journalist
আমার এ চিঠি পেয়ে অবাক হয়েছেন নিশ্চয়ই। প্রেরকের জায়গায় খোকন নামটি পরিচিত ঠেকলেও চিনে উঠতে পারছেন না। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনি আমার খুব আপনজনই হতেন। আপনার মেমসাহেব কাহিনীখানা পড়ার পর থেকেই আপনাকে লেখব ভাবছি। কিন্তু কিভাবে লেখব তা ঠিক করে উঠতে পারছিলাম না। আমার জন্য আমার ছোটদি মারা গেছে এই অপরাধবোধ থেকে কখনোই আমি বের হয়ে আসতে পারিনি। আপনার অবস্থা আমি কখনো চিন্তা করিনি। সত্যি বলতে কি আপনাকে আমি কখনোই পছন্দ করতে পারিনি। দিদি যখন আপনার কথা বলত তখন ঈর্ষায় জ্বলতাম আমি। আপনার সাথে পরিচয় হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার দিদির সবটুকু জুড়ে ছিলাম আমি। সদ্য কৈশোর পেরুনো আমার তাই আপনার আগমন একদমই ভাল লাগেনি। আপনার কাহিনী পড়ে তাই বুঝতে পারলাম পোড়ামূখী অসম্ভব সুখীদের মধ্যে একজন হতে পারত।এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝেছেন আমি আপনার মেমসাহেবের ছোটভাই খোকন।
আপনার জন্য আমার কখনোই খারাপ লাগেনি। অন্য সবার মত কিছুদিন দেবদাস সেজে থেকে ঠিকই আপনি আবার একজন মনের মানুষ জুটিয়ে ফেলবেন , এই ছিল আমার ধারণা। প্রেম করলেই প্রেমিকা পাওয়া যায়, বিয়ে করলে বউ, কিন্তু বোন হারালে কিভাবে আর পাওয়া যায় বলতে পারেন? ছোটবেলা থেকে যে দিদিকে পাশে দেখে বড় হয়েছি হঠাৎ করে সেখানে সে নেই , শূন্যতা কতটুকু বুঝতে পারেন? আপনার লেখা পড়ে তাই আমার ভুল ভেংগেছে। আমার দিদিটা জানলই না কত সুখ জমে ছিল তার জন্য।
আমি ওর আপন ভাই ছিলাম না। কিন্তু কোনদিন টের পাইনি আপন দিদি আর কতটা বেশি কিছু হয়। মায়ের কোন স্মৃতি নেই আমার। শুনেছি জন্মের সময় মা মারা যাবার পর পাশের বাসার এই দিদিরা আর ওনাদের মা যাকে আমি বড়মা ডাকি তারাই কোলে তুলে নেয় আমাকে। স্ত্রী হারিয়ে বিপর্যস্ত আমার বাবাও স্বস্তি পায় সন্তান পালনে ওনাকে আর কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি ওনাকে। ও বাড়িত কোন ছেলে না থাকায় আমার আদর, আধিপত্য সেখানে একচ্ছত্র হয়ে উঠে। তিন মেয়ের সবাই বেশ বড় হয়ে উঠায় আমি হয়ে উঠলাম সবার আদরের। ও বাসাতেই থাকতাম আমি। হঠাৎ হঠাৎ মনে হলে পিতাকে একবার দর্শন দিয়ে যেতাম হয়তবা। আমার জন্য কোন চিন্তাই করতে হয়নি আমার জনকের। চিন্তার জন্য যে তিনি অধীর ছিলেন এমনটাও কখনো মনে হয়নি। বাবা একজন থাকতে হয় তাই শুধু জানতাম আমি। আমার ছিল আমার বড়মা, আর তিন দিদি। আমি তাদের ঘরের পুতুল। আমাকে ছাড়া তাদের ঘর খালি হয়ে থাকে। ছোটবেলায় ঐ বাড়িতেই বড় হয়েছি আমি। বড়মাকে মা বলে জেনেছি। বড়দিকে বেশিদিন পাইনি তখনই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল দিদির কিন্তু ও যখন বাড়ি আসত আমার পছন্দের জিনিস কখনোই বাদ পড়তনা। মেঝদি আর ছোটদি আমার বাল্যকালের সাথী। ওদের দুজনের কোলে চড়েই বড় হয়েছি আমি। আমাকে নিয়ে দুজনের চলত কাড়াকাড়ি। আমি কার কাছে কি আবদার করব সেটার অপেক্ষায় থাকত তারা। আমি যেন কিছু চেয়ে ওদের একজনকে জিতিয়ে দিতাম আরেকজনের কাছে। ওদের ভালবাসায় আমিও হয়ে উঠেছি আহ্লাদী। বড়মা নিজেও আমাকে আদর করতেন কিন্তু মেয়েদের ভালবাসার আতিশয্য দেখে ওনার হয়তবা কখনো মনে হত একটু শাসন করা দরকার। প্রাণে ধরে তাই কখনো যদি বা একটু শাসন করলেন সেইদিনই তাকে পড়তে হত দিদিদের তোপের মুখে। দিদিরা আসার সাথে সাথেই তাদের কাছে বিচার দেয়া হয়ে যেত আমার। ফলাফল যেটার জন্য শাসন করা হল সেটা তো পেতামই উপরি হিসেবে পেতাম বাড়তি আদর। আমার অবশ্য বাড়তি বলে মনেই হতনা। এসবই যেন আমার ন্যয্য অধিকার। বড়মা হয়তবা বলতেন তোদের আদর পেয়েই ছেলেটা উচ্ছন্নে যাবে। মেঝদির চটপট উত্তর, এই বাচ্চা ছেলে উচ্ছন্নের পথই এখনো চেনেনা বড় হোক তখন শাসন কর।
পরদিন দিদিরা স্কুলে চলে গেলে আমি আস্তে করে এসে বড়মার পিছনে গলা জড়িয়ে ধরতাম। বড়মা রাগ করে বলতেন , থাক আর লাগবে না আমার কাছে আসা। দিদিরা আসলে তখন আদর নিও। আমি তখন বলতাম ঠিক আছে আমি তাহলে চলে যাচ্ছি ঐ বাসায় দিদিরা আসলেই আসব। জানতাম আমাকে ছাড়া খালি বাসা সহ্য হবে না বড়মার। পিছন থেকে বলতেন ওরে আমি কি তাই বলেছি আয় এদিকে আয়। কিচ্ছু খাসনি নিশ্চয়ই। আমি তখন আদর বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বলতাম নাশতা খেয়েছি না সকালে। সেই কখন খেয়েছিস বলে কাছে ডেকে আদর করে খাওয়াতেন আমাকে বড়মা। আপন মা থাকলে আর কিভাবে আদর করত আমি জানিনা। এইভাবেই আমার শৈশব কাটে। মায়ের জন্য কখনো আফসোস হয়নি আমার।
একটু বড় হলাম আমি। তখন আমার ৭-৮ বছর বয়স। বাইরে পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলতে যাই। মেঝদি তখন কলেজে ভর্তি হওয়ায় ছোটদির বেশি কাছঘেঁষা হয়ে গেলাম আমি। মেঝদি বাসায় আসতে দেরি হত ততক্ষণে আমি ছোটদির দলে ভিড়ে যেতাম। মেঝদি আসার পর তার কাছ থেকে চকলেট মুখে পুরেই আমি আবার ছোটদির কোলে চলে আসতাম। মেঝদি প্রায়ই বলত তুই আমার থেকে ছোটকে বেশি ভালবাসিস তাই না পিচ্চি। ভালবাসার মর্ম আমি তেমন বুঝিনা তখন। মেঝদির চকলেট খেতে খেতেই তখন বলতাম আমি ছোটিদিকে ভালবাসি। ছোটদি মনে হয় মেঝদিকে খুশি করার জন্যই বলত এতক্ষণ তো খালি মেঝদি কখন আসবে তাই জিজ্ঞেস করছিলি।
সেদিন আমি বাইরে খেলতে গিয়ে বিশুদের সাথে ঝগড়া লাগিয়ে ফেললাম। ওদের শাঁসিয়ে বললাম আসুক আমার ছোটদি ওকে বলে দিব তোকে আচ্ছা মত মেরে দিবে। বিশুটা মুখ বাঁকিয়ে বলল , ছোটদিকে বলে দিব ইশশ ছোটদি, ছোটদি কি তোর আপন বোন। জানিনা এই কথা শুনে কেন যে আমার এত খারাপ লাগল প্রচন্ড কান্না পেয়ে গেল আমার। সেদিন আর বড়মার কাছে গেলাম না। বাসায় এসে কান্না শুরু করলাম। আমার বাবা অসময়ে আমাকে বাসায় দেখে এমনিতেই হতবাক তার উপর ক্রন্দনরত ছেলেকে কিভাবে সামলাতে হয় তার জানা ছিলনা। অনভ্যস্ত হাতে আমাকে আদর করার চেষ্টা করে বলছিলেন কি খোকা কি হয়েছে। একরাশ অভিমান গ্রাস করছিল আমাকে। কিছুক্ষণ পর ছোটদি এসে স্বস্তি দিল আমার বাবাকে। বাবা অসহায়ের মত বললেন , দেখ তো মা সেই তখন থেকে কাঁদছে আমি তো কিছুই বুঝছিনা।
ছোটদি এমনিতেই স্কুল থেকে বাসায় এসে আমাকে না দেখে থাকতে পারেনা। আমি বাইরে থাকলেও ওর ফেরার সময়ে একবার এসে ওর সাথে দেখা করে যেতাম। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যার পরও আমি না আসাতে বড়মাও চিন্তায় পড়ে গেলেন। চিন্তিত ছোটদি যখন বিশুর কাছে শুনতে পেল আমি অনেক আগেই বাসায় চলে এসেছি তখন আমার ছোটদি কাঁদোকাঁদো হয়ে বাসায় ফিরে আসল। বড়মাই তখন বললেন এই বাসায় দেখতে। আমাকে দেখে ছোটদির জান ফিরে আসল কিন্তু আমার কান্না বেড়ে গেল দ্বিগুন। ও এসে আমাকে আদর করছে কেউ মেরেছে কিনা জিজ্ঞেস করছে আমি কারো কথাই শুনছি না। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কিনে আনা খেলনা দিয়েও আমার কান্না থামাতে পারলনা ও। আমাই সব ছুড়ে ফেললাম , লাগবে না আমার কিছু।বালক আমি কিভাবে বুঝাব আমার অভিমান। পেছন পেছন বড়মা আর মেঝদি এসেও হাজির হল। বড়মাই শেষ পর্যন্ত থামাল আমাকে। অনেকক্ষণ কেঁদে আমিও ক্লান্ত। মেঝদি এসে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছিলরে পিচ্চি তোর। আমি তখন ছোটদির দিকে তাকিয়ে বললাম ," বিশু কেন বলল ছোটদি আমার আপন বোন না"। এতক্ষণ ধরে আমার কান্না দেখে ছোটদির চোখ ও ছলছল করছিল এইবার সেখানে রাগ দপ করে জ্বলে উঠল। বলল, তোর আর খেলতে হবে না কোনদিন বিশুর সাথে। বড়মা আমাকে ধরে আস্তে করে বললেন, বোকা ছেলে এই জন্য এত কাঁদা লাগে। বলতো আপন আর পর কি দিয়ে হয়। জন্মের পরদিন থেকে তোকে কোলে তুলে নিয়েছি তোর আপন মা থাকলে এর থেকে কোন জিনিসটা বেশি করত। বিশু বাচ্চা ছেলে ও বুঝেনি। আর কোনদিন বললে জিজ্ঞেস করবি ওর আপন বোন কোন জিনিস করে যেটা তোর ছোটদি করে না। তুই আস্তে আস্তে বড় হবি তখন দেখবি আপন পর জন্ম দিয়ে ঠিক হয় না। অন্তর দিয়ে আপন পর চিনতে হয় । ছোট্ট আমি এত কিছু বুঝিনা। শুধু বড়মাকে বলেছিলাম তুমি বিশুকে বলে দিবা ছোটদি আমার আপন বোন। বড়মা হেসে বলেছিলেন হ্যা বলে দিব। মেঝদি হেসে বললেন ছোটদি আপন হলেই হবে আমি কেউ না? দৌড়ে ওর কোলে উঠে বলেছিলাম তুমিও আমার আপন বোন।
আজ আর লেখতে পারছি না। চোখ বুজলে আজো আমার ছোটদির মায়াবী মুখখানা আমার চোখের সামনে ভাসে। এক মুহূর্ত ও শান্তি দেয়না ও আমাকে। এখনো আমাকে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যায়। চোখের জল কেন যে আমার শেষ হয় না। তবুও আপনাকে আমার দিদির কাহিনী জানাব আমি। আপনার কাছে হয়ত আমি অপরাধী। কোন এক খোকনের জন্য আপনার স্বপ্ন উলটপালট হয়ে গেল। কোথা থেকে শুরু করে কিভাবে লেখব জানিনা। আপনি সাংবাদিক মানুষ লেখালেখি করাই আপনার কাজ। আপনার লেখায় আমার দিদি মেমসাহেব হয় সবার মনে অবস্থান করেছে। কিন্তু আমার পক্ষে এত গুছিয়ে বলা সম্ভব নয়। তবুও আপনাকে শোনাব আমার দিদির কথা।
Friday, October 31, 2008
Thursday, October 23, 2008
আমার আপুসোনা - ৪
তপু শোন তোর সাথে কথা আছে।
আম্মুর ডাক শুনে এসে বসলাম আম্মুর পাশে। মনে হচ্ছে সিরিয়াস কোন ব্যাপার আলোচনা হবে। বসতেই একটা প্রিন্ট করা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিল আম্মু। আপু দেখলাম উঠে চলে গেল অন্য রুমে। ব্যাপার কি বুঝার জন্য কাগজটাতে চোখ বুলাতেই দেখলাম কোন এক সুযোগ্য পাত্রের বায়োডাটা।
-কার জন্য মা এইটা
-কার জন্য আবার তোর বোনের জন্য। দেখ তোর পছন্দ হয় কিনা।
-মানে? আপুর বিয়ে? কেন এত তাড়াতাড়ি কেন।
-বিয়ে দিতে হবে না। মেয়ে বড় হয়েছে না?
আমার মাথায় কিছু কাজ করে না। আমার আপুসোনার বিয়ে হয়ে যাবে, ও চলে যাবে আমাদের বাসা থেকে এ কি করে সম্ভব। এই বাসায় আমার আপু থাকবে না, আমি রাতে কার সাথে গল্প করে করে ঘুমাব। এ কি করে হয়। আম্মুকে কিছু বলিনা আমি কাগজটাতে দ্বিতীয় নজর না দিয়েই ফিরিয়ে দেই আমি আম্মুর কাছে।
-কিরে কিছু বললিনা তো?
-আমার পছন্দ হয়নাই।
-দেখলিই তো না ঠিক করে।
আমি গিয়ে আমার আপুর কাছ ঘেষে বসি।
-আপু তোর বিয়ে হয়ে গেলে তুই এই বাসা থেকে চলে যাবি !
আপু কিছু বলে না একবার শুধু আমার দিকে তাকায়। আমার এটা তো প্রশ্ন ছিলনা।
-আপু তুই না থাকলে এই বাসায় আমার যে খুব একা একা লাগবে। আবার বলি আমি।
আর থাকতে পারিনা আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি।
আমার আবেগ দিয়ে তো আর কিছু হবে না। বাসার সবার গবেষণায় সেই পাত্রই সুযোগ্য বলে গণ্য হল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম কি দ্রুত আমার আপুর বিয়ের দিন চলে আসল। কেন আমার আপুকে বিয়ে করতেই হবে এটা আমার এখনো মাথায় ঢুকছেনা। সেই ছেলে আবার আমার আপুকে ফোন করে এখনই। আমার একটুও ভাল লাগে না। আপু যখন তার সাথে কথা বলে তখন আমার মনে হয় ফোনটা কেড়ে নিয়ে একটা আছাড় মারি। আর আপুকে চীৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে তুই কোথাও যাবিনা, তোর বিয়ের দরকার নেই। আমার সহ্য হয় না। ঘরে থাকতেও ইচ্ছা করেনা। আপুকে চোখের সামনে দেখলেই মনে হয় আগামী সপ্তাহেই ও আর আমাদের বাসায় থাকবে না। ওর সাথে আমার কথা বলতে হবে টেলিফোনে। প্রতিদিন ইচ্ছা হলেই ওকে দেখতে পারবনা। রাতে ঘুম না আসলে ওকে ডেকে বলতে পারবনা আপুসোন আমার , আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
---------------------------------------------------------------------------------------------
আজ আমার আপুসোনার বিয়ে। স্টেজে পরীর মত সেজে বসে আছে ও। আমাকে করতে হচ্ছে একশ একখানা কাজ। বোনের বিয়েতে ভাইয়ের কি আর ব্যস্ততার কোন শেষ থাকে। তাও কাজের মধ্যে ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার কাজ আমি ভুলে গেলাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলাম আমার আপুকে। আর ঘন্টা কিছু পরেই চলে যাবে আমার আপু। বাসায় গিয়ে আজ আর আমি আমার আপুকে দেখতে পারবনা। আপু আমাকে লক্ষ্য করল না। কে যেন ডাকছে আমাকে ...
আপু চলে যাচ্ছে। আমার সেখানে যেতে ইচ্ছা করছে না। দূর থেকে আমি দেখছি ও কাঁদছে আম্মুকে জড়িয়ে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ছুটে গিয়ে ওকে রেখে দিতে ইচ্ছা করছে। কে যেন বলল আমাকে ডাকে আমার আপুসোনা।
আপু তুই চলে যাবি ... আর কিছু আমার মুখ দিয়ে বের হল না। ও কাঁদছেই।
বাসায় এসে সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আমার আপুসোনাটা ছাড়া এই বাসায় আমি কখনো একা ছিলাম না। কেন ওর বিয়ে করতেই হল। অবুঝ কান্না জাপটে ধরে আমাকে। কিছুই বুঝতে চাইনা আমি আমার আপুসোনাটাকে যে আমি বড় ভালবাসি, ওকে ছাড়া কিভাবে থাকব।
আম্মুর ডাক শুনে এসে বসলাম আম্মুর পাশে। মনে হচ্ছে সিরিয়াস কোন ব্যাপার আলোচনা হবে। বসতেই একটা প্রিন্ট করা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিল আম্মু। আপু দেখলাম উঠে চলে গেল অন্য রুমে। ব্যাপার কি বুঝার জন্য কাগজটাতে চোখ বুলাতেই দেখলাম কোন এক সুযোগ্য পাত্রের বায়োডাটা।
-কার জন্য মা এইটা
-কার জন্য আবার তোর বোনের জন্য। দেখ তোর পছন্দ হয় কিনা।
-মানে? আপুর বিয়ে? কেন এত তাড়াতাড়ি কেন।
-বিয়ে দিতে হবে না। মেয়ে বড় হয়েছে না?
আমার মাথায় কিছু কাজ করে না। আমার আপুসোনার বিয়ে হয়ে যাবে, ও চলে যাবে আমাদের বাসা থেকে এ কি করে সম্ভব। এই বাসায় আমার আপু থাকবে না, আমি রাতে কার সাথে গল্প করে করে ঘুমাব। এ কি করে হয়। আম্মুকে কিছু বলিনা আমি কাগজটাতে দ্বিতীয় নজর না দিয়েই ফিরিয়ে দেই আমি আম্মুর কাছে।
-কিরে কিছু বললিনা তো?
-আমার পছন্দ হয়নাই।
-দেখলিই তো না ঠিক করে।
আমি গিয়ে আমার আপুর কাছ ঘেষে বসি।
-আপু তোর বিয়ে হয়ে গেলে তুই এই বাসা থেকে চলে যাবি !
আপু কিছু বলে না একবার শুধু আমার দিকে তাকায়। আমার এটা তো প্রশ্ন ছিলনা।
-আপু তুই না থাকলে এই বাসায় আমার যে খুব একা একা লাগবে। আবার বলি আমি।
আর থাকতে পারিনা আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি।
আমার আবেগ দিয়ে তো আর কিছু হবে না। বাসার সবার গবেষণায় সেই পাত্রই সুযোগ্য বলে গণ্য হল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম কি দ্রুত আমার আপুর বিয়ের দিন চলে আসল। কেন আমার আপুকে বিয়ে করতেই হবে এটা আমার এখনো মাথায় ঢুকছেনা। সেই ছেলে আবার আমার আপুকে ফোন করে এখনই। আমার একটুও ভাল লাগে না। আপু যখন তার সাথে কথা বলে তখন আমার মনে হয় ফোনটা কেড়ে নিয়ে একটা আছাড় মারি। আর আপুকে চীৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে তুই কোথাও যাবিনা, তোর বিয়ের দরকার নেই। আমার সহ্য হয় না। ঘরে থাকতেও ইচ্ছা করেনা। আপুকে চোখের সামনে দেখলেই মনে হয় আগামী সপ্তাহেই ও আর আমাদের বাসায় থাকবে না। ওর সাথে আমার কথা বলতে হবে টেলিফোনে। প্রতিদিন ইচ্ছা হলেই ওকে দেখতে পারবনা। রাতে ঘুম না আসলে ওকে ডেকে বলতে পারবনা আপুসোন আমার , আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
---------------------------------------------------------------------------------------------
আজ আমার আপুসোনার বিয়ে। স্টেজে পরীর মত সেজে বসে আছে ও। আমাকে করতে হচ্ছে একশ একখানা কাজ। বোনের বিয়েতে ভাইয়ের কি আর ব্যস্ততার কোন শেষ থাকে। তাও কাজের মধ্যে ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার কাজ আমি ভুলে গেলাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলাম আমার আপুকে। আর ঘন্টা কিছু পরেই চলে যাবে আমার আপু। বাসায় গিয়ে আজ আর আমি আমার আপুকে দেখতে পারবনা। আপু আমাকে লক্ষ্য করল না। কে যেন ডাকছে আমাকে ...
আপু চলে যাচ্ছে। আমার সেখানে যেতে ইচ্ছা করছে না। দূর থেকে আমি দেখছি ও কাঁদছে আম্মুকে জড়িয়ে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ছুটে গিয়ে ওকে রেখে দিতে ইচ্ছা করছে। কে যেন বলল আমাকে ডাকে আমার আপুসোনা।
আপু তুই চলে যাবি ... আর কিছু আমার মুখ দিয়ে বের হল না। ও কাঁদছেই।
বাসায় এসে সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আমার আপুসোনাটা ছাড়া এই বাসায় আমি কখনো একা ছিলাম না। কেন ওর বিয়ে করতেই হল। অবুঝ কান্না জাপটে ধরে আমাকে। কিছুই বুঝতে চাইনা আমি আমার আপুসোনাটাকে যে আমি বড় ভালবাসি, ওকে ছাড়া কিভাবে থাকব।
Wednesday, October 22, 2008
লোনাজলে ভাসে বুক
এই কবিতাটা আমার নিজের লেখা না। একটা পত্রিকায় পেয়ে ভাল লেগেছে। যার লেখা তাকে না জিজ্ঞেস করেই নিজের ব্লগে তুলে দিলাম। আশা করি তিনি রাগ করবেন না।
লোনা জলে ভাসে বুক
-জুলফিকার শাহাদাৎ
ঢাকা শহরের অলিতেগলিতে কত কার দেখা পাই
আমার দিদির মতন এমন চেনামুখ দেখিনাই
সকলের মুখে খুঁজেছি দিদির হাসিমাখা সোনামুখ
কোথাও পাইনি দিদিকে আমার লোনাজলে ভাসে বুক
দিদিকে খুঁজেছি হাটে মাঠে ঘাটে দিদিকে খুঁজেছি দূরে
পাখিকে বলেছি দিদির খবর, পাখি ছোটে উড়ে উড়ে
নদীকে বলেছি দিদিকে দেখেছ? যদি দেখা পাও ভাই-
একটু বলিও দিদির জন্য দুই চোখে ঘুম নাই।
পাহাড়ের কাছে জানতে চেয়েছি পাহার বলেছে শোনো
তোমার দিদিকে লুকিয়ে রেখেছি সন্দেহ যদি কোনো
আমিও তোমার দিদি হয়ে রবো , তুমি ভাই হয়ে থেকো
তোমার দিদির ঠিকানা আমার জানা নেই মনে রেখো।
জোছনা রাতের চাঁদকে বলেছি, শোনো শোনো চাঁদমামা
তোমার চোখে তো আলোর শহর আলোকরশ্মি জামা
তুমি যদি দেখো দিদিকে আমার একটু খবর দিয়ো
বিনিময়ে তুমি আমার চোখের আলোটুকু কেড়ে নিয়ো।
কেউই দেয়নি দিদির খবর সকলে বলেছে, না
আমরা জানিনা তোমার দিদির কোনো নাম ঠিকানা
কোথায় খুঁজব তোমার দিদিকে তোমার দিদি কি পাখি?
আকাশে আকাশে ডানা মেলে মেলে করে শুধু ডাকাডাকি।
দিদিকে খুঁজব , কোথায় খুঁজব, কার কাছে আর যাই
দিদিকে হারিয়ে আমার দুচোখের ঘুম নাই ঘুম নাই
দিদিকে পাব না কোথাও পাবনা এমন কি করে হয়
দিদি কি আমার আকাশের তারা আকাশেই জেগে রয়।
লোনা জলে ভাসে বুক
-জুলফিকার শাহাদাৎ
ঢাকা শহরের অলিতেগলিতে কত কার দেখা পাই
আমার দিদির মতন এমন চেনামুখ দেখিনাই
সকলের মুখে খুঁজেছি দিদির হাসিমাখা সোনামুখ
কোথাও পাইনি দিদিকে আমার লোনাজলে ভাসে বুক
দিদিকে খুঁজেছি হাটে মাঠে ঘাটে দিদিকে খুঁজেছি দূরে
পাখিকে বলেছি দিদির খবর, পাখি ছোটে উড়ে উড়ে
নদীকে বলেছি দিদিকে দেখেছ? যদি দেখা পাও ভাই-
একটু বলিও দিদির জন্য দুই চোখে ঘুম নাই।
পাহাড়ের কাছে জানতে চেয়েছি পাহার বলেছে শোনো
তোমার দিদিকে লুকিয়ে রেখেছি সন্দেহ যদি কোনো
আমিও তোমার দিদি হয়ে রবো , তুমি ভাই হয়ে থেকো
তোমার দিদির ঠিকানা আমার জানা নেই মনে রেখো।
জোছনা রাতের চাঁদকে বলেছি, শোনো শোনো চাঁদমামা
তোমার চোখে তো আলোর শহর আলোকরশ্মি জামা
তুমি যদি দেখো দিদিকে আমার একটু খবর দিয়ো
বিনিময়ে তুমি আমার চোখের আলোটুকু কেড়ে নিয়ো।
কেউই দেয়নি দিদির খবর সকলে বলেছে, না
আমরা জানিনা তোমার দিদির কোনো নাম ঠিকানা
কোথায় খুঁজব তোমার দিদিকে তোমার দিদি কি পাখি?
আকাশে আকাশে ডানা মেলে মেলে করে শুধু ডাকাডাকি।
দিদিকে খুঁজব , কোথায় খুঁজব, কার কাছে আর যাই
দিদিকে হারিয়ে আমার দুচোখের ঘুম নাই ঘুম নাই
দিদিকে পাব না কোথাও পাবনা এমন কি করে হয়
দিদি কি আমার আকাশের তারা আকাশেই জেগে রয়।
Wednesday, October 8, 2008
আমার কাজলাদিদিরা - ২ ( পিয়াপু )
[ঠিক কবে মনে নেই কিন্তু খুব ছোটবেলা থেকেই কেন যেন আমার একটা বড় বোনের শখ হয়ে গেল ( আজো গেল না )।
" মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?"
এই প্রশ্নটা আজীবন খুঁজে ফিরছি। একটু একটু যখন বড় হলাম গল্পের বই পড়া শুরু করলাম তখন এই ইচ্ছাটা দিনকে দিন বাড়তে লাগল। শরৎচন্দ্রের বড়দিদি, মেঝদি, পড়তে পড়তে ছোট্ট আমার কত দীর্ঘশ্বাস বের হল তার খবর কেউ রাখেনি। কেন যে আমার এত বোনের শখ আমি নিজেও জানিনা। আসলেই কি বোনরা অনেক বেশি আদর করে? আমার যেহেতু বোন নেই তাই আমার এই বিষয়ে অনেক কল্পনা অনেক রকমের চিন্তাভাবনা। যদি শুধু চিন্তার উপর পিএইচডি থাকত তাহলে আমি পেয়ে যেতাম। কত রকম চিন্তা যে করি আমার একটা বোন থাকলে এই করত ওই করত। পরবর্তীতে এক ভাইয়ার কাছে শুনেছিলাম উনার বড় আপু নাকি হোষ্টেলে থাকত উনি বাসায় এসেই প্রথমে নাকি আম্মুর সাথে একটা ঝগড়া করত কারন হচ্ছে তার আগেই নাকি উনি বোনের কাছে বিচার দিয়ে দিতেন অমুক দিন তমুক দিন মা ওনাকে মেরেছেন। আর আমি মনে মনে ভাবি ইশশ , আমি তো এইরকম একটা বড় বোন চেয়েছিলাম।
এই জন্যই মনে হয় ছোটবেলা থেকেই আমি আমার আশে পাশে সবসময় বড়বোন খুঁজেছিলাম। সেই খোঁজার ফলে আমার জীবনে অনেক গুলা আপুই এসেছে। কেউ কেউ আমাকে আসলেই ছোটভাইর মত আদর করেছে কাউকে কাউকে আমি নিজেই মনে মনে আপুর আসন দিয়েছি উনি হয়ত জানেই না।
সবার সাথে যে আজ যোগাযোগ আছে তাও না। কিন্তু মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে কারো কথা মনে পড়ে। সেই আপুদের গল্প আমার এই কাজলাদিদিরা। ]
আমি এখন যদি কাউকে বলি যে ছোটবেলায় আমি একেবারেই চুপচাপ ছিলাম। কথাই বলতাম না খুব একটা। এমন কথাও প্রচলিত ছিল যে আমাকে নাকি বোম মেরেও কথা বের করা যায় না। কোথাও গেলেই আমার প্রথম কাজ ছিল আশে পাশে খুঁজে একটা গল্পের বই বের করে ফেলা। তারপর কোন এক কোনায় গিয়ে সেটা গেলা। সবাই আমাকে সেইরকমই জানত। ক্যাডেট কলেজে ঢুকে তখন সবে মাত্র সবার কাছে পাত্তা পেতে শুরু করেছি। ছোট্ট একটা বাচ্চা একা বাইরে থাকে সবার কাছে তাই ছুটিতে আসলে আমার অনেক দাম। সবাই এটা ওটা জানতে চায়। আমিও টুকটাক কথায় তার উত্তর দেই। তখন ক্লাস ৮ এ পড়ি। আব্বু মারা গেছেন মাত্রই। আমি ছুটিতে এসেছি তখন আব্বুর জন্য মিলাদ হবে। আমার আব্বু মারা যাবার আগে ১১ মাস অসুস্থ ছিল। তখন আমার এক দূর সম্পর্কের মামা আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। ছোট বেলা থেকেই আমরা ঐ বাসায় গিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে থাকি কেন যেন ঐ মামীকে আমরা ভয় পেতাম। ওনার ভয়ে কত অখাদ্য যে খেতে হইছে ( শাকসব্জী ) ।
আব্বুর মিলাদ এর ব্যবস্থা সব করছেন ঐ মামা। আমার বড় ভাই আর আমি গেলাম সেখানে কি একটা কাজে। বড়ভাইয়া কথা বলছে মামী, মামাত ভাই আর বোনের সাথে। আমি সবসময়ের মতই একটা ম্যাগাজিন টেনে নিলাম। হঠাৎ পিয়া আপু এসে আমার থেকে সেটা কেড়ে নিল। বলল এত জ্ঞান অর্জন করতে হবে না কথা বল আমাদের সাথে। আপু ডিগ্রী পড়ে আর আমি সেভেন এর একটা ছেলে। ওনার সাথে আমি কি কথা বলব। কিন্তু সেই কেড়ে নেওয়ার মধ্যে কিছু একটা ছিল বুঝতে পারিনি। এই আপুও ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আমার ছোটভাইকে আদর করে। আর কয়েকদিন ধরেই দেখছিলাম গত ১ বছরেই পান্থ ( আমার বড়ভাই ) এর সাথে তার খুবই খাতির। পান্থভাইয়াও পিয়াপু বলতে প্রায় অজ্ঞান। আমার ভাইকে কখনো কারো এরকম ফ্যান হতে দেখিনি।
আব্বুর মিলাদের দিন রাতে আপুদের যখন বিদায় দিচ্ছি তখন আপু এসে আমাকে বলল , তপু পান্থ আমাকে তুমি করে বলে তুমিও আমাকে তুমি করে বলবা। আমি তো হা হয়ে গেলাম। এরপর ১ সপ্তাহ ছিলাম ঢাকায়। এর আগে কখনো আমি ফোনে কথা বলিনি। সেই সময় ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার আগে আপুকে ফোন করলাম। কথা বলতে গিয়ে তুমি আপনি এসবে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। মনে আছে কলেজে গিয়েও খালি ভাবতাম এতদিনে বুঝি আমার একটা কাজলাদিদি এসে হাজির হয়েছে।
অনেক ভেবে তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করলাম। কলেজে বসে প্রথম তাকে চিঠি লেখলাম। সেই চিঠির যে উত্তর পাব তা ঠিকই ভেবেছিলাম কিন্তু চিঠিটা যে আমাকে এতটা খুশি করবে তা বুঝতে পারিনি। হঠাৎ একদিন দেখলাম একটা খাম তার উপরে আমার নাম লেখা ঠিকই কিন্তু হাতের লেখাটা আমি চিনিনা। মনের মধ্যে অনেকদিন ধরেই বাজছিল আজই হয়তবা ... হলুদ রঙের খামটি তখন আমার কাছে আকাশের চাঁদ। খোলার আগে অনেকক্ষণ ধরে ভেবেছি এইরকম লেখবে ঐ রকম লেখবে।
তারপর থেকে শুরু হল আমার চিঠি লেখা আমার পিয়াপু কে। মনের আনন্দে আমি শুধু আপু আপু লেখতাম। এক চিঠিতে মনে হয় আমি ১০-১৫ বার আপু আপু ডাকতাম। ছোট্ট বেলা থেকে মনের ভিতরে জমে থাকা ডাকটা চান্স পেয়ে যত বেশি ডাকা যেত তত ডাকতাম।
কলেজ থেকে ছুটিতে আসলে কখন পিয়াপুকে দেখতে যাব তাই ভাবতাম শুধু। কিন্তু তখনো আমার এই মুখচোরা স্বভাব চেঞ্জ হয়নি তাই গিয়েও খুব বেশি কথা বলতে পারতাম না। আমার থেকে আমার বড় ভাইই বেশি কথা বলত। আমিও অনুভব করতাম পিয়াপু আমার থেকে আমার বড় ভাইকেই বেশি আদর করে। ও সবসময় ঢাকায় থাকে প্রায়ই তার সাথে দেখা হয় এজন্য তার সাথেই বেশি ফ্রি। আর আমি ? চিঠিতেই আপু আপু সামনে আসলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারিনা।
এইভাবে কেটে গেল অনেকদিন। কলেজে যতদিন ছিলাম প্রতি টার্মে তাকে চিঠি লেখতাম। পিয়াপু আমার চিঠির আপু। মনে আছে তখন ভাবতাম কলেজ থেকে বের হলে তো সবসময় ঢাকাতেই থাকব। আমার সাথেও আপুর সম্পর্কটা আস্তে আস্তে পান্থ ভাইয়ার মত হবে। কিন্তু কলেজ থেকে বের হয়ে যে কি হল চিঠি লেখা বন্ধ হয়ে গেল আমার আপুটাও কেমন যেন দূরে সরে গেল। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আরো ব্যস্ত হয়ে গেল। খুব মজা হত কোন বারই আমার জন্মদিন মনে রাখতে পারতনা আপু। আমি ফোন করে বলতাম কি আপু এবারও ভুলে গেলা।
একসময় বিদেশ চলে আসলাম। প্রথম চিঠি লিখেছিলাম আম্মু আর পিয়াপুকে। দুটা চিঠির একটাও গিয়ে পৌঁছায়নি। এরপর আর লেখা হয়নি। আস্তে আস্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল পিয়াপুর সাথে। তবুও বছরের দুটা দিন পিয়াপুকে ফোন দিতাম। তার জন্মদিনে উইশ করতে। আর আমার জন্মদিনে। সে মনে রাখতে পারতনা। আমিও আর বলতাম না যে আজ আমার জন্মদিন। আস্তে আস্তে ভুলতে বাধ্য হলাম কারণ যতদিন মনে হত কেমন যেন খারাপ লাগত।
এবারো দেশে গিয়ে আপুর সাথে ফোনে কথা হল। সে অনেকবারই বলছিল আমি কিন্তু তপু তোমাকে অনেক আদর করি। আমি মনে মনে বললাম হয়তবা সত্য কিন্তু সেকথা এখন তোমাকে মুখে বলতে হচ্ছে। দেখা করিনি ইচ্ছে করেই।
" মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?"
এই প্রশ্নটা আজীবন খুঁজে ফিরছি। একটু একটু যখন বড় হলাম গল্পের বই পড়া শুরু করলাম তখন এই ইচ্ছাটা দিনকে দিন বাড়তে লাগল। শরৎচন্দ্রের বড়দিদি, মেঝদি, পড়তে পড়তে ছোট্ট আমার কত দীর্ঘশ্বাস বের হল তার খবর কেউ রাখেনি। কেন যে আমার এত বোনের শখ আমি নিজেও জানিনা। আসলেই কি বোনরা অনেক বেশি আদর করে? আমার যেহেতু বোন নেই তাই আমার এই বিষয়ে অনেক কল্পনা অনেক রকমের চিন্তাভাবনা। যদি শুধু চিন্তার উপর পিএইচডি থাকত তাহলে আমি পেয়ে যেতাম। কত রকম চিন্তা যে করি আমার একটা বোন থাকলে এই করত ওই করত। পরবর্তীতে এক ভাইয়ার কাছে শুনেছিলাম উনার বড় আপু নাকি হোষ্টেলে থাকত উনি বাসায় এসেই প্রথমে নাকি আম্মুর সাথে একটা ঝগড়া করত কারন হচ্ছে তার আগেই নাকি উনি বোনের কাছে বিচার দিয়ে দিতেন অমুক দিন তমুক দিন মা ওনাকে মেরেছেন। আর আমি মনে মনে ভাবি ইশশ , আমি তো এইরকম একটা বড় বোন চেয়েছিলাম।
এই জন্যই মনে হয় ছোটবেলা থেকেই আমি আমার আশে পাশে সবসময় বড়বোন খুঁজেছিলাম। সেই খোঁজার ফলে আমার জীবনে অনেক গুলা আপুই এসেছে। কেউ কেউ আমাকে আসলেই ছোটভাইর মত আদর করেছে কাউকে কাউকে আমি নিজেই মনে মনে আপুর আসন দিয়েছি উনি হয়ত জানেই না।
সবার সাথে যে আজ যোগাযোগ আছে তাও না। কিন্তু মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে কারো কথা মনে পড়ে। সেই আপুদের গল্প আমার এই কাজলাদিদিরা। ]
আমি এখন যদি কাউকে বলি যে ছোটবেলায় আমি একেবারেই চুপচাপ ছিলাম। কথাই বলতাম না খুব একটা। এমন কথাও প্রচলিত ছিল যে আমাকে নাকি বোম মেরেও কথা বের করা যায় না। কোথাও গেলেই আমার প্রথম কাজ ছিল আশে পাশে খুঁজে একটা গল্পের বই বের করে ফেলা। তারপর কোন এক কোনায় গিয়ে সেটা গেলা। সবাই আমাকে সেইরকমই জানত। ক্যাডেট কলেজে ঢুকে তখন সবে মাত্র সবার কাছে পাত্তা পেতে শুরু করেছি। ছোট্ট একটা বাচ্চা একা বাইরে থাকে সবার কাছে তাই ছুটিতে আসলে আমার অনেক দাম। সবাই এটা ওটা জানতে চায়। আমিও টুকটাক কথায় তার উত্তর দেই। তখন ক্লাস ৮ এ পড়ি। আব্বু মারা গেছেন মাত্রই। আমি ছুটিতে এসেছি তখন আব্বুর জন্য মিলাদ হবে। আমার আব্বু মারা যাবার আগে ১১ মাস অসুস্থ ছিল। তখন আমার এক দূর সম্পর্কের মামা আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। ছোট বেলা থেকেই আমরা ঐ বাসায় গিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে থাকি কেন যেন ঐ মামীকে আমরা ভয় পেতাম। ওনার ভয়ে কত অখাদ্য যে খেতে হইছে ( শাকসব্জী ) ।
আব্বুর মিলাদ এর ব্যবস্থা সব করছেন ঐ মামা। আমার বড় ভাই আর আমি গেলাম সেখানে কি একটা কাজে। বড়ভাইয়া কথা বলছে মামী, মামাত ভাই আর বোনের সাথে। আমি সবসময়ের মতই একটা ম্যাগাজিন টেনে নিলাম। হঠাৎ পিয়া আপু এসে আমার থেকে সেটা কেড়ে নিল। বলল এত জ্ঞান অর্জন করতে হবে না কথা বল আমাদের সাথে। আপু ডিগ্রী পড়ে আর আমি সেভেন এর একটা ছেলে। ওনার সাথে আমি কি কথা বলব। কিন্তু সেই কেড়ে নেওয়ার মধ্যে কিছু একটা ছিল বুঝতে পারিনি। এই আপুও ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আমার ছোটভাইকে আদর করে। আর কয়েকদিন ধরেই দেখছিলাম গত ১ বছরেই পান্থ ( আমার বড়ভাই ) এর সাথে তার খুবই খাতির। পান্থভাইয়াও পিয়াপু বলতে প্রায় অজ্ঞান। আমার ভাইকে কখনো কারো এরকম ফ্যান হতে দেখিনি।
আব্বুর মিলাদের দিন রাতে আপুদের যখন বিদায় দিচ্ছি তখন আপু এসে আমাকে বলল , তপু পান্থ আমাকে তুমি করে বলে তুমিও আমাকে তুমি করে বলবা। আমি তো হা হয়ে গেলাম। এরপর ১ সপ্তাহ ছিলাম ঢাকায়। এর আগে কখনো আমি ফোনে কথা বলিনি। সেই সময় ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার আগে আপুকে ফোন করলাম। কথা বলতে গিয়ে তুমি আপনি এসবে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। মনে আছে কলেজে গিয়েও খালি ভাবতাম এতদিনে বুঝি আমার একটা কাজলাদিদি এসে হাজির হয়েছে।
তারপর থেকে শুরু হল আমার চিঠি লেখা আমার পিয়াপু কে। মনের আনন্দে আমি শুধু আপু আপু লেখতাম। এক চিঠিতে মনে হয় আমি ১০-১৫ বার আপু আপু ডাকতাম। ছোট্ট বেলা থেকে মনের ভিতরে জমে থাকা ডাকটা চান্স পেয়ে যত বেশি ডাকা যেত তত ডাকতাম।
কলেজ থেকে ছুটিতে আসলে কখন পিয়াপুকে দেখতে যাব তাই ভাবতাম শুধু। কিন্তু তখনো আমার এই মুখচোরা স্বভাব চেঞ্জ হয়নি তাই গিয়েও খুব বেশি কথা বলতে পারতাম না। আমার থেকে আমার বড় ভাইই বেশি কথা বলত। আমিও অনুভব করতাম পিয়াপু আমার থেকে আমার বড় ভাইকেই বেশি আদর করে। ও সবসময় ঢাকায় থাকে প্রায়ই তার সাথে দেখা হয় এজন্য তার সাথেই বেশি ফ্রি। আর আমি ? চিঠিতেই আপু আপু সামনে আসলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারিনা।
এইভাবে কেটে গেল অনেকদিন। কলেজে যতদিন ছিলাম প্রতি টার্মে তাকে চিঠি লেখতাম। পিয়াপু আমার চিঠির আপু। মনে আছে তখন ভাবতাম কলেজ থেকে বের হলে তো সবসময় ঢাকাতেই থাকব। আমার সাথেও আপুর সম্পর্কটা আস্তে আস্তে পান্থ ভাইয়ার মত হবে। কিন্তু কলেজ থেকে বের হয়ে যে কি হল চিঠি লেখা বন্ধ হয়ে গেল আমার আপুটাও কেমন যেন দূরে সরে গেল। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আরো ব্যস্ত হয়ে গেল। খুব মজা হত কোন বারই আমার জন্মদিন মনে রাখতে পারতনা আপু। আমি ফোন করে বলতাম কি আপু এবারও ভুলে গেলা।
একসময় বিদেশ চলে আসলাম। প্রথম চিঠি লিখেছিলাম আম্মু আর পিয়াপুকে। দুটা চিঠির একটাও গিয়ে পৌঁছায়নি। এরপর আর লেখা হয়নি। আস্তে আস্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল পিয়াপুর সাথে। তবুও বছরের দুটা দিন পিয়াপুকে ফোন দিতাম। তার জন্মদিনে উইশ করতে। আর আমার জন্মদিনে। সে মনে রাখতে পারতনা। আমিও আর বলতাম না যে আজ আমার জন্মদিন। আস্তে আস্তে ভুলতে বাধ্য হলাম কারণ যতদিন মনে হত কেমন যেন খারাপ লাগত।
এবারো দেশে গিয়ে আপুর সাথে ফোনে কথা হল। সে অনেকবারই বলছিল আমি কিন্তু তপু তোমাকে অনেক আদর করি। আমি মনে মনে বললাম হয়তবা সত্য কিন্তু সেকথা এখন তোমাকে মুখে বলতে হচ্ছে। দেখা করিনি ইচ্ছে করেই।
Saturday, October 4, 2008
আমার আপুসোনা - ৩
বহুদিন পরে দেশে যাচ্ছি। সময়ের হিসাব করলে অবশ্য হবে না। সময়ের হিসাব ধরলে মাত্র ১৫ মাস কিন্তু মানসিক ভাবে এই ১৫ মাস আমাকে ১৫ বছরের কষ্ট দিয়েছে। দেশ থেকে আসার সময় ১১ মাসকেই মনে হচ্ছিল অনন্তকাল। কত্ত দিন পর আজ মাকে দেখব। প্লেনটা মনে হয় আস্তে চলছে। একটা ঘুম দিয়ে দিব নাকি? ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম আমার দেশ। চোখ বন্ধ করে একটু চিন্তা করি এয়ারপোর্টে কি হবে। আম্মু তো আসবেই। সেই ক্লাস ৭ এ ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার পর থেকে আমার আজ পর্যন্ত যত আগমন এবং গমন সবসময়ই আম্মু শত কাজ থাকলেও আমাকে নিতে এবং দিতে আসবে। আর কে কে আসবে? কনক তো আসবেই। এয়ারপোর্ট বলে কথা ছেলেমানুষ একজন তো থাকতেই হবে। আম্মু কি এবারো কাঁদবে। দেশ ছাড়ার সময় কান্নার ব্যাপারটা বুঝতে পারি কিন্তু দেশে আসার সময় কেন আম্মু কাঁদে? আমারও বা কেন চোখ ভিজে যায়। দেশ যখন ছাড়ছিলাম তখন অবশ্য বুঝিনি এত তাড়াতাড়ি দেশে যেতে পারব। সবাই দেখে ২-৩ বছরের আগে আসে না। সেই হিসেবে ভালই লাগছে।
আমার আপুসোনাটা কি আসবে? আমি যখন দেশ ছাড়ছিলাম তখন আমার আপুসোনাটা আসেনি আমাকে তুলে দিতে । আম্মু অনেকবার বলার পরও তার একই কথা আমার পিচ্চিটা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে সেটা আমি সহ্য করতে পারবনা। ওখানে নাকি সে কাঁদতে কাঁদতেই মরে যাবে । সিনক্রিয়েট এর হাত থেকে বাঁচার জন্য সে যাবেনা। তাও যা করল। আমি বের হবার আগ পর্যন্ত বেশ হাসিমুখেই ছিল। কিছুক্ষণ পরপরই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, জড়িয়ে ধরে গাল টিপে আদর করে দিচ্ছে আর বারবার বলছে কোন ব্যাপার না প্রতিদিন আমরা মেসেঞ্জার এ কথা বলব ওয়েবক্যামে তোকে দেখব তুই আমাদের দেখবি দেখবি খারাপ লাগবেই না। আমি একবার আম্মুকে জড়িয়ে ধরি আরেকবার ওকে । বুকের মাঝে যে কান্নার দলাটা পাকিয়ে উঠছিল সেটা গলা পর্যন্ত এসে থেমে যায়। কি যেন অনেক কথা বলার ছিল। বলতে পারিনা। কিন্তু যেই আমি গাড়িতে উঠে গেলাম তখন বুঝতে পারলাম আমার আপুসোনাটা এতক্ষণ আমাকে নয় নিজেকেই স্বান্ত্বনা দিচ্ছিল। আমাকে দেখাবে না সেইজন্য সে ভিতরের রুমে গিয়ে শুরু করল কান্না। আম্মু আর আপু মিলে সে কি কান্না। আমি দাঁড়িয়ে আছি দরজায়। বের হতে পারছিনা। একবার মনে হল কেন যাব বিদেশে। কি দেবে আমাকে বিদেশ। কেন আমাদের যেতে হয়। না গেলেই কি নয়?
আমার আপুসোনার একটা কথা গত ১৫ মাসের সবসময় আমার কানে বেজেছে । ও কাঁদছিল আর বলছিল," আমার পিচ্চি ছাড়া এখানে আমার যে বুকটা হুহু করবে।" আম্মু অনেকক্ষণ ওকে বুঝিয়ে আমাকে নিয়ে বের হয়ে গেল। আমার আপুসোনাটা আর আমার সামনে আসল না। আমিও আর কাঁদতে চাইনি। গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছিল কত্ত দিন আমি আমার আপুসোনাটাকে দেখবনা। দৌড় দেই। একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা যে ওকে বলা হয়নি। ওকে বলা হয়নি আমি আপু তোকে কত ভালবাসি। মাকে জড়িয়ে ধরলাম। আম্মু বুঝতে পেরে আরো নিবিড় করে আমাকে জড়িয়ে ধরল। ফোনে কথা বলা শুরু করলাম আপুসোনার সাথে। আমি শুধু আপুসোনাটা উচ্চারণ করতে পেরেছিলাম। আর আপু বলেছিল পিচ্চি আমার একটুও কাঁদবি না। তুই যেদিন আসবি এয়ারপোর্টে নেমেই আমাকে দেখবি ।
ও তো অনেক ব্যস্ত। আজও ওর অফিস আছে। আসবে কি আমার আপুসোনা এয়ারপোর্টে।
---------
এয়ারপোর্টে নেমে ঝামেলা শেষ করে গেট দিয়ে বের হয়ে আসলাম। কোথায় আমার আম্মু কোথায় আমার আপুসোনা। এদিক ওদিক তাকাই কেউ নেই দেখি। এমন সময় দেখলাম কনক ডাকছে আমাকে। আমার অতি আদরের ছোট ভাইটা দেখি একটু বড় হয়ে গেছে। আমাকে কি সুন্দর গাইড করে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। ওর উপর নির্ভর হতে হল আমাকে। পিচ্চি কনক দেখি অনেক বেশি দায়িত্বশীল ও হয়েছে। আম্মুকে দেখে আবার সেই কলেজের মত ছবি। আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি।প্রথন দৃশ্যতো শেষ হল আমি এদিক ওদিক তাকাই আমার আপুসোনাটা কই? আম্মু কনক দুজনই বুঝতে পারে কিন্তু কিছু বলে না। এগিয়ে যাই গাড়ির দিকে হঠাৎ দেখি নরম দুটা হাত আমার চোখ ধরেছে। আর কিছু বুঝতে হল না আমাকে উলটা ঘুরেই বললাম " আমার আপুসোনা"।
আমার আপুসোনাটা কি আসবে? আমি যখন দেশ ছাড়ছিলাম তখন আমার আপুসোনাটা আসেনি আমাকে তুলে দিতে । আম্মু অনেকবার বলার পরও তার একই কথা আমার পিচ্চিটা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে সেটা আমি সহ্য করতে পারবনা। ওখানে নাকি সে কাঁদতে কাঁদতেই মরে যাবে । সিনক্রিয়েট এর হাত থেকে বাঁচার জন্য সে যাবেনা। তাও যা করল। আমি বের হবার আগ পর্যন্ত বেশ হাসিমুখেই ছিল। কিছুক্ষণ পরপরই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, জড়িয়ে ধরে গাল টিপে আদর করে দিচ্ছে আর বারবার বলছে কোন ব্যাপার না প্রতিদিন আমরা মেসেঞ্জার এ কথা বলব ওয়েবক্যামে তোকে দেখব তুই আমাদের দেখবি দেখবি খারাপ লাগবেই না। আমি একবার আম্মুকে জড়িয়ে ধরি আরেকবার ওকে । বুকের মাঝে যে কান্নার দলাটা পাকিয়ে উঠছিল সেটা গলা পর্যন্ত এসে থেমে যায়। কি যেন অনেক কথা বলার ছিল। বলতে পারিনা। কিন্তু যেই আমি গাড়িতে উঠে গেলাম তখন বুঝতে পারলাম আমার আপুসোনাটা এতক্ষণ আমাকে নয় নিজেকেই স্বান্ত্বনা দিচ্ছিল। আমাকে দেখাবে না সেইজন্য সে ভিতরের রুমে গিয়ে শুরু করল কান্না। আম্মু আর আপু মিলে সে কি কান্না। আমি দাঁড়িয়ে আছি দরজায়। বের হতে পারছিনা। একবার মনে হল কেন যাব বিদেশে। কি দেবে আমাকে বিদেশ। কেন আমাদের যেতে হয়। না গেলেই কি নয়?
আমার আপুসোনার একটা কথা গত ১৫ মাসের সবসময় আমার কানে বেজেছে । ও কাঁদছিল আর বলছিল," আমার পিচ্চি ছাড়া এখানে আমার যে বুকটা হুহু করবে।" আম্মু অনেকক্ষণ ওকে বুঝিয়ে আমাকে নিয়ে বের হয়ে গেল। আমার আপুসোনাটা আর আমার সামনে আসল না। আমিও আর কাঁদতে চাইনি। গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছিল কত্ত দিন আমি আমার আপুসোনাটাকে দেখবনা। দৌড় দেই। একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা যে ওকে বলা হয়নি। ওকে বলা হয়নি আমি আপু তোকে কত ভালবাসি। মাকে জড়িয়ে ধরলাম। আম্মু বুঝতে পেরে আরো নিবিড় করে আমাকে জড়িয়ে ধরল। ফোনে কথা বলা শুরু করলাম আপুসোনার সাথে। আমি শুধু আপুসোনাটা উচ্চারণ করতে পেরেছিলাম। আর আপু বলেছিল পিচ্চি আমার একটুও কাঁদবি না। তুই যেদিন আসবি এয়ারপোর্টে নেমেই আমাকে দেখবি ।
ও তো অনেক ব্যস্ত। আজও ওর অফিস আছে। আসবে কি আমার আপুসোনা এয়ারপোর্টে।
---------
এয়ারপোর্টে নেমে ঝামেলা শেষ করে গেট দিয়ে বের হয়ে আসলাম। কোথায় আমার আম্মু কোথায় আমার আপুসোনা। এদিক ওদিক তাকাই কেউ নেই দেখি। এমন সময় দেখলাম কনক ডাকছে আমাকে। আমার অতি আদরের ছোট ভাইটা দেখি একটু বড় হয়ে গেছে। আমাকে কি সুন্দর গাইড করে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। ওর উপর নির্ভর হতে হল আমাকে। পিচ্চি কনক দেখি অনেক বেশি দায়িত্বশীল ও হয়েছে। আম্মুকে দেখে আবার সেই কলেজের মত ছবি। আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি।প্রথন দৃশ্যতো শেষ হল আমি এদিক ওদিক তাকাই আমার আপুসোনাটা কই? আম্মু কনক দুজনই বুঝতে পারে কিন্তু কিছু বলে না। এগিয়ে যাই গাড়ির দিকে হঠাৎ দেখি নরম দুটা হাত আমার চোখ ধরেছে। আর কিছু বুঝতে হল না আমাকে উলটা ঘুরেই বললাম " আমার আপুসোনা"।
Subscribe to:
Posts (Atom)