মঙ্গল, ১৩/০১/০৯ – ৪:৪৭ অপরাহ্ন
কলেজে থাকতে জুনিয়র থাকতে জ্বর আসলে বেশ ভাল লাগত। কলেজ হাসপাতাল ছিল সেইরকম জায়গা। সবচেয়ে খাইষ্টা সিনিয়র ভাই ও জানি ঐখানে কেমন অন্যরকম হয়ে যাইত। সিনিয়র হওয়ার পর অবশ্য হাসপাতাল থেকে হাউসে থাকতেই বেশি ভাল লাগত। জ্বর হলে তাই নিজের কাছে থাকা প্যারাসিটামল দিয়ে চালিয়ে দিতাম। হাসপাতালে গেলে এক্সিকিউজ দিলে গেমস করতে পারব না এই জন্য। কিন্তু বাসায় আসলে আমার খালি মনে হত একবার জ্বর হলে মন্দ হয় না। আমার প্রচন্ড জ্বর হবে আম্মু পাশে বসে একটু পর পর কপালে হাত দিয়ে দেখবে, একসময় ঠান্ডা পানি এনে মাথায় পানি দিবে, আমি খেতে চাইব না আম্মু খাইয়ে দিবে। বেশ একটা ভাব। ঐ সময় মনে হয় সবারই একটু আলাদা ভাবে গুরুত্ব পাওয়ার রোগ থাকে হোক না সেটা অসুস্থতার মধ্য দিয়ে। আমার সেই ভাবটা এখনো যায়নি। দেশে গেলে একবার এই কথা বলার পর হালকা একটু জ্বরেই দেখলাম আম্মু এসে আমার মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছে। যদিও জানতাম যে সেটা জ্বর না হালকা গা গরম ছিল তাও আমার বেশ ভাল লাগছিল।
বিদেশের অবস্থাটা ঠিক তার উলটা। যারা বাইরে থাকেন (অবশ্যই একা ) এবং কখনো অসুস্থ হয়েছেন তারা অবশ্যই বুঝতে পারবেন। গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে টের পেলাম গায়ের তাপমাত্রা বাড়ছে। তার দুদিন আগে একটু মাথায় বৃষ্টির পানি পড়েছিল খুব একটা পাত্তা দেইনি আমি। শুক্রবার রাতের বেলা বুঝতে পারলাম এইটা আর গা গরমে থাকবে না জ্বরে পরিণত হবে। শনিবার সারাদিন নজরদারিতে রাখলাম কি হয়। রাতের বেলা মনে হল আর মনে হয় পারা যাবে না। জ্বর যদি আরো বাড়ে রান্নাবাড়া খাওয়া দাওয়া সর্বোপরি একা একা থাকা অসম্ভব একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আমার এখানে যে কোন সময় একা একা লাগলেই কিংবা কোথাও যাওয়ার কথা ভাবলেই কিংবা কাউকে জ্বালানোর দরকার পড়লেই মনে পড়ে এরকম ২-১ খানা জায়গা আছে ( কি লাকি আমি )। তার মধ্যে একটা জায়গা হল সাকেবভাই (মকক) এর বাসা। ঐ বাসায় আমি এত যাই অনেকে আমাকে সেখানকার সাবলেট বলেই মনে করে। বিশেষ করে গত মাসের বন্ধে আমি মাসের ৩টা উইকএন্ডই ঐখানে কাটিয়েছি। যাই হোক সেখানে চলে যাব কিনা যখন ভাবছি তখনই তন্বী আপুর (সাকেব ভাইর বৌ) মেইল পেলাম আপু বলছে কাজ না থাকলে চলে যেতে ওনার ওখানে। তাই কোন রকম দ্বিতীয় চিন্তা না করেই চলে গেলাম সেখানে। সেই রাত ভালভাবে থাকলেও পরেরদিন শুরু হল জ্বর বাড়া । আমি আবার অনেক পন্ডিত জ্বরের অষুধ খাওয়ার ব্যাপারে অনেক পন্ডিতি করে না খাওয়া ঠিক করলাম। কিন্তু মঙ্গলবারে একটা ক্লাসে যেতেই হবে তাই শেষ পর্যন্ত আর না খেয়ে পারলাম না। গত রাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল যার কারণে আজ ক্লাসখানা করতে পারলাম কিন্তু ক্লাস করে বাসায় ফিরে এসে দেখি আবারো আসছেন তিনি।
গতদুদিন জ্বরে পড়ে থাকলেও বুঝতে পারিনি কিছুই। সাকেব ভাই তন্বী আপু এমন ভাবে আমার সেবা করছিলেন খুব লজ্জাই লাগছিল। ৩ বেলা গরম কোকোয়া, রান্না করে খাওয়ানো , সারাক্ষণ জ্বরের হালহকিকত নেওয়া সত্যিই বড় লজ্জা লাগছিল। মুখে ধন্যবাদ বলতে আরো অস্বস্তি লাগছিল। তাই বলা হয়নি। আজ নিজের ঘরে বসে যখন থার্মোমিটারে জ্বর মাপলাম কেউ যখন জিজ্ঞেস করল না “কত?” তখন বুঝতে পারলাম গত দুদিন আর আজকের পার্থক্য। বাঙ্গালী স্বভাবটা আমার মাঝেও আছে হাসপাতালে যাওয়ার অনীহা, আজ হাসপাতালে যাওয়া দরকার ছিল। সকালে জ্বর ছিল না দেখে ভাবলাম ভাল হয়ে গিয়েছি এখন ভাল হওয়া টের পাচ্ছি।
Wednesday, January 14, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment