Wednesday, March 11, 2009

আমার কাজলাদিদিরা ( তন্বীআপু )

তন্বী আপু কিন্তু আমাকে এখনো আপু বানাবার পারমিশন দেয়নি। উনি খুব ভালভাবেই আমার এই আপু বানাবার রোগ সম্বন্ধে অবগত। এবং প্রথম দিন থেকেই ওনার কাছে ওয়ার্নিং পেয়ে পেয়ে এখনো ওনাকে আপু বানানো হয়নি। কিন্তু এই সিরিজের অন্য সবার সাথে ওনার অনেক মিল তাই ওনাকে নিয়েও লেখা যাক।
জাপানে আসার পর শুনলাম আমাদের এই স্কলারশীপের এই প্রোগ্রামটায় যারা এসেছে আমাদের সিনিয়র সবাই ছেলে শুধু একটা বড় আপু আছে নাম ও জেনে গেলাম তন্বী। ৪-৫ মাস পরে ওনার সাথে যখন দেখা হল তখনো খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হবার চান্স পেলাম না। আমাদের সিনিয়র ব্যাচের সাথে ওনার সম্পর্ক অনেক বেশি ভাল থাকার কারণে আমরা খুব একটা পাত্তা পেলাম না। যাই হোক সেইরকম ভাবেই চলছিল। ঠিক কখন যে ওনার কাছে আসলাম বলতে পারব না তবে একটা ঘটনা আমার এখনো আমি সবাইকে বলে বেড়াই। জাপানে এসে হালাল খাওয়ার চেষ্টা করার কারণে বাইরের কিছুই প্রায় খেতে পারি না। সবচেয়ে কষ্ট লাগে মজার মজার কেক এবং আইস্ক্রিম খেতে না পেরে। এই রকম একবার কোথাও বলার কারণে সেবার ওনার বাসায় যাবার পর উনি আমাকে কেক বানিয়ে খাইয়েছিল। আমি আপুর সেই কেক খেয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কেক কতটা মজা ছিল মনে নেই কিন্তু মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আমার জন্য এত কষ্ট করে কেক বানাবার কারণে। এরপর থেকেই আপুর ভক্ত হয়ে গেলাম।

আপুর সাথে কোন যোগাযোগ হত না আমার। থাকতাম ও অনেক দূরে। কিন্তু সেবার যখন আমার খুব খারাপ সময় যাচ্ছে আমি যখন কারো সাথে শেয়ার করতে না পেরে একা একা আরো বেশি বিষন্নতায় ডুবছিলাম হঠাৎ করেই আপু আমার খবর নেওয়া শুরু করেছিল। জানিনা কেন হঠাৎ আমার কথা আপুর মনে আসল কিন্তু তখন আমার একজনের কেয়ারিং খুব বেশিভাবেই দরকার ছিল। আমি সবসময় সবকিছু শেয়ার করতে পারিনি কিন্তু যখন আপু আমার খবর নিত তখন খুব ভাল লাগত। এইভাবে চলতে চলতে কখন যেন দেখি আপুর সাথেই এখন ফোনে সবচেয়ে বেশি কথা বলা হয়। টোকিওতে আসার পর আপুরা বাসা নিল সেই বাসাতেও উইকএন্ড আসলেই আমার যাতায়াত শুরু হয়ে গেল। গত ১ বছরের অসংখ্য উইকএন্ড আমি কাটিয়েছি আপুর বাসায়। গত মাসে যখন জ্বরে পড়েছিলাম তখনো সবার আগেই মনে পড়ল একা একা এখানে রুমে না থেকে আপুর বাসায় চলে যাই। আমি জানি আপু বিরক্ত হবে না তাই অনেকটা ছোট ভাইর দাবি নিয়েই রাতের বেলা চলে গিয়েছিলাম আপুর বাসায়। আপু এবং সেই সাথে ভাইয়া দুজনেরই তখন টার্ম শেষ হবার অসম্ভব কাজের চাপ। তারপরও আমার জ্বালাতন ওনারা একেবারে আপন ভাইবোনের মতই হাসিমুখে সহ্য করেছেন। আমার একবার ও কিছু মনে হয়নি । মনে হয়েছে এইটাই স্বাভাবিক।
আমার এই সিরিজের অন্য সবাই কোনভাবেই এই লেখার কথা জানেনা। একমাত্র তন্বী আপুই আগে থেকেই এই লেখার কথা জানে। গত সপ্তাহেই ভাইয়া ওয়ার্নিং দিয়ে আপুকে বলেছে তোমাকে মনে হয় তপু টার্গেট করেছে। আমি হেসে বললাম নাহ ভাইয়া আমার আর কোন টার্গেট নেই। আমার আর বোনের দরকার নাই। তাও আজ এই লেখাটা লিখে ফেললাম আপুকে নিয়ে।কারণ আর একটু পরেই আপুর জন্মদিন ।

শুভ জন্মদিন আপু

অনেক প্ল্যান করেছিলাম আপু, আপনার জন্মদিনে অনেক কিছু করব। মানুষকে চমকে দিতে আমার ভাল লাগে। এবার ভেবেছিলাম আপনার জন্মদিনে ১২টার দিকে গিয়ে হাজির হব। কিন্তু এমন এক ঝামেলায় পড়লাম। অসুখটা হবার আর সময় পেল না। নড়তে চড়তেই কষ্ট হচ্ছে। অসুখ হলে আপনার ওখানে চলে যাবারই কথা কিন্তু হাসপাতালে যেতে হবে তাই তাও যেতে পারছিনা। নইলে কি আর আজ এখানে বসে বসে আপনাকে নিয়ে লেখতে হয়? ভাইয়া নিশ্চয়ই আপনাকে বলছে আমি বলেছিলাম না তপু তোমাকে টার্গেট করেছে। কি করব আপু অন্য সবার সাথে আপনার এত মিল শুধু পারমিশনটাই পাইনি আপু বানাবার। সেদিন যখন হঠাৎ করে আপনার বাসায় চলে গেলাম, শুভ বলছিল তুই কত লাকি জাপানে এসেও তোর রাস্তায় বের হয়ে কারো বাসায় চলে যাবার জায়গা আছে। আসলেই আপু আমি অনেক ভাগ্যবান। এই এক জীবনে অনেকের ভালবাসা পেয়েছি। অনেক জ্বালাই আপনাদের কিন্তু কখনো আমার মনে আসেনি আপনারা বিরক্ত হবেন কিনা। এই স্বাভাবিকভাবে জ্বালাবার স্বাধীনতা পেয়েই আমি অনেক খুশি আপু আপনাকে আমার কাজলাদিদি হতে হবে না।
আপনার এই জন্মদিনে অনেক অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আপনার সকল আশা পূরণ হোক । আপনাদের ব্যাপারে একটা কথা আমি সবসময় ভাবি কখনো বলা হয়নি মনে হয়। আমার দেখা সবচেয়ে সবদিক দিয়ে কমপ্লিট হ্যাপি কাপল হচ্ছেন আপনি আর ভাইয়া । আপনাদের দুজনের যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে দুজন দুজনকে অনেক ভাল ভাবে চিনেন এবং দুজনের প্রতি দুজনের ভালবাসার সাথে সাথে রেসপেক্ট অনেক বেশি। আজীবন এরকম সুখী থাকুন আপু।

No comments: