Monday, February 23, 2009

আমার কাজলাদিদিরা ( বনানীদি )

ও আমাকে রূপাই বলে ডাকে। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম রূপাই কেন? এই নামটা নাকি ওর খুব পছন্দের নাম। জসীমউদ্দীনের নকশী কাঁথার মাঠ এর নায়কের নাম। সেই থেকে আমি ওর রূপাই। আর ও আমার দিদি। জাপান থেকে সেবার দেশে যাচ্ছি যাওয়ার আগে ওকে ফোন দিয়ে কেমন আছে জিজ্ঞেস করলাম। দেখি ওর মন অসম্ভব খারাপ। আমাদের জাপানে যত পিচ্চিকাচ্চা আছে সবার ও বৌদি। সবাইকে ও আদর করে একেবারে নিজের বাচ্চার মত। ছোট যতগুলা আসে সবার জন্যই ওর বাসা অবারিত সবসময়। তাই সবাই আমরা সেই ছোটবেলা থেকেই ওর মায়া নিয়ে বড় হয়েছি। সেবার দেশে যাবার আগ পর্যন্ত ও আমার সেরকম বৌদিই ছিল। সেই ফোনে ওর মন এত খারাপ দেখে আমার এত খারাপ লাগল , আমাকে বলল , "তুমি কবে আসবা? তাড়াতাড়ি চলে আইস"।
এয়ারপোর্টে বসে বসে ভাবছিলাম কি করলে বৌদির মন ভাল হবে। দাদার থেকে বাসার ঠিকানা নিলাম আর বললাম বৌদিকে না বলতে। দেশে গেলাম কয়েকদিন এমনি এমনিই কেটে গেল। তারপর এক রাতে সবাই যখন ঘুমাচ্ছে তখন আমি উঠে মানিব্যাগ থেকে ঠিকানাটা বের করে একটা চিঠি লেখলাম। খুব বড় চিঠি লেখিনি কিন্তু তা পোষ্ট করার ১৪ দিন পর বিশাল একটা চিঠি পেয়ে গেলাম। বুঝলাম ও যে কি অসম্ভব খুশি হয়েছে। ও মনে হয় জীবনে কল্পনাও করতে পারেনি আমি দেশে গিয়ে ওকে চিঠি লেখব। সেবার ওর আরো একটা চিঠি পেয়েছিলাম। সেবার দেশ থেকে এসেই ও আমার দিদি আর আমি ওর রূপাই। ও থাকত টোকিওতে আর আমি তখন থাকতাম টোকিও থেকে অনেক দূরে। আমার দিদির সাথে সব আহ্লাদ তাই চলত মেইলে মেইলে। ও অবশ্য সবারই খুব প্রিয় মানুষ। আমাদের এখানে সব পিচ্চিকাচ্চার (যারা গত ৪-৫ বছর এখানে এসেছি ) কাছে বৌদি মানেই আদরযত্ন। এত জনের মাঝেও আমি নিজেকে ওর স্পেশাল ভেবে অসম্ভব আনন্দ পাই কারণ আর সবার কাছে ও বৌদি আর আমার সে দিদি আর আমি যে ওর রূপাই।
টোকিও আসার পর থেকে মাসের অন্তত ২টা উইকএন্ড আমি ওখানে কাটাই। গত বছর ওর জন্মদিনে ওকে চমকে দেওয়ার জন্য রাত ১২টায় গিয়ে ওর বাসায় হাজির হয়েছিলাম। ভয় পেয়ে গিয়েছিল প্রথমে তারপর আমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিল। আসার সময় ওর লেটার বক্সে জন্মদিনের চিঠি ফেলে এসেছিলাম। রাতের বেলায় একটা অসম্ভব মায়াবী মেইল পেয়েছিলাম, আমার চিঠি লেখা সার্থক হয়েছিল।
ও দেশে গিয়েছিল ১ মাসের জন্য সম্প্রতি। উইকএন্ডে যখন দেখি কিচ্ছু করার নেই তখন মনে হত আহারে আমার দিদিটা থাকলে তো চলে যেতে পারতাম। ও অনেকটাই আমার মত।আমার মতই অনেক অনেক বেশি ইমোশনাল মনে হয় আমার থেকেও বেশি। আমাকে প্রায়ই বলে আমি যাদের অনেক ভালবাসি তারাই আমাকে কষ্ট দেয়। দেখ তোর যদি মনে হয় পরে পর হয়ে যাবি তাহলে এখনই চলে যা এখন হলেও একটু সময় আছে । আমি কিছু বলিনা। মনে মনে বলি, একই কথা তো আমারও দিদি যদি পরে দূরে চলেই যাবি তাহলে কেন কাছে এলে। সবসময় তোমার মুখে রূপাই শোনার জন্য অপেক্ষা করব দিদি।

No comments: