Friday, August 1, 2008

আপুসোনা ---৫


-ঐ শালা কার্ড দে, এইটা দাবা খেলা না।
-বেশি ভাব মারিস না শামস। twenty nine খেলতে আয় তোকে খেলা শিখিয়ে দেব। ব্রীজটা নতুন শিখেছি বলে ভাব মারতেছিস।
হাহাহা করে হেসে উঠে সবাই তপুর কথা শুনে। আজ বহুদিন পরে ওদের রাতের আসর বসেছে। আজ রাফির বাসায়।
-তোরা ৪ জন খেললে আমি কি করব বসে বসে।আয় ৬ জনে মিলে lorries খেলি।জ্যোতির প্রস্তাব।
-রাফিকে রাজি করাতে পারলে আয়। তোর দোষেই তুই বসে আছিস।৯ টায় আসার কথা তুই এসেছিস ১১টায়।মীমের নির্বিকার গলা।জ্যোতি বসে আছে এতে ওর কোন মাথাব্যাথা নেই।বরং খুশিই হচ্ছে।
-রাফি খেলবে কার্ড তাইলেই হইছে।ও sure কার্ড খেলতে বসলেও মিথ্যা কল দিবে।ফোঁড়ন কাটল শামস।আবার হেসে উঠে সবাই।
শুধু মর্তুজাই চুপচাপ খেলে যাচ্ছে।কোনদিকে খেয়াল নেই ওর।
-ইদানিং মর্তুজার কি হইছেরে কথাবার্তা বলিসই না একদম।কোন কিছুতেই আগ্রহ নাই তোর। শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলে তপু।
-আমার আবার কি হবে ।এইতো খেলছি।
-কি জানি তোকে দেখলে মনে হয় পৃথিবীর সব দুঃখ তোর। কোন কিছুতেই আগের মত আগ্রহ দেখাস না।অনেকদিন ধরেই খেয়াল করছি বলা হয়না।
-ধূর কিছু হয়নাই।তুই বেশি বুঝস।উড়িয়ে দেয় মর্তুজা।
-তপু তো মনে হয় জটিল আলোচনা শুরু করতে চাচ্ছিস।কিন্তু জটিল আলোচনার নিয়ম তো যে থাকবে না তাকে নিয়ে আজকে মর্তুজা কে নিয়ে কেন।
-নারে শামস মনে হয় বড় হয়ে গেছি। যাই বলি সব জটিল হয়ে যায়।আগে জীবন সহজ সরল ছিল আয়োজন করে আমরা জটিল আলোচনা করতাম।
হঠাত একটু চুপ হয়ে যায় আসরটা।সবাই মনে মনে মেনে না নিয়ে পারে না তপুর কথা। সবারই কোন না কোন ঝামেলা আছে যেটা নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না।
মর্তুজা ভাবে, সব কথা কি বলা যায়।তাও ভালো আমাকে তোরা খেয়াল করছিস।আমি change হচ্ছি এতে কারো তো কিছু এসে যাচ্ছেনা বলে মনে হয় আমার।
-ধুর তপু তুই একটা foul, আঁতলামি শুরু করছস। সর আমি খেলি।
-তোর শাস্তি এখনো শেষ হয়নাই।২ ঘন্টা পরে আসছিস ২ ঘন্টার আগে তুই খেলার নামই মুখে আনতে পারবিনা।
এ সময়ে বেজে উঠে মোবাইল।তপু মোবাইলটা নিয়েই কার্ডগুলো জ্যোতির দিকে বাড়িয়ে দেয়।
-নে তোর কপাল খুলে গেল। আমি কথা বলি।
আর কোন কথা না বলে তপু পাশের রুমে চলে গেল।রাফির বাসায় আজ ওরা ছাড়া কেউ নেই।
-কি ব্যাপার রে , ঘটনা কি?তপু কার্ড ছেড়ে উঠে গেল মনে হচ্ছে লম্বা ব্যাটিং দিবে।এটা তো মর্তুজা আর জ্যোতির কাহিনী।তপুর কিছু হল নাকি?মীমের প্রবল কৌতুহল।
-নাহ sure লাবণী আপু।মর্তুজার উত্তর। ঐ শালা ইদানিং buet এও আমাদের পাত্তা দেয়না।লাবণী আপুরে পাইলেই হইছে।কঠিন খাতির হইছে। প্রতিদিন ই নাকি আপু ফোন করে।
-তপু শালা একটা লুইচ্চা হইছে।
-তুই এত jealous কেন শামস।
-তুই আবার কথা কস কেন তুই ও তো ।
জ্যোতি আর শামসের মধে চলে খুনসুটি।ওদের আড্ডায় এরকম পঁচানো চলবেই।একটু পরে দেখা যাবে জ্যোতি আর শামস মিলেই অন্য একজনকে পঁচাচ্ছে।
-ঐ রাফি ল্যাপটপ গুতাচ্ছিস কেন।দেখাস নাকি।গান ছাড়।
-নারে আমার কালকেই একটা report জমা দিতে হবে।
-মীম যা তো কিছু গান ছাড়।ঐ শালার কথা বিশ্বাস করিস না ।চাপা মারে শালায়।
-আরে না না চাপা না ও মিছা কথা কয়।
শামসের কথা শুনে হেসে উঠে সবাই।
রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে ওদের হাসির মাত্রাও বাড়তে থাকে।রাতের একটা মাদকতা আছে।রাত গভীর হলে এমনিতেই সবার মাথা আউলা হয়ে যায় তাই।


লাবণী আপুর সাথে কথা বলে রুমে ঢুকে তপু।ঢুকেই সবার তোপের মুখে ও। কোন কথাই কানে ঢুকে না অবশ্য।অদ্ভুত এক ভালো লাগায় মনটা ভরে আছে ওর।জানে বন্ধুদের এইসব বাঁকা কথায় কান না দিলেও চল্বে।কোণ topic পেলে পঁচানোর chance ছাড়বেনা কেউই।কোন কথাই mean করে বলে না কেউ।ওর মনের মধ্যে এখন শুধু একটাই নাম ওর আপুমনি।একটা জিনিস কিছুতেই ভেবে পায়না ও এত আদর করে একজন কিভাবে কথা বলে। ওর সাথে কথা শুনলে মনে হয় ও অনেক পিচ্চি একটা বাচ্চা এখনই ওকে কোলে তুলে আদর করবে।এত আদর পেয়ে অভ্যস্ত নয় তপু।তাই ওর অসম্ভব ভাল লাগে।কখন যে ১ ঘন্টা পেরিয়ে যায় টেরই পায়না ।প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে কথা বলেও তাই শখ মিটে না তপুর।সবসময় চিন্তা করে ইশশ লাবণীটা যদি ওর আপন বোন হত। নিদেনপক্ষে খালাতো মামাতো।অথবা ওদের বাসাটা যদি লাবণীদের আশে পাশে থাকত।

সারাদিন কার্ড খেলে কিংবা আড্ডা দিয়ে সকাল হলেই ওরা যে যার জায়গায় চলে যায়। এই হয়ে আসছে সবসময়।কখনো মীমের বাসা কখনো তপুর বাসায়। আজই প্রথম রাফির বাসায়। আন্টি আঙ্কেলের কাছে চট্রগ্রাম চলে যাওয়াতে আজ এখানে এসেছে ওরা।
-আমরা এক সাথে হলেই শুধু কার্ড খেলি।কেমন boring হয়ে যাচ্ছে।তপু বলল । অন্য কিছু করা যায়না?
-কেন তোর লাবণী আপু মানা করেছে কার্ড খেলতে।মীমের প্রশ্ন।
-আরে তা না, বলছিলাম অন্য কিছু করা যায় কিনা।মনে মনে ভাবে তপু আসলেই তো কার্ড খেলছে শুনে মৃদু ঝাড়ি দিল আপু।
-চল কক্সবাজার যাই এই বৃহস্পতিবার।
শামসের প্রস্তাব শুনে হৈহৈ করে উঠল সবাই।তপুই শুধু কিছু বললনা।ও জানে ওর পক্ষে যাওয়া সম্ভব হবে না।বৃহস্পতি শুক্রবার ও খুব busy থাকে।আর বাসা থেকেও যেতে দিবে না আম্মু।
-তপুরে জিজ্ঞেস কর। ওর বাসা থেকে যেতে দিবে কিনা।মর্তুজাই বলল কথাটা।
-না ঠিক তা না। বাসায় সমস্যা নাই।কিন্তু আমি তো বৃহস্পতি আর শুক্র omeca তে ক্লাস নেই। কিভাবে যাই।
-এক সপ্তাহ ক্লাস না নিলে দুনিয়া উলটে যাবেনা। তুই ছাড়াও অনেকে আছে ক্লাস নেওয়ার।ভাব দেখাইসনা। রেগে উঠে জ্যোতি।
-দেখি তোরা প্ল্যান কর আমি পরে জানাচ্ছি।
রাত পার হয়ে যায় কখনো কার্ড খেলে কখন আড্ডা বা কক্সবাজার যাবার প্ল্যান করে।তুমুল এই জমজমাট আড্ডায় থেকে ৬ তরুণের মনে হয় ওরাই বুঝি পৃথিবীর সেরা circle।ওরা জানেনা পৃথিবীর সব circle ই এটা মনে করে।

No comments: