপ্রেসড হয়ে গেলাম অন্য একটা পার্সোনাল ব্যাপারে। তখন ওর খুব সাপোর্ট আমার প্রয়োজন ছিল কিন্তু ও বুঝতে পারেনি আমাকে সেই সময়। আমিও বলতে পারিনি আপুকে। আমাদের মধ্যে যোগাযোগ কমে গিয়েছিল তখন। আমি তখন কারো সাথেই যোগাযোগ করতাম না। ও ফোন করত কিন্তু আমার ফোন করা কমে গেল নেটে ঢুকতাম না তখন। আমার ব্যাপার বুঝতে না পেরে ও ও যোগাযোগ কমিয়ে দিল । তখনই ওর এফেয়ার হল। আমি ততদিনে অসম্ভব রকম নিজের মধ্যে গুটিয়ে গিয়েছি। আপুর এত আনন্দের সময়ে ওর আনন্দের শেয়ার নিতে পারলাম না। স্বাভাবিক ভাবেই আপু ব্যস্ত হল। মাঝে মাঝে আপু ফোন দিত কিন্তু কথা জমত না ও একাই কথা বলে যেত আমি শুনতাম মাঝে মাঝে অল্প একটু কথা বলতাম। ভাইয়ার খবর দবর নিতাম। ওর সেই আনন্দময় গলা শুনে নিজের কষ্টের কথা বলে ওর আনন্দে বাধা দিতে চাইতাম না। ও অবশ্য আমাকে ফোন দিলেই জিজ্ঞেস করত ," ভাইয়া তোমার কি হয়েছে? কথাবার্তা একদম বল না আমিই বকবক করছি " আমি বলতাম তোমার অনেক ঘটনা ঘটছে তাই তোমারই তো কথা বলার সময়। আমার তো বলার মত কিছু নেই কি বলব। মাঝে মাঝে অনেকদিন পর পর হয়ত ওকে ফোন করেছি মন খারাপ করে নিজের ডিপ্রেশনের কথা বলার জন্য তখন দেখা গেল ফোন করার পর ও কথা শুরুই করেছে খুব আনন্দিত গলায় আমার আর বলা হত না কিছুই। ওর কোন দোষ ছিল না তাও আমার খুব অভিমান হয়ে গেল। প্রতিদিন কথা না বললে কেমন খালি খালি লাগত সেই আমি আপুর সাথে ফোন করা বন্ধই করে দিলাম। আপু অবশ্য করত টুকটাক কথা হত তখন। এইভাবে অনেকদিন পার হয়ে গেল প্রায় এক বছর। অভিমান করে যা শুরু করেছিলাম সেটাই স্বাভাবিক হয়ে গেল। কথা বলা অনেক অনিয়মিত হয়ে গেল তবে আপুটা আমার আপুই রয়ে গেছে।
২০০৮ আমি টোকিও ফিরে আসলাম। আগে থেকে আমরা প্ল্যান করতাম আমি টোকিও আসলে প্রতি উইকএন্ডে হয় ও আমার এখানে আসবে নয় আমি যাব। ভাইবোনে মিলে অনেক বেড়াব অনেক মজা করব। কিন্তু তার কিছুই হল না। টোকিও এসেও আমি ওর ডর্মে গিয়েছি বড়জোর ২-৩ বার তাও ওর অনেক পীড়াপীড়ি কিংবা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল এর কারণে। ও সবসময় বলে এখন তো তোমার আরো আপু আছে আমাকে আর এত ভাল লাগে না। আমি কিছু বলি না মনে মনে বলি আপু পাওয়া এত সহজ হলে আর কথাই ছিল না। মনে মনে ওকে কিন্তু আমি অনেক পছন্দ করি কিন্তু কোন কিছুই প্রকাশ করি না।
সম্প্রতি আমার এই আপুটার বিয়ে হয়েছে আমি দেশে যেতে পারিনি ওর বিয়েতে। ওর বিয়ের পরেরদিন গিয়েছি দেশে। এতে ও খুব রাগ করেছে। আমার আসলে কিছু করার ছিল না। ও যখন রাগ করে তখন আমার ভাল লাগে, যখন রেগে গিয়ে বলে আমাকে তো এখন আর ভাল লাগে না, আমার কথা মনে পড়ে না, আপুকে দেখতে আস না, ফোন দাও না তখন আমার ভাল লাগে মনে হয় একজন অন্তত আছে যে আমার উপর কিছু আশা করে না পেলে রাগ করে। এই রাগটাকে ভালবাসা ধরে শান্তি পাই। তাই মনে হয় ইচ্ছা করেই ওর কোন কথাই শুনিনা। কদিন পরে আমার এই বোনটাও আমেরিকা চলে যাবে। তখন হয়ত অন্য সব কাজলা দিদির মতই এও হারিয়ে যাবে বছরে একদিন দুদিন কথা হবে। এটা এখন নিয়ম হয়ে গেছে। এক এক আপু আসবে আমার জীবনে কিছুদিন প্রচন্ড ভাবে আদর করবে, তারপর কিছু একটা হবে হয় আমার আবেদন ফুরিয়ে যাবে, নইলে কোন কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে কিংবা এমন কোথাও চলে যাবে যেখানে যোগাযোগ করা কমে যাবে আর স্বাভাবিক ভাবেই out of sight out of mind. এইজন্য বেশি বেশি কষ্ট লাগে আমার যদি একটা আপন আপু থাকত তাহলে যেখানেই যেত হারিয়ে যেত না।

Friday, January 23, 2009

আমার কাজলাদিদিরা ( চামু )

ওর আসল নাম হচ্ছে চামেলী। আমার খালাত বোন। কলেজে ৯ এ উঠার সময় এক ছেলের সাথে আমার বাজি হল পরের টার্মে ওর থেকে আমি বেশি চিঠি পাব। কিন্তু টার্ম শুরু হওয়ার পর বুঝতে পারলাম খুবই অসম্ভব ব্যাপার। আমার বাসা থেকেই আমাকে মাসে একখানা চিঠি লেখে। আর ও প্রতি সপ্তাহে ৩-৪টা চিঠি পেয়ে যাচ্ছে। কি আর করা বাজিতে হারব বুঝে গেলাম। কিন্তু চিঠি পাওয়ার খুব ইচ্ছে থেকেই আমি চিঠি লেখা শুরু করলাম। কিন্তু লেখার মানুষ তো আমার বেশি নেই। সেই চিঠি লেখা থেকে মনে হয় আমার পরিবর্তন শুরু হল। ছোটবেলা থেকে যাদের মনে মনে পছন্দ করতাম কিন্তু বলতে পারতাম না চিঠি লিখতে গেলে দেখলাম খুব সহজেই পছন্দের কথা বলা শুরু করলাম। তখন আমার এই খালাত বোনকে চিঠি লেখা শুরু হল। সেও আমাকে উত্তর দিত। শুরু হল আমার চামু আপুর কাহিনী। চামেলী নামটা হারিয়েই গেল। শেষ কবে যে ওকে চামেলী আপু বলে ডেকেছি মনে পড়ে না। আপুও ডাকতামনা। ও হয়ে উঠল আমার এক কাজলা দিদি, চামু।


আমার কাজলাদিদির মধ্যেই ঐ একমাত্র আমার ফ্যামিলির ভিতরে। কিন্তু তবুও ওকে পেতে আমার অনেক দেরি হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আমার যে চিন্তা সবাই বুঝি আমার থেকে আমার ভাইদেরকেই বেশি আদর করে ওর বেলাতেও তাই হয়েছে। তবে এখন ওকে জিজ্ঞেস করি যদি তখন তো আমাকে আদর করতা পান্থ ভাইয়া আর কনকই বেশি আদর পেত তোমাদের তখন সে বলে তোরে কইছে। একটু পরে অবশ্য বলে তুই তো চুপচাপ থাকতি এই জন্য বেশি আদর পাইতি না। কথাটা অবশ্য ভুল না। ছোট থাকতে আমি আদর নিতেই মনে হয় জানতাম না। ইশশ চুপচাপ না হয়ে যদি আরেকটু দুষ্ট হতাম তাহলে মনে হয় ছোটবেলা থেকেই অনেক আদর পেতাম। চিঠি লিখতে লিখতেই চামুকে পাওয়া। এর আগ পর্যন্ত ও ছিল আমার খালাত বোন অন্য সবার মত। তখনই সে আস্তে আস্তে হয়ে উঠল আমার খুব প্রিয় এক আপু। ওর বিয়ের আগ পর্যন্ত প্রতি টার্মে চামুর একটা করে চিঠি পেতাম। আমি অবশ্য লেখতাম অনেক। সবজায়গায় যেমন হয় ওর বিয়ের পর দুরত্ব বেড়ে গেল আপুর সাথে। তখন আমরা কলেজ থেকে বের হব হব। ওরা তখন নতুন ঢাকায় এসেছে আমাদের বাসার পাশেই। আমি কত প্ল্যান করছি যে অনেক মজা হবে অনেক দিন পরে আমি বাসায় ফিরছি। এবার আর বেড়ানো নয় একেবারে বাসাতেই থাকব। আর আমার পাশেই থাকবে আমার আপু চামু। কত কিছু ভাবতাম এই করব ওই করব। কিন্তু সব কিছু শুরু হওয়ার আগেই দেখলাম চামুর বিয়ে হয়ে গেল আর ও চলে গেল কুমিল্লাতে। ঢাকায় আসলাম কিন্তু আমার কল্পনাগুলা আর বাস্তব হল না। ও যখন ঢাকায় আসত প্রতিদিন আমি যেতাম ওর সাথে গল্প করতে কিন্তু কেন যে মেয়েরা বিয়ের পর বদলে যায় সেটা তখনো বুঝতে পারতাম না এখনো পারিনা। ওর সাথে কথা বলতেই ভাল লাগত কিন্তু ও খুব চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। কলেজ থেকে বের হওয়ার পর আর কখনো চিঠি লেখা হয়নি ওকে ও ও কখনো চায়নি। কলেজ থেকে বের হয়ে খুব অল্প দিনের জন্যই বাসায় ছিলাম। এরপর বাইরে চলে আসলাম । চামুর সাথে দুরত্ব বেড়ে যাচ্ছিল একটু একটু করে। ওর দুটি ছেলে হল সংসারকাজে ব্যস্ত আমার আপু। দেশে গেলে এক-দুইবার ওর সাথে দেখা হয় । এরকম করেই হয়ত চলত কিন্তু ও ঢাকা শিফট করল চাকরী নিল। ওর চাকরীটাই আবার আমাকে আমার চামু আপুকে পাইয়ে দিল। অফিসে ও সারাদিনই ইয়াহুতে থাকে। আর আমি তো সারাদিনই ফ্রি। ওর সাথে অনলাইন কথাবার্তা শুরু হল। একসময় আমি খুব মেন্টালি আপসেট ছিলাম। ও সবসময় খালি জিজ্ঞেস করত আমার কি হয়েছে। ওকে কেন কাউকেই ঠিক করে বুঝিয়ে বলতে পারিনি আসলে আমার কি হয়েছিল। যাই হোক আমার এই আপুটাকে আবার ফিরে পেয়ে আমি অসম্ভব খুশি। ওকে আমি অনেক পছন্দ করি আর সেকথাও ও জানে। ওকে যদি জিজ্ঞেস করি জানিস আমাদের ফ্যামিলিতে আমি সবচেয়ে বেশি কাকে পছন্দ করি ও তখন বলে আমাকে। চামু তোকে অনেক ভালবাসি আপু। আদর করিস সবসময় এখন যেমন করিস।

ছোটদি - ৩


আবারো অনেকদিন দেরী হয়ে গেল । আপনার এই ব্যস্ত সময়ের মাঝেও আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন দেখে খুবই ভাল লাগছিল। আপনাকে বলছিলাম আমার ছোটদির গল্প। স্কুল ফাইন্যালের আগ পর্যন্ত আমি বেশ লক্ষীছেলে ছিলাম। কখনো কিছুতে গড়বড় হতে নিলেই ছোটদির কাছে ঠিকই ধরা খেয়ে যেতাম। ওর কথা অমান্য করার ক্ষমতা আমার ছিল না। ওর শাসনে মিষ্টি একটা দিক ছিল। প্রথমে শুরু হত বৃষ্টির মত ঝাড়ি। আমি তখন গোবেচারার মত মুখ করে বসে থাকতাম অপেক্ষা করতাম এরপরের অংশের জন্য। কিছুক্ষণ পরে এসেই আমাকে শতেক রকম ভাবে আদর করে বোঝানো শুরু হত এক পর্যায়ে কেঁদেই দিত। তখন আমাকে কথা দিতে হত আর করব না। শাসনের প্রথম ধাপ থেকে এই অংশের কার্যকরীতা বেশি ছিল। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার সেটা করতে নিলেই ওর মুখখানা চোখের সামনে ভাসত।
আমার বহির্জীবনের সব কান্ডকারখানা ওর কানে চলে আসত। তার কারণ অবশ্য আমার বিশ্বাসঘাতক বন্ধুর দল। আমার খবর রাখার জন্যই কিনা তাদের সবার সাথে আমার ছোটদির বহুত খাতির। ওদের এই গুপ্তচরগিরির জন্য কিছু বলতে গেলেই ওদের স্বীকারোক্তি,” দিদির সাথে মিথ্যা বলব নাকি, তোর চেয়ে দিদির কাছে সত্য বলে আদর পাওয়াটা ঢের বেশি ভাল” আর সাথে জুটত উপদেশ কেন দিদির কথা শুনিনা। সকল অপকর্মের সাথীরা যদি এরকম বলে তাহলে কেমন লাগে বলেন। ওদের বলতাম তোরা করিস কেন। আমার প্রশ্নে অবাক হয়ে ওরা বলত ” আমাদের কি ওইরকম দিদি আছে নাকি চিন্তা করার জন্য”।
আমাকে শিক্ষা দেওয়ার উপায়গুলাও ছিল অন্যরকম। স্কুল ফাইন্যালের আগে একবার বন্ধুরা মিলে প্রাইভেট ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। সিনেমা শেষ করে ফুরফুরে মেজাজা বাসায় ঢুকতেই মেঝদির সাবধানবাণী, ” তোর আজ খবর আছেরে খোকন, প্রাইভেট ফাঁকি দিয়েছিস খবর পেয়ে গেছে ছোট, দেখ কি হয় আজ”। ভয়ে ভয়ে ওর রুমে ঢুকে দেখি সেজেগুজে বসে আছে ও যেন এখনই বের হবে। আমাকে বলল চল বের হবি আমার সাথে। কোথায় যাব জিজ্ঞেস না করেই বের হলাম ওর সাথে। রিক্সা ঠিক করার আগে বলল কোন সিনেমা দেখেছিস বল আমিও দেখব তোর সাথে। আমার তখন মাথায় হাত। বন্ধুদের সাথে দেখা সিনেমা এখন দিদির সাথে কিভাবে দেখি। বার বার বলছি দিদি আর কখনো দেখব না কিন্তু ও কথাই শুনল না। আমাকে নিয়ে রওনা দিল সিনেমা দেখার উদ্দেশ্যে। আর সারা রাস্তা আমি লজ্জায় ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। এরপর দিদি শুরু করল আমাকে বোঝানো। যে কাজ করে লজ্জা লাগে সেটা না করাই কি ভাল না? ওকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর কখনো ওকে না বলে কিছু করব না। সেদিন অবশ্য সিনেমা আমরা ভাই বোন দেখেছিলাম তবে সেটা না। ওই আমাকে নিয়ে গিয়েছিল কোথায় যেন সিনেমা সপ্তাহ চলছিল সেখানে। সেদিন “চিলড্রেন অব হ্যাভেন ” দেখে আমরা ভাই বোন কেঁদে বুকভাসিয়ে দিয়েছিলাম। ফেরার পথে ওকে বলেছি ছোটদি তোকে আমি এর চেয়েও অনেক ভালবাসি। তোর কথা কোনদিন অমান্য করব না দেখিস। দিদি শুধু আমার চুল এলোমেলো করে দিয়েছিল একটুখানি। ওকে দেওয়া প্রতিজ্ঞাটুকু অনেকবারই ভেংগেছি জীবনে তবে প্রতিবারই ওর মায়াবী মুখখানা চোখের সামনে ভেসে উঠেছে আর অপরাধবোধে ভুগেছি।
ততদিনে আপনার সাথে আমার দিদির পরিচয় হয়ে গিয়েছে। ওর চোখেমুখে তখন অন্যরকম আনন্দের আভা দেখতাম।আমি আমার দিদির খুব কাছের বন্ধুও ছিলাম তাই প্রথম দিন থেকেই আপনার কথা ও আমাকে বলেছিল। প্রথম দিন কি বলেছিল জানেন? বলল আজ একটা হ্যংলা ছেলের সাথে দেখা হল । এইটুকুই। এরপর যখন আর্ট গ্যালারীতে আপনার সাথে দেখা হল হঠাৎ করে সেদিন ও উত্তেজনায় টগবগ করছিল। সেদিন ওকে বলেছিলাম তুই বুঝি ঐ হ্যাংলার প্রেমে পড়লি। লজ্জায় রাঙা হয়ে আমার দিদি আমার সাথে পরামর্শ করছিল আপনাকে ফোন করা ঠিক হবে কিনা কিভাবে আপনাকে চাইবে। আমার খুব ভাল লাগছিল কিন্তু কোথায় একটু বুঝি ঈর্ষাও হচ্ছিল। কপট রাগের ভান করে বললাম আমি কিন্তু jealous হয়ে যাচ্ছি। প্রেমে পড়ে আমাকে আদর করার কথা ভুলে যে যাবা খুব ভালই বুঝতে পারছি। আমি এইসব বলতাম যাতে দিদি আমাকে বেশি করে আদর করে। সেটা সেও বুঝত। তাই তো আদর করে বলত তুই আমার পিচ্চিসোনা, আজীবন তোর আদর ঠিক থাকবে।
“তোমার নিজের যখন পিচ্চি হবে তখন?” আবার জিজ্ঞেস করি আমি। হেসে উঠে বলেছিল ” দেখিস কখনোই কম পড়বে না”।
একদিন ক্লাসের এক ছেলে এসে আমাকে বলল “তোর দিদিকে দেখলাম ময়দানের ওদিকে একটা লোকের সাথে। সেটা কি ওনার বয়ফ্রেন্ড?” । প্রশ্নে কি যেন একটা ছিল আমার প্রচন্ড রাগ হল। বিশু না ঠেকালে সেদিন ওকে আচ্ছামত পিটাতাম। বাসায় ফেরার সময় একটা শব্দই মাথায় ঘুরছিল “বয়ফ্রেন্ড”। খুব বিশ্রী লাগছিল শব্দটা। বাসায় এসে দিদির সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করলাম। রাতে ঘুমাবার সময় ও আসল আমার মাথার পাশে বসে আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। একসময় জিজ্ঞেস করল, ” কি হয়েছে পিচ্চি? আমাকে বলবিনা?” সব খুলে বললাম ওকে, কেন যে আমার খারাপ লাগছিল সেটা আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না সেটাও বললাম। সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত দিদি আপনার গল্প করেছিল আমার কাছে। কি যে অসম্ভব ভালবাসত দিদি আপনাকে সেদিনই বুঝেছিলাম।

আমার স্কুল ফাইন্যালের সময় দিদি বাড়াবাড়ি পাগলামি শুরু করে দিয়েছিল। মাষ্টার্স শেষ করে দিদির তখন অঢেল সময়। কাজের মধ্যে হচ্ছে আমার পড়ালেখা, খাওয়াদাওয়ার তদারকী করা। একটু রাত হলেই এসে জোর করে বিছানায় শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত পাছে রাত জেগে শরীর খারাপ করে আর প্রতি খাবার বেলায় হাজারটা বাড়াবাড়ি। প্রতিটা পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এসে দেখতাম আমার দিদি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে খাবার নিয়ে। বন্ধুবান্ধবরা সবাই নিজেদের তখন অনেক বড় মনে করতাম। কারো জন্যই কেউ আসত না। সবাই যখন কে কেমন পরীক্ষা দিল কার পাশে কোন মেয়ে কি জামা পড়ে আসল দেখতে কেমন , কেমন করে না পেরে ওকে জিজ্ঞেস করল এইসব নিয়ে আলোচনা করত আমি তখন দিদির হাতে ভাত খেয়ে পরের পরীক্ষার জন্য বই দেখছি। ছোটদির হাতে খাওয়ার জন্য বন্ধুরা পরে আমাকে টিটকারী দিবে এইসব বলে যদিও খেতে চাইতাম না কিন্তু মনে মনে যে ইচ্ছে করেই ওর হাতে খাওয়ার জন্য আমি বই খুলে পড়ার ভান করতাম সেটা কি ও বুঝত?
পরীক্ষা শেষ হবার দিন খুব মজা হয়েছিল। বন্ধুরা সবাই মিলে দিদিসহ আমরা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। সেদিন দেখেছিলাম প্রিন্সেস ডায়েরী। দিদিই সবার জন্য টিকেট কেটে রেখেছিল আগে থেকেই। এরপর দিদি আমাদের ডিনার করিয়েছিল। খেতে খেতে বেশ আড্ডা হচ্ছিল। প্রদীপ বলল ” আপনি যখন পাশে থাকেন তখন খোকনটা আমাদের একদমই চিনেনা। মাঝে মাঝে মনে হয় আপনার মত একটা দিদি আমার থাকলে খুব ভাল হত”। আমার মায়াবী দিদি তখন বলেছিল ” তোমরা সবাই তো আমার কাছে খোকনের মতই। ” আমি পাশ থেকে বলেছিলাম “ইশশ আমার দিদির ভাগ আমি কাউকে দিলে তো”। বিশু বলেছিল দিদি সত্যি আমার মনে হয় রানুদিকে বাদ দিয়ে আমিও তোমার ভাই হই কিন্তু খোকন এত স্বার্থপর ওর জন্য আর সাহস হয় না।
দিদি আমি আর স্বার্থপর হবনা। প্লিজ তুমি ফিরে আস প্লিজ…

Sunday, January 18, 2009

অপলাপ-৩

মাঝে মাঝে সময় এত দীর্ঘ ঠেকে
ঘুম না আসা মাঝরাতে,
যখন ঘড়ির টিকটিক
জগতের একমাত্র শব্দ বলে মনে হয়।
সমস্ত বিশ্বে একা আমি জাগ্রত।
বিছানায় এপাশ ওপাশে ঘুমাবার আকুলতা।
তখনই,
জেগে জেগে দেখা স্বপ্নে তোমার আগমন।
অদ্ভুত এক মায়াবী কন্ঠে ডাক দাও আমাকে,
আমি প্রবেশ করি আমার কল্পনায়।
স্পর্শ করা দূরত্বে তুমি আর তোমার মায়া
নাকি তুমিই মায়া।
কল্পনার লাগামছাড়া ঘোড়া হঠাৎ হোঁচট খায়…
একা আমি আমার বিছানায়।

Wednesday, January 14, 2009

প্রবাসে প্রলাপ ০০২

মঙ্গল, ১৩/০১/০৯ – ৪:৪৭ অপরাহ্ন

কলেজে থাকতে জুনিয়র থাকতে জ্বর আসলে বেশ ভাল লাগত। কলেজ হাসপাতাল ছিল সেইরকম জায়গা। সবচেয়ে খাইষ্টা সিনিয়র ভাই ও জানি ঐখানে কেমন অন্যরকম হয়ে যাইত। সিনিয়র হওয়ার পর অবশ্য হাসপাতাল থেকে হাউসে থাকতেই বেশি ভাল লাগত। জ্বর হলে তাই নিজের কাছে থাকা প্যারাসিটামল দিয়ে চালিয়ে দিতাম। হাসপাতালে গেলে এক্সিকিউজ দিলে গেমস করতে পারব না এই জন্য। কিন্তু বাসায় আসলে আমার খালি মনে হত একবার জ্বর হলে মন্দ হয় না। আমার প্রচন্ড জ্বর হবে আম্মু পাশে বসে একটু পর পর কপালে হাত দিয়ে দেখবে, একসময় ঠান্ডা পানি এনে মাথায় পানি দিবে, আমি খেতে চাইব না আম্মু খাইয়ে দিবে। বেশ একটা ভাব। ঐ সময় মনে হয় সবারই একটু আলাদা ভাবে গুরুত্ব পাওয়ার রোগ থাকে হোক না সেটা অসুস্থতার মধ্য দিয়ে। আমার সেই ভাবটা এখনো যায়নি। দেশে গেলে একবার এই কথা বলার পর হালকা একটু জ্বরেই দেখলাম আম্মু এসে আমার মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছে। যদিও জানতাম যে সেটা জ্বর না হালকা গা গরম ছিল তাও আমার বেশ ভাল লাগছিল।

বিদেশের অবস্থাটা ঠিক তার উলটা। যারা বাইরে থাকেন (অবশ্যই একা ) এবং কখনো অসুস্থ হয়েছেন তারা অবশ্যই বুঝতে পারবেন। গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে টের পেলাম গায়ের তাপমাত্রা বাড়ছে। তার দুদিন আগে একটু মাথায় বৃষ্টির পানি পড়েছিল খুব একটা পাত্তা দেইনি আমি। শুক্রবার রাতের বেলা বুঝতে পারলাম এইটা আর গা গরমে থাকবে না জ্বরে পরিণত হবে। শনিবার সারাদিন নজরদারিতে রাখলাম কি হয়। রাতের বেলা মনে হল আর মনে হয় পারা যাবে না। জ্বর যদি আরো বাড়ে রান্নাবাড়া খাওয়া দাওয়া সর্বোপরি একা একা থাকা অসম্ভব একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আমার এখানে যে কোন সময় একা একা লাগলেই কিংবা কোথাও যাওয়ার কথা ভাবলেই কিংবা কাউকে জ্বালানোর দরকার পড়লেই মনে পড়ে এরকম ২-১ খানা জায়গা আছে ( কি লাকি আমি )। তার মধ্যে একটা জায়গা হল সাকেবভাই (মকক) এর বাসা। ঐ বাসায় আমি এত যাই অনেকে আমাকে সেখানকার সাবলেট বলেই মনে করে। বিশেষ করে গত মাসের বন্ধে আমি মাসের ৩টা উইকএন্ডই ঐখানে কাটিয়েছি। যাই হোক সেখানে চলে যাব কিনা যখন ভাবছি তখনই তন্বী আপুর (সাকেব ভাইর বৌ) মেইল পেলাম আপু বলছে কাজ না থাকলে চলে যেতে ওনার ওখানে। তাই কোন রকম দ্বিতীয় চিন্তা না করেই চলে গেলাম সেখানে। সেই রাত ভালভাবে থাকলেও পরেরদিন শুরু হল জ্বর বাড়া । আমি আবার অনেক পন্ডিত জ্বরের অষুধ খাওয়ার ব্যাপারে অনেক পন্ডিতি করে না খাওয়া ঠিক করলাম। কিন্তু মঙ্গলবারে একটা ক্লাসে যেতেই হবে তাই শেষ পর্যন্ত আর না খেয়ে পারলাম না। গত রাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল যার কারণে আজ ক্লাসখানা করতে পারলাম কিন্তু ক্লাস করে বাসায় ফিরে এসে দেখি আবারো আসছেন তিনি।

গতদুদিন জ্বরে পড়ে থাকলেও বুঝতে পারিনি কিছুই। সাকেব ভাই তন্বী আপু এমন ভাবে আমার সেবা করছিলেন খুব লজ্জাই লাগছিল। ৩ বেলা গরম কোকোয়া, রান্না করে খাওয়ানো , সারাক্ষণ জ্বরের হালহকিকত নেওয়া সত্যিই বড় লজ্জা লাগছিল। মুখে ধন্যবাদ বলতে আরো অস্বস্তি লাগছিল। তাই বলা হয়নি। আজ নিজের ঘরে বসে যখন থার্মোমিটারে জ্বর মাপলাম কেউ যখন জিজ্ঞেস করল না “কত?” তখন বুঝতে পারলাম গত দুদিন আর আজকের পার্থক্য। বাঙ্গালী স্বভাবটা আমার মাঝেও আছে হাসপাতালে যাওয়ার অনীহা, আজ হাসপাতালে যাওয়া দরকার ছিল। সকালে জ্বর ছিল না দেখে ভাবলাম ভাল হয়ে গিয়েছি এখন ভাল হওয়া টের পাচ্ছি।

প্রবাসে প্রলাপ - ০০১

রবি, ৪/০১/০৯ – ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

একটা শীতের বন্ধ শেষ করলাম। আজ ছুটির শেষ দিন তাই মনটা বড়ই উশখুশ করছে। ছুটি শেষের অনুভূতি মনে হয় সবারই একরকমই হয়। কিন্তু ছুটি শুরুর অনুভূতিগুলো বিদেশে যারা থাকে তাদের একটু অন্যরকম। এবার যেমন ছুটি শুরু হবার আগে ভাবছিলাম কি যে করি। ছোট্ট একটা ছুটি খুব বেশি কিছু করার ও নেই। প্রতিটা ছুটির আগে যেমন নিজের টাকা পয়সা মিলিয়ে দেখি দেশে যাওয়া যাবে কিনা এবারও তেমন। যদিও জানি বছরে দুইবার দেশে যাবার সামর্থ্য এখনো হয়নি তাও এই যাব যাব ইচ্ছেটা তাড়াতে পারিনা। বাংলাদেশের খেলা আছে তাই ভাবলাম শুয়ে শুয়ে বাংলাদেশের খেলা দেখে দেখেই ছুটি কাটাব। কিন্তু বড়ই আচানক ভাবে একটা গ্রুপ তৈরি হয়ে গেল তাই আর আমাকে বোরিং ভাগে ছুটি কাটাতে হল না। বেশ মজাই হল বলা যায়। লাষ্ট ১০ দিনের এক রাত ঠিকমত ঘুমিয়েছি। আর প্রতিদিনই ঘুমাতাম ভোর ৬টায়। রাত জুড়ে আড্ডা মারা আর খেলা। আগে রাত জুড়ে আমরা কার্ড খেলতাম। কিন্তু ইদানিং আমাদের আড্ডাতে মানুষ এত বেশি হয় কার্ড খেলা আর হয়ে উঠে না । কার্ড খেললে অনেককেই বসে থাকতে হয়। আড্ডা দিতে দিতে যখন সকাল হয়ে যায় তখন ঘুমাতে গেলে কেমন যেন একটা খারাপ লাগায় আক্রান্ত হই আমি। পৃথিবী জুড়ে মানুষ যখন ঘুম থেকে উঠছে আমি তখন ঘুমাতে যাচ্ছি।
যে বাংলাদেশের খেলা দেখে দিন পার করব বলে ঠিক করেছিলাম তা আর দেখা হল না সেইরকম ভাবে। যদিও এরই মাঝে বাংলাদেশে প্রথম টেষ্ট এ খুবই ভাল খেলা দেখিয়ে দিল ভেবেছিলাম বুঝি জিতেই যাবে তাও যা করেছে তাই বা খারাপ কি। আমার ছুটির মধ্যে আরেকটা যেটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল তা হল বাংলাদেশের নির্বাচন। সবার পূর্বধারণা মত আওয়ামীলীগ প্রচুর আসন পেয়ে গেল। তাতে আবার আমি একটু শংকিত হয়ে উঠলাম। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা অনেক সাবধানে অনেক ভাল ভাল কথা বলছেন। জানিনা সত্যি সত্যি তিনি এইসব ধরে রাখতে পারবেন কিনা। পাহাড় সমান আসন পেয়ে তিনি কিন্তু পাহাড় সমান চাওয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এ কথা কি তিনি বুঝতে পারছেন কিনা কে জানে ? এই ৫ বছর আমাদের জাতির জন্য একটা বিশাল গুরুত্বপূর্ণ সময় বলেই আমার মনে হয়। আমাদের রাজনীতির চরিত্র বদলের এইটাই সময়। শুধুমাত্র প্রয়োজন সবার সদিচ্ছা এবং গত ২ বছরের শিক্ষা। কিন্তু ভয় লাগে কুকুরের লেজ নাকি ১০ মন ঘিয়েও সোজা হয় না।
একটা জিনিসে শান্তি পেলাম এরশাদ প্রেসিডেন্ট হবে না জেনে। এরশাদ প্রেসিডেন্ট হবে এটা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছিল অন্য যারা হবে তারা কি এরশাদ থেকে ভাল কিনা। কিন্তু আমি খুবই ইমোশনাল। রাজনীতি সম্বন্ধে আমার বুদ্ধি হওয়ার পরের প্রথম ঘটনাই হল ৯০ এর গণ আন্দোলন। তখন থেকেই অল্প অল্প করে আমি স্বৈরাচার সম্বন্ধে জেনেছি। তাই আমি কখনো মেনে নিতে পারি না সেই এরশাদ আবার প্রেসিডেন্ট হবে। প্রেসিডেন্টের তেমন কোন ক্ষমতা নেই এটা জেনেও এরশাদ যেমন ঘাউরামি করে ওটা হতে চায় আমিও তেমনই ঘাউরামি করে ও প্রেসিডেন্ট হবে এইটার বিপক্ষে। রাজাকার দের বিচার আসলেই হবে কিনা তা আমি জানিনা কিন্তু একভাবে সামাজিক বিচার তাদের হয়েছে বলেই আমার ধারণা। এইভাবে আমরা সামাজিক ভাবেই রাজাকারদের বিতাড়িত করতে পারব আমাদের সমাজ থেকে । অনেকের কাছেই শুনি এত বছর পর রাজাকার ইস্যু টা ব্যবহার না করে সবাই মিলে দেশ গড়াই নাকি লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমি এটাও মানতে পারিনা। রাজাকার কে এখনো আমি আমার দেশের একজন মানতে পারি না।
অনেক বকে ফেললাম। আজ নাহয় বন্ধ করি।

শুভ জন্মদিন

আজ ১৪ জানুয়ারী একেবারেই প্রথম প্রহর। মাত্র ১২টা বাজল। আমার জন্মদিন। ১২ টা বাজার সাথে সাথে নিজেকে নিজেই উইশ করলাম। এরপর আসলাম এখানে কিছু লিখতে। ২৬ তম জন্মদিন। জন্মদিন এর এই সময়টা কেমন কাটে সেটা নিয়ে জানুয়ারী মাস আসলেই আমার খুব কল্পনা বাড়ে। কোনবারই কল্পনা মিলে না। তাও কল্পনা করতে মজাই লাগে। চিন্তা করি ১২ টা বাজার সাথে সাথে নিশ্চয়ই অনেকে আমাকে উইশ করার চেষ্টা করবে । সেই অনেকেরা প্রতিবারই ভুলে যায় কিন্তু আমি আশা ছাড়ি না। বেটার লাক নেক্সট টাইম।
বাসা থেকে আম্মু একটা এসএমএস কিংবা ফোন করার কথা। এইটা অন্তত মিস হবার কথা না। এখনো কেন আসছে না বুঝতে পারছিনা। কনকের তো ভুলে যাওয়ার কথা না। মনে হয় লাইন পাচ্ছে না। কলেজে থাকতে অবশ্য কনক সবসময় ভুলে যেত। রাতের বেলা গিয়ে আমি ওকে মনে করিয়ে দিতাম। আরেকটা কথা মনে পড়ছে পিয়াপুকে নিয়ে। পিয়াপুকে আমি সবসময় ১৪ জানুয়ারী ফোন দিতাম গল্প করতাম কিন্তু কখনই বলতাম না । ওর মনেও থাকত না বুঝতও না। সববার মনে হত ফোন রাখার সময় বলব আজ আমার জন্মদিন ছিল আপু। কিন্তু বলা আর হয়ে উঠেনি। একদিন এইরকম ফোন করার পর পান্থ ভাইয়া ফোন করে ওকে জানিয়ে দিল তপুর জন্মদিন ছিল এই জন্য ও তোমাকে ফোন করেছিল তুমি কেন বুঝলা না। এরপর থেকে ওকে ফোন করা বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ ওকে ফোন করলেই ও সবার আগে চিন্তা করে হয়ত আজ আমার জন্মদিন। দেখা যাবে আমি যদি ২০ তারিখেও ফোন করি সে আমাকে উইশ করবে।
আমার আপুসোনাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করতাম । অনেক সুন্দর সুন্দর কল্পনা করতাম কিভাবে ও আমাকে উইশ করবে। গতবছর ওর মনে ছিল না। এইবার তো আরো মনে থাকবে না। কখনই খুব সুন্দর কিছু পাইনি তাই কেন যেন কিছু কল্পনা করতে গেলে ওর থেকে খুব সুন্দর করে একটা উইশের কথা মনে পড়ে।
আগে বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে উইশ বাদ পড়ত না। শামস,মীম,মর্তুজার কি এবার মনে পড়বে আমার জন্মদিনের কথা। আমি এখন আর ওদের উইশ করি না বিদেশ থেকে।ওরাও হয়ত করবে না। না করুক কিন্তু মনে পড়বে কি? কে জানে। নাহ এবার মনে হয় কেউ উইশ করবে না। ঘুমিয়ে পড়ি। নিজেকে নিজেই উইশ করি। তাও মনের ভিতরে আশা যায় না। হয়ত বাংলাদেশ সময় ১২ টায় কেউ করবে। হাহাহা।
এনিওয়ে
"শুভ জন্মদিন"